Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
কে জানত যে ছেলেটা কবিতাকে ভয় পেয়ে পালিয়ে বেড়াতে চাইত ইচ্ছে মতো,একদিন কবিতা ছাড়া তার দিন কাটবে না!
একদিন সে বলবে আমি যা কিছু কবিতার জন্যেই,আমার যা কিছু কবিতার জন্য !
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে আজ বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী তাপস রায়।
সাতকাহনে স্বাগতম জানাই, পাঠকরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে চাইছেন আবৃত্তিশিল্পে আজ যার জগৎ জোড়া নাম তাঁর নাকি কবিতাকে ভয় ছিল? কিভাবে?
ধন্যবাদ। হ্যাঁ। আসলে ছোটবেলায় আবৃত্তিতে আমার ভীষণ ভয় ছিল। মা আমাকে জোর জবরদস্তী করে প্রায় আবৃত্তি শেখাতেন এবং পাড়ায় পাড়ায় যেখানেই আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হত মা আমাকে নিয়ে গিয়ে হাজির করাতেন। এই জন্যে মারধোরও খেয়েছি মায়ের কাছে।
কিন্তু ঘটনাচক্রে কোন প্রতিযোগিতাতেই আমি বিফল হইনি। ফলে, সেটা মা কে আরও উদ্বুদ্ধ করত যে ছেলেকে নিয়ে এটা আমাকে করতেই হবে।
মা কি নিজেও আবৃত্তি করতেন?
না। মা কিন্তু কোনদিন আবৃত্তি করতেন না।
আমি মফঃস্বলে (পূর্ব মেদনীপুর, অধুনা এগরা মহকুমার, বালিঘাইতে ) বড় হয়েছি। কিন্তু মায়ের যেখানে বড় হয়ে ওঠা সেটা মফঃস্বলও বলা চলে না। এত্তোটাই গ্রাম্য জীবন,সেখানে তখনও কবিতার প্রবেশ ঘটেনি।
বাবা লেখালেখি করতেন। একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। বাবার গলা ছিল খুব ভালো। তুলিতে বাবা বিদ্যাসাগর হরফ লিখতে পারতেন এতটাই চমৎকার ওনার হাতের লেখা।
এছাড়া জ্যাঠামশাই খুবই ভালো আবৃত্তি করতেন,গণনাট্য করতেন।
তাই আমার মনে হয় মায়ের এই কবিতা বা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মেছিল আমার বাবা ও জ্যাঠামশাই এর সাহচর্যে।
মনে আছে একটি প্রতিযোগিতার জন্য মা শিখিয়েছিলেন…
“আমরা বিলেত ফেরতা ক ভাই,আমরা সাহেব সেজেছি সবাই।
তাই কি করি নাচার স্বদেশী আচার করিয়াছি সব জবাই।।“
তাহলে আবৃত্তির প্রতি আপনার ভালোবাসা জন্মালো কিভাবে?
একটু বড় হলাম যখন গলাটা ভাঙল। গলার আওয়াজটা বেশ ভারী হল।আমাদের গ্রামাঞ্চলে যুব উৎসব তখন বেশ জনপ্রিয় একটি কর্মকাণ্ড।
পঞ্চায়েত স্তর, ব্লক স্তর, মহকুমা স্তর, জেলা স্তর ও অবশেষে রাজ্য স্তরে প্রতিযোগিতা হত।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়াকালীন আমি যুব উৎসবে অংশগ্রহন করি।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ‘ঠিকানা’ আবৃত্তি করে আমি মহকুমা স্তরে প্রথম হই।
মহকুমা স্তরে অনেক উন্নত ধরনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হত।
সেই স্তরে প্রথম হওয়ার সুবাদে কবিতা বলতে মঞ্চে উঠে যখন আমি নিজের কণ্ঠস্বর শুনলাম তখন আমার নিজেরই বেশ ভালো লাগল।
কবিতা আবৃত্তির দরুন আমাদের বিদ্যালয়ে আমার নাম ছিল।
নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বন্ধু ও বান্ধবীদের মধ্যে এই জনপ্রিয়তা বেশ বাড়ল।আমি সম্পূর্ণ ভাবে নিজজ্জিত হলাম কবিতায়।
বড় হওয়ার পর কার কাছে আবৃত্তি শেখা?
মা ছাড়া ছোট থেকে আমি আমার জ্যাঠামশাই ডঃ রমাপদ রায় -এর কাছে আবৃত্তি শিখেছি।
আমাকে শুধু হাতে ধরে তৈরি করেছেন তাই নয় উনি আমাদের এলাকায় সাহিত্য-নাট্যের এক আলোড়ন তুলেছিলেন সেই সময়।
আমি হয়ে উঠেছিলাম ওনার ছায়াসঙ্গী। উনি ধরে ধরে শব্দের উচ্চারণ শেখাতেন।
বলতেন শব্দটা কিভাবে বললে একজন মানুষকে তুমি আলোড়িত করবে সেই ভাবনা ভাবতে থাকো।
বলতেন,প্রকৃতিতে প্রচুর শব্দ আছে।পাখির শব্দ, হাওয়া ভেসে আসার শব্দ…ইত্যাদি।
চারপাশে যে শব্দ তুমি শুনছ সেটা কিভাবে ভেসে আসে তোমার কানে সেটা অনুধাবন করবে আর কবিতার ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করবে।
চিত্রকরকে তাঁর মগজ বলে কোথায় কতটা রঙ দিতে হবে, তাঁর হাত সেই কাজটা করে। কবিতার ক্ষেত্রে মগজ বলবে, কণ্ঠকে সেই কাজটা করতে হবে।
আবৃত্তিকে পেশাগত ভাবে নেওয়ার কথা কখন ভাবলেন?
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আমি পরবর্তী পড়াশুনার জন্য কলকাতা আসি। পরিবারের তরফ থেকে একটা তীব্র প্রতিবাদ আসে। পরিবারের ইচ্ছে ছিল আমি মেদনীপুরে থাকি, স্থানীয় কলেজে পড়াশুনা করি এবং বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করি। কিন্তু আমার মাথায় তখন আবৃত্তি ছাড়া কিচ্ছু নেই।
আমি নিজের ইচ্ছেয় অনড় থেকে কলকাতায় আসি। সেই কারণে আমার পরিবারের থেকে বেশ কিছুদিন যথেষ্ট সহযোগিতা বা সাহায্য সেই সময় পাই নি।নিজের লড়াই খানিক নিজেকেই লড়তে হয়েছে।
Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
কেমন ছিল কবিতার জন্য একলা লড়াই করা সেই দিন গুলো?
আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। আমি কলকাতা এসে টিউশানি সহ সিকিউরিটি গার্ড এর কাজ করেছি, কুরিয়ার বয়ের কাজ করেছি, কনসট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করেছি। রেলের টিকিট ব্রোকারির কাজ করেছি।
এই ভাবে আমি বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছি, সাথে কবিতা।
এরপর আমার কাকা বদলি হয়ে কলকাতা আসেন ও আমাকে তাঁর কাছে থাকতে বলেন। ফলে আমার খাওয়া থাকার সমস্যা বেশ খানিকটা দূর হয়। যার ফলে আমি পড়াশুনা ও আবৃত্তিতে সম্পূর্ণ মন দিতে পারি।আর্ট কলেজে কমার্শিয়াল আর্ট নিয়ে পড়া শুরু করলেও মাঝপথে ছেড়ে দিই।
সাফল্যের সুচনা কিভাবে?
সাফল্য ঠিক না,মানুষের ভালোবাসা। ঘটনাচক্রে আমার পরিচয় হয় সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে।ওনার শ্যালিকা ডঃ বনবানী ভট্টাচার্য একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন এবং উনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর খুবই ভালো স্ক্রিপ্ট লিখতেন।ওনার পাড়াতে একটি অনুষ্ঠানে ওনার স্ক্রিপ্ট পড়ার জন্য উনি একটি ভালো কণ্ঠ খুঁজছিলেন।
আমার এক বন্ধু সুত্রে আমি সেই অনুষ্ঠানটি করার সুযোগ পাই।
সেখানে স্বস্ত্রীক সুভাষ চক্রবর্তী আসেন এবং আমি ওনাদের সুনজরে পড়ে যাই।
ওনারা আমাকে যুক্ত করলেন পথের পাঁচালীর সঙ্গে। যার ফলে আমার সাথে সাংস্কৃতিক জগতের একটা ওতপ্রোত সম্পর্ক তৈরি হল।
এই সময় কবি অরুন মিত্রর আহ্বানে একটি প্রতিবাদ সভায় আমি সঞ্চালনার দায়িত্ব পাই। সেই সভায় উপস্থিত সুনীল গাঙ্গুলী,শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে আরও অনেকে।
এই সময় ঘটে এক ঘটনা।
কি সেই ঘটনা?
সভা শেষ হয়ে যাবার পর একজন আমাকে এসে বলে ওই যে দূরে বটগাছ আছে, ওখানে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। উনি আপনাকে ডাকছেন।
গিয়ে দেখি আমার এক স্বপ্নের মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে। যাকে আমি এতদিন শুধু রেডিওতে শুনে এসেছি, মনে মনে শ্রদ্ধা করি। প্রচণ্ড ভক্তি করি।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে অরুনাভ গাঙ্গুলী।
আমি তো দেখেই চমকে গেছি। সাথে সাথে প্রনাম করতে গেছি।
আমাকে বললেন, “No,No. পায়ে হাত দেবে না।“
সে কি জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর।
বললেন, “আমার নাম অরুনাভ গাঙ্গুলী।“
আমি বললাম,” হ্যাঁ স্যার আমি আপনাকে দেখেই চিনতে পেরেছি।“
বললেন,” না, স্যার নয়।আমাকে দাদা বলবে।“
আমি বললাম, আচ্ছা দাদা আমি আপনাকে দাদা বলেই ডাকব।“
বললেন,”শোনো তুমি সঞ্চালনা করছিলে তো? কোথায় বাড়ি?”
বললাম “আমার মেদনীপুরে বাড়ি। থাকি সল্টলেকে কাকার কাছে।“
শুনে বললেন, “ দ্যাখো, আমার কদিন আগে বাঁ পা ভেঙে গেছিল এখন সবে হাঁটতে শুরু করেছি আবার। আমাকে একটু গাড়ি অব্দি পৌঁছে দেবে?”
আমি একটু অবাক হলাম। এত লোক আছে, যাকে হোক এ কথা উনি বলতে পারতেন। কেবল গাড়ি অব্দি এগিয়ে দেবার জন্যে উনি আমাকে ডাকলেন?
আমি বললাম,” হ্যাঁ দাদা চলুন নিশ্চয়ই।“
উনি তখন ওনার বাঁ হাতটা আমার ডান কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠলেন।
বললেন,” একদিন আমার বাড়িতে চলে এসো। ও হ্যাঁ আর একটা কথা। আমি অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলাম কার উপরে ভর করব। তোমার কাঁধটা বেশ শক্ত। তুমি পারবে। কবে আসবে জানিয়ে আসবে“
আমি গেলাম ঠিক তার পরের দিনই। তুমি থেকে তুই হলাম এবং ওনার কাছে নতুন করে শিখতে শুরু করলাম।
শিখতে শুরু করার কিছু পরই ওনার স্ট্রোক মত হয়। সেই সময় ওনার কথা জড়িয়ে গেছিল। ডাক্তার বললেন এটা আসতে আসতে ঠিক হবে।
তখন ওনার স্ত্রী মানে বাচিকশিল্পী অপর্ণা গাঙ্গুলী, বৌদি আমাকে বললেন, “ তাপস ও যদি কবিতাটা বলতে আরম্ভ করে তাহলে কিন্তু কথার জড়তা কেটে যাবে। তুই বলবি আমি তো আপনার কাছে শিখতে আসি, এখন তো আপনি বলতে পারছেন না। আমি বলছি আপনি শুনুন।শুধু ভুলগুলি ধরিয়ে দেবেন। বলে তুই না একটু ভুলভাল বলবি। তাহলেই ও ভুল ধরবে।“
আর সত্যিই এই পদ্ধতিতে উনি সেরে উঠলেন।
সেরে ওঠার পর উনি কাবুলিওলা নাটকটি মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
কোনদিন টাকি,কোনদিন জলপাইগুরি,তো কোনদিন সবং।শ্রোতাদের চোখের জলে ভাসিয়ে উনি মঞ্চ থেকে নামতেন।
Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
তারপর?
বসিরহাট বইমেলার একটি অনুষ্ঠানের কথা। উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে অনুরোধ এল নাটক শুরুর আগে যেন উনি একটি কবিতা বলেন।
দাদা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, “ অরুনাভকে আপনারা অনেক দিন শুনেছেন। আরও কিছুদিন শুনবেন। কিন্তু অরুনাভ চলে গেলে যাকে শুনবেন আজ তাঁকে শুনুন।“
বলেই উনি আমাকে আদেশ করলেন আবৃত্তি করার জন্য। আমি আবৃত্তি করলাম নজরুলের ‘যদি আর বাঁশী না বাজে’ অভিভাষণের অংশ ।“
এটি শুনেছিলেন বিধাননগর সংস্কৃতি অঙ্গনের সম্পাদক সুভাষ পাল। তিনি আমাকে যুক্ত করলেন তাঁর বিধাননগর সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে।
এইভাবেই কলকাতার মানুষের কাছে আমার পরিচিতি তৈরি হল।এছাড়া দূরদর্শনে আমি এখনও কাজ করছি।
সত্যি কথা এই যে আবৃত্তি জগতে একজন কর্মী হিসেবে আমি যেটুকু হতে পেরেছি তার নেপথ্যে অনেকের প্রশ্রয়, ভালোবাসা সমর্থন আছে তবু বিশেষ যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে সুভাষ চক্রবর্তী, রমলা চক্রবর্তী,পথের পাঁচালীর সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি ও আমার গুরু অরুনাভ গাঙ্গুলীর অবদান আমি আমৃত্যু স্মরণে রাখবো।
Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ কবে থেকে?
আমি পেশাগত ভাবে আবৃত্তি শুরু করেছি ২০০০ সাল থেকে। তারপর অনেকেই অনুরোধ করেন আমাকে আবৃত্তি শেখাতে। কিন্তু আমি এই দ্বন্দে ছিলাম যে আমি তো নিজেই এখনও শিখছি, আমি কি শেখাতে পারব? তারপর একজন আমায় বললেন, আবৃত্তি একটি শিখি-শেখাই বিষয়। অর্থাৎ, তুমি যেমন শেখালে, তেমনই উল্টো দিকে যে শিখতে এসেছে তার থেকেও তুমি শিখলে। এটা করলে তোমার শেখাটা আরও উন্নত হবে। পেশাগত ভাবে একজন আবৃত্তি শিল্পের কর্মী হওয়ার ১৭ বছর পর ২০১৭ সালে আমি ‘কথাবৃতা’ শুরু করি দুরুদুরু বুকে।
এখন কথাবৃতার বহু ছাত্র ছাত্রী ভালো কাজ করছে।
আবৃত্তির জন্যে আপনার এত লড়াই…আবৃত্তি আপনাকে কি দিয়েছে?
আবৃত্তি আমি যেদিন করতে পারব না, সেদিন হয়ত আমি বাঁচবো না। আজ আমি যা কিছু, তার অতলে গিয়েও যদি দেখি সেখানেও কিন্তু কবিতা।
যে গ্রামের ছেলেটা কলকাতায় আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল সেই গ্রামের ছেলেটা দু-দুবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চোদ্দ বার বাংলাদেশে অনুষ্ঠান করে এসেছে। এ পাওয়া তো কম পাওয়া নয়। আমার পুত্র যখন আমার দুটি কাজের মান নিয়ে তার মতামত দেয় তখন মনে হয় এই তো একটি হলেও নিমগ্ন শ্রোতাকে আমি তৈরী করেছি।কম কী!আমার স্ত্রী আমাকে প্রথম পছন্দ করেছিলেন আমার আবৃত্তি শুনে(হেসে)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আমার ও নিবেদিতা নাগ তহবিলদারের কণ্ঠে একটি দ্বৈত কণ্ঠের কবিতা মুক্তি পায় ‘এক মুঠো বিকেল’ নামে। সেটি বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয় হয়। আমার ও নিবেদিতার “এক বিকেলের কথা ” এলবামের কথা তো কবিতা প্রেমীদের মুখে মুখে।এই যে এত মানুষের ভালবাসা,এ তো কবিতারই জন্য।
বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণীদির প্রযোজনায় পিকাসো থেকে আমার প্রথম একক অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছিল।
কবিতার ইতিহাসে প্রথম আমার একক অ্যালবাম ‘ভালবাসার মমি’ বিক্রির অর্থ সিরিয়ার দুস্থ শিশুদের জন্য Unicef কে তুলে দেওয়া হয়। Unicef এর তরফ থেকে তার জন্যে শংশাপত্রও দেওয়া হয়েছে।পুরো প্রক্রিয়াটি করেছেন “ভালোবাসার মমি” এর কবি ক্লিভল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড.বর্ষণজিৎ মজুমদার।
এ তো আমার বিশাল প্রাপ্তি।আমার প্রায় সমস্ত রেকর্ডের আবহ নির্মান করে দিয়েছেন পরম যত্নে শ্রদ্ধেয় সুরকার কল্যাণ সেন বরাট।কবিতার কাছ থেকে প্রাপ্তির ভাঁড়ার পূর্ণ আমার।
Satkahon – Sunday Exclusive | Tapas Roy | Reciter
আজকাল ছেলেমেয়েরা পড়তে ভালবাসে না। লিখতে ভালবাসেনা।
না লিখলে আমরা নতুন লেখক লেখিকা পাব কি করে? নতুন লেখা না হলে নতুন আবৃত্তি শিল্পীই বা তৈরি হবে কি করে?
ডিজিটাল যুগের এটা একটা কঠিন বাস্তব। কিন্তু সবাই নিজের মত করে একটু চেষ্টা করলেই পড়ালেখার অভ্যাস রাখতে পারে।
যেমন আমি আমার প্রতিষ্ঠানের সকলকে বই দেখে খাতায় আবৃত্তি লিখতে বলি। যে কবির কবিতা আমি শেখাচ্ছি সেই কবির অন্যান্য বই পড়ার নির্দেশও কিন্তু আমি আমার ছাত্র ছাত্রীদের দিই। কারণ আমি মনে করি, একজন কবির একটি মাত্র কবিতা পড়ে সেই কবির ভাব কে উজাড় করা যায় না।
এছাড়া আমি আমার কথাবৃতাতে কিন্তু নিয়মিত ভাবে উচ্চারণ করে গল্প পড়তে উৎসাহী করি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কি বলবেন?
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে নির্দেশ দেওয়ার মত জায়গায় আমি এখনো আসিনি,আমাদের মাথার উপর এখনও উৎপল কুণ্ডু আছেন, এখনও বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ আছেন, রত্না মিত্র আছেন, উর্মিমালা বসু আছেন, জগন্নাথ বসু আছেন, প্রণতি ঠাকুর, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস বসু,ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অগ্রজ শ্রদ্ধেয় আবৃত্তিকারেরা আছেন। তাঁরাই দিকনির্দেশক হতে পারেন।
তবে, অভিজ্ঞতা থেকে যেটা আমি আমার অনুজদের বলতে পারি, তা হল… shortcut করে কিছু হয় না, এই shortcut এর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদি সত্যিই তুমি আবৃত্তি কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে চাও, তাহলে চর্চার কোন বিকল্প নেই। নিজেকে ভালো রাখতে নিজের আনন্দে সেই চর্চা হতে হবে অত্যন্ত মগ্নতা দিয়ে।অনুষ্ঠানের সংখ্যাটা সুচক নয়।
প্রশংসা যেন দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়, তা যেন অহংকারী না করে তোলে।