Satkahon Interview – Sumana Bhattacharjee – Sitar Player | Sunday Exclusive

Satkahon Interview – Sumana Bhattacharjee – Sitar Player

Satkahon Interview – Sumana Bhattacharjee – Sitar Player

রুপে লক্ষ্মী, গুনে সরস্বতী সেতার বাদিকা সুমনা ভট্টাচার্য। বয়সে তিনি বেশ ছোট। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা অনেকের থেকেই বেশী।

কাকা শ্রী পিন্টু ভট্টাচার্যের স্নেহের লালনে বড় হয়েছেন তিনি। কাকাই তাঁর মা-বাবা কাকাই তাঁর গুরু।

সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিলেন জীবন গল্পের প্রথমাংশ কারণ এখনও তাঁর অনেকটা পথ চলা রয়েছে বাকি……   

সুমনা, সাতকাহনে স্বাগত। আপনি তো খুবই অল্পবয়স থেকে সেতার শিখছেন।

একটু ছোটবেলার কথা জানতে চাই.. কার অনুপ্রেরনায় এই সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ?

সাতকাহনকে ধন্যবাদ।

ছোটবেলার কথা বলি, আমার জন্মের সময় মা মারা যান আর বাবাকে হারাই চার বছর বয়সে। মা চলে যাবার শোকটা বাবা নিতে পারেননি আসলে।

আমি মানুষ হয়েছি আমার কাকার কাছে।

আমার সেতারের হাতে খড়ি সেই চার বছর বয়সেই আমার ঠাকুরদা শ্রী রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের হাতে।

আমার পরিবারে তিনপুরুষ সেতার তৈরির ব্যবসার সাথে যুক্ত। ঠাকুরদাকে দেখেছি সেতার বানাতে।

চার বছর বয়সেই উনি আমাকে একটা ছোট্ট সেতার তৈরি করে দেন। আমার খেলনা বলতে আমি সেতারকেই চিনেছি সেই সময়।

ঠাকুরদা, ঠাকুমা, কাকা প্রত্যেকেই সেতার বাজান। এমনকি শুনেছি বাবাও ভালো বাজাতেন। তাই সংগীতকে সাথে নিয়ে আমি বড় হয়েছি।

তাহলে সেতার শেখা কি শুধু পরিবার থেকেই?  

আমার হাতে খড়ি ঠাকুরদার কাছে। তারপর কাকা শ্রী পিন্টু ভট্টাচার্যের কাছে শিখেছি।

এরপর পণ্ডিত দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমি ১০ বছর সেনিয়া মাহিয়ার ঘরানায় তালিম নিই।

তার পরবর্তীকালে সরোদ শিল্পী পণ্ডিত রণজিৎ সেনগুপ্তের কাছে ওই একই ঘরানায় তালিম নিয়েছি।

এই দীর্ঘদিনের শিক্ষা গ্রহণের পর কখনোই আপনার শেখাতে ইচ্ছে হয়নি?

হ্যাঁ মঞ্চ অনুষ্ঠানের পাশে পাশে কলেজ জীবন থেকেই আমি সেতার শেখাই।

আমার অনুষ্ঠান দেখে অনেকেই বলেন তাঁদের ছোট ছেলে বা মেয়েকে শেখানোর কথা। তাই আমি শেখানো শুরু করি।

তাছাড়া আরও একটা চিন্তা কাজ করেছিল যে কাকা আমার সব দায়িত্ব নিয়েছেন। উনিই আমার বাবা আমার মা, আমি বড় হচ্ছি ..তাই যদি নিজে কিছু করি তাহলে নিজেরও ভালো লাগবে।

সেই ভেবেই শেখানো শুরু করি।

এখন দেশে বিদেশে মিলিয়ে আমার ২০-২৫ জন মত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। প্রায় ৬-৭ বছর হল আমি শেখাচ্ছি।

প্রথাগত শিক্ষা কি সংগীত নিয়েই?

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি সেতার নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করেছি।

স্নাতক স্তরে আমি প্রথম এবং স্নাতকোত্তরে আমি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি।

স্নাতক স্তরে যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগে প্রথম হওয়ার জন্যে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিরোধ বরণ মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

খুব ছোট থেকেই তো আপনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছেন…

আমি মায়া মিত্র মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পাই অরবিন্দ ইন্সটিটিউট থেকে।

ওই বছরই মাত্র ১২ বছর বয়সে আমি মিনিস্ট্রি অফ কালচার এর পক্ষ থেকে ন্যাশনাল স্কলারশিপ (২০০৫-২০১২) পাই।

চ্যালেঞ্জ ট্রফী জিতেছি একবার মুরারি স্মৃতি সংগীত সম্মেলন (২০১৩) এবং আরও একবার ডোভারলেন মিউসিক কনফারেন্স (২০১৫) -এর প্রতিযোগিতায়।

নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মান অর্জন করি আসাম (তিন্সুকিয়া) থেকে।

এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত যুব উৎসবে আমি দ্বিতীয় হই।

গুরুজী বলতেন এমন কোন কথা যা আপনি এখনও মেনে চলেন…

আমার গুরুজীরা যা বলতেন আমি সবই মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু মনে আছে গুরুজী পণ্ডিত দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলতেন “এক সাধে যে সব সাধে সে।”

গুরুজী আমাকে শেখা শুরুর প্রথম ৭-৮ বছর শুধু হাত সাধা অভ্যাস করিয়েছিলেন।

এখন দেখি ১০ বছর শিখেই অনেকে ভাবে আমি অনেক কিছু শিখে ফেলেছি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এর উল্টোটা হয়েছিল।

আমার ঠাকুরদা ঠাকুমাও বলতেন যত বেশী হাত সাধা রেওয়াজ করবে পরবর্তীকালে রাগরাগিণী শিখতে অসুবিধা হবে না।

ফলে সত্যিই কি হয় গুরুজী যখন আমার রাগরাগিণী শেখাতে শুরু করেন তখন আমি সহজেই সেটা আয়ত্ত করতে পেরেছি।

Satkahon Interview – Sumana Bhattacharjee – Sitar Player
কাকার সাথে সুমনা

সংগীত- নৃত্যের সাথে যেমন সকলে অতি পরিচিত, যন্ত্র সঙ্গীতের সাথে কিন্তু সেভাবে এখনও অনেকে পরিচিত নন।

অনেকেই এখনও সেতার-সরোদ-তানপুরা-বীনা কিংবা অনান্য তার-বাদ্যযন্ত্র এক নিমেষে দেখে চিনে ফেলতে পারেন না।

রাগরাগিণী বোঝার বা ভালোবাসার মত মানসিকতা এখনও সেইভাবে সকলের মধ্যে তৈরি হয়নি।

যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে কি মনে করেন পরিবর্তন সম্ভব? নাকি মনে করেন শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্র ও রাগরাগিণী সকলের জন্যে নয়?

কখনোই সেটা মনে করি না। সংগীত সকলের। অবশ্যই স্থান বিশেষে তার প্রচার শিল্পীদের দায়িত্ব।

এটা সত্যি যে রাগরাগিণীর যে বিস্তার তা সকলের ভালো নাও লাগতে পারে।

সেই জন্যে প্রথমে যন্ত্রের সাথে বা শব্দের সাথে পরিচয় করানো এবং সেটা সেটা শোনার প্রতি ভালবাসা তৈরি করা দরকার।

শ্রোতা যা শুনতে পছন্দ করেন সেই অনুযায়ী যদি আমি কিছু বাজাই যেমন কেউ যদি রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ করেন আমি যদি তা বাজাই তাহলে আমার যন্ত্রের প্রতি প্রথমে তাঁর ভালোলাগা তৈরি হবে।

এরপর যদি আমি তাঁকে রাগরাগিণী শোনাই তিনি কিন্তু শুধু এই সুর এই শব্দ শোনার জন্যে তিনি তা শুনবেন। এটা আমি মনে করি।

আর আমি নিজেও এই ভাবে সঙ্গীতের প্রচারে ব্রতী।

এখনও পর্যন্ত সঙ্গীত জীবনে লড়াই কতটা করতে হয়েছে?

সংগীত জীবন বলে আলাদা কিছু ভাবি না। জীবনটাই আমার সঙ্গীতের জন্য। বাবা-মায়ের মুখটাও সেভাবে মনে নেই।

কাকা আমাকে মানুষ করবেন বলে বিয়ে করেননি। তাই কাকা আমার সব কিছু।একাধারে আমার পরিবার অন্যধারে আমার গুরু।

তাই চিরকাল মনে হয়েছে নিজে কিছু করব। এমনও হয়েছে অনুষ্ঠানে আমাকে হিন্দি গান বাজাতে হয়েছে, সেখানে মানুষ সেতার বাদ্যযন্ত্রটাই চেনেন না।

তেমনই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে যখন পরিবেশন করেছি সেই কষ্টটা ভুলে গেছি।

একা একা পড়াশুনা করেছি কোন প্রাইভেট টিউটরের সাহায্য ছাড়াই। তবে কাকা অনেকটা সাহায্য করেছেন।  

এটা একধরনের লড়াই।

আর এক ধরণের লড়াই করেছি আমার সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে।

আমার বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে অনেকেই সেভাবে আমার সঙ্গীত চর্চা মেনে নেননি। সেই মুহূর্তে স্বামীও আমার পাশে এসে দাঁড়াননি তাই সরে আসি।

পরবর্তীকালে তিনি তাঁর নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং আমার পাশে এসে দাঁড়ান।আমাকে সমর্থন করেন।

আসলে কোন কিছুর মুল্যেই সঙ্গীতকে আমি ভুলে যেতে পারি না। জন্মের পর থেকে সঙ্গীতই আমার সব কিছু।  

এখানেই আমার লড়াই এর সার্থকতা যে আমি সংগীতকে হারিয়ে যেতে দিই নি।

আমি সঙ্গীতের পাশে ছিলাম সব কিছু ছেড়ে। জানি একদিন সংগীত আমার পাশে দাঁড়াবে।

সুমনা, এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁদের সব কিছু থেকেও পাশে থাকার মত কেউ নেই। আপনি যতটা লড়াই করেছেন, তাঁর নিরিখে তাঁদের কি পরামর্শ দেবেন?

আমি বলব জেদ রাখতে হবে যে আমার যা স্বপ্ন আমাকে তা পূরণ করতেই হবে। একেবারে ছোট বেলায় নিজেদের কিছু করার থাকে না।

কিন্তু একটু বড় হবার পর যদি নিজে কিছু চেষ্টা করে শেখা যায় তাহলে স্বপ্ন সফল হতেও পারে।

তবে বলব যে হয়ত সেই ভাবে তিনি জনপ্রিয়তা নাইবা পেলেন ইচ্ছেটা বা ভাললাগাটা ধরে রাখতে হবে।

ভাবতে হবে যে, একদিন যখন আমার কেউ থাকবে না তখন সংগীত, শিল্প আমার সাথে থাকবে।

জনপ্রিয়তার জন্যে নয় নিজের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানাতে জেদ রাখতে হবে। লড়াই করতে হবে। তবেই স্বপ্ন সফল হবে।   

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

2 thoughts on “Satkahon Interview – Sumana Bhattacharjee – Sitar Player | Sunday Exclusive”

  1. সত্যিই খুব ভালো লাগল এই ইন্টারভিউ টা। একটা দৃষ্টান্ত মুলক সঙ্গীত জীবন। অনেক উৎসাহ দায়ক ও বটে। এমন মহান শিল্পীর সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি। অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *