Satkahon Interview – কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায় – Satkahon

সাক্ষাৎকারে অদিতি বসুরায় – Satkahon.in

Satkahon Interview – অদিতি বসুরায়

জীবনের নানা ওঠাপড়া, হাসি কান্নায় কথারা ছোট হয়ে আসে, ভরে ওঠে খাতার পাতা। আনন্দে বাঁচতে চাওয়াটাই বোধহয় জীবনযুদ্ধের অপর নাম। কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায়ের জীবন গল্প,আজকের লেখনীতে…

ছোটবেলা

বসিরহাটে জন্ম তাঁর, বাবা মা দুজনেই সরকারি চাকরি করতেন, দাদা তখন পড়াশুনা করেন কলেজে। একা বাড়িতে  স্কুলে-পড়া ছোট্ট মেয়েটির সম্বল ছিল বই। একের পর এক মৃত্যু দেখেছেন তিনি চোখের সামনে। অষ্টম শ্রেণী সবে তাঁর, মারা গেলেন জ্যাঠতুতো দাদা।তার কিছুদিন পরেই মৃত্যুসংবাদ এলো মামার। মনের কষ্ট গুলো লিখে রাখতেন খাতায়। কবিতা ভেবে নয়, লিখে রাখতেন কারণ, খাতায় যতটা উজাড় করে দেওয়া যায়,মানুষকে হয়ত ততটা বোঝানো সম্ভব নয়। বরং, বলতে গিয়ে বোঝা বাড়ে নিজেরই।

মন চুরি বনাম কবিতা চুরি

দুঃখ যে কেবল কাঁদায় তা তো নয়, কিছু কিছু দুঃখ আবার বেশ মজার। স্কুল জীবনে প্রথমবার এসেছিল প্রেম। প্রেমের চিঠিতে কবিতা লিখেছিলেন অদিতি। কিন্তু অসুবিধা হল সেই প্রেমিক মন চুরির সাথে সাথে শিল্পীর লেখা কবিতা নিজের নামে ছাপিয়ে দিল একটি লিটল ম্যাগাজিন-এ। মন চুরি মেনে নেওয়া গেলেও কবিতা চুরি মানা যায় না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিচ্ছেদ ঘটল সম্পর্কে।

Satkahon Interview - কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায়
Satkahon Interview – কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায়

যে দিন গেছে ভেসে

২০০৫ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তাঁর। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সেই বছরই বিয়ে এবং বিয়ের পর বিদেশ যাত্রা। ২ বছর বাদে কলকাতা ফিরে এসে চাকরি পান সংবাদপত্র ‘প্রতিদিন’ এ। দীর্ঘ সান্নিধ্য পেয়েছেন চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের। সান্নিধ্যে এসেছেন জয় গোস্বামী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ গুণীজনের । সেই সময় থেকেই তিনি কবিতা ও প্রবন্ধ রচনার উপর আকৃষ্ট হন তথা লেখালেখির জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেন। শুরুতেই বলেছি এ গল্প তাঁর জীবন যুদ্ধের।ছবির মত কাটতে থাকা দিনে এক নিমেষে নেমে আসে অন্ধকার। যে মানুষটিকে ভালবেসে পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে,হঠাতই মনুষ্যতের এক ক্রূঢ় বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তিনি একা ফেলে চলে যান শিল্পী কে। প্রেম বিবাহের ১৭ বছরের সম্পর্কে বিচ্ছেদ,মেনে নিতে পারেননি অদিতি।

কে আমাদের বাঁধবে?

