Satkahon Review – Kalakar Arts ও বিশ্বব্যাপী অভিনব ডিজিটাল অনুষ্ঠান
সঙ্গীত তাঁর আপন মহিমায় সমৃদ্ধ এবং তাঁর শক্তিতে সমৃদ্ধশালী আমরা।
তবে সঙ্গীতের মূল বিস্তার বা প্রকাশ কিন্তু মানব সমাজের হাত ধরেই।
বর্তমানে এক দুরারোগ্য মহামারী যখন সেই মানব সমাজকে গ্রাস করেছে সঙ্গীত কিন্তু বিভ্রান্ত হয়নি। ভয় পায়নি, হারিয়ে যায়নি।
বরং কণ্ঠে কণ্ঠে নিজের বাসাকে মজবুত করেছে এবং ধ্বনিত করেছে আদি মানব সমাজের জয়। সে জয় সঙ্গীতের জয়।
সঙ্গীতকে হাতিয়ার করে এক হৃদয় থেকে আরেক হৃদয়ে পৌঁছে গেছে সাহসের বানী, আমরা আছি, আমরা থাকব।
বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী এবং পণ্ডিত এ.কানন এর কন্যাসম শিষ্যা শ্রীমতী চন্দ্রা চক্রবর্তীর উদ্যোগে এই আশার বানী আন্তঃর জালে বিস্তার লাভ করেছে এক অনন্য উপায়।
তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের অনুপ্রেরণাতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কলাকার আর্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমকে ভরসা করে সারা বছর ব্যাপী পণ্ডিত এ.কানন এর জন্ম শতবার্ষিকী পালনে বিশ্বের বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশগ্রহন করেছেন।
“গুরু শিষ্য পরপম্পরা” নামক এই অনুষ্ঠান আলোকিত করেছেন উস্তাদ শাহিদ পারভেজ,পণ্ডিত বিজয় কিচলু,পণ্ডিত কুমার বোস,পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ন মজুমদার, উস্তাদ রশিদ খান, পণ্ডিত তন্ময় বোস,পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জী,পণ্ডিত গৌরব মজুমদার,শ্রীমতি শ্রাবণী সেন, মুরাদ আলী খান, অনুপ জালোটা, দেবাশিস ভট্টাচার্য, শ্রীমতী শুভ্রা গুহ ও আরও অনেক বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ।
আগামী দিনে এই অনুষ্ঠান বর্ণময় করবেন আচার্য পণ্ডিত জয়ন্ত বোস ও তাঁর ছাত্রী ও কন্যা শ্রীমতী মাহিরী বোস এবং কিছু দিন পরেই আমরা এই অনুষ্ঠানে সরাসরি দেখতে চলেছি পণ্ডিত অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এর অমুল্য একটি উপস্থাপনা।
গুরু শিষ্য পরম্পরা ছাড়াও এক একটি ভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানে কলাকার নিজেকে অন্যদের থেকে ভিন্ন করে তুলেছে।
সেইরকমই একটি অনুষ্ঠান ‘The Godsends’
শ্রীমতি চক্রবর্তীর মতে, “এই পৃথিবী তে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যে ও সঙ্গীত ও শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে লড়াই করে চলেছেন।কলাকার সেই শিল্পীদের সন্মান জানিয়ে প্রথমবার ডিজিটাল মাধ্যমে এই ‘The Godsends’ নামক অনুষ্ঠানটি শুরু করেছে “
এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় দক্ষিন আফ্রিকার বাসিন্দা রৌনক পালকে দিয়ে। তাঁর জন্ম Down Syndrome নিয়ে।
কিন্তু তিনি একজন গুনী পিয়ানো বাদকই শুধু নন,পেশাগত ভাবে কেক তৈরির সমস্ত রকম প্রশিক্ষনও নিয়েছেন তিনি।
এই অনুষ্ঠান মানুষের মন কেড়ে নেয় এবং সকলের সাফল্য বার্তায় ভরে ওঠে কলাকার।
আগামী দিনে এই অনুষ্ঠানে থাকবেন চেলো বাদক শ্রী অনুপ কুমার বিশ্বাস।
বর্তমানে লন্ডন নিবাসী হলেও তিনি বড় হয়েছেন বেহালার এক অনাথ আশ্রমে।
নিজের চেষ্টায় চেলো বাজানো শেখেন তিনি, এবং পৃথিবীর নানা অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।
নিজের অনাথ জীবনের প্রতিকুলতায় হেরে না গিয়ে তিনি জিতিয়ে চলেছেন কয়েকশো অনাথ শিশুকে।
তিনি Father Mathieson Music School নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে প্রত্যেকটি শিশু কে পড়াশুনার পাশাপাশি সঙ্গীত শিক্ষা দেওয়া হয়।
UNICEF এর গৃহহীন শিশুদের সাহায্যার্থে কলাকার ১২-১৬ বছরের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটি গানের দল “Musical masks” নামে গঠন করেছে।
এই দলে রয়েছেন পাঁচ ক্ষুদে কলাকার। ভারতবর্ষ থেকে এই দলে তবলায় রয়েছেন আর্চিক ব্যানার্জী।
ব্যাঙ্গালর থেকে শ্রীনিবাস গিরিধর, কন্নড় পরিবারের জন্ম তার। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারলেও এক প্রান ঢালা আবেগ নিয়ে সে পরিবেশন করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান।
ইউ.কে থেকে রয়েছে মোজেস, ১২ বছর বয়সেই ড্রামস বাজাতে পারদর্শী সে।
এছাড়া রয়েছে দুই যমজ বোন উর্বি মধুরা এবং পুর্বা অধরা। তারা Western classical পরিবেশন করে এবং ভারতীয় খেয়াল রবীন্দ্রসঙ্গীত ও গায়।
তাছাড়া ১৫ বছর বয়সেই তারা ইউকে থেকে দাবা খেলায় সেরার শিরোপা পেয়েছে।
গত ১৪ ই আগস্ট তাঁদের হাত ধরেই অনুষ্ঠিত হল ‘মুক্তি’। দেখুন সেই অনুষ্ঠান…
এই কঠিন অবস্থাতেও শ্রীমতী চন্দ্রা চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠিত কলাকার আর্টস পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে অবিরত সঙ্গীতানুষ্ঠান করে চলেছে।
শিল্পীদের সাধ্যমত সাম্মানিকও প্রদান করছেন তাঁরা।
কারণ তাঁরা মনে করেন সঙ্গীতশিল্পীরা যেমন মানুষের সুখে দুঃখে সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং মানুষের মনোরঞ্জন করে তাঁদের পাশে থাকেন তেমনই সঙ্গীতের তথা সঙ্গীতশিল্পীদের এই দুর্দিনেও আমাদের পাশে থাকা উচিত।
কলাকারের এই উদ্যোগ সমগ্র বিশ্বে চর্চিত এবং প্রশংসিত।
Saptarshi Saha | Satkahon