Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty | Poet & Reciter | Sunday Exclusive

Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty
দীধিতি চক্রবর্তী | কবি ও আবৃত্তিশিল্পী

Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty

বাঁকুড়া জেলার ময়নাপুর গ্রামের জমিদার পরিবারের মেয়ে জনপ্রিয় কবি ও আবৃত্তিশিল্পী দীধিতি চক্রবর্তী।

কবিতা রচনা ও আবৃত্তিতে তিনি নজির গড়েছেন। বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাঁর রচিত আঞ্চলিক কবিতাকে কেন্দ্র করে।

তাঁর কবিতায় একদিকে যেমন মনের কথা, ব্যথার প্রলেপ, ভালোবাসার স্বপ্ন অন্যদিকে তেমনই সমাজের না পাওয়া মানুষদের বিরুদ্ধে ধ্বনিত হয়েছে প্রতিবাদ।

সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে তাঁর সাথে আলোচনায় আমি সুরঞ্জনা….  

আপনার অধিকাংশ রচনায় একটি প্রতিবাদ আছে …

কখনো সমাজের প্রতি, কখনো পুরুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে, কখনো অবহেলিত পথ শিশুর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে আপনার কলম… কিন্তু কবিতা কি পারে বিপ্লব আনতে?

খুব কঠিন একটা প্রশ্ন।

ধরা যাক, একটি নক্কার জনক ঘটনার প্রতিবাদে একটি নাটক লেখা হল, কিন্তু যারা টিকিট কেটে একটি নাটক দেখার মনোবৃত্তি নিয়ে সেটি দেখতে যাবেন তাঁরা কি সেই খারাপ কাজটির সঙ্গে যুক্ত বা খারাপ মনস্কৃতির কেউ?

কখনোই তা নয়, তাহলে প্রতিবাদ সেই মানুষটি অবধি পৌঁছল কি? না।

তেমনই কবিতাও তাই।

যারা কবিতা পড়ছেন, যারা কবিতাকে আপন করছেন, তাদের মধ্যে অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ হয়ত নেই, সেই সমাজের মানুষ কবিতা পড়বেন না। তাহলে লাভ কি হচ্ছে?

লাভ এখানেই যে মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের বোধ জাগছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদবোধের বিপ্লব আনাই শিল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য, কবিতাও এভাবেই বিপ্লব আনতে পারে।

কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি দুই শিল্পেই আপনি সমান জনপ্রিয়তার পরিচয় রেখেছেন। এই শিল্পী সম্ভাবনা কি ছোট থেকেই?

হ্যাঁ, আসলে আমার মা বাবা দুজনেই আবৃত্তি করতেন। জ্ঞান হবার পর থেকেই মা-বাবা কে কর্ণ-কুন্তী সংবাদ আবৃত্তি করতে শুনেছি। রবীন্দ্রচর্চাও ছিল ভীষণ ভাবেই।

আমার দিদি, ছোট মাসি আবৃত্তি করতেন। মোট কথা আমার বাড়িতে বরাবরই নাচ-গান-আবৃত্তি প্রভৃতি শিল্পচর্চা ছিলই।

আমিও ছোট থেকে নাচ,গান,আবৃত্তি শিখেছি, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি,পুরস্কার পেয়েছি।

আমাদের পরিবার হচ্ছে বাঁকুড়া জেলার ময়নাপুরের জমিদার পরিবার।

দীধিতি চক্রবর্তী | কবি ও আবৃত্তিশিল্পী

তাহলে জমিদার বাড়ির সংস্কৃতিই আপনার শিল্প চর্চার বুনিয়াদ?

অনেকটাই। কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবারের সকলে যখন এক হয়েছি তখন সেখানে সমস্ত রকম সংস্কৃতির একটা মেলবন্ধন হতে দেখেছি।

বাড়ির পরিবেশ অনেকটাই সাহায্য করেছে সংস্কৃতিমনস্ক হতে।

তাছাড়া আমার নাচের প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল। কিন্তু গ্রামে বড় হয়েছি, সেখানে নাচের স্কুল সেভাবে ছিল না। তাই আবৃত্তি নিয়েই এগিয়েছি।

কবিতা লেখার শুরু কিভাবে?

ছোটবেলায় খাতার পিছনে টুকটাক লেখালেখি, যেমন গ্রামকে নিয়ে “গ্রামটির নাম ময়নাপুর, সেথা বাজে সদাই সুখের সুর” এইসব করতাম যা সবাই করে,তখন আমার সাত কি আট বছর বয়স হবে,তখন ভাবিনি যে আমি কবিতা নিয়ে কিছু করব।

কিন্তু লেখাটায় আমি মনোযোগ দিয়েছি আমার বিয়ের পর।

খুব ছোট বেলায় আমার বিয়ে হয়। আঠারো-উনিশ বছর বয়সে।

তখন অবকাশ ছিল, আর অবকাশে আমার অন্য কিছু নয় শুধুই লিখতে ভালো লাগত।

লেখাগুলো আমি আমার বাবাকে শোনাতাম। এখন বাবার পাশাপাশি আমার স্বামীকে শোনাই কিছু লিখলে।

কারণ আমার মনে হত আমার লেখা এমন কিছুই নয় যে তা সকলকে শোনাব।

তারপর ধীরে ধীরে বন্ধু বান্ধব পরিবার পরিজনদের শোনাতে তারা যখন বলেন ভালো হয়েছে তখন মনে একটু সাহস পাই আর কি… সাহস করে ফেসবুকে দিতে থাকি আমার লেখা।

ফেসবুক কিন্তু কবি হিসেবে আমাকে অনেকটা পরিচিতি দিয়েছে।

Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty
দীধিতি চক্রবর্তী | কবি ও আবৃত্তিশিল্পী

সোশ্যাল মিডিয়ায় সবকিছুই প্রশংসিত হয় কিন্তু একজন লেখক বা লেখিকা ক্রমাগত লেখা দিলে তাঁকে ‘ফেসবুক কবি’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। আপনি কি বলবেন?

প্রত্যেকেরই নিজের শিল্প প্রদর্শনের একটা মাধ্যম প্রয়োজন। ফেসবুক ভীষণ ভাবেই সে কাজে সাহায্য করে। যেমন আমাকে এক্ষেত্রে বেশ পরিচিতি দিয়েছেই ফেসবুকই।

অনেকেই মনে করেন ফেসবুকে সময় নষ্ট করছে।

আমার সেটা মনে হয় না একেবারেই, আমি নিজেকে চিনেছি ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে।

তাই, “ফেসবুক কবি” বলে যতই তাচ্ছিল্য করা হোক, ভালো কাজ প্রশংসিত হবেই।

আবৃত্তি শেখা কি শুধুই মায়ের কাছে?

হ্যাঁ, মায়ের কাছেই মূলত আমার কবিতা শেখা। আর আমার আঞ্চলিক কবিতা শেখা ছোট মাসির কাছে।

মা চাকরি করতেন, তাই অনেকটা সময় মাসির সাথে কাটিয়েছি। উনি আঞ্চলিক কবিতা বলতেন এবং সবসময়, মানে হাঁটতে চলতে আবৃত্তি করতেন।এখনও করেন।

কলকাতা আসার পর পল্লব কীর্তনিয়া দাদার কাছে যাই, এবং “কবিতা বাড়ি” নামে পল্লবদারই তৈরি একটি দলের সাথে যুক্ত হই। অনেক কিছু শিখি।  

লকডাউনে বেশ কিছুদিন রবীন্দ্রকবিতা আবৃত্তি শিখেছি শ্রী পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কাছে।

দীধিতি চক্রবর্তী | কবি ও আবৃত্তিশিল্পী

আঞ্চলিক ভাষায় আপনার একাধিক কবিতা জনপ্রিয়। এই ভাষার উপর দক্ষতা কিভাবে?

ছোট বেলায় মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘মদনাকাহার’ বলে একটি আঞ্চলিক কবিতা আমি শুনেছিলাম আমি মাসির কাছে।

সেই কবিতা আমি ৬-৭ বছর বয়স থেকে মুখস্থ আবৃত্তি করতাম।

এই ভাষা কিন্তু আমার অঞ্চলের ভাষা নয়।

রাঢ় বাংলার এই ভাষার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মানোর পর আমি সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে যাই এবং সময় দিয়ে ওনাদের সাথে কথা বলে ওনাদের ভাষা, কথা বলার ধরণ শিখি।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ “পরিচিতা” নিয়ে কিছু কথা যদি বলেন…

আসলে পরিবারে আবৃত্তির সাথে যুক্ত হলেও লেখালেখি নিয়ে সেভাবে যুক্ত নয়।

তাই কবিতার বই যখন প্রকাশ করার কথা ভাবি, তখন কার সাথে যোগাযোগ করব বুঝতে পারছিলাম না।

এমন সময়, এক দাদা, বিপ্লব মণ্ডল আমাকে দে’জ এ যোগাযোগ করতে বলেন।

ওনারা আমার লেখার পান্ডুলিপি জমা নেন এবং আমার বই ‘পরিচিতা’ প্রকাশ পায় ২০১৯ এর আগস্ট মাসে।

Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty
দীধিতি চক্রবর্তী | কবি ও আবৃত্তিশিল্পী

আপনি তো নিজেও কবিতা শেখান…

আমি সব ধরণের আবৃত্তি শেখাই, আবার কিছু মানুষ আছে যারা শুধুই আঞ্চলিক ভাষায় আবৃত্তি শেখেন।

গড়িয়াতে আমার আবৃত্তি প্রশিক্ষনকেন্দ্র “প্রতি-শ্রুতি”।

কবিতা নিয়ে কিছু স্মৃতি…

এই বছর ২রা ফেব্রুয়ারি আমাকে বাংলাদেশ কবিতা সম্মেলন থেকে আমন্ত্রন করা হয়।

ভারতবর্ষকে প্রতিনিধিত্ব করা যে কি গর্বের বিষয় আমার কাছে আমি বোঝাতে পারব না। সেখানে মাননীয়া শেখ হাসিনা মহাশয়ার সাথেও আমার পরিচয় হয়।

এমনকি স্বরব্যঞ্জন এবং শ্রুতিঘর নামে দুটি দল শুধু মাত্র আমার জন্যে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। “কবি দীধিতি চক্রবর্তীর সাথে কাব্যালাপ ও আবৃত্তি” নামে সেই অনুষ্ঠানটি হয়।

বাংলাদেশের মানুষের সেই ভালোবাসা আমার কাছে চিরস্মরণীয়।

Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty
Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty

নতুন কবিতার প্রচার কিভাবে সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

আমার মনে হয় কবি কণ্ঠে কবিতার একটি নতুন ধারা যদি তৈরি করা যায়, যেমন নচিকেতা বা কবীর সুমন তাঁদের নিজেদের গানের একটি ধারা তৈরি করেছেন, তেমনই যদি কবিরাও নিজের লেখা আবৃত্তি করেন তাহলে ভিন্ন কিছু হয়।

তবে নতুন কবিতার প্রচারও বেশ অন্যরকম ভাবে করা যায়।

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

1 thought on “Satkahon Interview – Didhiti Chakraborty | Poet & Reciter | Sunday Exclusive”

  1. জয় ভট্টাচাৰ্য

    চমৎকার লাগলো প্রতিটি উত্তর… অপূর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *