Satkahon Interview – Rik Basu ( Singer) – Sunday Exclusive

Satkahon Interview - Rik Basu

সিনেমার পর্দায় স্বনামধন্য অভিনেতা শরমন যোশি, সিনেমার নাম বারিশ ২, গান ‘দিল কি গুল্লাক’ আর গাইছেন বাংলার ছেলে ঋক বসু।

 বাংলায় ব্যাটিং আর বল উড়ে গিয়ে পড়ল সোজা মুম্বাই… যাকে বলে এক বলে ছক্কা… কিন্তু এই যে বাংলা থেকে মুম্বাই উড়ে যাওয়ার পথ সেটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না তাঁর জীবনে… তবে তিনি তো থেমে থাকার ছেলে নন, লড়তে শিখেছেন, হারতে নয়।

বাংলা হিন্দি দুই ভাষাতেই একাধিক মৌলিক গান উপহার দিয়েছেন। যেমন ‘তোমাকে খুঁজি’,’পিছুটান’,’হোক না কথা’,’এলো মা দুর্গা’,’সাইবা’,’তুঝে প্যার প্যার’ কিংবা ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৮ নিয়ে তাঁর নিজের লেখা গান ‘WOLE WOLE AA’…

গত চার বছরে কয়েকশো মঞ্চ অনুষ্ঠান করলেও এবং বাংলার মানুষদের অফুরান ভালোবাসা পেলেও চিত্রপরিচালক বা সঙ্গীত পরিচালকদের থেকে পাওয়া তিক্ত ব্যবহারে তাঁর মত “মুম্বাই আমাকে শুনেছে, বাংলা শোনেনি”  …

সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে জবাব চাইলেন বাংলার সঙ্গীত ও চিত্রপরিচালকদের কাছে…

Dill ki gullak

সংগীত দুনিয়ায় পরিচিত নাম ঋক বসু… একাধিক মঞ্চানুষ্ঠান, অগুন্তি শ্রোতার উল্লাস, একের পর এক বাংলা-হিন্দি মৌলিক গান, কিংবা মুম্বাই তে প্লে ব্যাক করা সত্ত্বেও বাংলায় প্লে ব্যাক করছেন না কেনো?

(হাসি) কি বলবো বলুন তো? ‘গ ল প’ এর মত এখানেও ‘ল ব ই’ বলে একটা ব্যাপার আছে… যেটা আমার জানা নেই…

একাধিক নামী সঙ্গীত পরিচালকদের নিজের পরিচয় দিয়ে গান পাঠাতে চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা শুধু সে কথা শুনেই গান শোনার আগে আমাকে ব্লক করে দিয়েছেন…

আমি ছোট থেকে লড়াই করে বড় হয়েছি, হারতে শিখি নি। তাই সেই একই ভাবে আমি মুম্বাই এর সঙ্গীত পরিচালকদের গান শোনার অনুরোধ করেছি। তাঁরা শুনেছেন আমাকে সুযোগ দিয়েছেন।

আর আমি তো আপনার প্রশ্নের উত্তরটা নিজেই জানিনা। আমাকে কি দেখতে খারাপ? নাকি আমার জামাটা খারাপ? নাকি চুলটা ঠিক করে কাটা নেই… একটু বলুন তো !

বাংলার দাদা সৌরভ গাঙ্গুলীর একটা কথা মনে হয়, তুমি যখন কাউকে তাঁর কাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে বিচার করবে তখন তার কিছুই বলার থাকে না…

আমারও নেই… তবে আমার প্রশ্ন আছে তাঁদের কাছে… বাংলার সঙ্গীত পরিচালকদের কাছে।

যে এই যে একটা ছেলে ১২ বছর বয়স থেকে গান নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে, যেটুকু উপার্জন মঞ্চানুষ্ঠান থেকে হয় তা থেকে পরিবার সামলানোর পাশাপাশি নিজের গানের ভিডিও করছে, বা বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে গিয়ে নিজের দক্ষতা প্রমান করছে,এতটা সমর্পণ করার পরেও তাঁরা গান না শুনেই ব্লক করে দিচ্ছেন কি ভাবে?

আজ একজন অভিনেতা আত্মহত্যা করেছে বলে সবাই তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করছে। এই যে ব্যবহার গুলো আমরা পাচ্ছি, সেও পেয়েছে।

তাহলে আমরা আত্মহত্যা না করলে কি তাঁরা বুঝবেন না যে তাঁরা অন্যায় করছেন!

ডাকুন বা না ডাকুন এইটুকু যে ঋক, তোমার গায়কীতে এখানে ভুল আছে তুমি এটা নিয়ে ভাবো… এইটুকুও কি বলা যায় না?

Saibaan

ঋক, আপনি বলছেন ১২ বছর বয়স থেকে লড়াই করছেন… সেই অভিজ্ঞতা যদি একটু বলেন…

হ্যাঁ, দীর্ঘদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন। সংসারের দায়িত্ব এসে পরে বাবা অসুস্থ হবার পর থেকেই, তখন বয়স সবে ১২।

বাবা গত হয়েছেন ২০০৯ এর শেষের দিকে। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।

আমি সারারাত জেগে পড়তাম। সকালে স্কুল এ যেতাম, এসেই যেতে হত গানের শো করতে।

এমনও হয়েছে আমি শো করে এসে রাত জেগে পড়েছি ভোর পর্যন্ত।

স্কুল এ পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আমি সবে খেতে বসেছি, আমার ইভেন্ট ম্যানেজার ফোন করলেন এক্ষুনি অমুক জায়গায় চলে এসো।

আমি খাবার ফেলে রেখে ছুটে গেছি। পেয়েছি ৩০০ টাকা।

সেই সময় একটা গান খুব বিখ্যাত হয়েছিল। ‘খোকাবাবু যায় লাল জুতো পায়’

সেই গান নাকি সেখানে কেউ গাইতে পারছে না, আর শ্রোতা ওই গানই শুনবে।আমার একটা লাল জুতো ছিল। সেটা পরে আমি গানটা গাইলাম, প্রায় ২০০ এর অপর শ্রোতার উল্লাস … লাফালাফি…

জি বাংলা ‘সারেগামাপা’-এ আমি দ্বিতীয় হই। এরপর আমি যখন বাংলারই এক পরিচালকের কাছে গেছি আমাকে সুযোগ দেবার জন্যে অবিশ্বাস্য ভাবে আমাকে দারোয়ান দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে, যে দারোয়ানের পাড়ায় হয়ত আমি আগের দিনই গান গেয়ে এসেছি।

এই অপমান এই লাঞ্ছনা একটা কম বয়সী ছেলের মনে কি প্রভাব ফেলতে পারে বাংলার পরিচালকরা ভেবেও দেখেননি।

LIKE FOLLOW AND SHARE : SATKAHON NEWS ON FACEBOOK
@SATKAHONNEWS/

Wole Wole Aa

সারেগামাপার মঞ্চে আপনি বলেছিলেন ছোটবেলায় আপনি একবার একাই মুম্বাই চলে গেছিলেন…

হ্যাঁ আসলে প্রায়ই মা কে বলতাম মা আমি মুম্বাই যাব। একদিন হঠাৎই চলে গেলাম দুরন্ত এক্সপ্রেস এ।

পকেটে ৬০০ টাকা ছিল।তখন আমি ছোট। সেভাবে কিছুই বুঝি না।

কোথায় থাকব কি করব কোন আন্দাজ নেই। মা কে ফোন করে বললাম।

মা রাগারাগি করলেন স্বাভাবিক ভাবেই। তারপর চেষ্টা করেও কিছু থাকার ব্যাবস্থা করা যাচ্ছিল না। শেষ অবদি আমারই এক পরিচিতের সুবাদে যার বাড়ি থাকার কথা ঠিক হল শুনলাম তিনি সেখানে নেই আসবেন তিন দিন পরে।

আমি প্রায় দু রাত তিন দিন ওনারই বাড়ির গ্যারেজ এ কাটিয়েছি। তারপর মুম্বাইতে দুজন বিখ্যাত সঙ্গীতপরিচালকের সাথে দেখা হল।

ওনারা আমার গান শুনলেন তারপর খুবই ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেন তুমি তো এখনও অনেকটাই ছোট আরও শিখতে হবে। তারপর আমি চলে আসি।

এইটুকুই বলব, আমি যা করেছি সবই কিন্তু গানটা কে আমার ধ্যান জ্ঞান করে করেছি।

বহুবার ঠকেছি, শিখেছি। এখনও শিখছি। জানছি।

Pichutan

এত লড়াইতে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি করে?

আমার মা সব সময় আমার সাথে ছিলেন, আছেন। মা চেয়েছিলেন আমি গান শিখি। বাবা ছিলেন শ্রদ্ধেয় অখিলবন্ধু ঘোষের ছাত্র।

তবে সাঙ্গীতিক জীবনের অনিশ্চয়তার ভয়েই হয়ত তিনি পড়াশুনার দিকে আমাকে বেশী মনোযোগ দিতে বলতেন।

আমার গান শেখার অনেকটাই বাবার কাছে।

বাবাই আমার প্রথম গুরু।

প্রতিযোগিতা কি সফলতা পেতে সাহায্য করেছে?

সফলতা শব্দটা হয়ত ভুল… বলতে পারেন খ্যাতি। হ্যাঁ, ছোট থেকেই দূরদর্শনের ‘এত সুর আর এত গান” কিংবা ‘ইন্ডিয়ান আইডল’, ‘ভারত কি শান’ অনেক প্রতিযোগিতা তে আমি অংশ নিয়েছি।

আমার পরিবার বলেছে ঋক ভালো গায়, শুনতে ভালো লেগেছে কিন্তু তবু মনে সেই ভাবে আনন্দ ছিল না,কারণ মনে হত বাড়ির লোকেরা তো ভালো বলবেনই।

যখন প্রতিযোগিতার মঞ্চে বিচারক মণ্ডলীতে গুনী সঙ্গীতশিল্পীরা আমার প্রশংসা করলেন, বা আমি পুরস্কৃত হলাম তখন আমি আসতে আসতে আরও বেশী করে উৎসাহিত হলাম।

তবে সারেগামাপা আমাকে সব থেকে বেশী পরিচয় ও খ্যাতি দিয়েছে।

কিন্তু খ্যাতি তো কোন উপার্জন নয়, উপার্জনের পথ।

নবীন শিল্পীরা একটি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় নিজেকে যথাযথ ভাবে প্রমান করার পরও প্লে ব্যাক করার সুযোগ পাচ্ছেন না। সেটা খ্যাতির বিরম্বনা হয়ে উঠছে।

প্রতিযোগিতার মঞ্চে সেলেব্রিটি বিচারক আমার গান শুনে বলছেন আমি তোমাকে আমার আগামী প্রজেক্ট এ সুযোগ দিতে চাই।

প্রতিযোগিতার পর বেরিয়ে এসে তাঁর সাথে কথা বলতে চেয়েছি বহুবার বলতে দেওয়া হয়নি। আমার কথা শোনাই হয়নি।

আসলে প্রতিশ্রুতি বাক্য যে কখন কিভাবে প্রশস্তিবাক্য হয়ে যাবে কেউ ধরতেই পারবে না।

আর ওই যে বললাম শুধু গানকেই প্রাধান্য দিয়েছি, কোন ‘ল ব ই’ এর ‘গ ল প’ তে আমি নেই… হয়ত সেই জন্যেই বাংলা থেকে আমাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না…

Tujhe Pyaar Pyaar

তাহলে ঋক বসুকে যারা বাংলায় চাইছেন তাঁদের আপনি কি বলবেন…

মানুষ আমাকে ভালবাসেন, আমার গান ভালবাসেন, তাঁরা আমার অনুপ্রেরণা। তাঁদের জন্যে গান আমার ছিল, আছে, থাকবে।


তবে আমার মনে হয় আমরা যারা ছোট থেকে অনেকটা লড়াই করে গান নিয়ে এগিয়ে চলেছি, তাঁদের কথাটা, তাঁদের গানটা একটু চিত্র পরিচালক বা সঙ্গীত পরিচালকদের শোনা উচিত।

আমি চুপ করে থাকিনি, আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি আমাকে শোনাই হয়নি।

এর বিচার আমি বাংলার মানুষের হাতেই সঁপে দিতে চাই।

তবে আবারো বলব, অভিযোগ হোক বা একটা দীর্ঘদিনের অভিমান,তাঁদের আমার অনুরোধ একবার সুযোগ দিয়েই দেখুন না, আশাকরি ঠকবেন না!

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *