Satkahon Review – রবিগানের তরী ভাসালেন অন্তরা ও অর্ঘ্য
Satkahon Review – রবিগানের তরী ভাসালেন অন্তরা ও অর্ঘ্য
ব্রাহ্মসমাজের পণ্ডিত সীতানাথ তত্ত্বভূষণের কন্যা শান্তিময়ী দত্ত লিখছেন, “রবীন্দ্রনাথকে প্রথম দেখি ১৯০৬ খৃস্টাব্দে।ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরূপে গানের ক্লাসে গান শিখি–হঠাৎ একদিন ডাক এল রাস্তার অপরদিকের স্যার জগদীশ বসুর বাড়ি থেকে।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সদ্য-লেখা স্বরচিত স্বদেশী গান শোনাবেন সেখানে। বিদ্যালয়ের গান-জানা মেয়েরা তাঁর মুখ থেকে শুনে গানগুলি শিখে নেবে।অর্গানে বসেছেন সি আর দাশের ভগ্নী অমলা দাশ।
কবি এসে পকেট থেকে ছোট নোটবই খুলে গাইলেন “এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে“
প্রথমে তিনি একবার গাইলেন খালি গলায়। তারপর অমলা দাশের বাজনার সঙ্গে।
দরাজ, উচ্চ কণ্ঠস্বর কিন্তু একটু মেয়েলি ধরনের। তাঁর সেই সু-উচ্চ মিষ্ট কণ্ঠস্বরে ঘরখানা যেন গম্গম্ করে ভরে গেল।
আমরা মেয়েরা গান শিখব কী? গায়কের চোখ-ধাঁধানো রূপে, অতুলনীয় গানের মাধুর্যে যেন সম্মোহিত হয়ে চেয়ে রইলাম। “
–পার্থ বসু, “গায়ক রবীন্দ্রনাথ”, আনন্দ – ১৩৯ (সূত্র:গীতবিতান)
পর কে আপন করেই ‘মন মাঝি সামাল সামাল’ শীর্ষক সারি গান থেকে কবি ধার নিয়েছিলেন গানের সুর।
১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তিনি লিখলেন ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’।
জীবনের যেকোনো অনুভুতিতে রবিঠাকুরের গান আমাদের সাথী।
আজ এই মহামারীর সময়ে সমগ্র পৃথিবীর তরী যখন সামাজিক, মানসিক, সর্বোপরি অর্থনৈতিক দিক থেকে ডুবতে বসেছে তখন ভরসা দিয়ে কবি বললেন ‘জয় মা, বলে ভাসা তরী’
তাঁর সেই কথাই মানুষের কান থেকে প্রানে নতুন করে পৌঁছে দিলেন নবীন প্রজন্মের দুই জনপ্রিয় শিল্পী অন্তরা সাহা ও অর্ঘ্য ব্যানার্জী।
মায়ের কাছে গান শেখার হাতে খড়ি অন্তরার।
এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্রীমতী মঞ্জরি নাগ, এবং তারপর শ্রী সৌরভ চক্রবর্তীর কাছেই তাঁর রবিগানের তালিম।
বর্তমানে তিনি বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী জয়তি চক্রবর্তীর কাছে শিক্ষারতা।
অন্তরা বলেন, “গানের ভাবনা চিন্তা করি আমি আর অর্ঘ্য এক বছর আগে। অর্ঘ্য সাধারণত বাংলা আধুনিক আর হিন্দি কভার গান বেশি গায়। ও চাইছিল লোকগানের সুরে কিছু গাইতে তাই আমরা দুজনে এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটাই গাইব ভাবলাম। কিন্তু সেটা যে এভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে সেটা বুঝতে পারিনি।
বর্ধমানে আমার বাড়ি, এখানেই দামোদর নদীর তীরে গানের শুটিং হয়েছে গত ডিসেম্বরে।ইচ্ছে ছিল পয়লা বৈশাখে গানটা প্রকাশ করার।
কিন্তু কিছু কাজ বাকি থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। Times Music Bangla আমাদের পাশে ছিল, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ।
আর সঙ্গীতায়োজনের প্রসঙ্গে বলব আমার দেখা এই প্রজন্মের সেরা সঙ্গীত পরিচালকদের মধ্যে রনদীপ একজন।
রবীন্দ্রসঙ্গীতকে এই ভাবে নতুন রুপে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি আমি,আমরা তাঁর জন্যে রনদীপকে অনেক ধন্যবাদ“
অন্যদিকে অর্ঘ্য বলেন, “সেভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত কারো কাছে না শিখলেও আমি ছোট থেকেই বাড়িতে রবিগান,নজরুলগীতি শুনে বড় হয়েছি।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখেছি শ্রদ্ধেয় গুরু পণ্ডিত কুমার রায় ও পরবর্তীকালে শ্রদ্ধেয় গুরু পণ্ডিত তুষার দত্তের কাছে।
এই গানের ক্ষেত্রে আমি কিন্তু অন্তরাকে ভীষণভাবেই অনুসরণ করেছি।
বদলেছে সময়, বদলেছে মানুষের পছন্দ।
রবিগানে নতুন সঙ্গীতায়োজন, প্রথাগত ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেশি মনোগ্রাহী করে তুলছে গানকে।
এই প্রসঙ্গে সঙ্গীত পরিচালক রনদীপ মুখার্জী (মানু) বললেন, “আমি বেশ কিছু দক্ষিনী বাদ্যযন্ত্রেরও প্রয়োগ করেছি এই গানে যা সাধারণত রবীন্দ্রসঙ্গীতে ব্যবহার করা হয় না।“
গানে গিটার সঙ্গত করেছেন রাজা চৌধুরী এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র সঙ্গত করেছেন সবুজ মুখার্জী।
গানের শব্দগ্রহন এবং প্রক্ষেপনের কাজটি সম্পন্ন করেছেন গৌতম বসু (Studio Vibration)
গানের ভিডিও করেছেন আদিত্য নারায়ন দাস, উৎসব রায় ও বিটু। গানটি মুক্তি পেয়েছে Times Music Bangla থেকে।
দুখের নিরাশা নিয়ে বসে না থেকে লড়াই করতে হবে, জয় মা বলে তরী ভাসিয়ে আমাদের নেমে পড়তে হবে আর্তের সাহায্যে, দীনের সেবায়।
তবেই বিশ্বকবির গান হয়ে উঠবে বিশ্ব প্রানের সঙ্গীত।