Satkahon Interview | Arunasish Roy | জনপ্রিয়তার শিখরে বাংলা গজল

Satkahon Interview | Arunasish Roy
জনপ্রিয়তার শিখরে বাংলা গজল

Satkahon Interview | Arunasish Roy

একদিকে সঙ্গীতকে যেমন শিল্পী তাঁর সব কিছু দিয়ে সাজিয়ে তোলেন তেমনই সঙ্গীতও কখনো কখনো মানুষকে ডেকে নেয় তার স্বপ্নের জগতে।

সঙ্গীতজগতে গজলকে বাংলা ভাষায় এক নতুন রুপদান করেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অরুণাশীষ রায়।

বাবা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী বাসুদেব রায়ের কাছেই বিষ্ণুপুর ঘরানায় গান শেখা তার।

আসুন জেনে নিই কিভাবে বাংলা গজল তথা সঙ্গীত তাঁর জীবনে সবকিছু হয়ে উঠল…   

প্রথমেই জানতে চাইব গান শেখার শুরু কিভাবে?

অবশ্যই আমার বাবার কাছে আমার গান শেখার শুরু। কিন্তু গান নিয়ে যে আমি কিছু করব বা পেশাগত একজন সঙ্গীতশিল্পী হয়ে উঠব এই চিন্তাভাবনা এসেছে অনেক পরে। বলা যেতে পারে, আমার শুরুটা হয়েছে একটু দেরীতে।

পরবর্তীকালে বাবা ছাড়াও বেশ কিছুদিন আমি শ্রী গৌতম ঘোষাল এবং শ্রী প্রবুদ্ধ রাহার কাছে যথাক্রমে আধুনিক ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখি।

LIKE FOLLOW AND SHARE : SATKAHON NEWS ON FACEBOOK

তাহলে এই গানের সাথে ভালোবাসা হওয়ার গল্পটা শুনি…

অন্যান্য ছোট ছেলেদের মত আমিও ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতাম, ছবি আঁকতাম। কিন্তু ওই ছবি আঁকতে আঁকতেই হয়ত আমি গুন গুন করে গাইছি ‘পায়েল কি ঝনকার’ আমি তখনও জানিনা যে এটা কোন রাগে কিন্তু গান গাইতে ভালো লাগত।

এবার নিবিড় ভাবে ভালোবাসা কিভাবে তৈরি হল বলি, ১৭ বছরের জন্মদিনে উপহার পাই জাকির হুসেন এবং হরিহরণজীর একটি গজল গানের অ্যালবাম ‘হাজির’।

সেই অ্যালবাম, সেই গান আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা বদলে দিলো। আমি ভাবলাম এটা আমাকে শিখতে হবে।

আমি বাবার কাছে মন প্রান দিয়ে গান শেখা শুরু করলাম। গানই হয়ে উঠল আমার ধ্যান জ্ঞান।

LIKE FOLLOW AND SHARE : SATKAHON NEWS ON FACEBOOK

১৭-১৮ বছর বয়সের পড়াশুনার চাপ, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, সেই সময় তো জীবিকা নির্ধারণের সময়? একাডেমিক পথে জীবিকা না বেছে একেবারে শিল্প জগতে নিজেকে সমর্পণ করতে কতটা মনের জোর আনতে হয়েছে?

হ্যাঁ, সেই সময় আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। জয়েন্ট পরীক্ষাতেও ভালভাবে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাইনি, কারণ গান তখন আমার সবকিছু। আমি পড়াশুনা করলাম মিডিয়া সাইন্স নিয়ে।

কিন্তু আমি দেখলাম মিডিয়াতে কাজ করতে গেলে আমাকে যে সময়টা দিতে হবে সেখানে আমার গানটা শেষ হয়ে যাবে। তাই চাকরি করা হল না। গান শেখানো শুরু করলাম। এক মজার ঘটনায় শুরু হল আমার উর্দু শেখা।

মজার ঘটনা যখন একটু বলতেই হবে…

আমি জানলার ধারে বসে একদিন গজল গাইছিলাম। ঠিক সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন শাল বিক্রেতা আমিন ভাই।

তিনি হঠাৎ ঘরে ঢুকে বললেন কে গাইছে এমন গান? আমি বললাম আমি গাইছি। তখন তিনি আমাকে তাঁর পছন্দের কিছু গান গাইবার অনুরোধ করলেন। তারপর থেকে তিনি প্রায় আসতেন আমার গান শুনতে।

এরপর একদিন আমি তাঁকে বললাম আমিন ভাই আমাকে উর্দু শেখাবেন? তিনি সানন্দে বললেন, নিশ্চয়ই।

তারপর তিনি জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে এসে আমাকে বই কিনে বিনা পারিশ্রমিক এ উর্দু লেখা ও পড়া দুই শেখাতে শুরু করলেন।

Satkahon Interview | Arunasish Roy
পছন্দের পোশাকে অরুনাশীষ

শুধুমাত্র গান শেখানো যখন আর্থিক ভরসা, মানসিক ভাবে কতটা শক্ত থাকতে পেরেছিলেন?

একদম ঠিক, সেই সময় স্নাতক স্তরের পরীক্ষা শেষ, আর্থিক দোটানার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎই অল ইন্ডিয়া রেডিওর পরীক্ষায় দ্বিতীয় হলাম। মনের জোর খানিকটা বাড়লেও আর্থিক ভাবে তখনও বেশ দুর্বল।

এমন সময় আমি গজলে ন্যাশনাল স্কলারশিপ পাই। যার ফলে মনের জোর তো বাড়েই সাথে স্কলারশিপের বৃত্তিতে আমার কিছুটা আর্থিক সুবিধাও হয়।

LIKE FOLLOW AND SHARE : SATKAHON NEWS ON FACEBOOK

দীর্ঘদিন হারমোনিয়াম সঙ্গত করেছেন…সেই জীবনটা কেমন ছিল?

দেখুন, মঞ্চ আমার কাছে সব কিছু ছিল, এমনিতেই আমি অনেক দেরীতে শুরু করেছি তাই আমি ভাবিনি মঞ্চে আমি কি! একজন সঙ্গীতশিল্পী নাকি সঙ্গতকার।

এমনই একদিন তারা মিউজিকের এক অনুষ্ঠানে আমি হারমোনিয়াম সঙ্গত করছি। আমাকে সেখানে দেখে গৌতমদা বললেন, “তোকে যেন আর কোনোদিন না দেখি সঙ্গত করতে। তুই তোর লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছিস।“

আমি ভেবে দেখলাম ঠিকই। সঙ্গীতশিল্পী হবার লক্ষ্য থেকে আমি কোথাও যেন একটু হলেও সরে যাচ্ছিলাম।

সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ হল কিভাবে?

শ্রী গৌতম ঘোষালের নির্দেশেই আমি আকাশ আট টিভি চ্যানেলে অডিশন দিতে যাই ও গুডমর্নিং আকাশ অনুষ্ঠানে গজল পরিবেশন করার সুযোগ পাই

প্রথম অনুষ্ঠান এতটাই সফল হয় যে সেই দিনই আমি দ্বিতীয় অনুষ্ঠানের ডাক পাই।

সেদিনের অনুষ্ঠানে আমি গালিবের লেখায় আমার সুর করা গজল দিয়ে শুরু করি।

এরপর একের পর এক মঞ্চ অনুষ্ঠানের ডাক আসতে থাকে।

অনির্বচনীয় ভাবে ২০১৬ সালে আমার কাছে জগজিৎ সিং মিউজিক ফেস্টিভালে অংশগ্রহন করার সুযোগ আসে এবং সমগ্র বাংলা থেকে আমি একাই সেই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করি।

এছাড়া এরপর দাদা ইন্দ্রাশীষ রায়ের সাথে সম্মিলিত ভাবে একাধিক মেগা সিরিয়ালে সঙ্গীত পরিচালনা করি।

যেমন, ফিরকি, ইরাবতির চুপ কথা, দীপ জ্বেলে যাই, সাগরিকা, রাইকিশোরী, রাশি ইত্যাদি।

LIKE FOLLOW AND SHARE : SATKAHON NEWS ON FACEBOOK

এখন তো আপামর বাঙালী আপনাকেই বাংলা গজলের জনক বলে চেনে। লড়াই কতটা কঠিন ছিল?

না, বাংলা গজলের জনক আমি কখনোই নই। জনক যদি কেউ হয়ে থাকেন তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।

আসলে এই বাংলা গজল বিষয়টা অন্ধকারে থাকতে থাকতে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছিল।

আমি শুধু মনে প্রানে চেষ্টা করছি সেটাকে সকলের সামনে আনার।

গজল গাইতে গাইতে আমার মনে হল, গজল যখন কোন নির্দিষ্ট ভাষায় সীমাবদ্ধ নয় তখন তা কেন আমরা আমাদের মাতৃভাষায় তা গাইব না? সেই থেকেই বাংলা ভাষায় গজল লেখার ও গাওয়ার সুত্রপাত।

 বিশিষ্ট তবলাবাদক পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বাংলা গজল গাইবার জন্যে উৎসাহিত করেন।

কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালীদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বলতে শুরু করলেন বাংলায় গজল হয় না। গজল মানেই উর্দু।

এই ধারনায় পরিবর্তন আনতে আমাকে অনেকটাই লড়াই করতে হয়েছে। বর্তমানে আমরা যে ধারায় গজল গাই তার উৎস কিন্তু পারসিয়াতে।

মুঘল আমলে উর্দু গজল তৈরি হয়েছে এবং সেটা সর্বাধিক প্রচলিত। কিন্তু উর্দু ছাড়াও আরও অনেক ভাষায় গজল লেখা এবং গাওয়া হয়েছে।

যদিও প্রতিষ্ঠিত গজল গায়ক হিসেবে অনেকেই এই কাজে আমাকে সমর্থন করেছেন।

আসতে আসতে মানুষ এই গানকে সাদরে গ্রহন করতে থাকেন আর এখন তো আমার সুরে-কথায় বাংলা গজল অনেকেই গাইছেন। 

আগামী দিনে আসতে চলেছে আমার সুরে একটি ইংরাজি গজল। খুব বেশী রহস্যভেদ করব না, কিছুটা থাক। গান মুক্তি পেলে পুরো গল্পটা বলব।

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

2 thoughts on “Satkahon Interview | Arunasish Roy | জনপ্রিয়তার শিখরে বাংলা গজল”

  1. Pingback: Satkahon Review – বাংলা গজল - মন দেওয়া মন নেওয়া হয়েছিল - Satkahon

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *