Satkahon Interview – Soma Das | Singer | Sunday Exclusive

Satkahon Interview – Soma Das
লন্ডন নিবাসী প্রবাসী বাঙালী জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সোমা দাস। এক গাল হাসি সব সময়ের সঙ্গী তাঁর।
তাই যেন দূরে থেকেও তিনি বড়ই কাছের মানুষ আমাদের।
সুদূর লন্ডন থেকে তাঁর জীবনের টুকরো স্মৃতি তিনি তুলে ধরলেন সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে।
দিদি আপনার থেকে সবার প্রথমে যা শুনতে চাইব তা হল, এই যে আমরা আজ আপনাকে আমাদের প্রিয় দিদি হিসেবে আমাদের শিল্প জগতে পাচ্ছি,
একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে পাচ্ছি, এর জন্যে কাকে আমরা সব থেকে বেশী ধন্যবাদ জানাব?
অবশ্যই আমার বাবা মা কে সবার প্রথমে ধন্যবাদ জানান উচিত।আমিও তোমাদের সকলের থেকে এত ভালোবাসা পাচ্ছি।
বাবা আমাকে খুব ছোট বয়সে গান শিখতে ভর্তি করেন।আমাকে বাড়িতে গান শেখাতে আসতেন মাস্টারমশাই, শ্রী নিতাই দাস।
তিনি বলতেন, “সোমা আমার ছাত্রীদের মধ্যে একজন যে আমি যা শেখাই তা নিয়মিত রেওয়াজ করে”, এটা আমার মনে আছে।
তাছাড়া বাড়িতে বাবা প্রচুর ক্যাসেট, রেকর্ড কিনে আনতেন।
খুব জোরে না হলেও গুনগুন করে বাবাকে গান গাইতে শুনেছি। তাই ছোট থেকেই গান শোনার একটা অভ্যাস আমার ছিল। যেটা পরবর্তীকালে আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছে।
এছাড়াও আমার সঙ্গীত গুরুদের কাছে আমি চিরঋনী। আমি শ্রী নবীন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে দীর্ঘদিন পুরাতনী কবিগান শিখেছি।
বর্তমানে আমি শ্রীমতি লোপামুদ্রা মিত্রের কাছে আধুনিক বাংলা গান, শ্রী অভিজিৎ বসুর কাছে লোকগান শিখছি।
এছাড়া যার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলেই নয় তিনি আমার স্বামী, আমার বন্ধু ডঃ কিংশুক দাস।
তাঁর সাহায্য ছাড়া গানটা হয়ত এতটা স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ছোটবেলায় গান নিয়ে সব থেকে মনে রাখার মত স্মৃতি কোনটা?
আমি তো উত্তর কলকাতার মেয়ে। আমাদের পাড়ায় প্রায়শই পুজো হত। প্রতিটা পুজোতেই আমার ডাক আসত উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনের জন্যে।
পাড়ার ছেলেরা আমার বাড়ি থেকে হারমোনিয়াম, তবলা নিয়ে যেত।
অনুষ্ঠানের পর আমার হাতে একটা মস্ত বড় মিষ্টির প্যাকেট দিত। সেটা নিয়ে আমি আনন্দে লাফাতে লাফাতে বাড়ি আসতাম।
গান নিয়ে ছোটবেলার কথা ভাবলে সে কথা আমার আজ ও মনে পরে। (হাসি)
পেশাগত সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছে কবে থেকে?
পেশাগত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত উপস্থাপন করলেও, না, আমি কখনোই ভাবিনি ‘কেবলমাত্র সঙ্গীত’কে পেশা হিসেবে নির্বাচন করব।
মূল পেশা হিসেবে বর্তমানে আমি লন্ডনের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি।
কারণ শুধুমাত্র সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নির্বাচন করার জন্যে অনেকটা সাহস লাগে। আমি বলব এখনও আমার সেই সাহস আসেনি।

এখন তো প্রতিযোগিতার যুগ, আপনার ছোটবেলায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের কোন স্মৃতি?
আমি ছোটবেলায় প্রচুর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি আমার বাবার উদ্যোগে।
তবে কি জানতো আমার প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার আনন্দটা ছিল অন্য জায়গায়।
সকাল থেকেই নানান ভালো-মন্দ খাবার, আদর যত্ন করা হত আমাকে যাতে আমি মনের আনন্দে গান গাইতে পারি।
সেইটা ছিল আমার কাছে সব চেয়ে বেশী খুশির কারণ। (হাসি)
হা হা হা, আচ্ছা এবার বড় বয়সে চলে আসি, কিছু গানের অ্যালবাম এর কথা যদি বলেন..
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। গানের অ্যালবামের কথা আমি ভাবি লন্ডন আসার পর।
আমার প্রথম অ্যালবাম শ্রী দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গীত পরিচালনায় কবিগুরুর গান “আমার প্রানের মানুষ”।
এর পর কবিগুরুর ধর্ম মোহ কবিতা ও লালনের “জাত গেলো জাত গেলো” গানটির মিশ্রনে আমি একক গান করি “এক জাতি এক প্রান”।
এরপর রুপঙ্করের কথায় ও সুরে “একুশের গান”, আমার শেষ কাজ সৈকত কুন্ডুর কথায় ও জয় সরকারের সুরে “ফিরে আসছি”।
তবে খুব তাড়াতাড়ি আমার একটি নতুন গান আসছে যার নাম “পুজোর হাওয়ায়”। গানের সুর দিয়েছেন তাপস দত্ত মার্কো এবং কথা লিখেছেন গৌতম সুস্মিত।
উল্লেখযোগ্য মঞ্চ অনুষ্ঠান..
আমি মঞ্চ অনুষ্ঠান অনেক করেছি, তবে আমার কাছে যেটা সব থেকে গর্বের বিষয় সেটা হল যখন আমি লন্ডনের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রন পাই।
কারণ, এদেশে থেকে আমি আমার মাতৃভাষাকে, আমার বাংলা গানকে আমি এক ভিন্ন ভাষীর কাছে তুলে ধরছি, তাঁরা আমাকে সানন্দে গ্রহণ করছেন এটাই সব থেকে বড় পাওনা।
এখনও পর্যন্ত আমি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রন পেয়েছি তা হল SOAS University of London ও De Montfort University Leicester.
দিদি, গান নিয়ে আপনি বিভিন্ন ভিন্নধর্মী কাজ করেছেন, করছেনও। এই রকমই কিছু কাজের কথা যদি বলেন..
হ্যাঁ, আমি Street Musicians দের নিয়ে একটি কাজ করেছি। আসলে ভারতবর্ষের পথে পথে কিংবা ট্রেনে যারা গান করেন তাঁদের অন্য চোখে দেখা হয়।
কিন্তু এদেশে (লন্ডন) আসার পর আমি প্রথম অনুভব করি যে Street Musicians দের কতটা সম্মান এখানে সবাই করেন।
এখানে কিন্তু তাঁদেরকে শুধুমাত্র সঙ্গীতশিল্পীর চোখেই দেখা হয়।
এমনকি তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল বা ইন্সটাগ্রাম আকাউন্ট ও রয়েছে। তাই তাঁদের দেখেই আমার পথ সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করার কথা মনে আসে।
এই বছর কলকাতায় প্রথম Street Music Festival অনুষ্ঠিত হয়।
আমার কাছে এটা গর্বের বিষয় যে সেই অনুষ্ঠানের প্রধান তিন উদ্যোগতাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম।

প্রবাসী বাঙালী হিসেবে বাংলা গানের প্রচারে একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কি ভাবেন?
দেখো আমি যখন লন্ডন আসি তখন দেখেছি অধিকাংশ মানুষকেই ট্র্যাকে গান গাইতেন। কিন্তু আমি তা কোনোদিনই করিনি।
যেসব গানের ট্র্যাক সহজে পাওয়া যেত সেই গানই বেশী গাওয়া হত।
কিন্তু আমার পরিবেশনায় থাকত লোপা দি, কিংবা সুমনের গান। নতুন বাংলা গান।
এভাবেই কিন্তু নতুন গানের প্রচার সম্ভব বলে আমার মনে হয় আর আমি সেই চেষ্টাই করেছি।
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কোথায় নিজেকে সকলের থেকে আলাদা মনে হয়?
ব্যাক্তিত্ব, বক্তব্য এবং পরিবেশনা সকলকে একে অপরের থেকে আলদা করে তোলে।
গানের সাথে ছোট ছোট কবিতা বলা বা ভিন্ন ধরণের গান পরিবেশনা এগুলোই আমাকে আমার নিজস্বতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শ্রোতাদের উদ্যেশ্যে কোন বার্তা?
শ্রোতারা আছেন তাই আমি আছি।
যে সাহস, যে উৎসাহ তাঁরা আমাকে দিয়েছেন তা যেন চিরকাল আমার সঙ্গে থাকে। এইটুকুই আমি চাইব।