Satkahon Interview – Anupam Sarkar | Mimicry Artist | Fantastic Friday
Satkahon Interview – Anupam Sarkar
শান্তিপুরের বাসিন্দা অনুপম সরকার, তিনি অবিকল ভানু কণ্ঠী।
মীরাক্কেল থেকে শুরু করে তাঁর কণ্ঠ ও কৌতুক প্রশংসিত একাধিক মঞ্চে।
বিশ্ব হাসির রাজা চ্যাপলিনের মত আর্থিক প্রতিকুলতা থাকুক কিংবা গাঁয়ের ছেলে বলে অবমাননা, অনুপম দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে, চেষ্টা ও অধ্যাবসায়ে তিনি একদিকে যেমন বাংলার কৌতুক সম্রাট ভানুর কণ্ঠ অনুকরণে সকলের মুখে নিমেষে হাসি এনে দিতে পারেন তেমনই অন্যদিকে তিন তিন বার বিশ্বের সেরার খাতায় জুড়ে দিতে পারেন নিজের নাম।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে রইল তাঁর জীবন কথা….
ছোটবেলা থেকেই কি কৌতুক নকশার প্রতি আগ্রহ?
বিদ্যালয়ে প্রথম অভিনয় করি “ভানু পেলো লটারি”। তখন থেকেই আমার মনে হয়েছিল আমি অভিনয় করতে পারি।
তখন নাটক নিয়ে চর্চা শুরু করি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিনয় নিয়েই পড়াশুনা।
ছোট থেকে অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ ছিল। অভিনেতা হবার ইচ্ছে নিয়েই বড় হওয়া।
শ্রদ্ধ্যেয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ অনুকরণ করতে পারেন এমন প্রতিভা আবিস্কার করলেন কিভাবে?
রবীন্দ্রভারতীতে পড়াশুনা করছি তখন।বাঙ্গাল না হলেও আমি বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলতে পারতাম বেশ ভালো ভাবেই।
বিদ্যালয় জীবনে ভানু পেলো লটারিতে অভিনয়ের সময় থেকেই আমি এই চরিত্রের জাদুতে মুগ্ধ।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভালভাবে চর্চা করতে শুরু করি।
বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলতে পারার দক্ষতা আমাকে এক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করেছিল।
সেই সময় জী বাংলা মীরাক্কেল অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই আমি নিজের মধ্যে এই ক্ষমতা অনুভব করি। আমার কৌতুক নকশা জনপ্রিয়তা পায়।
তখন এতটা সুক্ষতা ছিল না তবে সেই জনপ্রিয়তা বা প্রশংসা আমাকে অনেকটা অনুপ্রাণিত করেছিল। আমি আরও চর্চা করতে শুরু করি।
মীরাক্কেল এর পর কিরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছেন?
৯২.৭ বিগ এফ এম থেকে আমাকে আমন্ত্রন করা হয়েছিল একটি সাক্ষাৎকারের জন্যে।
সেই সাক্ষাৎকারের পর আমার কাছে ওঁদের তরফ থেকেই “ভক্ত ভানু” অনুষ্ঠানের জন্যে একটি ডাক আসে।
তিন বছরের চুক্তিতে আমি সেই অনুষ্ঠানে ভক্ত ভানুর ভুমিকায় অংশ নিই।
এবিপি আনন্দে ‘দুই খান কথা’ নামক অনুষ্ঠানে আমি যুক্ত হই। এরপর ‘ফিরে দেখা ২০১৭’ অনুষ্ঠানের নেপথ্যে ভানু কণ্ঠে আমি ভানু রুপে সঞ্চালকের ভুমিকা নিই।
ভাগ্য ক্রমে সেই সময়ই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সংস্পর্শে আসি আমি।
সেই কাহিনী একটু যদি বলেন….
ফোনে যোগাযোগ হয় শ্রদ্ধ্যেয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা সম্মানীয়া বাসবী ঘটক দিদির সাথে, উনি আমার কাছে আমার কিছু রেকর্ডিং চান।
.আমি ওনাকে সেগুলো পাঠাই।
কিছু দিন পর উনি ফোন করে আমাকে বলেন উনি ওনার মা অর্থাৎ শ্রদ্ধ্যেয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী শ্রীমতী নীলিমাদেবীকে সেই রেকর্ডিং শুনিয়ে উনি প্রশ্ন করেছিলেন সেটি কার কণ্ঠস্বর। তিনি তাঁকে বলেন “এটা তো একদম তোর বাবার গলার মত”।
এর থেকে বড় উপহার আমার কাছে কি বা হতে পারে?
অবশ্যই তাই… কিন্তু অনুপম এখন শুধু মাত্র কৌতুক নকশা নয়, তিন তিন বার গিনেস রেকর্ড করেছেন। সেই প্রসঙ্গে আসা যাক…. হঠাৎ এই ইচ্ছে কি করে?
ভানু কণ্ঠে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে করতে আমার মনে হয় সকলের থেকে আলাদা কিছু করতে হবে।
সেই সুত্রেই গিনেস রেকর্ড ঘাঁটতে শুরু করি।
স্টেপ্লার পিন দিয়ে দীর্ঘতম চেন বানিয়ে ফেলে পাই প্রথম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড।
সঞ্চালনা এবং অভিনয় চলতে থাকলেও বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় হাতে কাজ থাকে না….
সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘতম আপেল বীজের মালা তৈরি করে আবারও গিনেস রেকর্ড গড়ে তুলি।
লক ডাউনের এই চারমাসের বন্দী দশাকে কাজে লাগিয়ে আঠা দিয়ে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯১৬ টি দেশলাই কাঠি আটকে এক ইঞ্চি পুরু প্লাইবোর্ড এর উপর তৈরি করেছি অমর জওয়ান জ্যোতি ম্যাচিস্টিক ইমেজ।
তৃতীয় বার বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্দেশ্যে।
শিল্পের এই অনিশ্চিত যাত্রায় কতটা পাথুরে পথ পার হতে হয়েছে?
হ্যাঁ, শিল্পীর তো পথে পথে পাথর ছড়ানো।
একসময় চার্লি চ্যাপ্লেন এর ভুমিকায় মাইম করে অর্থ উপার্জন করেছি। সেই খরচায় পড়াশুনো চালিয়েছি।
জীবন শিখিয়েছে অনেক। শেখাচ্ছেও।
স্বর্ণ যুগের কৌতুক নকশা নিয়ে আমার কাজ, কিন্তু এখন যেসব বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে বা যেসব কাজে অশ্লীলতা রয়েছে, তা অনেকেই বেশী পরিমানে গ্রহণ করছেন।
কিন্তু আমি আমার কাজে সেই অশ্লীলতা আনতে পারি না। তাই পথ চলা অনেকটা কঠিন।
পরিচিতি কম থাকার ফলে কাজের সুযোগ কম আসে, এটাও একটা সমস্যা। তবে পাথর সরিয়ে পথ চলাটাই তো কাজ।
আর কাজ করে যাওয়াটাই আমাদের সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত।