Shamik Guha Roy | Sunday Exclusive | Satkahon
Shamik Guha Roy | Sunday Exclusive | Satkahon
বাংলা ও বাঙালী দুইই গানবাজনা ছাড়া অচল।
তবে পেশাগতভাবে গানবাজনা করতে গেলে কতটা জেদ, পরিশ্রম থাকতে হয় তা বাঙালী জানে।
বর্তমান দিনে ওয়েস্টার্ন মিউজিকের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাতেও এমন অনেক কাজ হচ্ছে যা বাংলা গানকে আর শুধু মাত্র ভাষার গণ্ডীতে বেঁধে রাখতে পারেনি।
সঙ্গীত নির্দেশনা, পরিচালনা, সুর, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ সব মিলিয়ে বাংলা গানও এখন বিশ্বের গান।
আর এই ধরণের কাজ যেসব শিল্পীদের হাত ধরে বিশ্বের দরবার ছুঁয়ে চলেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শমীক গুহ রায় ওরফে পকাই।
একদিকে তিনি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, অন্যদিকে সুরকার, সঙ্গীত নির্দেশক।
পণ্ডিত বিক্রম ঘোষের ‘মায়া’ অ্যালবাম এর জন্য বেস্ট সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার,
‘দুর্গা সহায়’ সিনেমায় “আজ বাজে মন মাঝে” গানটির জন্য বেস্ট মিক্সিং মাস্টারিং,
সনু নিগম ও পণ্ডিত বিক্রম ঘোষের যৌথ অ্যালবাম ‘Music Room’ এর জন্য বেস্ট সাউন্ড রেকর্ডিস্ট হিসেবে তিন বার তিনি IRAA(Indian Recording Arts Academy) Award পেয়েছেন।
একের পর এক কাজ করছেন সঙ্গীত জগতের নামী শিল্পীদের সাথে।
বিখ্যাত হবার যুদ্ধে নামতে চাননা তিনি। তাই হয়ত খ্যাতি আপনা থেকেই ধরা দিয়েছে তাঁর কাছে।
সাতকাহনকে জানালেন তাঁর পথ চলার গল্প…
শুনব সঙ্গীতের সাথে প্রথম ভালোবাসা গড়ে ওঠার কাহিনী…
গানবাজনা করার ইচ্ছে হয় মা – কে দেখে। মা গান করতেন।
এছাড়া আমার দিদি ভরতনট্যম শিখত।
তাই বাড়ীতে একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল।
মা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতেন তখন আমিও পাশে বসতাম। মায়ের থেকেই আমার প্রথম সারেগামা গাইতে শেখা।
গান নিয়েই তাহলে প্রথম যাত্রা শুরু? শুনব সঙ্গীত গুরুদের কথা…
একদমই তাই। মা আমার প্রথম সঙ্গীত গুরু।
এরপর শ্রী অশোক সেন এঁর কাছে আমার রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখা শুরু হয়।তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছি।
আমাদের বিদ্যালয়ে একটি প্রতিযোগিতা হত। সেটি হল ‘শিক্ষা একটি উৎসব’।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোন না কোন বিষয়ে যোগদান করতেই হত, সেটা নাচ,গান,ঘর সাজানো যাই হোক না কেন।
তাই ছোট বেলা থেকেই আমার মঞ্চে গান গাইবার করার অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
৫ বছর রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার পর লোক সঙ্গীত নিয়ে বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ থেকে স্নাতকত্তর হই।
যার কাছে আমি লোক সঙ্গীত শিখেছি তিনি হলে শ্রী উত্তম চ্য়াটার্জী।
গান শেখার পাশাপাশি অপ্রচলিত দুস্প্রাপ্য লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করার নেশা আমার তাঁর থেকেই পাওয়া…
তাহলে ছোট বেলা থেকে কি একজন সংগীত শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল?
যখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি, তখন প্রথম বাংলা ব্যান্ড এর গান শুনি। তখন সেই গান শুনে মনে হয় আমাকেও এটাই হতে হবে।
বাংলা ব্যান্ড এর যে সামগ্রিক পরিবেশনা, উপস্থাপনা সেটা আমাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে সেই সময়।
হারমোনিয়াম আর তবলা চিনতাম, প্রথম দেখলাম বিদেশী বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান বাজনা হচ্ছে।
তখন আমারও মাথায় চুল টুল রেখে রকস্টার হবার ইচ্ছে হল।(হাসি)
এমনকি তখন থেকেই আমার গিটার শেখা শুরু এবং আমার নিজের ব্যান্ড-এর আত্মপ্রকাশ।
পেশাগত শিল্পী হয়ে ওঠার অন্তরালে কোন কাহিনী?
অ্যাকাডেমিক্যালী আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার।
ঘটনা হচ্ছে আমি তখন পুরোদমে আমার ব্যান্ড নিয়ে মঞ্চ অনুষ্ঠান করছি।
একটা তো চাপ থাকেই একটা নিশ্চিত অর্থ উপার্জনের।
কিন্তু গানবাজনাকে পেশা করে সেটা হওয়া সম্ভব নয়।
তবুও আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম যাই হয়ে যাক আমি গানকেই পেশা করব।
যদিও বাড়িতে সেটা বলা সহজ ছিল না।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্যাম্পাসিং এর জন্যে পরীক্ষা দিয়েও ইন্টার্ভিউ না দিয়ে আমি কলেজ থেকে পালিয়ে গেছিলাম।
ভয় হয়নি? একটা নিশ্চিত অর্থ উপার্জনের পথ হাতের কাছে পেয়েও
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে যেখানে পাশে থাকার কেউ নেই…
হ্যাঁ, ভয় হয়েছিল। জানতাম চাকরি না করাটাকে কেউই তখন মেনে নেবে না।
কিন্তু তবুও মনে এই জোরটুকু ছিল যেটুকুই উপার্জন করি না কেন গানবাজনা করেই করব।
তারপর গান জীবনের যাত্রা শুরু হল কিভাবে?
২০০৭-৮ এর সময় আমার অনুভব হল যে শুধু বাংলা ব্যান্ড এর ভোকালিস্ট হয়ে থাকলে হবে না।
সেই সময় আমার আলাপ হয় ঈশান বাংলা ব্যান্ড এর কীবোর্ড প্লেয়ার অভিষেক পাপান দত্ত দাদার সাথে।
পাপান দার কাছেই আমি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শিখলাম।
তখন পাপান দার কাছে কাজ করতে করতেই ইন্দ্রজিৎ দে মানে ইন্দ্রদার সুত্রে পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ এর সাথে পরিচয় এবং তাঁর স্টুডিওতে ২০১১ থেকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান।
সঙ্গীত নির্দেশক হয়ে ওঠা কিভাবে?
বিক্রমদার কাছে কাজ করতে করতেই শুরু করি।
প্রথম প্রথম নিজেই একটু আধটু সাউন্ড ডিসাইন করে দাদাকে শোনাতাম।
তারপর যখন দেখলাম দাদা আমাকে কাজটা করতে বলে, দায়িত্ব চলে যাচ্ছেন তখন বুঝলাম আমি কাজটা পারছি আর ওনার ভরসার জায়গাটা দখল করেছি।
তখন একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হল।
তারপর নিজেই বন্ধুবান্ধবদের সাথে কাজ করতে শুরু করলাম।
তারপর আসতে আসতে পেশাগত ভাবে এই কাজে যুক্ত হয়ে গেলাম।
আপনার নিজের স্টুডিও কবে তৈরি করলেন?
বিক্রম দার সাথে যখন কাজ করতে শুরু করলাম তখনই স্টুডিও মিউজিক হাউস (Muzik House Studio) তৈরি করি।
আপনি তো বহু গুনী মানুষের সাথে কাজ করেছেন… মনে রাখার মত কিছু ঘটনা?
অবশ্যই আছে।
বিক্রমদার সুত্রেই পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভাট- এঁর সাথে কাজ করেছি যা কোনদিন ভুলতে পারব না।
সনু নিগমজীর সাথে কাজ করেছি যা আমার জীবনে অন্যতম পাওয়া।
আজও উনি আমাকে মনে রেখে দেখা হলে নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করেন কেমন আছো শমীক?… এই পাওয়ার কোন তুলনা নেই।
সঙ্গীত জগতে টিকে থাকার লড়াই প্রসঙ্গে নবীন শিল্পীদের উদ্দ্যেশ্যে কি বলবেন?
একজন শিল্পীর জীবনে প্রত্যেকটা দিনই সঙ্গীত জগতে টিকে থাকার লড়াই।
তবে এই লড়াইটা অনেকের কাছে ‘নাম করার লড়াই’ হয়ে যায়। না, এই নাম করার পিছনে ছুটলে কিন্তু হবে না।
শুধু নিজের কাজটা যদি সৎ ভাবে করে যাওয়া যায় তাহলে জীবনে ওঠা নামা হয়ত আসবে কিন্তু কঠিন দিন আসবে না।
কাল কি হবে সেটা ভেবে সময় নষ্ট না করে কাজটা আগে শিখে নিতে হবে।
শিক্ষা যদি সঠিক হয় তাহলে আত্মবিশ্বাস কোনদিন হাত ছেড়ে যাবে না।
আর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকলে আর যাই হোক কেউ কোনদিন হেরে যায় না।