Soumya Kanti Roy | Friday Fantastic | Satkahon

Soumya Kanti Roy

Soumya Kanti Roy | Friday Fantastic | Satkahon

লাল মাটির দেশ।

সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, শিল্প সবেতেই নজির গড়েছে শ্রীশ্রী মা সারদা দেবীর পূণ্য জন্মভূমি বাঁকুড়া।

একদিকে বিখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ, যামিনী রায়, শ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথির রচয়িতা অক্ষয় কুমার সেন, সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর মতো মানুষরা এই লাল মাটিতেই জন্ম নিয়েই ধন্য করেছেন গোটা দেশকে।

পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও এই জেলার অবদান ভোলার নয়।

কিছুদিন আগেই আমাদের ছেড়ে পরলোকে যাত্রা করেছেন বাঁকুড়ার গর্ব সুভাষ চক্রবর্তী মহাশয়।

তাঁর কথায় বলতেই হয় “বাঁকুড়ার মাটিকে পেনাম করি দিনে দুপুরে…”

এমনতর বাঁকুড়া জেলার মানুষ সৌম্য কান্তি রায়।

একাধারে তিনি পদার্থবিদ্যার শিক্ষক,অন্যধারে চিত্রশিল্পী, আবার একদিকে হাওয়াইয়ান গিটার বাদক।

সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে জানব তাঁর জীবন গল্প…

Soumya Kanti Roy
The colours used in this painting is similar to the colours that were used in Ajanta- Elora Cave and extracted from natural resources.

বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে জন্ম সৌম্যকান্তির।

ঠাকুরদা ছিলেন ক্যালকাটা বিদ্যাভবনের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান পণ্ডিত। 

বাবা বিকাশ রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক।

তিনি যেমন একদিকে কাঠের ও পাথরের মূর্তিও তৈরি করেন নিপুণ দক্ষতায়, অন্যদিকে প্রথিতযশা হাওয়াইয়ান গিটার বাদক।

প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ছাত্র ছাত্রীদের হাওয়াইয়ান গিটার শিখিয়ে চলেছেন তিনি।

পাঁচ বছরের জন্মদিন থেকেই বাবার কাছে হাওয়াইয়ান গিটার শেখার শুরু সৌম্যর।

হাওয়াইয়ান গিটারের পাশাপাশি তাই বাবার থেকেই ছবি আঁকা ও মুর্তি তৈরি শিখেছেন তিনি।

Soumya Kanti Roy
Oil on canvas

বললেন,

“ ছোট বেলা থেকেই দেখছি বাড়িতে বাবার কাছে বহু ছাত্র ছাত্রী শিখতে আসছে।

সেই থেকেই আমার আগ্রহ জন্মায়। পাঁচ বছর বয়সে আমার বাবার কাছেই যন্ত্রসঙ্গীতে হাতেখড়ি।

তবে বাবা বলতেন শুনে শুনেও অনেক কিছু শেখা যায়। তাই অনেক সময় গান শুনে নিজেই গান তোলার চেষ্টা করতাম।

আজ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আমি হাওয়াইন গিটার বাজাচ্ছি।“

বাবার কাছে গিটার শেখার পাশাপাশি শিখেছিলেন মুর্তি গড়া।

এছাড়াও আর্ট কলেজের শিক্ষক শ্রী প্রদীপ বিশ্বাস এর কাছেও তাঁর ছবি আঁকা শেখা।

 চাকরি সুত্রে তিনি আসেন সোনামুখী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে।

Soumya Kanti Roy

সৌম্য জানান,

“ উনি সেভাবে কাউকে শেখাতেন না।

কিন্তু জানিনা কেন আমাকে ওনার খুব পছন্দ হয়ে যায়। বাবাকে বলেন, ছেলেটাকে আমাকে দাও আমি ওকে তৈরি করবো।

বাবার সঙ্গে ওনার খুব বন্ধুত্ব ছিল। বাবা বলেছিলেন, এই দেশের এমনই দুর্গতি এখানে শিল্পীরা খেতে পায় না।

তাই উপার্জনের একটা আলাদা মাধ্যম চাই, শুধু শিল্প কর্ম করে ভাত জুটবে না।“

ফলত, পড়াশুনার পাশপাশি সমান তালেই চলছিল গানবাজনা ও আঁকা শেখা।

মাননীয় প্রদীপ বিশ্বাসের কাছেই তাঁর Western Art শেখা।

পরবর্তীকালে শ্রী তুলসী দের কাছে শিখেছেন Indian Art.

এমনকি ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তাঁর মায়ের অবদানও কম নয়। কারণ ছোটবেলায় অনেক ধৈর্য ধরে মা রঙ করা শেখাতেন।

পুরুলিয়া নাড়াগড়িয়া দুর্গাদাসী উচ্চতর বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌম্যকান্তি।

Soumya Kanti Roy
Soft pastel on paper

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকার শিক্ষক তিনি।

বললেন,

“ আমার স্কুলের দেওয়ালগুলি আমি চিত্রকলায় ভরিয়ে তুলেছি।

কিছুদিন আগেই ৫’’৩ নেতাজীর চিত্র এঁকেছি।

পুরুলিয়া গ্রাম্য অঞ্চল, এখানে অর্থের বিনিময়ে কিছু শেখার মত ক্ষমতা বা আগ্রহ অনেকেরই নেই।

শিক্ষক সংখ্যা কম হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই স্কুলের ওয়ার্ক এডুকেশনের ক্লাসে আমি আঁকা শেখাই।“

তিনি তাঁর স্কুলে, বিশ্বভারতীতে, এছাড়াও কিছুদিন আগেই জয়চন্ডী পর্যটন মেলায় অনুষ্ঠান করে বিপুল মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছেন সৌম্য।

এছাড়াও কামারপুকুর কলেজে পড়াশুনা করেছেন তাই সেখানেও বহু অনুষ্ঠান করেছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ যুব উৎসবে তিনবার জেলা থেকে প্রথম হয়েছেন ও একবার রাজ্যে প্রথম হয়েছেন গিটার বাদন ও আঁকা দুই ক্ষেত্রেই।

বিষ্ণুপুর- বাঁকুড়ার একাধিক প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছেন এবং প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

সোনামুখী বিদ্যালয়ের শতবর্ষে সেখানকার প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে ছবির প্রদর্শনী করেন সৌম্য।

সম্প্রতি নজরুল মঞ্চেও তাঁর একটি চিত্র প্রদর্শনী প্রদর্শিত হয়েছে।

পুরুলিয়া, বিশ্বভারতীর কলাভবনেও চিত্র প্রদর্শনী করেছেন সৌম্য।

পড়াশুনার সাথে ছবি আঁকা বা গিটার বাদন কিভাবে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে তা নানাভাবে প্রমান করেছেন সৌম্য।

বললেন,

“পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সংস্কৃতি চর্চা করলে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বাড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের।“

সরকারী বিভিন্ন স্তরের চিত্র প্রতিযোগিতায় আমাদের স্কুল রাজ্যস্তরে প্রথম হয়।“

পুরুলিয়া থেকে কলকাতায় আসা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তাই ডিজিটাল মাধ্যমে অধিকাংশ অনুষ্ঠান করে থাকেন সৌম্য।

তাঁর স্ত্রী পাপিয়া ও পুত্র দিব্যকান্তিও হস্তশিল্পে পারদর্শী।

এমনকি তাঁরা গিটার, মাউথ অর্গান বাজানোও শিখেছেন সৌম্য ও তাঁর বাবার থেকেই।

সব শেষে সৌম্য বললেন,

“কোন শিক্ষাকেই ছোট করা উচিত নয়। পড়াশুনা করছি বলে গান বাজনা থেকে বিরত থাকতে হবে এমন নয়।

গানবাজনা বা ছবি আঁকার সাথে পড়াশুনার নানা বিষয়ের ওতপ্রোত যোগাযোগ আছে।

সংস্কৃতি চর্চা মানুষকে মনের খোরাক জোগানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবেও সাবলম্বী করে তোলে।

অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে বিষয়টা এখনও ঠিকভাবে না পৌঁছয়নি কিন্তু শহরে এর কদর আছে।

তবুও আমি চেষ্টা করে চলেছি নানাভাবে ছবি আঁকা বা গান বাজনাকে সকলের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার, আগামী দিনেও সেই চেষ্টাই থাকবে।“

লড়াই, লড়াই।

লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার অপর নাম।

আর মানুষ যতদিন বাঁচতে চাইবে শিল্পী হয়ে ততদিন তাঁর জীবনে এই লড়াইটা হয়ে উঠবে নেশার মত, এ যেন হেরে গিয়েও জিতে যাওয়ার নেশা।

দুঃখ পেতে পেতে যেমন দুঃখ পাওয়ার একটা নেশা হয়ে যায় তেমনই যারা লড়াই করে বাঁচে তাঁরা লড়াই ছাড়া আর বাঁচতে পারে না।

তাই বোধহয় শিল্পী কোনদিন নিজের কাজকে সেরা বলতে পারে না। একটু দুঃখ সে নিজের জন্য রেখেই দেয়।

তেরো বছরের শিক্ষক জীবনে এবং প্রায় ৩৫ বছরের শিল্পী জীবনে সৌম্য কান্তি রায় যন্ত্র সংগীত ও চিত্রশিল্প চর্চা করছেন নিজের মনের আনন্দে।

আর ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে  ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর অগাধ জ্ঞানভাণ্ডার।

কোন কিছু পাওয়ার আশা না করেও তিনি পেয়েছেন সম্মান।

এই পাওয়াই একজন শিল্পীর জীবনের সেরা পাওয়া।

এগিয়ে চলুন সৌম্য কান্তির মত মানুষ, সাতকাহনের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা।

COPYRIGHT © SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *