Satkahon Interview – Lyricist Dibyadyuti | নবীন গীতিকার দিব্যদ্যুতি বিশ্বাস
Satkahon Interview – Lyricist Dibyadyuti
মফস্বলের নানা বাধাকে অগ্রাহ্য করে গানের ডালি সাজিয়ে সঙ্গীত জগতে গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান দিব্যদ্যুতি।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে বললেন মনের কথা….
দিব্যদ্যুতি, সাংস্কৃতিক জগতের প্রতি ভালোবাসা কি ছোট থেকেই?
হ্যাঁ। আমার মা খুব ভালো আবৃত্তি করতেন। ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনে শুনে আমিও চেষ্টা করতাম।
মায়ের মুখে শুনে আমি কর্ণ-কুন্তী সংবাদ মুখস্থ করে অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেছি।
পাড়ার অনুষ্ঠানে আমি উপস্থাপনা করেছি বহুবার। সেই থেকেই মনের মধ্যে শিল্পী হবার এক বাসনা জন্ম নেয়।
তাছাড়া আমার মামার বাড়িতে সকলেই সংস্কৃতি মনোভাব সম্পন্ন।
আপনি তো কবিতাও লেখেন..
হ্যাঁ, আমার মা ১৯৭৬-৯০ আকাশবানীর সঞ্চালিকা ছিলেন। অবসর নেওয়ার পর কবিতা লিখতেন মাঝে মাঝে।
মা কে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই এবং আমিও লেখার চেষ্টা করি। তারপর ধীরে ধীরে কবিতা লিখতে শুরু করি।
প্রথমে অনেকেই অবজ্ঞা করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে আমার লেখা মানুষ ভালবেসেছেন প্রসংশাও পাই।
পেশাগত ভাবে সঙ্গীত রচনাকে বেছে নিতে পরিবারের থেকে একজন পুরুষ মানুষ হিসেবে কতটা সমর্থন পেয়েছেন?
একমাত্র মা আমার পাশে ছিলেন। বাবা কোনদিনই আমাকে সমর্থন করেননি।
এমন নয় যে উনি সংস্কৃতি বিষয়টা পছন্দ করেন না। তবে আর্থিক অনিশ্চয়তার জন্যেই উনি আমাকে সমর্থন করেননি।
কিন্তু, শুধু যে সমর্থন করেননি তেমনটা হলে হয়ত অন্যরকম হত। উনি আমাকে প্রতি মুহূর্তে ছোট করেছেন, অবজ্ঞা করেছেন।আমাকে নিয়ে তামাশা করেছেন।
একদিন আমার লেখা কবিতা উনি পড়েন এবং মা কে বলেন যে “ছেলে তো কবি হয়েছে”।
আমি আশা করেছিলাম বাবা আমাকে সমর্থন করবেন।
আমার কষ্ট একটাই যে উনি নাইবা আমার পাশে এসে দাঁড়ান, আমার কাজকে ছোট করা বা আমার নামে অন্য মানুষকে কটু কথা বলা আমি মেনে নিতে পারিনি।
প্রত্যেক সন্তানই তাঁর মা ও বাবা উভয়ের থেকে শুধু পাশে থাকাটুকু দাবী করে।
এমনকি এই নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় উনি প্রায় দুই বছর আমার সাথে কথা বলেননি।
কিন্তু আমার গান মুক্তি পাবার পরে বাবা খুশি হয়েছেন।
সেটাই আমার প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।
যে অনিশ্চয়তার কথা ভেবে বাবার সাথে আপনার মনোমালিন্য, আপনার বিচারে সেটা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
শিল্প জগত একজন মানুষকে আর্থিক ভাবে কতটাই বা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ দিতে পারে?
দেখুন, আমি কখনোই বলছিনা বাবা ভুল। হ্যাঁ, এখনও আর্থিক নিশ্চয়তা চারুশিল্প আমাদের দিতে পারেনি।
কিন্তু শিল্পী হবার পাশাপাশি এই জগতেই এমন অনেক সৃষ্টিমূলক ক্রিয়াকর্ম রয়েছে যার সাথে যুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে আমি আমার নেশা ও পেশা দুইই নির্বাহ করতে পারি।
যেমন আমি মিডিয়া সাইন্স নিয়ে পড়াশুনো করছি, পাশাপাশি রেডিও- উপস্থাপনা শিখছি। আবার গানও লিখছি।
সব থেকে বড় কথা হল মনের জোর।
আমি মনে করি যে আমি যদি মনের জোর রেখে কোন কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই একদিন না একদিন আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
বাবা যদি আমাকে অবজ্ঞা না করে আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করতেন, আমার পাশে থাকতেন এমনও হতে পারত যে আমি অনেক আগে থেকেই আমার কাজ শুরু করতে পারতাম।
আপনি তো খেলাধুলো জগতের একাধিক মানুষকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন… খেলাধুলোর সাথে আপনি কিভাবে যুক্ত?
খেলাধুলোর সুত্রেই আমি অলিম্পিয়ান শ্যুটার জয়দীপ স্যারের সানিধ্যে আসি।
জন্মদিনের উপহার হিসেবে আমি ওনাকে নিয়েই আমার লেখা একটি কবিতা উপহার দিই। উনি আমার লেখা শেয়ার করেন। কবিতাটি প্রশংসিত হয়।
বাবা মনে করতেন আমার দ্বারা খেলাধুলো হবে না।
কিন্তু উনি জানতেন না যে দীর্ঘদিন আমি জয়দীপ কর্মকার শুটিং আকাদেমিতে প্রশিক্ষন নিচ্ছি।
কবিতাটি জয়দীপ স্যার শেয়ার করেছেন সেটা যখন আমি বাবাকে দেখাই তখন আমাকে বাবা প্রশ্ন করেন আমি কি করে এনাকে চিনলাম।
তখন আমি আমার খেলাধুলোর কথা জানাই। বাবা অবাক হন।
আমি মাঝে মাঝেই বিশেষ ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে কবিতা লিখি।
এছাড়াও শ্যুটার রাধিকা কর্মকার আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা। উনি খেলাধুলোর পাশাপাশি রেডিওতে উপস্থাপনা করতেন।
ওনাকে দেখে আমার মনে হয় আমিও পারব খেলাধুলো এবং রেডিও উপস্থাপনা একসাথে করতে।
গান লেখার সাথে কিভাবে যুক্ত হন?
গান লেখা হঠাৎ করেই। তবে লেখার পর বনগাঁর কিছু শিল্পীকে তা শোনাই কিন্তু তাঁরা আমাকে না করে দেন।
অবশেষে আমার যোগাযোগ হয় প্রীতম দেবের সাথে।
প্রীতম দার আমার লেখা পছন্দ হয় ও তৈরি হয় প্রথম গান “রুপকথা নয়”।
গানটি গেয়েছিলেন সৌরভ দে এবং দোয়েল গোস্বামী।
দ্বিতীয় গান গেয়েছে বিখ্যাত দুই যমজ বোন তানি-মুনি।
প্রীতম দেবের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে তা মুক্তি পেয়েছে কিছুদিন আগেই।
এত মানুষের থেকে লাঞ্ছিত হয়েও আপনি কাজ করে চলেছেন। মনোবল পান কিভাবে?
মা আমার পাশে আছে। আর আমি কৃতজ্ঞ ক্রীড়া-মনোবিদ অনুশীলা ব্রক্ষ্মচারী এবং হস্তশিল্পী ও থিয়েটর ব্যাক্তিত্ব মৈথিলী গুহর কাছে।
ওনারা আমাকে আমার মনোবল হারাতে দেননি।
আগামী দিনে কি কি কাজ আসছে?
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মাধুরীদে ও শত্রুজিৎ দাসগুপ্তের কণ্ঠে মুক্তি পাবে আমার লেখা একটি গান।
কিছু কাজ বাকি আছে। এছাড়াও আরও কাজ আসছে, চমক থাক কিছু।
যারা পাশে ছিলেন না, যারা পাশে আছেন, তাঁদের কি বলবেন?
একসময় যারা বলতেন “তোর বাবার পরিচয়েই পরিচিত হতে হবে। তোর নিজের কি যোগ্যতা আছে?”
তাঁরা আজ আমাকে শুভেচ্ছা পাঠান। রাস্তাঘাটে বাবাকে ডেকে আমার প্রশংসা করেন।
মনে আনন্দ হয় তবে শুভেচ্ছার জোয়ারে গা ভাসাতে চাই না। মধ্যবিত্ত হলেও মনটা ঊচ্চ রাখতে চাই।
স্বপ্ন দেখার বয়স হয় না।সাফল্য ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ।
সবার আশীর্বাদকে পাথেয় করে আরও নতুন নতুন কাজ উপহার দিতে চাই আগামী দিনে।
পা মাটিতে রেখেই আকাশ চুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে এগোবো।
অহংকার নয় সবার ভালোবাসাই আমার অলংকার হোক।