Satkahon – Prithwidev | সাক্ষাৎকারে সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য

Satkahon - Prithwidev | সাক্ষাৎকারে সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

নামকরা দুষ্টু ছেলে আপ্পু, সে কাটা ঘুড়ি ধরতে ছোটে আর বাড়ির রাস্তা ভুলে যায়, সে চলন্ত লরিতে উঠে পরে, গাছে ওঠে, লক গেট থেকে ঝাঁপ দেয় নদীতে, সেই আপ্পু আজ আমাদের সবার পরিচিত সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য। গুপি বাঘা থেকে গৌড়-মল্লার,রবীন্দ্রসঙ্গীত কিংবা পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান যেকোনো ধারার সঙ্গীত যার অঙ্গুলিস্পর্শে সরোদে পায় অঞ্জলি, দুষ্টুমি ভুলে উস্তাদ আমজাদ আলি খান সাহেবের সরোদের প্রেমে একটা ৭ বছরের বাচ্চা ছেলের হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়া, কখনো চটুল সঙ্গীতপ্রেমী শ্রোতার ভিড়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অবমাননা দেখে অভিমানে সরোদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ১৮ বছরের কিশোর,কিংবা অবশেষে নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে সব ফেলে সেই সরোদকেই কোলে তুলে নেওয়া, অনেকের থেকে আলাদা, ভারী অদ্ভুত তাঁর জীবন গল্প,আর সেই গল্পই আজকের লেখনীতে আপনাদের জন্যে।

সেই ছেলেটির ছোটবেলা – বদলে গেছি আমি

বাড়ির সকলেই পেশাগত ভাবে না হলেও মনে প্রানে সাংগীতিক। তাই সঙ্গীত তথা রাগ সঙ্গীত অঙ্কুরিত হয়েছিল তাঁর মধ্যেও। ৬ বছর বয়সে দিদার সাথে উস্তাদ আমজাদ আলি খান সাহেবের অনুষ্ঠান দেখতে গেছিলেন তিনি, সেই অঙ্কুর সবুজ হতে শুরু করল সেই দিন থেকেই। ছোট্ট আপ্পুর দুষ্টুমি গেলো ঘুচে, তাঁর কানে তখন আমজাদ আলি, তাঁর প্রাণে তখন সরোদ এর সুর।

পরের বছর জন্মদিনে উপহার পেলেন উস্তাদজির বাজানো ‘মিয়াঁ কি মলহার’ এর একটি সিডি, সবে সবে সিডি প্লেয়ার এসেছে তখন। স্বাভাবিক ভাবেই কেউ ভাবেনি ৭ বছরের আপ্পু তাঁর কদর বুঝবে, কিন্তু হল বিপরীত। ডানপিটে ছেলে সারাদিন সে ২৭ মিনিট এর সেই সঙ্গীত শোনে। কিন্তু তাঁর ভালো লাগে ২০-২৩ মিনিট অংশ টুকুই…  

“আমি তখন সবে আবিস্কার করেছি fast forward কি করে করতে হয়,তাই আমি বার বার ঐ অংশ টাই শুনতে লাগলাম। কিন্তু দেখলাম সেই ভালোলাগা বা মোহ যেটা এতক্ষণ হচ্ছিল সেটা আর হচ্ছে না। তখন আমি বুঝলাম আগে আমি পুরোটা শুনে তারপর এই অংশ টা শুনেছি বলেই আমার ভালো লেগেছে, আর যদি আমি পুরোটা না শুনি কখনোই আমার সেই অনুভুতি আসবে না।“

দুরন্ত আপ্পু খুঁজে পেলো তার স্বর্গ। সঙ্গীতে, সুরে, সরোদে।

Yaman in drut
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

মন তুমি ভজো গুরুর নাম

আপ্পুর বদলে যাওয়াটা বাবা মা দিদি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। দিদি গান শিখতেন অঞ্জনা নাথ ও পণ্ডিত কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তাই গান শোনার অভ্যাস বরাবরই ছিল। একদিন দিদি রেওয়াজ করছিলেন ইমন রাগে একটি পাল্টা। অনেকক্ষণ ধরে একই তানের পাল্টা শুনে পৃথ্বী তাকে একটি নতুন পাল্টা তৈরি করে শুনিয়ে বললেন সেটি গাইতে।

একটি ৭ বছরের ছেলে, যে আগে কখনও গান শেখেনি, তার মুখে তাঁরই তৈরি একটি নতুন পাল্টা শুনে দিদি অবাক।

অনেক দিন ধরেই সরোদ শিখতে চাইছিলেন কিন্তু ছোট্ট ছেলে একটি প্রায় ১৫০০০ টাকা মূল্যের বাদ্যযন্ত্রের সঠিক সম্মান করবে কিনা ভেবে পিছিয়ে আসছিলেন বাবা, সেই বাধা তো দূর হলই, ৬ মাস দীর্ঘ অপেক্ষার পর হাতে পেলেন তার বহু বাসনার সরোদ।  

পণ্ডিত কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শে শাহজাহানপুর ঘরানায় শ্রী পুষ্পেন দের কাছে ভর্তি হলেন সরোদ প্রশিক্ষনে। ৬ বছর তাঁর কাছে সঙ্গীতশিক্ষা গ্রহণ করেন পৃথ্বী।

শুধু তাই নয়,ঐশ্বরিক উপহার হিসেবে,উস্তাদ আলি আকবর খান সাহেবের বাড়ি যাওয়া ও সেখানে কিছু দিন থাকার ও সৌভাগ্য হয় তাঁর,উস্তাদজীর নাতি বন্ধু সিরাজ এর সাথে পাঠভবন-এ পড়ার সূত্রে।

Satkahon - Prithwidev | সাক্ষাৎকারে সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য
With Ustad Ali Akbar Khan at Maihar
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান

কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে সরোদের প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকে তাঁর। কারণ সেই সময় কিছু মুষ্টিমেয় গণ্ডির বাইরে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের তুলনায় হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের প্রতি শ্রোতার আগ্রহ বা একজন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীর প্রতি সেই সম্মান ছিল অনেক কম । হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের বোঝদার বন্ধু পাওয়াটাও মুশকিল ছিল তাঁর, অভিমানে প্রাণের থেকেও প্রিয় সরোদ তুলে রাখলেন বাক্সে। পৃথ্বীর কথায়,

“আমি আমার inspiration হারিয়ে ফেলেছিলাম, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত যা আমাদের নিজস্ব সঙ্গীত, সেই সময় তাকে কেউ সেভাবে বুঝল না, বরং অন্যান্য ধারার গান নিয়ে মাতামাতিতে, আমার মত ১৮ বছরের ছেলের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা কোণঠাসা হয়ে পড়ল, অশেষ অভিমানে আমি সরোদ শেখাও বন্ধ করে দিলাম”

শুরু করলেন গিটার শেখা।

সরোদ আমার অরুণ আলোর অঞ্জলি

ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে গিটার সঙ্গত করেছেন বিভিন্ন ব্যান্ড এর সাথে,২০১১ সালে স্কলারশিপ পান স্বর্ণভূমি আকাদেমি অফ মিউজিক (Swarnabhoomi academy of music, Chennai) থেকে। একদিকে Prasanna Ramaswamy( Guitar Player and composer), Dafnis Prieto ( American Cuban drummer),Ferenc Nemeth( Hungarian drummer),Lara Bello (“Best Spanish Artist 2010” by the World Music Charts Europe,WMCE), Carmen Staaf( American pianist) অন্যদিকে Jordan rudess (American Keyboardist), Victor wooten (bass guiter player), L. Shankar (violinist) এঁর মত গুণী, বিখ্যাত তথা বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞের সান্নিধ্যে প্রশিক্ষা লাভ করেছেন স্বর্ণভূমিতে।

“They teach they learn, আমি ওখানে শিখেছি তো বটেই আবার হিন্দুস্থানী সঙ্গীত শিখিয়েওছি, স্বর্ণভূমি তে আমি গিয়েছিলাম গিটার বাদক হিসেবে, ওখান থেকে বেরিয়েছি সরোদ বাদক হয়ে, যদিও আমি সব ধারার সঙ্গীত শিখেছি, কিন্তু আমি উপলব্ধি করলাম যে Mississippi এর ধারে আমি জন্মাইনি,আমি জন্মেছি গঙ্গার ধারে, তাই গিটারটা কাঁধ থেকে নামিয়ে আমি সরোদ কেই কোলে তুলে নিলাম। কারণ আমি আমার সঙ্গীতে যে মাধুর্য আনতে পারব অন্যের culture কে আশ্রয় করে তা কখনোই সম্ভব নয়। যে inspiration আমি খুঁজছিলাম তা আমি স্বর্ণভূমি থেকেই পেলাম। এখন পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের কাছে আমি শিক্ষারত, ওনার কাছে আমি সঙ্গীত নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি বাইরের চাওয়া ভুলে নিজের মনের কথা শুনতে শুরু করলাম“

A Tribute to Satyajit Ray
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

‘আহারে’ মন

এই প্রশ্নের বোধহয় কোন উত্তর বা সমাধান পাওয়া যাবে না।  

জীবন বদলাচ্ছে, মঞ্চ কেন্দ্রিক শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এই ডিজিটাল যুগে মুখ থুবরে পড়ছে,কোনোদিন কোনো শিল্পীই হয়ত ভাবেন নি, যে এভাবে এতদিন অনুষ্ঠান না করে ঘরে বসে থাকতে হবে। সোশাল মিডিয়া (You tube, Facebook) আমাদের মনোরঞ্জন ছাড়াও যদি আর্থিক উপার্জনের একটা বিশাল দিক হয়ে ওঠে তবেই এই যুগে শিল্পীদের উপকারে আসে। Security policies আরো মজবুত হওয়া উচিত। নাহলে একজন শিল্পীর কষ্ট করে তৈরি করা কাজ অন্যের নামে প্রচার হয়ে যাচ্ছে যেটা খুবই অপ্রীতিকর। তাছাড়া, সম্মানের সাথে সাথে সাম্মানিকটা খুব জরুরী কারণ সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি তাদের ‘আহার’-এও মন দিতে হয়।

“Concert এর call পাওয়ার জন্যে এক ধরনের ‘পদ্ধতি’ অনেকে অবলম্বন করেন, কিন্তু আমি সেটা পারিনা, তাই যারা স্বাধীন ভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, সোশ্যাল মিডিয়ার তাঁদের জন্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমার অনেক কাজই আমার অনুমতি ছাড়া অনেকে তাঁদের কাজে ব্যবহার করেন, কিন্তু কি করে তাঁরা এটা করতে পারেন? তাহলে কি স্বাধীন ভাবে নিজের কোন কাজ করা যাবে না? আমি যেহেতু সরোদে বিভিন্ন ধারার সঙ্গীত বাজাই, সেহেতু অনেকেই তাঁদের কাজে Background music হিসেবে সেটি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করেন, কেউ কেউ আবার লিখে দেন Background music by Prithwidev bhattacharyya, বুঝলাম না, আমি তো আবহ করিনি, আমার ভিডিও থেকে বিনা অনুমতি তে মিউজিক নিয়ে তাঁদের কাজে ব্যবহার করে আমাকে background score এর খেতাব দেওয়া হচ্ছে, এর কোন উত্তর নেই আমার কাছে. এই চুরির নালিশ আমি কোন থানায় করব? তবে আমার কাজ তো থেমে থাকতে পারে না, আমার একনিষ্ঠ শ্রোতাদের জন্যে আমাকে আরও কাজ করতেই হবে”

Satkahon - Prithwidev | সাক্ষাৎকারে সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

সাফল্যের ষোলোকলা

প্রয়োজন সাধনা,সঙ্গীতের প্রতি এক নিপাট ভালোবাসা, কেউ ঈশ্বর এর কাছে দুই হাত জোড় করে, কেউ দুই হাতে তাকে বন্ধু ভেবে বুকে টেনে নেয়। সরোদ,যেটির সাথে জড়িয়ে শুধুই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তাকে আপন করে নিয়ে তার শব্দ তরঙ্গে গুপি বাঘা, সত্যজিৎ রায় কিংবা রবিঠাকুর এমনই আসেনি, এসেছে সঙ্গীতের সাথে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে। সব শেষে তাঁর কথায়…

“সঠিক ভাবে শেখাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, কিছু না করে চুপ করে বসে থাকলে হবে না, নিজের কি ভালো লাগে সেটা জানতে হবে।বুঝতে হবে, রেওয়াজ করতে হবে, আর শুনতে হবে। শোনো, শুনে যেটা তোমার ভালো লাগে করো।সাফল্যের প্রত্যাশায় বসে থাকলে সাফল্য আসবে না, অনুশীলন চাই কারণ যতটুকু আমি জেনেছি শেখানো যায় না, শেখা যায়, “

তুমি রবে নীরবে
Interview – Prithwidev Bhattacharyya | Satkahon.in

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

3 thoughts on “Satkahon – Prithwidev | সাক্ষাৎকারে সরোদ বাদক পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য”

  1. Appur shuru string instrument ey or nyak royechhe janata, or galludir maaney or didir rabindrasangeet gulo o tanpurar taare bajato ekta fountain pen er dhakna angule goliye. Or string instrument er sense aar kaan prothom otey e chena jaay. Tokhon o chaar bochhorer ekta geccho.

    Munia ( or pistuto didi)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *