Sayan Ari – Photographer | Fantastic Friday | Satkahon Interview
Sayan Ari – Photographer | Fantastic Friday
ছবি তুলতে আমরা কে না ভালোবাসি? তবে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে পারি বলেই আমরা কিন্তু ছবিওয়ালা নই।
Spiderman কিংবা Superman নিয়ে আমরা যতই উল্লাস করি না কেন, আমাদের সুপার হিরো বানিয়ে তোলেন কিন্তু একজন Photographer. অনেকেই যাঁদের বলেন “Camera Man”
Camera Man আর Photographer এর পার্থক্য কিন্তু এখনও অনেকে করে উঠতে পারেননি।
ছোটবেলার কথা বলছি, তখনকার দিনে ছবি বলতে ছিল স্টুডিওর ক্লিক ক্লিক শব্দ আর বিয়েবাড়িতে হাতে একটা Videocam নিয়ে ঘোরা কাকু।
কিন্তু এখন বিষয়টা অন্য। Photography কিন্তু এখন একটা Subject. যা নিয়ে পড়াশুনা করতে পারেন আপনিও।
নবীন প্রজন্মের কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এটি। আনন্দের পেশা।
ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করছে।
তেমনই একজন ছবিওয়ালা হলেন বুনিয়াদপুর দক্ষিন দিনাজপুরের ছেলে সায়ন অরি।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে বললেন Photographer হবেন বলে রীতিমত বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার গল্প।….
সায়ন এখন তো Camera মানেই Photo-Video দুটোর কথাই আমরা বুঝি। আপনি কি দুই ক্ষেত্রেই পারদর্শী?
আমি শুধুই একজন Photographer. জানিনা কেন Videography তে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আগ্রহী নই।
এই ছবি তোলার শখ কি ছোট বেলা থেকেই?
ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল বাবার মত ইঞ্জিনিয়ার হবো। বড় হয়ে BCA পড়লাম। কিন্তু চাকরি করা হল না। কারণ স্বপ্নটা তখন বদলে গেছে।
এই স্বপ্ন বদলের গল্পটা শুনব…
আমি ছোট থেকে আঁকা শিখেছি। পঞ্চম শ্রেনীতে যখন পড়ি তখন মোবাইল এ ছবি তুলে সেটা হাতে আঁকতাম।
তারপর যখন অষ্টম শ্রেণী অনেক বায়নার পর মা একটা ক্যামেরা কিনে দিলো।
তখনও ছবি তুলে এনে সেটা দেখে হাতে আঁকতাম।
কখনো কখনো বন্ধুদের আবদারে ছবি তুলে দিতাম। এইভাবেই আসতে আসতে ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ জন্মাল।
পেশাগত ভাবে Photographe হওয়ার ইচ্ছেটা কবে হল?
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক দাদা আমাদের এখানকারই ছেলে। ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছি বলা যায়।
দাদা মুম্বাই থেকে ফিরলে আমি ছবি তুলে দিতাম। তাই উনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন।
যখন পড়াশুনা করতে কলকাতা এলাম তখন হাতখরচার টাকায় একটু টান পড়তে লাগল। দাদাকে বললাম দাদা কি করব?
তারপর দাদার অনুমতি নিয়ে দাদার লাইভ অনুষ্ঠান গুলোতে ছবি তুলতে শুরু করলাম।
পেশাগত ভাবে তখনও কাজ শুরু করিনি। কিন্তু হাতখরচা নিয়ে আর ভাবতে হয়নি। নিজের ভাইয়ের মত দাদা আমার খেয়াল রেখেছে। এইভাবেই চলতে চলতে ঘটল একটা ঘটনা।
কি ঘটনা?
হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে ফোন এলো তোর আর পড়াশুনা হবে না তুই বাড়ি চলে আয় এসে ব্যবসা কর।
আমাদের কলেজের অধ্যাপক আসলে বাবার বন্ধু ছিলেন।
তাঁর সুত্রেই বাবা খবর পেয়েছিলেন যে অনেক সময় আমি কলেজ না গিয়ে ছবি তুলতে যাই।
যাইহোক আমি কলকাতা ছেড়ে উত্তরবঙ্গ ফিরে গেলাম।
বাড়িতে ৬ মাস ছিলাম। এমন সময় খবর পেলাম নিগ্ধজিৎ দার স্ত্রী অদিতিদির মা মারা যান।
আমি সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ যাই। সেখানে দাদার সাথে দেখা হয় কথা হয়।
পরের দিন বাড়ি ফিরে আমি ভোরবেলা জামা কাপড় গুছিয়ে চুপি চুপি সোজা মুর্শিদাবাদ চলে এলাম।
কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে এসেছি কারণ সেই সময় Photography বিষয়টা কে কেউ সমর্থন করত না।
বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এলেন Photogpher হবেন বলে? তারপর কি হল?
বাড়ি থেকে ফোন আসছে ক্রমাগত। কাউকে না বলে চলে এসেছি জেনে যদিও অদিতি দি আমাকে একটু বকাবকি করলেন।
তারপর আমি বাবাকে বললাম যে আমি কলকাতা চলে এসেছি আমি আর বাড়ি ফিরব না। আমি ব্যবসা করব না।
কলকাতা আসার পরের যাত্রা কিরকম ছিল?
স্নিগ্ধজিৎ দা আমার God Father. দাদার পরিচিত মহলে দাদা নিজেই আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
ধীরে ধীরে আমি অনেকের সাথে কাজ করতে শুরু করি।
এরপর অন্বেষা দত্ত, ঋক বসু, ওঁদের সাথে কাজ করলাম।
ঋক দা ভীষণ ভাবেই পাশে থেকেছে।
এইভাবেই ধীরে ধীরে পেশাগত জীবনে ঢুকে পড়ি। গত তিন বছরে মোটামুটি কলকাতার সব শিল্পীর সাথেই আমি কাজ করেছি।
এমনকি মুম্বাই এর শিল্পী দের সাথেও কাজ করেছি। যেমন সুখবিন্দর সিং, নেহা কক্কর, সুনিধি চৌহান, বাদশা আর অনেকের সাথেই কাজ করেছি।
পেশাগত ভাবে Photography আপনাকে কতটা আর্থিক সচ্ছলতা দিচ্ছে?
যথেষ্ট সচ্ছলতা দিয়েছে। আমি বলব এটা হয়ত আমি চাকরি করলে পেতাম না।
শুধু তাই নয় আমার একটা স্বাধীনতা রয়েছে। যেটা চাকরি করলে থাকত না।
এখন সব ক্ষেত্রেই ওঠাপড়া রয়েছে। যেমন করোনার সময় কোন লাইভ অনুষ্ঠান ছিল না। সেই সময় বিভিন্ন ডিজিটাল শো হ্যান্ডেল করেছি।
আমি মনে করি এখনও পর্যন্ত আমি যা করেছি আনন্দ করেই করেছি।
ভালো সময়টা যেমন দেখেছি খারাপ সময়টাও দেখতে হবে এতে কষ্টের কিছু নেই।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আমার ইচ্ছে আছে নিজের একটা অফিস করা যেখানে একজন শিল্পীকে ONE-STOP-SOLUTION দেওয়া হবে।
Promotion থেকে শুরু করে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধে তিনি পাবেন।
সমাজের উদ্যেশে পরিবারের উদ্যেশে আপনার কোন বার্তা…
বাবা মা সকলেই এখন যথেষ্ট সমর্থন করেন।
আসলে আমার যেটা ভালো লেগেছে আমি করেছি। এটুকু নিজের উপর বিশ্বাস আছে খারাপ কিছু করিনি।
আর নিজের মনের কথা শুনে বর্তমান সময়টাকে উপভোগ করতে বাঁচলে, সেই ভবিষ্যতের পথ বলে দেবে।
লড়াই করার ক্ষমতা রাখতে হবে আর আনন্দ করে বাঁচতে হবে। এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য।