তবে দুঃখের সাথে যুদ্ধে জয় কিন্তু আনন্দেরই হয়। থেমে থাকেননি তিনি। মনের জোরের সাথে বেড়েছে কলমের জোরও। ২০০৯ সাালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর সম্পাদনায় তাঁর প্রথম বই ‘ব্যাকরণ মানিনা‘ প্রকাশিত হয় কৃত্তিবাস পাবলিশার্স থেকে। ২০১০-১১ তে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয় ‘১৫৭ রকম মিথ্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আবৃত্তি শিখতে যেতেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী শোভন সুন্দর বসুর কাছে। বিদেশ থেকে ফিরে তাঁর সাথে হঠাৎ দেখা। অদিতি শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে যান তাঁকে। শুভেচ্ছা জানাবার পরই ব্যাস্ত শোভন সুন্দর বসু চলে যান সেখান থেকে। অদিতি বললেন,

আমার খুব রাগ হল, যাবার পথে আমার জুতো ছিঁড়ে গেছিল, এত কষ্ট করে গেলাম, ঘটনাক্রমে সেই দিনই ছিল ওনার জন্মদিন। আমি বললাম আর কোনোদিন কথা বলব না আপনার সাথে। কিন্তু কপালের লিখন,২০১৪ সালে আমার উকিলের প্রয়োজন হয়, তখন আমিই ওকে ফোন করি,কারণ পেশাগত ভাবে উনি একজন উকিল। সেই থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়। ভালোবাসার অন্ধকার দিকগুলো নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য করেছিল আমায়, কিন্তু ওর কাজের প্রতি যে দায়িত্ব, মনন বা যে শ্রদ্ধা আমি দেখি আমার মনে হয় জীবনের অনেকটা সময় আমি নষ্ট করে ফেলেছি।  তাঁর জীবনেও আমারই মত কিছু খারাপ-লাগা রয়েছে কিন্তু সে তো কাজ ভুলে যায়নি,তাই আমাকেও নিজের কাজে মন দিতে হবে। সেই থেকেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা এবং অবশেষে বিয়ে।

বসু পরিবারের ছোট্ট সদস্য পদ্য। পদ্যর ভালো নাম আরশি।

সাহিত্য পুরস্কার

২০১৬ সালে মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কার পান অদিতি। তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল ব্যাকরণ মানিনা, ১৫৭ রকম মিথ্যে, সাড়ে তিনটের উড়োজাহাজ, অসতী প্রবনতা, পরশুদিনের কাগজ, সব চিঠি প্রকাশিত ইত্যাদি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ সম্মিলিত ভাবে তাঁকে পূর্ব পশ্চিম সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও স্রোত সাহিত্য পুরস্কার, অমিতেশ মাইতি স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

Satkahon Interview - কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায়
কিছু বই
Satkahon Interview – কবি, সাহিত্যিক অদিতি বসুরায়

রঙ

নতুন প্রজন্মের লেখক লেখিকা দের উদ্দ্যেশে তিনি বললেন, “ এখন অনেকেই লেখালেখি করছেন,আমার খুবই ভালো লাগে আমি অনেকের লেখাই পড়ি। সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা পার্সোনাল ব্লগ, সবাই লিখুন, কিন্তু লিখতে গেলে আগে পড়তে হবে। পড়াটাই আমাদের পরিশ্রম। বই পড়া, মানুষের সাথে মানুষের মেলামেশার উপর নির্ভর করে লেখার সাবলীলতা।

সমাজে সকলের যে দৃষ্টিভঙ্গি সমান হবে তা নয়, লড়াই করে যেতে হবে, নিজের জীবনের এক ঘটনা বলছি, একবার পুজোতে এক জায়গায় যাই, সেখানে একজন আমার মেয়ে কে দেখিয়ে আমায় বলেন, ইশ, মায়ের মত রং টা পেলো না। শুনে আমার অবাক লাগল ! কি যায় আসে গায়ের রঙ চাপা হলে? গায়ের রঙে তো কোথাও কারুর যোগ্যতা প্রমান পায় না! কারণ, সাদা কালোর বিভাজন তো আমরা করেছি, ঈশ্বর রঙ তৈরি করেছেন।

তাই, ভালোবাসা জীবনে থাকা ভীষণ জরুরী, কিন্তু তার থেকেও বড় নিজের পরিচয় তৈরি করা। নিজের পায়ের মাটি শক্ত হলে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে, নইলে প্রতিবাদ হয়ত হবে, তবে যুদ্ধ জয় হবে না। “

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *