Subhasish Sur – Srinivas Music | Sunday Exclusive | Satkahon
Subhasish Sur – Srinivas Music | Sunday Exclusive | Satkahon
কলের গান, ক্যাসেট, সিডির যুগ পেরিয়ে দুনিয়া এখন ডিজিটাল।
আত্মবিস্মৃত বাঙালীর অনেকেই হয়ত জানেন না, ভারতবর্ষে প্রথম ধ্বনিমুদ্রন অর্থাৎ Sound Record এর পদ্ধতি চালু হয় আমাদের কলকাতায়।
গ্রামাফোন রেকর্ড বা আমাদের ভাষায় কলের গান।
গ্রামাফোন কোম্পানির প্রথম রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার এস. ডাব্লিউ. গেইসবার্গ।
১৯০২ সালে তিনি প্রথম একজন ভারতীয় শিল্পীর গানের রেকর্ড করেন খোদ কলকাতায়।
আর সেই শিল্পী হলেন বাংলার শিল্পী গওহর জান।
অল্পদিনেই সেই রেকর্ড প্লেয়ার জনপ্রিয় হয়ে পরে বাংলা থেকে সমগ্র ভারতে।
আর ভারতে ব্যবসায়িক বাজারে গ্রামাফোন লাভ করে বিশাল বিস্তার।
১৯০৮ সালের ১৯ জুন কলকাতার বেলেঘাটায় স্থাপিত হয় এশিয়ার প্রথম রেকর্ড কারখানা।
এরপর দিন গেছে, কলের গানের দিন শেষ হয়ে এসেছে ক্যাসেট ও তারপর সিডির যুগ।
যুগের সাথে সাথে যন্ত্রের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি বাঙালীর সংস্কৃতি প্রেমের।
আজকের সাক্ষাৎকারে আমরা এমন একজন মানুষের সাথে কথা বলব যিনি সিডি থেকে ডিজিটাল যুগ কাজ করে চলেছেন বাংলা গান তথা বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে।
নিত্যদিন কাজ করছেন একেবারে নতুন শিল্পী থেকে বিশিষ্ট শিল্পীদের সাথে।
অল্প সময়ে বিখ্যাত হওয়া তাঁর লক্ষ্য নয়, জয়ের ক্ষেত্রে কচ্ছপের গতি তত্ত্বে বিশ্বাসী তিনি।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে আজ শ্রীনিবাস মিউজিক (Srinivas Music) অডিও কোম্পানির কর্নধার শ্রী শুভাশিস সুর।
জানতে চাইব আপনার কথা… বাংলা সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠল কিভাবে?
প্রথমেই বলব, আমি কিন্তু কোন সাংগীতিক পরিবার থেকে বড় হয়ে উঠিনি।
আমার বড় হওয়া কলকাতায়। ইকনমিক্স নিয়ে আমি অনার্স করি।
এর পর প্রিন্টিং টেকনোলজি নিয়ে আমার পড়াশুনা।
আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল প্রিন্টিং এবং সিডি তৈরি।
২০০৫ সালে পড়াশুনা শেষ করার পর আমি বাবার ব্যাবসার সাথেই যুক্ত হই।
তাহলে সিডি তৈরির ব্যবসা থেকেই কি সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ? আর সেই থেকেই সঙ্গীত প্রযোজক হয়ে ওঠা?
হ্যাঁ। কাজের সুত্রেই আমার এই পেশায় আসা।
বই ছাপার পাশাপাশি সিডি বানানোর কাজ যেহেতু আমরা করতাম তাই সিডি তৈরির সব উপকরণই আমার কাছে ছিল, পদ্ধতিও আমার জানা ছিল।
এই ভাবেই চলতে চলতে হঠাৎই নব নালন্দা পরিচালিত ‘নব রবি কিরণ’ নামে একটি সংস্থাকে আমি প্রস্তাব দিলাম গানের সিডি তৈরির জন্য, এবং তাঁরা আমার সাথে কাজ শুরু করলেন।
সিডি বানাতে বানাতেই নব নালন্দার প্রধান অধ্যক্ষ শ্রী অরিজিৎ মিত্র মহাশয়ের সাথে আমি গান তৈরির ব্যাপারেও যুক্ত হয়ে যাই।
সেই সময় আমি তৈরি করি শ্রীনিবাস মিউসিক অডিও কোম্পানি।
খুব কম সময়ের মধ্যেই আমরা প্রায় ৩০০ সিডি তৈরি করে ফেলি।
২০১৩ সালে জি ডি বিড়লা সভাঘরে সিডি আকারে মুক্তি শ্রীনিবাস মিউজিকের প্রথম অডিও অ্যালবাম নব নালন্দার ‘কথা ও কাহিনী ২’।
তাহলে তখন থেকেই শ্রীনিবাস মিউজিকের যাত্রা শুরু?
হ্যাঁ।
এরপর পরপর বেশ কিছু কাজ মুক্তি পেতে থাকে। মেলোডি, সিম্ফানি, প্রভৃতি জায়গায় আমাদের সিডি যায়।
মানুষ সুখ্যাতি করেন যে, কোন সমস্যা ছাড়াই তাঁরা গান ভালভাবে শুনতে পাচ্ছেন।
আমাদের পঞ্চম সিডি ‘মধুধারা’। গেয়েছেন শমীক পাল।
সেই সময় সমগ্র কলকাতায় দুটো সিডির সর্বাধিক বিক্রি ছিল।
একটি ছিল শান এর ‘তোমার খোলা হাওয়া’।
এবং অপরটি আমাদের সিডি ‘মধুধারা’।
সেই সময় থেকেই শ্রীনিবাস মিউজিক অডিও কোম্পানি বহুল পরিচিতি পায় এবং বলা যায় তখন থেকেই আমারা নতুন উদ্যগে পুরো দমে আমাদের কাজ শুরু করি।
সিডি যুগের রমরমা আপনি দেখেছেন।
এরপর যখন সিডি প্রায় অবলুপ্তির দিকে যেতে লাগল, ডিজিটাল যুগ শুরু হল কতটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হল আপনাদের?
কালের নিয়মের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারার নামই তো জীবন।
করোনা আসার আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রচুর সিডি বিক্রি হয়েছে।
তারপর হঠাৎ করেই সিডির বাজারে সম্পূর্ণ রুপে ধ্বস নামে।
তবে আগে থেকেই আমরা ডিজিটাল মিডিয়ায় ছিলাম।
কিন্তু যেহেতু সেই সময় ডিজিটাল মিডিয়াই একমাত্র ভরসা তাই আমরা সেটাকেই অধিক প্রাধান্য দিতে শুরু করলাম।
Subhasish Sur – Srinivas Music | Sunday Exclusive | Satkahon
শ্রীনিবাস মিউজিক মিউজিক ভিডিও ছাড়া আর কি কি কাজের সাথে যুক্ত?
আগে বলি শ্রীনিবাস মিউজিক এর মুল ইউটিউব চ্যানেলটির নাম Srinivas Music.
এর সাথে আমাদের আরো দুটি চ্যানেল রয়েছে একটি Pomo Kidz ও অন্যটি Euphoriadigi.
Pomokidz শুধু মাত্র ছোটদের জন্য তৈরি একটি চ্যানেল। সেখানে বেশ কিছু ছোটদের কবিতার অডিও ভিসুয়াল অ্যানিমেশন আকারে মুক্তি পেয়েছে।
শুধু মাত্র হিন্দি গানের জন্য কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে Euphoriadigi. যেখানে ইতিমধ্যেই কয়েকটি হিন্দি গান মুক্তি পেয়েছে।
আগামী দিনে মৌলিক হিন্দি গান নিয়েও আমরা কাজ করতে চলেছি।
যে মাধ্যমে আপনি কাজ করছেন,
সেই মাধ্যমেই আপনার এমন প্রতিযোগী রয়েছে যারা কোন বিনিয়োগ ছাড়াই
চটজলদি নাম ও অর্থ দুটোই এই মাধ্যম থেকে উপার্জন করে নিচ্ছেন।
সেক্ষেত্রে আপনি একজন সঙ্গীত প্রযোজক তথা Youtuber হিসেবে কি বলবেন?
দেখুন, সস্তায় হয়ত নাম আর অর্থ দুটোই উপার্জন করা যায়। কিন্তু সম্মানটা উপার্জন করা যায় না।
মানুষকে ভালো কাজ উপহার দেওয়া আমার চেষ্টা ছিল আর সেটাই থাকবে।
ভালো কাজের বদলে মানুষ যে সম্মান ও ভালোবাসা আমাদের দিয়েছেন তার কাছে অন্য কিছুই তুচ্ছ।
‘মহুয়া’ নামে আমাদের একটি গীতিনাট্য মুক্তি পায়।
বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ আমাকে সেটি দেখে অনুরোধ করেছেন এই রকম আরও কাজ করার জন্য।
এটাই তো জীবনের অনেক বড় পাওয়া।
এটাই কাজ করার সার্থ্যকতা।
Subhasish Sur – Srinivas Music | Sunday Exclusive | Satkahon
প্রথম থেকেই শ্রীনিবাস মিউজিক নতুন, অনামী শিল্পীদের সুযোগ দিয়ে এসেছে…
হ্যাঁ।
শ্রীনিবাস প্রথম থেকেই নবীন শিল্পীদের পাশে আছে। আমি নতুনদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি।
যেমন অন্বেষা চক্রবর্তী বলে একটি মেয়ের সাথে এর মধ্যে আমরা কাজ করেছি। অন্বেষার গান আমার খুবই ভালো লেগেছে। আগামী দিনে ওর সাথে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে।
যারা ভালো গান গাইছে তাঁরা নিশ্চয়ই সুযোগ পাবে।
নতুনদের পাশাপাশি আমরা বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষের সাথেও নিয়ত কাজ করছি।
যেমন, শম্পা বিশ্বাস, শমীক পাল, মহুয়া ব্যানার্জী, প্রমিতা মল্লিক,বিশ্বরূপ গোস্বামী,
সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, প্রদীপ দত্ত, শ্রাবণী সেন, স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত, দেবাদৃত চট্টোপাধ্যায় আরও অনেকে।
শ্রীনিবাস এর ঝুলিতে তো এর মধ্যেই দুটি মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড?
হ্যাঁ।
দেবাদৃত চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে মুক্তি পায় বাংলা আধুনিক গান ‘ভোলোনি আমায়’।
গানটি মিরচির পক্ষ থেকে ‘বছরের সেরা গান’ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পায়।
এবং সেই বছরই রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অদিতি গুপ্তের কণ্ঠে গীত রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ‘ভালোবাসি’ বছরের সেরা অ্যালবাম অ্যাওয়ার্ড পায়।
আগামী দিনে কি কি কাজ আসছে?
আসছে শ্রুতি নাটক Oedipus.
শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন মীর, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, অপরাজিতা আঢ্য,অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী, ক্রীড়া সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য, ইন্দ্রানী চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ,ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসু, সৌরভ গাঙ্গুলী ও আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষ।
গ্রীক পুরান কথা Oedipus. বাংলা মানুষের কাছে এটি প্রথম উপস্থাপনা করেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র। পরের দিকে দেবশঙ্কর হালদার মহাশয়ও এটি উপস্থাপনা করেন।
শ্রীনিবাস মিউজিক এটিকে নতুন ভাবে নিয়ে আসছে।
রানীর ভূমিকায় রয়েছেন – শ্রী।
Oedipus এর ভূমিকায় আছেন – অনির্বান ঘোষ।
Oedipus এর প্রেক্ষাপটে পুরো চিন্তা ভাবনায় আছে শ্রী।
এটি রেকর্ড হয়েছে ধ্বনি স্টুডিওতে।
আগামী দিনে মুক্তি পেতে চলেছে শমীক পালের কণ্ঠে মিউজিক ভিডিও ‘জীবনে কি পাবো না’।
আসছে ‘অয়ি গিরি নন্দিনী’, গানটিতে নৃত্য পরিচালনা করেছেন ফিরদৌসি বসু।
ভালো কাজ করতে চাওয়ার লড়াই তো অনেকটা? কি বলবেন?
লড়াই এর তো কোন শেষ নেই। ভালোর লড়াই আরও ভালোর সাথে আর খারাপের লড়াই আরও খারাপের সাথে।
তবে বিখ্যাত হবার ইঁদুর দৌড়ে না গিয়ে যদি নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে ধীরে সুস্থে এগিয়ে যাওয়া যায় তবে সাফল্য দেরীতে হলেও আসবেই।
জীবনে যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য তাঁরা হলেন শ্রী অরিজিৎ মিত্র মহাশয়। শ্রীনিবাস মিউজিকের শুরুতে তিনি যথেষ্ট পাশে ছিলেন।
আমার স্ত্রী অনন্যা সুর, ও না থাকলে তো কাজ করতেই পারতাম না।
আর ধন্যবাদ জানাব শিল্পী বন্ধু মহুয়া ব্যানার্জীকে, যে সবসময় ভালো-মন্দ সময়ে এখনও আমাদের পরামর্শ দিয়ে চলেছে, পাশে আছে।
মহুয়া ছাড়াও শুরু থেকেই শ্রীনিবাস মিউজিকের পাশে আছেন শমীক পাল। দাদার সেই ভালবাসার কাছেও আমি চির কৃতজ্ঞ।
এই মানুষ গুলো না থাকলে লড়াইটা হয়ত আরও কঠিন হয়ে যেতো।
আর সর্বোপরি আপামর মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য শ্রীনিবাস মিউজিকের এই লড়াইটা…… আনন্দের।