Tapas Dutta (Marco) | Sunday Exclusive | Satkahon

Tapas Dutta (Marco) | Sunday Exclusive | Satkahon

Tapas Dutta (Marco) | Sunday Exclusive | Satkahon

সাধারণ বাঙালী ঘরে মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান শিখবে,ছেলেরাও তবলা শিখবে, গিটার শিখবে এটা তো সবাই জানে। ।

কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ছেলেরা গান বাজনা শিখলেও সেটাকে উপার্জনের মাধ্যম করাটা পরিবার কখনই সমর্থন করত না।

অনেক লড়াই করে তবেই একজন পেশাগত শিল্পী জন্ম নিত।

এখন সংস্কৃতি জগতে উপার্জন করে নিজের ভবিষ্যৎ গঠন করে নিতে ছেলেদের উৎসাহ দিচ্ছেন মা বাবাই।

পিছিয়ে নেই মেয়েরাও।

সুতরাং তখনকার দিনে যেমন লাখে একজন শিল্পী জন্ম নিত, এখন তা উল্টো। এখন লাখ শিল্পীর মধ্যে শ্রোতা এক। 

সঙ্গীত জীবনের ৪৫ বছর পারে অনেক কিছু দেখেছেন, শুনেছেন, শিখেছেন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক তথা গিটার প্রশিক্ষক, গিটার বাদক তাপস দত্ত মার্কো।

আজ প্রথমবার সাতকাহনের পাতায় তিনি ভাগ করে নিলেন মনের কথা।

কিভাবে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ?

আমার বাবা শ্রী তপন দত্তের অর্কেস্ট্রা ছিল Echo-d-la. সেই সময়ে Echo-d-la ছিল খুবই জনপ্রিয় অর্কেস্ট্রা।

তাঁরা নানা দেশ বিদেশ ঘুরে অনুষ্ঠান করতেন।

ছোটবেলায় সেই অর্কেস্ট্রার রিহার্সাল হত, আর সেই দেখে দেখেই আমার ইচ্ছে হল আমিও বাজাবো।

প্রথমে তবলায় আমার হাতে খড়ি। এরপর আমি ছোটদের little-betles অর্কেস্ট্রায় যোগ দিলাম।

সেখানে আমার গুরু ছিলেন অনাথ বন্ধু মৌলিক।(A.B.Moulik)

সেখানেই বংগো, ড্রামস, গিটার শিখেছি।

পরবর্তীকালে আমার গিটারের গুরু হলেন বিখ্যাত জ্যাজ গিটারিস্ট কার্লটন কিটো।

আপনি তো খুব ছোট থেকেই সঙ্গীতজগতে পরিচিত?

হ্যাঁ। তখন আকাশবাণী বা দূরদর্শনে সুযোগ পাওয়া একটা বিশাল ব্যাপার ছিল।

আমি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে  ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত ছোটদের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহন করেছি।

তারপর?

তারপর তো পড়াশুনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম, চাকরিও পেয়েছিলাম।

কিন্তু মন মানল না, তাই চাকরি বাকরি ছেড়ে গান বাজনা নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম।

তারপর কি কি কাজ শুরু করলেন?

১৯ বছর বয়স থেকেই বলা যায় আমি সঙ্গীত জগতে কাজ করতে শুরু করেছি।

সঙ্গতের পাশাপাশি প্রথমে advertisement jingles দিয়ে শুরু, তারপর ধীরে ধীরে সঙ্গীত পরিচালনা।

তখন ইউ টিউব আসেনি, সেই সময় ডিস্ক, ক্যাসেট এর যুগ… সেই সময় কার কার সাথে কাজ করেছেন?

বিদুষী শিপ্রা বসু, সনৎ সিংহ, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, কমন মিউজিসিয়ান হিসেবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,

অখিল বন্ধু ঘোষ,প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, নির্মলা মিশ্র কত নাম বলব আমি অনেকের সাথেই বাজিয়েছি।

পদ্মশ্রী মান্না দের সাথে মঞ্চ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমি ওনার গানের রেকর্ডিং এও বাজিয়েছি।

সেই সময় কলকাতায় প্রচুর অনুষ্ঠান হত, তখন নাম করা শিল্পী ছাড়া সেভাবে কেউ মঞ্চে সুযোগ পেত না।

৪৫ বছর ধরে আপনি বাংলা সঙ্গীত জগতে আপনি আপনার সবটুকু দিয়ে কাজ করে চলেছেন।

কি পেয়েছেন?

অনেক কিছু।

ইন্ডাস্ট্রি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।

দু একটা শ্রুতি মধুর গান ছাড়া আমিই বরং কিছু দিতে পারিনি।

পরিচিতি দিয়েছে। এক এক দিনে এত কাজ এসে যায় যে বেছে নিতে মুস্কিল হয়।

আমিও অনেককে ভালো কাজের এগিয়ে দিতে পারি, এটাই তো পাওয়া।

কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিচিতি অনুযায়ী আজ আপনার যে ‘জায়গা’ পাওয়া কথা,

সঙ্গীতজগত কি আপনাকে সেই জায়গা দিয়েছে?

তার কারণ ভিড় বেশী হয়ে গেছে।

৭০ এর দশকে মানুষ গান বাজনা করাটাকে ভালো নজরে দেখত না।

তাই তখন কেউ সাহস করে গানবাজনাকে পেশা করত না।

কিন্তু এখন এই বেকারত্বের যুগে যারা একটু বাজাতে পারে তারা এটাকেই উপার্জনের মাধ্যম করতে শিখে গেছে।

ফলে ভিড় বেড়ে গেছে।

তাছাড়া, আমরা যারা সেই সময়ের মানুষ তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে নিজেদের সেইভাবে মানিয়ে নিতে পারিনি।

নিজের অনুকূলে কিভাবে তা ব্যবহার করা যায় ঠিক করে শিখে উঠতে পারিনি।

এখনকার ছেলেমেয়েরা এতে অনেক বেশী পোক্ত।

Join our Facebook Group today

Click Here

৪৫ বছরের জীবনে নিশ্চয়ই দেখেছেন মানুষ কিভাবে একে অপরের ঘাড়ে পা রেখে উঠে যাচ্ছে…

আপনি পারেননি. সেটাই কি ‘সেই জায়গা’ না পাওয়ার কারণ বলছেন?

সেটা তো একটা প্রতিভা আর পরিশ্রম করার ক্ষমতা।

আমি একটু কুঁড়ে।

ঘাড়ে পা রেখে উপরে উঠতে গেলে প্রচুর মাথা খাটাতে হবে, প্রচুর রাজনীতিতে থাকতে হবে।

আমি সেই ধরণের পরিশ্রম করতে পারিনি বরং গান বাজনাটায় মন দিয়েছি তাই হয়ত ‘সেই জায়গা’ পাইনি।

আপনার তো অনেক ছাত্র-ছাত্রী?

হ্যাঁ। আমি অনেককেই নিজের হাতে তৈরি করেছি।

তারা ভালো কাজ করছে।

সেটা ‘জায়গা’ পাওয়ার থেকেও বড় পাওয়া।

 মাউথ অরগ্যান কি সেই ছোট থেকেই শেখা?

জন্মদিনে উপহার পেয়েছিলাম একটা মাউথ অরগ্যান।

সেটায় খেলার ছলে ফুঁ দিতে দিতেই শিখে গেলাম একদিন।

সেই শুনে আমার ডাক আসত মাউথ অরগ্যান বাজানোর জন্য বহু কর্পোরেট হাউস থেকে।

দেশে বিদেশেও বাজিয়েছি।

সঙ্গত করতেই হয় কিন্তু সঙ্গতের তুলনায় আমি একক অনুষ্ঠান করতে বেশী পছন্দ করি।

সঙ্গীত জীবনের সুদীর্ঘ পথে আপনি পরিবর্তন দেখছেন বহুবার, বহু রকম ভাবে।

শিল্পীদের কেমন পরিবর্তন দেখছেন?

এখন শিল্পীদের প্রথমেই চিন্তা কটা ভিউ হবে ইউটিউবে আর ফেসবুকে Blue tick হবে নাকি…

কিন্তু গানটা কবার রেওয়াজ করলে আরও ভালো গাওয়া যায় সেদিকে মন নেই।

কিন্তু সেই সময়েও তো মানুষ নিজের গান মুক্তি পাবার পর কটা ক্যাসেট,

কটা সিডি বিক্রি হল সেই চিন্তা ভাবনা করতেন?

অবশ্যই ছিল। তবে সেটা এখন একটা পাগলামিতে পরিণত হয়েছে।

তখন মানুষ গানটা শিখে গাইতেন। সেই সময় shortcut, copy paste বা auto tune বলে কিছু ছিল না।

তখন মিক্সিং মাস্টারিং হত কানে শুনে। তাই গানের পাশাপাশি কানের রেওয়াজ দরকার হত।

বিখ্যাত হবার খিদে যেমন ছিল তেমনই খিদে মেটাবার জন্য মন দিতে হত রেওয়াজ, গুরুমুখী শিক্ষায়, চর্চায়।

এখন মানুষ পরে কি পাবে সেটা আগে ভেবে সময় নষ্ট করে ফেলছে।

এখন ঘরে ঘরে সঙ্গীত পরিচালক। সকলেরই প্রায় নিজের স্টুডিও।

৪৫ বছরের জীবনে আপনার নিজের স্টুডিও নেই। কেন?

এখনকার দিনে বাবা মায়েরা অনেক সচেতন।

চাকরির যা অবস্থা তাই সেই দিকে না গিয়ে নিজের সন্তানকে তার পছন্দের কাজে কিভাবে সাহায্য করা যায় সেই চিন্তা করছেন।

এখনকার ছেলেমেয়েরা তাই আমাদের থেকে এগিয়ে।

তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে হয় জানে।

সেক্ষেত্রে আমরা এখনও কাঁচা।

আমাদের উপার্জন তাঁদের তুলনায় অনেক কম।

আগেই বলেছি।

বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর নানা দেশে আপনি অনুষ্ঠান করেছেন।

এই ৪৫ বছরের জীবনে কি পেয়েছেন? কি পাননি?

হাততালির একটা নেশা আছে। যেকোনো শিল্পীর কাছেই।

হাততালি অনেক পেয়েছি।

আর উপার্জন তো যে যেমন করতে পারে তার উপর নির্ভর করছে,তাই কি পাইনি ঠিক ভাবে বলা যাবে না।

বা, বলাটা ঠিক হবে না।

আমরা আসলে টাকা পয়সাকে যত না গুরুত্ব দিয়েছি তার থেকে ভালো কাজের দিকে নজর দিয়েছি।

এখন আগে টাকা জমা করতে হয়, তারপর কাজ শুরু হয়।

আসলে এটাও তাঁদের থেকে শিখে নিতে পারলে আমাদেরই ভালো হয়। শিখছিও। দেখা যাক…

একজন শিল্পীকে কিসের নিরিখে যাচাই করবেন মঞ্চ নাকি মিউজিক ভিডিও?

অবশ্যই মঞ্চ।

সুখ দুঃখ মিলিয়ে সবশেষে আপনার কথা শুনব…

নতুন যারা গানবাজনা করছে তারা চটজলদি সাফল্য চাইছে, আর পাচ্ছেও।

আর আমরা যারা বসেছিলাম আরও ভালো কাজ করব বলে তারা এখনও বসেই আছি সেই আশায়।

তবে আনন্দ একটাই, যে, যারা গানবাজনা করে তাঁদের জীবনে দুঃখ বলে কিছু থাকে না। কারণ, দুঃখ পেলে আর গান হবে না।

জীবনে যতটা আনন্দ থাকবে-ততটাই সঙ্গীত থাকবে।

 COPYRIGHT © SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *