Singer Ananya Das | সঙ্গীতের যুদ্ধে আমিও এক সৈনিক | Satkahon
Singer Ananya Das
গানবাজনা নিয়ে প্রত্যেক মুহূর্তে একটা লড়াই চলছে। এই লড়াই একা সঙ্গীতশিল্পীর নয়, এই লড়াই তার পরিবারেরও।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে মা তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানের মধ্যে সঞ্চার করেন।
সঙ্গীত এমন এক বিষয় যা কেবলমাত্র যে সাধনা দ্বারা অর্জন করা সম্ভব তা নয়।
সঙ্গীত ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আজ তেমনই এক আশীর্বাদধন্যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎকার।
নবীন সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতী অনন্যা দাস।
মায়ের স্বপ্নকে আপন করে তাঁর সঙ্গীতের যাত্রা শুরু। সাধারণ জীবনের নানা সমস্যা সামলেও গান নিয়েই তার লড়াই, তাই নিজেকে সঙ্গীত যুদ্ধের সৈনিক মনে করেন তিনি….
আসুন যেনে নিই অনন্যার সঙ্গীত যাত্রার কাহিনী….
অনন্যা, প্রথমেই শুনব আপনার ছোটবেলার কথা। গানের সাথে সম্পর্ক হল কিভাবে?
মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আমার গান শেখা। আড়াই বছর বয়স থেকে আমি গান শিখছি।
সংসারের চাপে, চাকরি সামলে মা গানটা সেইভাবে চালিয়ে যেতে পারেননি। ওনার ভীষণ ইচ্ছে ইচ্ছে গান নিয়ে আমি কিছু করি।
মা ছাড়া প্রথাগত ভাবে সঙ্গীতগুরু হিসেবে কাকে কাকে জীবনে পেয়েছেন?
মায়ের কাছে বেশ কিছুদিন শেখার পর আমি কাটোয়াতেই শ্রী গৌতম কর্মকারের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও প্রাথমিক পর্যায়ের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে শুরু করি।
এরপর নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন আধুনিক, লোকগান ও হিন্দি গান শিখতে শুরু করি শ্রী গৌতম গুহর কাছে।
২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় সাগরিকা মিউজিক আকাদেমির পরীক্ষায় পাস করে সঙ্গীতের ওয়ার্কশপে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পাই আমি।
সেই সময় বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী জয়ন্ত সরকারের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে শুরু করি।
এছাড়াও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বেশ কিছুদিন রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালিম নিয়েই আমি।
এই মুহূর্তে আমি শ্রী সমুদ্র সৈকত বিশ্বাস ও গৌরব সরকারের কাছে সঙ্গীত শিক্ষারতা।
খুবই ছোট বয়স থেকে আপনি গান শিখছেন। শিক্ষাকালীন গুরুদের থেকে গ্রহণ করা সবথেকে মনে রাখার মত কোন কথা বা ঘটনা মনে পড়ে?
যতটুকু শিক্ষা আমি আমার গুরুজিদের থেকে নিতে পেরেছি সবটুকুই মনে রাখার মত। সবটাই আমার কাছে পরম পাওয়া।
যেমন গুরু জয়ন্ত সরকারের কাছে একদিন ঠিকঠাক গাইতে না পারায় গুরুজী আমাকে খুব বকলেন। আমি তো কেঁদেই ফেলেছিলাম।
আবার পরের দিন ওই গানটা ভালো করে গাইতে গুরুজী এত প্রশংসা করেছেন যে আনন্দের শেষ থাকেনি।
আমি মনে করি এভাবেই গুরু শিষ্যের সম্পর্ক মজবুত হয়।
গুরুজী না বকলে ওনার ভালোবাসার মর্মটা বুঝতাম না।
একাধিক মঞ্চ উপস্থাপনাও করেছেন আপনি। বর্তমান দিনে শ্রোতার থেকে শিল্পীর সংখ্যা বেশী। সঙ্গীত যেন মহাযুদ্ধ। কি বলবেন?
ছোটবেলায় বাবা মা চাকরি করতেন, আমাকে সময় দিয়েছে আমার সঙ্গীত। এখন বিবাহিত জীবনের সমস্ত দিক বজায় রেখে আমি এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীও এক্ষেত্রে আমাকে ভীষণই সমর্থন করেন।
হ্যাঁ, পারস্পরিক শিল্পের লড়াই তো অবশ্যই আছে।
আমি মনে করি সবাইকেই নিজের চরম দক্ষতাটুকু প্রকাশ করতে হয়, সেটা যদি লড়াই হয় তাহলে সে তো লড়তেই হবে।
আমার মনে হয় এই লড়াই করার শক্তি আমার আছে, আমি পারব।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধের একজন সৈনিক ভাবলে নিজেকে ভালোই লাগে। অনেকটা শক্তি পাওয়া যায়
এই লড়াইের এখনও পর্যন্ত স্মরণীয় কোন ঘটনা?
কাটোয়া থেকে কলকাতা আসার যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। রেললাইনে নানান সমস্যা হামেশাই লেগে থাকত।
কলকাতায় আমাদের কোন থাকার জায়গা ছিল না তাই আমাদের দিনের দিনই ফিরে আসতে হতো।
সেদিন মোহিত মৈত্র মঞ্চে আমার অনুষ্ঠান ছিল। বাবা আমার সাথে গেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর আমরা ৯.২৫ এর শেষ ট্রেন ধরতে পারি। লাইনের সমস্যার ফলে ট্রেন কাটোয়া গিয়ে পৌছয় রাত ২.৩০ এ।
রাস্তা জনশূন্য। একটা রিকশাও নেই। হেঁটে ষ্টেশন থেকে বাড়ি ফিরতে হয়। সেদিন বাবার চোখে একটা ভয় দেখেছিলাম।
আমার বাবা মা দুজনেই শিক্ষক শিক্ষিকা। কলকাতায় আসলে কাউকে না কাউকে ছুটি নিয়ে আমার সাথে আসতে হত।
তাই আমি মনে করি, এই লড়াই শুধু আমার নয়, এ আমার পরিবারেরও লড়াই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা আমি যেন ওনাদের এই ত্যাগের দাম দিতে পারি।
কিছুদিন আগেই মুক্তি পায় লোকগান ‘সখী আমায় বোলো না’। সম্ভবত আপনিই গানটি প্রথম সোশ্যাল মিডিয়াতে উপস্থাপন করেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
বাংলাদেশের সুফি মতাদর্শের মরমী সাধক কবি পাঞ্জু শাহ ( Panju Shah) রচিত গান “সখী আমায় বোলো না”। গানের সুর করেছেন দীনেন্দ্র চৌধুরী।
কবি পাঞ্জু শাহ এর লেখা অধিকাংশ গানই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক কষ্টে ওনার ১০৬ টি গান উদ্ধার করেছেন সুরকার দীনেন্দ্র চৌধুরী।
গানটি আমি গুরু সমুদ্র সৈকত বিশ্বাসের কাছ থেকে আমি শিখি।
লোকগান, মাটির গান এমনিতেই মানুষের মনের কাছের গান। তাছাড়া অল্প প্রচলিত হওয়ায় মানুষ গানটিকে খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করেছেন।
খুব সুন্দর ভাবে সঙ্গীতায়োজন করেছেন পার্থ চক্রবর্তী। চিত্রগ্রহন করেছে নীলার্ঘ্য ব্যানার্জী।
এখন প্রত্যেক শিল্পীই নিজস্ব বাংলা মৌলিক গান নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। কবে আপনার কণ্ঠে নতুন বাংলা গান শুনবে শ্রোতারা?
আমার নিজের গান হবে এমনটা কে না চায়? আশা করছি ২০২২ এর শুরুর দিকেই আমি সকলকে বাংলা মৌলিক গান শোনাতে পারব।
আগামী দিনে নিজে সুর করারও একটা ইচ্ছে রয়েছে।
আপনার শ্রোতাদের উদ্দ্যেশে আপনি কি বার্তা দেবেন?
সকলের উদ্যেশ্যে বলব, আমি খুব অল্পদিন হল সঙ্গীত জগতে এসেছি কাজ করছি।
এর মধ্যেই মানুষ আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছেন যে আমি সত্যিই ধন্য মনে করছি। আগামী দিনেও আপনারা এইভাবেই আমার পাশে থাকুন আমি এইটুকুই চাইব।
আমি আমার তরফ থেকে অনেক নতুন নতুন গান আপনাদের উপহার দিতে চলেছি, তাই আপনারা পাশে না থাকলে আমি লড়াই করার শক্তি পাবো না।