Satkahon Interview – Samadipta Mukherjee | Oxy Town-এর Mozart Girl
Satkahon Interview – Samadipta Mukherjee
সমদীপ্তা মুখার্জী নামটা এখন ভারতবর্ষ পেরিয়ে পৌঁছে গেছে অনেক দূর। তাঁকে চেনেন না এমন মানুষ বোধহয় খুব কম.
মোৎযার্ট সিম্ফনী ৪০ ভারতীয় সরগম এ গেয়ে তিনি মুগ্ধ করেছেন সঙ্গীতের সরস্বতী বিদুষী লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে অভিনেতা আর.মাধবন,অনুপম খের, চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এবং আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষকে।
কিন্তু কেমন ছিল বিখ্যাত হবার ঠিক আগের জীবনটা?
খোলামেলা আলোচনা করলেন সাতকাহন এর সাথে…
সমদীপ্তা প্রথমেই জানাই অনেক অভিনন্দন।ইতিমধ্যেই যারা আমার মতই তোমার ভক্ত হয়ে পরেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে তোমার গান শেখা শুরুর গল্পটা…
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। আসলে,আমার পরিবারের কেউ গানের সাথে যুক্ত নন, মা শিক্ষিকা আর বাবা চাকুরিজীবি।
কিন্তু বাবা আবৃত্তি করতে ভালবাসেন।তাই তিনি মনে করতেন যে পড়াশুনার পাশাপাশি জীবনে সাংস্কৃতিক একটা পরিমণ্ডল থাকা খুব জরুরী।
অন্যান্য বাঙালী পরিবারের মতই আমাকেও ছোটবেলায় গান-নাচ-আঁকা সবকিছু শিখতেই ভর্তি করেন তাঁরা এটা দেখার জন্যে যে কোন বিষয়ে আমি আগ্রহ পাচ্ছি।
শেষ অবদি গানের প্রতিই আমার সব থেকে বেশী উৎসাহ তৈরি হয়।
কার কার কাছে গান শিখেছ? এখন কার কাছে শিখছ?
পাঁচ বছর বয়স থেকে আমি গান শিখছি। প্রথম গানের হাতে খড়ি বাবার বন্ধু শ্রী স্মরজীৎ গুহরায় এঁর কাছে।
এখনও আমি ওনার ছত্রছায়ায় আছি। ছয় বছর বয়স থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখছি শ্রী কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
বর্তমানে আমি সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতী শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভয়েস ট্রেনিং ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুশীলন করছি।
এই গানের প্রেক্ষাপটে কি চিন্তাভাবনা কাজ করেছে?
শিশু কিশোর আকাদেমির আয়োজনে নন্দনে দেবজ্যোতি মিশ্র স্যার এর একটি ওয়ার্কশপে আমি যোগদান করি। সেখান থেকে পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও ভারতীয় সঙ্গীতের যোগসূত্র প্রসঙ্গে অনেক কিছু জানতে পারি।
তাছাড়া আমি western music গাইতে খুব একটা confident নই। আমার মনে হয় ওদের গানে ওরা যে আবেদন আনতে পারবে আমি সেটা পারব না। কিন্তু ভারতীয় সঙ্গীতে আমি সেটা পারব।
তাই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের মত একটা দিনে আমি মোৎযার্ট সিম্ফনী ভারতীয় সরগম এ গাইবার কথা ভাবি।
স্বরলিপি তৈরি করার দক্ষতা কবে থেকে?মোৎযার্ট সিম্ফনী ৪০ এর স্বরলিপি করতে কতটা সময় লেগেছে?
একদম ছোট থেকেই আমি যেকোনো গান একবার শুনে হারমোনিয়ামে বাজিয়ে ফেলতে পারি।
একদিন সকালে রেওয়াজ করতে বসে আমি ভাবলাম এটা আমি করতে পারি কিনা দেখি। তখন মোৎযার্ট সিম্ফনী ৪০ এর স্বরলিপি আমি অল্প একটু করেছিলাম ৩০ সেকেন্ড মত, মার্চ মাসের শেষ দিকে।
তারপর বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে যখন আমি এই ভিডিও টা করব ভাবলাম তখন মনে হল এটা আরও একটু করা দরকার।
তাই ২০শে জুন সকালে আমি বাকি স্বরলিপিটা করি আর সেইদিনই সন্ধেবেলা ভিডিও রেকর্ড করি।
একদিনে পুরো স্বরলিপি তৈরি করে না দেখে গাওয়া কিভাবে সম্ভব হল?
যেহেতু মুহূর্তের মধ্যে স্বরলিপি তৈরি করতে পারাটা আমার স্বভাব বা দক্ষতা সেহেতু এগুলো আমার মাথায় থেকে যায়। জানিনা কিভাবে কিন্তু এটা আমার একটা ক্ষমতা।
কতক্ষন রেওয়াজ করো?
আমাদের বর্তমান জীবন ভীষণ রকম ভাবে ব্যস্ততাময়,আগেকার দিনে যেমন একজন সঙ্গীতশিল্পী দিনে ৭-৮ ঘণ্টা সময় দিতেন সঙ্গীতের জন্যে আমাদের পক্ষে তা একটু মুশকিল কারণ পড়াশুনার জন্যেও বেশ কিছুটা সময় চলে যায়।
তবুও আমি নিয়মিত দুবেলাই ২ ঘণ্টা করে হলেও রেওয়াজ করি।
গুরুজী কল্যাণ চট্টোপাধ্যায় আমাকে বলেন “কোন কারণে রেওয়াজ না করতে পারলেও ১০ মিনিট তুই হারমোনিয়াম এর সামনে বসবি” সেটা আমি ভীষণ ভাবে মেনে চলি।
লতাজীর টুইট দেখে প্রথম কি মনে হল?
প্রথম কথা ভিডিওটা যে ভাইরাল হবে একথা আমি ভাবতে পারিনি। তাছাড়া যাকে আমরা পুজো করি, তাঁর কাছে আমার গান পৌঁছবে এ এক স্বপ্ন।
আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন করে জানাল যে লতাজী শেয়ার করেছেন আমি বেশ কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারিনি।
আমার কাছে সারাজীবনের একটা উপহার।
আরও অনেক গুনীজনেরা যেমন অভিনেতা আর.মাধবন,পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কমেন্ট এ.
বিখ্যাত সেতার বাদক পণ্ডিত নীলাদ্রি কুমার, ভায়োলিন বাদক শ্রী দীপক পণ্ডিত আমার ভিডিও রি-টুইট করেন।
এমনকি অভিনেতা অনুপম খের আমাকে ফোন করে আমার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বলেন আমাকে শুভেচ্ছা জানান এবং আমার গান শেয়ারও করেন।
জনপ্রিয়তার সাথে বিতর্কও তো তৈরি হয়েছে স্বীকৃতি নিয়ে? সেই প্রসঙ্গে তোমার বক্তব্য কি?
এই প্রসঙ্গে আমার বেশ কিছু কথা বলার আছে।
প্রথমত, এই যে পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে এই কাজটা প্রথম নয়।
অনেক সময় পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুই শিল্পীর ভাবনা মিলে যেতে পারে।
আজ যদি আমার ভিডিওটা কারুর পছন্দ হয় সে হুবহু এই কাজটাই রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তাহলে সেখানে আমি স্বীকৃতি দাবী করতে পারি।
আমি যেটা করেছি সেখানে আমি কোথাও বলিনি এই কাজটা আমি প্রথম করছি, আমার শুধুমাত্র বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উদযাপন করার জন্যে এই নির্মাণটি করেছি। তাছাড়া আমি অনেক গুনী মানুষের আলোচনা শুনেছি শিখেছি।
অনেক গুনী মানুষ আমরা ভাবার অনেকদিন আগেই এগুলো ভেবে ফেলেছেন।
রাজ্যসঙ্গীত আকাদেমীর প্রতিযোগিতায় সমদীপ্তা ভজনে প্রথম ও আধুনিক গানে দ্বিতীয় স্থান পান। এছাড়াও রাগপ্রধান,গজল প্রমুখ বিভাগে পুরস্কৃত হন তিনি।
ডোভারলেন মিউজিক আকাদেমির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন তিনি এবং Calcutta Univeristy Institute থেকেও সঙ্গীতের বেশ কয়েকটি বিভাগে পুরস্কৃত হন তিনি।
এখন অনেকেই বাংলা মৌলিক গান গাইছেন… সেইরকম কাজ কবে পাব?
খুব তাড়াতাড়ি আমার গুরু শ্রী স্মরজীৎ গুহরায় এর কথায় ও সুরে আমার নতুন গান আসছে।
এতো গুণী শ্রোতা অপেক্ষা করছেন,দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো তাহলে?
আমার বাবা বলেন কেউ যদি তোমার প্রশংসা করে তুমি শুনো এবং তাঁকে মন থেকে সহস্র ধন্যবাদ জানিয়ো। কিন্তু তারপর তা তুমি ভুলে যেয়ো। প্রশংসা যেন তোমার অহংকারের কারণ না হয়ে ওঠে,বরং এটা ভেবো কিভাবে সেই প্রশংসার মান তুমি বজায় রাখবে।
আমি সেই কথা মনে প্রানে মেনে চলি। আমি জানি এখন মানুষের আমার প্রতি যে expectations তৈরি হয়েছে আমাকে সেটার সম্মান রাখতে হবে।
সারাজীবন আমি সৎ ভাবে গান শিখতে ও গাইতে চাই। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা আমি যেন আমার সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।