Satkahon – Tapan saha | সাক্ষাৎকারে চিত্রশিল্পী,কোলাজ-সম্রাট তপন সাহা
Satkahon – Tapan saha
রঙ ছাড়া ছবি যার আঙ্গুলের খেলায় রঙিন, টেরাকোটা শিল্প যার নিপুন দক্ষতায় নব-জন্ম লাভ করেছে, তিনি আর কেউ নন,সমগ্র ভারতবর্ষ তাঁকে “কোলাজ-সম্রাট তপন সাহা” নামে চেনে।
ছেলে-বেলা
পড়াশুনা কে ভয় পেতেন না তবে ‘মাস্টারমশাই মারবেন’ বলে ভয় পেতেন এতটাই যে স্কুল-এর বাইরে মা কে বসে থাকতে হত। একদিন মা উঠে গেছেন দেখে তিনি শিক্ষা-কক্ষ থেকে বেরিয়ে দিলেন ছুট, মাস্টারমশাই শুধু ধরেই ফেললেন না, বরং তাঁর পিঠে পড়ল রদ্দা। স্কুল ছুটির পর বাড়ি এলেন তিনি। বিকেল বেলা মাস্টার এলেন তাঁর সাথে দেখা করতে।তাঁকে আসতে দেখে খালি তেলের ড্রাম এর মধ্যে লুকিয়ে বসে রইলেন তিনি। এর ওর মুখে খবর পেয়ে সেই মাস্টারমশাই এসে বের করলেন তাঁকে সেই ড্রাম থেকে। তারপর আদর করে ভালবেসে আঁকতে দিলেন একটি কাপ-প্লেট। শেখালেন ELLIPSE DRAWING. সেই থেকে দুর হল তাঁর স্কুল-ভীতি, সেই হাতে খড়ি হল আঁকার।
একটু বড় বয়সে বেশ কিছু পোস্ট কার্ড সংগ্রহ করে, সেগুলি কেটে কেটে জুড়ে একটু অন্যরকম রুপ দেওয়ার চেষ্টা করতেন, বিভিন্ন ছবি থেকে তৈরি হত একটি ছবি। নিছকই শখে নয়, তখন বন্ধুদের মধ্যেই সেই ছবি বিক্রি করে হাতখরচা তুলে ফেলতেন তিনি।
পরিবারের কেউ যুক্ত না থাকলেও চিত্রশিল্প তাঁর হাত ধরেই এক অন্য পরিচিতি পাবে, এই ছিল ভবিতব্য।
পথে এবার নামো সাথী
পরিবারের চাপেই ব্যাবসায় যোগদান করতে যেতে হয় তাঁকে। তবে বেশিদিন তা করতে পারেননি। ফিরে আসার পর দাদা বললেন, আঁকার সামগ্রী সব পুড়িয়ে দেবেন।এক বুক অভিমান নিয়ে ঘর ছাড়লেন। শান্তিনিকেতনের এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে বেরিয়ে পরলেন পথে। রাস্তায় শুয়ে কাটাতে হয়েছে দীর্ঘদিন। কলাপুকুর গ্রামের আদিবাসিদের সাথে কথা বলে, সেখানে একটি মাটির ঘর তৈরি করে সেখানে থাকতে শুরু করলেন তিনি ও তাঁর মত ঘর ছাড়া কিছু মানুষ।
কলেজ স্ট্রিট যাতায়াত করতেন, সেই সময় সবে সবে কোলাজ তৈরি করছেন তিনি, একটি রঙের প্রয়োজন হয়, সেন্ত্রাল-এ্যভিনিউ এর মোড়েএকটি পোস্টার এ সেই রঙ দেখে বাদামওলা কে পয়সা দিয়ে সেই কাগজ ছেঁড়ান তিনি। সেই ভাবেই শুরু হয় তাঁর ‘রঙ ছাড়া রঙিন ছবি’র যাত্রা।
টেরাকোটা
১৫ দিনের অন্তরে গত হলেন মা বাবা একসাথে।
ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম থেকে মিউজিওলজি পড়েছেন তিনি,একদিন পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে একটি টেরাকোটার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন এক বন্ধুর। এমন সময় একটি মেয়ে দোকানে আসে এবং গয়নার অর্ডার দেয়। দোকানদার তাকে বলেন ৪৫ মিনিট ঘুরে আসতে। ৪৫ মিনিট এ টেরাকোটা? কৌতূহলী হয়ে দেখেন দোকানদার মাটি না পুড়িয়ে, শুধু শুকিয়ে নিয়ে, কেনা রঙ দিয়ে গয়না টি বানিয়ে দিলো। তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। ফেরার পথে গনশক্তি পত্রিকায় অভিযোগ দায়েরও করেন।সেইসময় তিনি বেশ কয়েকটি মাধ্যমে ছবি আঁকেন, তাই বাড়ি ফিরে এক বন্ধুর কাছ থেকে একটু মাটি চাইতে যান, কিন্তু চরম কটুকথা বলে ও দুর্ব্যবহার করে বন্ধু ফিরিয়ে দেন তাঁকে। অদম্য জেদ নিয়ে শুরু করলেন টেরাকোটার কাজ।
শান্তিনিকেতন থেকেই শুরু হল টেরাকোটা নিয়ে গবেষনা। ১২ রকম রঙ আবিস্কার করেছেন তিনি এই টেরাকোটা কারুকার্যে। শুধু তাই নয় টেরাকোটায় সাদা রঙের সৃষ্টি তাঁরই।
“সোনার সাথে টেরাকোটা” – কাজ শুরু হয় তাঁর এবং এ. সরকার জুয়েলার্সের হাত ধরেই। সব থেকে বড় পরিবর্তন আনলেন টেরাকোটার ওজনে। ৩০ গ্রাম সোনার ওজনের সঙ্গে তুলনায় মাটির ওজন আনলেন ৬ গ্রামে। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত থেকে শুরু করে বলিউডের বিখ্যাত ব্যক্তিতের আভরনে শোভা পেয়েছে তাঁর তৈরি গয়না।
রঙ ছাড়া রঙিন ছবি
দীর্ঘ ১৮ বছর হাতে কাগজ ধরেননি তিনি, মুম্বাইতে তখন চলছে টেরাকোটার প্রদর্শনী, বন্ধুর ডাকে ব্যঙ্গালোর পাড়ি দিলেন ১৮ বছর আগে তৈরি কোলাজ নিয়ে।তখন বেশ কিছু গুণী ব্যক্তিরা তাঁকে বলেন কোলাজ নিয়ে আবার কাজ শুরু করতে। এমনকি পাড়ার বন্ধুরা কথা বলা বন্ধ করে দিলেন, শুধু মাত্র তিনি কোলাজ তৈরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে। বন্ধু অনুপম চক্রবর্তীর অনুরোধে তাঁর আবার কোলাজ শুরু। সেই সময় ফটোগ্রাফি করতেন তিনি। ফটো ওয়াশ করাতে যেতে হয়েছিল সেন্ট্রাল এ্যভিনিউ, সেই পুরনো কলেজ স্ট্রিট,ফেরার পথে আবার সেই দেওয়াল থেকেই কাগজ ছিঁড়ে শুরু হল কোলাজ এর নতুন যাত্রা।সেই কাগজ দিয়ে তৈরি করলেন নিজের পোট্রেট।
বর্তমান পত্রিকার সুখী গৃহকোণ ম্যাগাজিন এ অধিকাংশ ইলাস্ট্রেসন তাঁর করা,২০১২ সালে তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় চন্দননগরে।আকাশ বাংলা টিভি চ্যানেল-এ ‘চলো যাই’ অনুষ্ঠান এর সম্প্রচার বন্ধ করে তাঁর চিত্র প্রদর্শনীর প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হয় ৫ দিন।এখনও পর্যন্ত ৯ টি প্রদর্শনী প্রদর্শিত হয়েছে শিল্পীর। একটি ছবি তৈরি করতে তিনমাস সময় লাগে তাঁর। দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা একটি রং খুঁজতে সময় কেটে যায়।
উল্লেখযোগ্য, আন্তর্জাতিক স্তরের ‘কলানিধি’ পুরস্কার, রাজস্থান সরকারের ‘RUDA’, ভারত সরকারের M.C.P, রাজ্য সরকারের STATE AWARD ছাড়াও একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
“বাংলায় শিল্প তথা শিল্পীদের ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত।অনেকেই বাইরে চলে যাচ্ছেন, কারণ কাজ তো হচ্ছে, কিন্তু শিল্পীরা যথাযথ সন্মান, মর্যাদা পাচ্ছেন না।তবে, আমার কাছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য দুটো আলাদা। হয়ত শিল্পীদের স্বাচ্ছন্দ্যটা কম কিন্তু নিজের কাজের প্রতি যদি ভালোবাসা থাকে তাহলে সে সুখী, তাই আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আমার শিল্প আমাকে কি দিয়েছে, আমি বলব ‘আনন্দ’, সৃষ্টি সুখের উল্লাসেই আমি সুখী।“ – তপন সাহা
COPYRIGHT © 2020 SATKAHON
অনেক অনেক অভিনন্দন কোলাজসম্রাট।আপনি সারা ভারতের গর্ব।আপনার বন্ধু হতে পেরে গর্বিত, ধন্য আমি।বেশ থাকবেন।🙏🙏🙏
সাতকাহনের জন্য অনেক শুভকামনা, অনেক ধন্যবাদ।
Excellent ! You are a great artist.
The great artist with tremendous spirit of mind & God gifted creativity . A big salute.
আপনার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন। বেশ থাকবেন।
অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাকে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন। বেশ থাকবেন। 🙏🙏🙏🙏
Great effort, hats off,
Congratulations and wish you for more success.
Wow, what a great story about the life. Amazing journey