Satkahon Interview – সাক্ষাৎকারে পণ্ডিত কৌশিক ভট্টাচার্য
Satkahon Interview – সাক্ষাৎকারে পণ্ডিত কৌশিক ভট্টাচার্য
জীবন ভৈরব
সঙ্গীতাচার্য মনীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের পৌত্র এবং সঙ্গীতাচার্য পতাকী ভট্টাচার্যের পুত্র পণ্ডিত কৌশিক ভট্টাচার্য।
গুরুজনেরা আত্মিক এবং পেশাগত ভাবে সঙ্গীত জগতে যুক্ত ছিলেন বলে একদিকে যেমন সংগীতের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি তাঁর, তেমনই কণ্ঠ বা সুর পেয়েছিলেন উত্তরসূরি হিসেবে।
তাই তিন চাকার সাইকেল চালাতে চালাতে যখন তিনি রাগ সঙ্গীত গেয়ে উঠলেন বাবা খুঁজে পেলেন তাঁর আগামী।
পরিবারের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই নিজ কণ্ঠে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মর্যাদাকে এখনও অক্ষুণ্ণ রেখেছেন তিনি।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে উঠে এলো তাঁর অভিজ্ঞতা ও জীবন গল্প। আলোচনা করলেন খেয়াল সঙ্গীতের গোড়াপত্তন নিয়ে।
আর, আপনাদের জন্যে রইল সরাসরি তাঁর মুখে কিছু মজাদার গল্পের Exclusive Video.
ধ্রুপদ খেয়াল
পিতার উত্তরসূরি হিসেবে আপনি খেয়াল সঙ্গীতকেই গ্রহন করেছেন, ধ্রুপদ কেন নয়?
প্রথম কথা হল প্রকৃত উর্দু উচ্চারণে কথাতা খয়াল, খেয়াল শব্দটা বাংলা ভাষায় অপভ্রংশ হয়েছে।
আসলে, আমরা যাই গাই না কেন সবটাই ধ্রুপদ, দাদুর সময়ে ধ্রুপদ সঙ্গীতের চর্চা ছিল প্রবল।
কিন্তু ধীরে ধীরে তা অনেকাংশে হ্রাস পেতে থাকে। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি,
খয়াল শব্দের অর্থ হল মর্জি,ইচ্ছে বা কল্পনা। ধ্রুপদ অর্থে সত্যপদ বা ঈশ্বরের সঙ্গীত।তাই ধ্রুপদ পরিবেশিত হত মন্দিরে এবং তা পুজা অর্চনার মাধ্যম ছিল বলতে পারো।
ক্রমে দেশের রাজা সম্রাটরা নিজেদের সভায় সঙ্গীতের আসর বসাতে লাগলেন।তাঁরা বললেন আমি তোমাদের রাজা-মালিক তোমরা আমাকে গান শোনাও।
এখন পাথর প্রতিমার সাথে একই গান বারবার গাইলেও তিনি আপত্তি জানাবেন না কিন্তু রক্তমাংসের মানুষের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়।
তাছাড়া ভালো গান ভালো লাগলে রাজারা পুরস্কার দিতেন।
সেই থেকে নতুন গান বাঁধবার তাগিদেই একদল সঙ্গীতজ্ঞ ধ্রুপদ কে ভেঙে এক নতুন রকম সঙ্গীত তৈরি করলেন। কিছু ব্যক্তি বললেন এটা অনুচিত এবং কিছু বললেন অনুচিত।
যারা বললেন অনুচিত তাঁদের প্রত্যুতরে বীপরিত দল বললেন এটা আমাদের ইচ্ছে বা মর্জি বা খয়াল, আমরা এই গান গাইব।
সেই থেকে এই সঙ্গীতের নামকরণ হল ‘’খয়াল’’ এবং একদল নিজেদের ধ্রুপদ সঙ্গীতে আবদ্ধ রাখলেন ও অন্যদল কে বলা হল “খয়ালী”
তোমার প্রশ্নের উত্তরে আমিও তাই বলব এই ধারাকে অবগাহন করাটা আমার ভালোলাগা, আমার খয়াল।তবে ধ্রুপদের সমস্ত বৈশিষ্ট খেয়ালে আছে কিন্তু খয়ালের বৈশিষ্ট কিন্তু ধ্রুপদে নেই।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত
দীর্ঘ দিন আপনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করছেন, শিক্ষকতা করছেন। অনেক গুনী প্রতিভা বিকশিত হয়েছে আপনার হাত ধরে।
এখন অনেকেই শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে মাধ্যম করে এগিয়ে চলেছে.
আপনার সময়ে কি এই সঙ্গীত ও শিল্পীদের জনপ্রয়িতার আজকের মতই রমরমা ছিল নাকি তা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল?
এই সঙ্গীত কিন্তু কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের জন্যেই।এই নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।
আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব আর একজন পপ গায়ক এর মত লক্ষ লক্ষ লোক আমার পিছনে ঘুরবে এটা ভাবলে খয়াল না শেখাই ভালো। সাহিত্যের যেমন বিভিন্ন বিভাগ আছে সঙ্গীতেরও আছে।
সব কিছু সবার জন্যে নয়।
আর একটা কথা বলি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে শাস্ত্র কথাটার মানে কিন্তু ব্যকরণ নয়।অনেকেই এটা ভুল করে। যেকোনো গান গাইতে গেলেই কিন্তু ব্যকরণ লাগবে।
যেমন কোন ছেলের নাম সূর্য মানেই সে সূর্য নয়, সেটা তার নাম তেমনই এটাও একটা নাম।তাই আমরা যেটা গাইছি সেটাকে তুমি খয়াল বলতে পারো।
সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমি ও পণ্ডিত কে জি গিন্ডে
বাবার কাছে শেখার পাশাপাশি আর কার কার কাছে শিখেছেন? গুরুজীদের সাথে কিছু স্মৃতি?
বাবার কাছে আমি অনেকটাই শিখেছি বাবা আমার প্রথম সঙ্গীতগুরু, এছারা SRA তে আমি শিখেছি পণ্ডিত অরুণ ভাদুরি ও পণ্ডিত কে জি গিন্ডে এঁর কাছে। শেখান থেকে আমি A3 grade নিয়ে পাস করি।
একটা মজার ঘটনা বলি। আমি তখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন। কিন্তু পণ্ডিত কে জি গিন্ডে যখন কলকাতায় আসতেন তখন ওনার কাছেই আমরা থাকতাম, শিখতাম। বাড়ি আসার উপায় ছিল না।
তখন বন্ধুদের মধ্যে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল সেটা হল কেউ বাড়ি যাবার কথা বললে আমরা বলতাম, হ্যাঁ ওনাকে বল ছুটির কথা জানো না তো বাড়ি যেতে মার লাগে।
আর গানের বাপ্যারে পণ্ডিতজী ছিলেন খুব কঠোর। উনি খাতা দেখে গান গাইতে দিতেন না। আর উনি ধরো অন্য কাউকে শেখাচ্ছেন আমরা শুনছি, এখন আমাদের গাইতে বললে আমাদের গাইতেই হবে। যদি বলি জানিনা তাহলে উনি অসন্তুষ্ট হতেন।
এমনই একদিন উনি রবীন্দ্রভারতীর একটি ওয়ার্কশপে শেখাচ্ছেন শ্যামকল্যানের বন্দিশ। একটু গেয়েছেন, কি গেয়েছেন বুঝতে পারিনি ঠিক, সবার আগে আমাকে ধরলেন গেয়ে শোনাতে হবে।
তখন কি করব বুঝতে পারছি না আমি একটু হিন্দি উচ্চারণ করে গেয়ে উঠলাম “বাড়ি যেতে মার লাগে”.
উনি বুঝতে পারেননি, বললেন বাহ বাহ ঠিক গেয়েছ বহুত আচ্ছা।
তো, এইরকম নানা আনন্দের স্মৃতির পাশাপাশি কিছু করুণ স্মৃতি আছে।
ওয়ার্কশপের পর উনি আমার সাথেই ক্যান্টিনে খেতে আসতেন।
তেমনই একদিন ওনার সাথে এসছি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ওনার ফ্লাইট এর টিকিট কনফার্ম হয়েছে কিনা। আমি বললাম হ্যাঁ হয়ে গেছে।
ওনাকে বসতে বলে আমি ওনার জন্যে খাবার আনতে গেছি। বেশিক্ষন হয়নি, ফিরে এসে দেখি উনি টেবিল এ মাথা রেখে শুয়ে আছেন। ডাকছি সাড়া নেই। গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম শরীর নিস্পন্দন।
এক নিমেষে এক লহমায় উনি গান গাইতে গাইতে চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
হয়ত ওনার মত একজন মানুষের এইরকম মৃত্যুই কাম্য।
কিন্তু আমরা যারা আগের মুহূর্তেই ওনার সাথে আনন্দ করেছি গান করেছি তাদের কাছে খুবই শোকবহুল।
জ্ঞানবানী ও রেডিও ফ্রান্স
জ্ঞানবানী রেডিও চ্যানেলে প্রথম দূরভাষে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখানো শুরু হয় পণ্ডিত কৌশিক ভট্টাচার্যের হাত ধরেই।
বাবা সঙ্গীতাচার্য পতাকি ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান মনীন্দ্র সঙ্গীত তীর্থের পাশাপাশি ডোভারলেন সঙ্গীত আকাদেমিতে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন তিনি।
ভারতবর্ষ ও বিদেশের একাধিক বিখ্যাত মঞ্চ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন তিনি।
তাঁর বিশেষ কিছু গানের আলব্যাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, “Samanwaya” ,”Meditative Midnight”,”Refusion”, “কথা না কথায়” ইত্যাদি।
বাঙালী হিসেবে বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে কোন স্মৃতি?
সে আরও এক মজার স্মৃতি। আগে নানান গ্রামে গঞ্জেও অনুষ্ঠান করেছি সেখানে দেখি ঘোষণা করছে গজল আসলে গজল না বলছে গোজোল পরিবেশন করবেন কৌশিক ভট্টাচার্য।
আমি বললাম আমি তো গজল গাই না আমি খেয়াল গাইব বলে এসেছি।
যিনি ঘোষণা করছিলেন তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন এখানে কেউ বুঝবে না তুমি খেয়ালই শোনাও।
তখন আমরা বলতাম গান টা ভালো করে গাস কিন্তু নইলে হাততালি দিয়ে তুলে দেবে।
মানে, কারুর গান ভালো না লাগলে শ্রোতা হাততালি দিচ্ছে গানের মাঝখানে যে এবার তুমি উঠে পড়ো। সেই হাততালির কথাটা কিন্তু ভুলিনি।
তা, আমি তো গেছি রেডিও ফ্রান্সের অনুষ্ঠানে। সে এক মজার অভিজ্ঞতা।
আমি তো গাইলাম, এবার দেখি সবাই ভীষণ ভাবে হাততালি দিচ্ছে।
আমি ভাবলাম আমার গান একদম ভালো হয়নি। আমি স্টেজ ছেড়ে চলে এলাম। লজ্জায় আমার যাচ্ছে তাই অবস্থা।
তখন আমার বন্ধু যিনি ঘোষণা করছিলেন বললেন তুই কেন চলে এলি?আমি বললাম আমার গান ভালো হয়নি বলে সবাই হাততালি দিয়ে আমায় তুলে দিয়েছে। ততক্ষনে শ্রোতার করতালি প্রায় পদতালিতে পরিণত হয়েছে আর চলে আসার পরও থামছে না।
তখন সে আমাকে বলল যে এখানে সবাই গান ভালো লাগলে ওভাবে হাততালি দিয়ে প্রশংসা করে এর মানে হল ওরা আরও গান শুনতে চায়। তারপর আমি গিয়ে গান শুরু করতে সব স্তব্ধ হল।
এই ধরণের নানান অভিজ্ঞতা আনন্দে দুঃখে আমার গান জীবনের পাথেয়।
অধ্যাবসায়
নতুন ছাত্রছাত্রীদের উদ্যেশ্যে কি বার্তা দেবেন?
বিদ্যালয়ের যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকার কাছে পড়তে হয়।
বাড়িতে মাস্টার মশায় এর কাছে পড়তে হয়। তারপরেও যদি কেউ খারাপ ফল করে তখন সবাই বলেন তুই তার মানে ভালো করে পড়িস নি।
কিন্তু কেউ আধঘণ্টা রেওয়াজ করে দু বছর গান শিখে যদি গাইতে না পারে তখন সবাই হতবাক হয়ে যায় এবং বলে ও ২ বছর ধরে গান শিখছে কিন্তু গাইতে পারছে না কেন?
যেকোনো বিষয়ে দক্ষ হতে গেলে তার জন্যে চাই অধ্যাবসায়। রেওয়াজ। অভ্যাস।
সাধনা করতে হবে।শুধু জনপ্রিয়তা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে শেখাটা শেখাই, সাধনা নয়। সাধনার জন্যে প্রয়োজন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
খুব ভালো লাগল…গল্প গুলো সুন্দর .. শেষের কথা টা একদম ই প্রযোজ্য.. আমরা সত্যি পড়াশোনা র মতো করে 7-8ঘন্টা অভ্যাস করিনা… কিন্তু একটা জিনিস কে সঠিক ভাবে পেতে গেলে সময় দিতে হয়…. এই 3-4বছর এর ছাত্রী জীবনে অনেক শিখেছি… আমি সত্যি কিছুই পারতামনা যা পারি যেটুকু পারি সত্যি আপনার শেখানোর জন্যই…
আপনার শেখানোর appreciation সকল কে আত্মবিশ্বাস দেওয়া যে হচ্ছে নিশ্চই হবে এই কথা গুলোই সব থেকে শান্তি জনক যেটা অন্য কেউ করেনা…নিজেকে improve করার চেষ্টা করবো আরও… . thank you sir..
খুব ভালো লাগল…গল্প গুলো সুন্দর .. শেষের কথা টা একদম ই প্রযোজ্য.. আমরা সত্যি পড়াশোনা র মতো করে 7-8ঘন্টা অভ্যাস করিনা… কিন্তু একটা জিনিস কে সঠিক ভাবে পেতে গেলে সময় দিতে হয়…. এই 3-4বছর এর ছাত্রী জীবনে অনেক শিখেছি… আমি সত্যি কিছুই পারতামনা যা পারি যেটুকু পারি সত্যি আপনার শেখানোর জন্যই…
আপনার শেখানোর appreciation সকল কে আত্মবিশ্বাস দেওয়া যে হচ্ছে নিশ্চই হবে এই কথা গুলোই সব থেকে শান্তি জনক যেটা অন্য কেউ করেনা…নিজেকে improve করার চেষ্টা করবো আরও… . thank you sir..