Sayar Banerjee | Friday Fantastic | Satkahon
Sayar Banerjee | Friday Fantastic | Satkahon
কাঁধে ঝোলা শান্তিনিকেতনী ব্যাগ আর হাতে বই।
পকেটের এক কোনায় উঁকি দেয় ফাউন্টেন পেন। এই নাহলে, কবি-সাহিত্যিক কি করে হল?
তবে এখন কিন্তু যুগ বদলেছে। এখন নবীন কবি-সাহিত্যিকরা এভাবে আত্মপ্রকাশ করেন না।
কথায় আছে মাথার চুল সাদা না হলে অভিজ্ঞতা বাড়ে না।
কিন্তু এখনকার সমাজে দাঁড়িয়ে একথা বলা ভুল হবে।
সাহিত্য আমাদের যতই সংস্কৃতিময় করে তুলুক আর্থিক ভিত্তিকে কিন্তু মজবুত করতে পারেনি।
সাহিত্য হয়ে উঠেছে এক প্রতিবাদের ভাষা।
সেই প্রতিবাদে কলম পকেট থেকে এসে উঠেছে মোবাইলের কী-প্যাডে।
খাতা হয়ে গেছে নোট প্যাড।
কিন্তু লেখা থেমে নেই। লেখা আজও গর্জে উঠছে ছোট থেকে বড় সকলের মধ্যে দিয়ে।
আজকের কুঁড়ি কালকের ফুল হয়ে বিকশিত হবে এই আশা নিয়েই তো বাঁচা।
তাই সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে রইল আজকের আধুনিক যুগের এক নবীন লেখকের কাহিনী।
হালিশহরের ছেলে সায়র ব্যানার্জী। সেখানেই পড়াশুনা আর বড় হয়ে ওঠা।
ছোটবেলা থেকেই নানা ধরণের লেখার প্রতি আগ্রহ তাঁর।
লেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হল কি করে জানতে চাওয়ায় তিনি জানালেন,
“আমাদের জীবন থেকে প্রায় হারিয়েই গেছে Greetings cards.
নতুন বছরের শুরুতেই বন্ধুদের মধ্যে এই Greetings cards দেওয়ার চল ছিল।
সেই কার্ডে লেখা থাকতো ছোট ছোট quotation.
ছোট ছোট সেই quote গুলো পড়তে ভালো লাগত আমার।
ডায়রির পাতায় লিখে রাখতাম সেই টুকরো কথাগুলো।“
সাথে সাথে নিজেও লেখার চেষ্টা করতেন অল্প সল্প ছড়া।
কবিতা বা ছন্দের সাথে সেই থেকেই সায়রের বন্ধুত্ব।
আসতে আসতে Greetings Card এর সাথেই হারিয়ে গিয়েছিল সায়রের কবিতা।
মোড় ঘুরলো কলেজ জীবনে।
বন্ধুর ল্যাপটপে সিনেমা দেখতে গিয়ে নোটপ্যাড খুলে ফেলেন সায়র।
খুলে গেলো সাদা পাতা আর অদ্ভুত এক টানে সায়র সেই নোটপ্যাডে লিখে ফেলেন একটি গল্প।
গল্পের নাম দিয়েছিলেন ‘আমার জানলা’।
বন্ধুরা ও বাড়ির সবাইকে শোনালে ভীষণ প্রশংসা করেন তাঁরা।
কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর হাতে আসে জয় গোস্বামীর ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’ বইটি।
সেই কবিতার বই পড়ে নিজের মধ্যে এক অদ্ভুত কাব্য প্রতিভা আর উদ্যম খুঁজে পেলেন সায়র।
আর আবারও লিখতে শুরু করলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা ফন্ট এ লিখতে গিয়ে প্রথম প্রথম খুব সমস্যায় পড়েন সায়র।
বললেন,
“ বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনা করলেও অভ্র কীবোর্ডে কিভাবে লিখতে হয় ঠিক ভাবে জানতাম না।
রোমান হরফে বাংলা কবিতা লিখছি, মানুষ সেটা অপছন্দ করছেন। তাই সাহায্য নিলাম পার্থসারথি একলব্য দার।
কবিতা লিখে আগে আমি পার্থদাকে পাঠাতাম, পার্থদা বানান গুলো ঠিক করে দিতেন।
পার্থদা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে সব সময় ঠিক বানান লিখতে সাহায্য করেছেন এখন ভাবলে মনে শ্রদ্ধা জাগে “
গল্প উপন্যাস ছেড়ে কেন কবিতা লেখা?
জানতে চাইলে সায়র বললেন,
“আমার শুধুই ভালো লাগে বলে কবিতা লিখি, তা না।
আমি তাগিদ থেকে কবিতা লিখি। কবিতা আমাকে পায়।
ভালোবাসার মত কবিতাও নিজে থেকেই আসে। কবিতা যখন ইচ্ছা লেখা যায় না।”
হালিশহরে বন্ধুদের দল ছিল ‘ঘাটের আড্ডা’।
দলে কেউ গান গাইতেন, কেউ ফটোগ্রাফি করতেন, কেউ গিটার বাজাতেন। ওদের সবারই ফার্স্ট প্রায়োরিটি ছিল ‘প্যাশন’।
পড়াশুনা ভুলে সায়রের মন তখন পুরোপুরি কবিতায়।
এবার হাতে পেলেন ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতার বই।
বললেন,
“ভাস্কর চক্রবর্তীর লেখা আমার কাছে একটা অসুখের মত। সব সময় যেন আমাকে পেয়ে বসে আছে।“
সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হতে থাকে সায়রের কবিতা।
বললেন,
“যেকোনো লেখার সাথে যদি পাঠকের মনস্তাত্বিক সম্পর্ক গড়ে না ওঠে,
পাঠক যদি লেখাটার সাথে আত্মিক যোগাযোগ না করতে পারেন, তাহলে কবিতাটা বড়জোর ‘ভালো কবিতা’ হয়।
‘সার্থক কবিতা’ হয়ে ওঠে না।
তাই আমি ভীষণ সরল ভাবে লেখার চেষ্টা করি।“
এর পর তাঁর আলাপ হয় পরিচালক পৃথা চক্রবর্তীর সাথে।
সায়রের লেখা পড়ে তিনি তাকে জী বাংলা ডান্স বাংলা ডান্স এর একটি প্রোমো লেখার কথা বলেন।
সায়রের কথায়,
“পৃথাদির মত কিছু মানুষ আমার লেখায় বিশ্বাস রেখেছিল বলে আজ আমি পেশাগত লেখক হিসেবে এতদূর আসতে পেরেছি।”
শুরু হয় উপার্জন এবং পরিচয় হয় পেশাগত লেখক হিসেবে।
সেই সময় থেকেই শুরু হল বিভিন্ন অ্যাড, জিঙ্গল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের লেখার কাজ।
সায়র ইতিমধ্যেই Big baazar, The times of india, Shoppers stop এবং আরো কিছু ব্রান্ডের বিভিন্ন Campaign এ রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন।
সায়রের লেখা গানে কন্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী অনুপম রায়।
‘ঘাটের আড্ডা’ দলের সঙ্গীতশিল্পী বন্ধু ইন্দ্রের মারফত আলাপ হয় পরিচালক অরিজিৎ সরকারের সাথে।
একদিন স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটি ছবি নিয়ে আলোচনা বসে তাঁরই ফ্ল্যাটে।
হঠাৎই সায়রের মাথায় আসে একটি ভুতুড়ে প্রেমের গল্পের কন্সেপ্ট। যে গল্পে আছে ভয়ের সাথে মজাও।
জন্ম নেয় RIP- রেস্ট ইন প্রেম।
অরিজিৎ সরকার এবং সায়রের মিলিত চিত্রনাট্যে মুক্তি পায় এই সিরিজটি, যে সিরিজ ইউটিউবে বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয়তা পায়।
আরব দে-র কথায় ও অভিষেক সাহার সুরে বাচ্চা থেকে বুড়ো মানুষ মেতে ওঠেন রেস্ট ইন প্রেম সিরিজের অন্তর্গত ‘টুম্পা’ গানে।
এমনকি সিরিজের জনপ্রিয়তার তাগিদেই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে রেস্ট ইন প্রেম২ – RIP2.
সিরিজে সায়রের লেখা সংলাপ ইতিমধ্যেই ফেসবুকে জনপ্রিয় এবং ভাইরাল হয়েছে।
এখন পুরো দমে সিরিজের চিত্রনাট্য ও অন্যান্য লেখালেখির কাজ করছেন সায়র।
মন দিয়েছেন গান লেখাতেও।
বললেন,
“অনেকে আমার নামের আগে ‘কবি’ কথাটা যুক্ত করে। কিন্তু আমি মনে করি কবি হওয়া এত সহজ নয়।
এর জন্যে অনেক মনন প্রয়োজন, অনেক কাব্যচর্চা প্রয়োজন। আমি সত্যি বলতে তা করি না। আমি কাব্য বিশেষজ্ঞ নই।
আমি একজন সামান্য লেখক। যে আজও কবিতা লেখার চেষ্টা করে।
শুধু কবিতা নয়, এখনো অনেক কিছু লেখা বাকী আছে, লিখতে হবে।
অনেক কাজ করতে হবে“।
আগামী দিনে চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে বেশ কিছু সিরিজে, সিনেমায় তাঁর কাজ আমরা দেখতে পাবো।
দিন বদলাচ্ছে, সময়ের কাঁটা এগিয়ে চলেছে প্রতি মুহূর্তে। সময়ের সাথে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের ধর্ম।
কাগজ, কলম হারিয়ে যেতে বসলেও সায়রের মত কিছু নবীন লেখক লেখিকারা এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন আমাদের বাংলার সাহিত্য রচনাকে।
বাঙালীর ছেলে কবি- সাহিত্যিক হবে এ সকলেরই জানা।তা দিয়ে আবার পয়সা আসে নাকি?
এই বিদ্রূপ বাক্য শুনতে হয়নি এমন কবি-সাহিত্যিক বোধহয় বাংলায় নেই।
কিন্তু সে কথাকে সমস্বরে ভুল প্রমাণিত করে, সায়রের মত কিছু নবীন লেখকেরা তাঁদের লেখনি ক্ষমতার উপর ভর করেই উপার্জন করছেন।
এটাই এই যুগের সব থেকে বড় আনন্দের বিষয়, ও কৃতিত্ব।
আগামী পথ মসৃণ হোক, সায়রের জন্য সাতকাহনের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা।
এমন প্রতিভা আরও দরকার