Satkahon Interview – Shankar Halder | Suchitra Music | এক জয়যাত্রার গল্প
Satkahon Interview – Shankar Halder | Suchitra Music
শিল্পী হতে পারেননি তিনি, কিন্তু শিল্পের প্রতি অনুরাগ তাঁকে মফঃস্বল থেকে কলকাতা টেনে এনেছে।
‘একলা চলো রে’ কবি বানীকে জীবন মন্ত্র করে একের পর এক কাজে নাম লিখেছেন শিল্পী হৃদয়ে।
তিনি শঙ্কর হালদার। সুচিত্রা মিউজিকের কর্ণধার।
শঙ্কর আপনার কাছে প্রথমেই জানতে চাইব সুচিত্রা মিউজিকের গোড়াপত্তনের কথা। ব্যক্তিজীবনে সঙ্গীতশিল্পী না হয়েও সঙ্গীতের প্রতি এত অনুরাগ… ঠিক কিভাবে?
আসলে আমার গান গাইতে ভালো লাগত। পড়াশুনা চলাকালীন স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছি।
আমারও ইচ্ছে ছিল গান শেখার, কোনরকম ভাবে হয়ে ওঠেনি। তারপর উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা এসে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করি।
ফিরে এসে চাকরির চেষ্টা করি। কিন্তু গান নিয়ে একটা পাগলামি ছিলোই, তবে কেউ বোঝেনি যে একদিন পছন্দের শিল্পীদের জন্য গান বানাবো।
আমি নিজেও জানতাম না এমনটা হবে। প্রবল ইচ্ছেশক্তিই সবটা সত্যি করেছে।
সাধারন ঘরের ছেলে। খুব কাছের বন্ধুর থেকে তাচ্ছিল্য পেয়েছিলাম ওঠাবসা, মেলামেশাটা খুব সাধারন ছিল বলে।
মহালয়ার রাতের এক অনুষ্ঠানের টিকিট হন্যে হয়ে খুঁজেছিলাম পাইনি, দুটো টিকিট একজনের কাছে ছিল…আমাকে দিয়ে তিনজন। কাকে বাদ দেবে বুঝতে পারেনি…আমি না থাকলে ওরা যেতে পারত বা রাতটা আনন্দ করতে পারত বা আমার জন্যেই ওরা যেতে পারল না… এধরনের কথা আমাকে বলা হয়েছিল।
যারা বলেছিল তারা কটা বাংলাগান শুনেছে জীবনে সে নিয়ে সংশয় আছে। সেটা লোপাদি ও শুভমিতাদির একটি অনুষ্ঠান ছিল সায়েন্সসিটি অডিটোরিয়ামে।
এখন সেই বিখ্যাত কিছু মানুষগুলোরই কাছের হতে পেরেছি, ফোনে ভালোমন্দ খোঁজ নেন বা সরাসরি কথা হয়, দেখা হয়…আড্ডা হয়।
শুরুর দিকে কতটা সমস্যা হয়েছে সঙ্গীতজগতের একজন হয়ে উঠতে?
নিজে একটু প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ভাবলাম গান নিয়েই এবারে কিছু করবো। নতুন কিছু করার পাগলামি বলতে পারো…প্রথমে কলকাতায় পিয়ানো শিখতাম, সেখানে অল্পসল্প ধারনা পাই কিভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হয়।
তারপর অনেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি অনেকেই গুরুত্ব দেননি প্রথমে…ঠিকঠাক মানুষের কাছে পৌছোতে তাই অনেকটা সময় লেগেছে। অনেকের সাথে দেখা করেছি, কাজ এগোয়নি।
অল্প বাজেটে অনেক কাজ করেছিলাম, সেগুলো ফেলে দিতে হয়েছে। পরে যখন শুরু হল দারুন ভাবে সবটা হল…আমি পারলাম এটা ভাবতে অবাক লাগে।
উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতি সপ্তাহে কলকাতা যাতায়াত করাটা সব থেকে বড় স্ট্রাগল।
না ঘুমিয়ে, না খেয়ে শুটিং স্পটে বা রেকর্ডিংয়ে সময়মতো থাকাটা চ্যালেঞ্জিং লাগত। ভীষন অনিয়মে নিজের দিকেই তাকাতে পারছিলাম না কিছুদিন।
নিজের ছবি তুলতাম না লজ্জায়। একেকটা কাজের সাথে অনেক মানুষ থাকেন, তাদের সবার ডেট মিলিয়ে একসাথে হাজির করানোটা আসল চ্যালেঞ্জ।
উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলা গান নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ সম্ভবত এই প্রথম।
কার কার সাথে কাজ করেছেন এখনও?
শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়তি চক্রবর্তী, মধুরা, মেখলা, অন্বেষা দত্তগুপ্ত, বৃষ্টিলেখা নন্দিনী , অরুনাশীষ, গৌরব, রুপক, তৃষা, অনামিকা দত্ত, দীপান্বিতা, অদিতি মুন্সী এদের মত শিল্পীদের সাথে কাজ করেছি।
প্রত্যুষ বন্দোপাধ্যায়ের মত গুনী ব্যক্তিকে পেয়েছি সঙ্গীতায়োজক হিসেবে।
দেব গৌতম, দেবজিত রায়, ভাস্বর ভট্টাচার্যের মত সুরকারদের পাশে পেয়েছি। অভিষেক দা, চন্দ্রানীদির মত গুনী গীতিকার আমার জন্যে লিখেছেন।
তবে শুভমিতাদির সাথে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা।
একজন ভক্ত তার প্রিয় শিল্পীর সাথে কাজ করছে…এর থেকে বেশী আর পাওয়ার কি থাকতে পারে! ওনার গান শুনেই বাংলা গানের জগতটাকে চিনেছি আমি।
এখন তো মহামারীর জন্যে সঙ্গীতজগতের অবস্থা খুবই সংকটময়। বিপুল ক্ষতির মুখ দেখছে অডিও কোম্পানি গুলি। এ প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন?
হ্যাঁ। ক্ষতি তো ভীষণ রকম ভাবেই হয়েছে। অডিও স্টুডিও বন্ধ। আমাদের কয়েকটা কাজ আসার পরেই লকডাউন চালু হয়, এরপর অনেক কাজ আটকে যায়…আমি উত্তরবঙ্গে এখনো আটকে আছি।
তবে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হচ্ছে…কদিন আগে নতুন গানের রেকর্ডিং হল, শুটিং এর কাজ হলেই সেগুলো রিলিজ হবে ধীরে ধীরে।
প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে এরমধ্যেই বেশ কিছু কাজ আপনি করেছেন। তবে নতুনদের নিয়ে কিছু ভাবনা?
আবির বিশ্বাস, পীযুস দাস, প্রজ্ঞা এদের মত নতুন প্রতিভাদের সাথে কাজ করছি। আগামী দিনেও হবে। অনেকেই কাজ করতে চেয়েছে। সুচিত্রা মিউজিক সুস্থ রুচির উন্নতমানের কাজ করতে আগ্রহী, অল্প তবে ভালো কিছু।
প্রধানত নতুন বাংলা গান থাকবে, সাথে ফোক বা রবীন্দ্রনাথের গানও। প্রতিটি গানের ঝকঝকে মিউজিক ভিডিও থাকছে।
এরপরে টেলিভিশনের পরিচিত মুখ বাংলা গানের ভিডিওতে এনে মৌলিক গানকে আরো বেশী মানুষের কাছে পৌছে দেবার ভাবনা রয়েছে।
আপনি নিজেও এই জগতে নবীন বলা যায়, কতটা সাড়া পাচ্ছেন মানুষের থেকে?
একদম নতুন হিসেবে যথেষ্ট ভালো সাড়া পেয়েছি, অনেকে কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। একা লড়ে যেটুকু করতে পেরেছি তাতে সন্তুষ্ট।
সবাই এই ভাবেই সাথে থাকলে আরো ভালো কাজ করতে পারবো বলে আশাবাদী। এই সময়ে একদম নতুন বাংলা গান মানুষকে শোনানোই সব থেকে বড়ো স্ট্রাগল।
সবাই যেখানে রিমেক বা কভার করে সেফলি খেলছেন, সেখানে একদম নতুন গান নিয়ে কাজ করা সত্যিই একটু ভয়ের বা চ্যালেঞ্জের। তবুও আশাবাদী।
সাড়া মিলছে।
আগামী দিনের কাজে কোন চমক?
শ্রেয়া ঘোষালের সাথে কাজ করার কথা হচ্ছিল প্রথমে, থেমেছি। শুরুতেই রিস্কটা নেইনি। গানও তৈরী। সেটাই পরবর্তীতে করার ইচ্ছে আছে।
এছাড়া জয় সরকার, নচিকেতা, ইমন চক্রবর্তী, কৌশিকি চক্রবর্তীদের মত গুনী মানুষদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
রঙিন জগতের কাঁটা ভরা পথে এবং এই প্রতিযোগিতার যুগে মনে সাহস আনেন কি ভাবে?
আসলে প্রতিদিন শিখছি… নতুন নতুন পরিস্থিতি, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অনেককিছু শেখাচ্ছে। এখন একটু সহজ হয়েছে সব ব্যাপারটা। প্রথমে খুব চাপ হয়েছিল। এতো শিল্পীবন্ধুরা পাশে রয়েছেন সেটাই সাহস দেয়।
আমি কিছু নই, সবাইকে একসাথে করার দায়িত্বটুকু কেবল আমার থাকে, আসল কাজ করেন শিল্পীরা…ওনারাই সব।
ব্যবসার কথা ভেবে সস্তা গান আমরা করবো না, শিল্পীরা যে গান গেয়ে নিজেরা তৃপ্তি পান আমরা তেমন কাজে তাদের পাশে আছি…শিল্প ও শিল্পীর যথাযত মর্যাদা দিয়ে কাজ করতে চাই। Slow but Steady নীতি নিয়ে চলবো।
বন্ধু এগিয়ে চলো , পাশে আছি।
এগিয়ে চলো, পাশে আছি। গান শুধু গান চাই।
Pingback: Satkahon Review – বাংলা গজল - মন দেওয়া মন নেওয়া হয়েছিল - Satkahon