Satkahon | Interview | শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষয়িত্রী Chaitali Das
Satkahon | Interview | Chaitali Das
মহাকাশের নক্ষত্র সংখ্যা যদি গোনা যেত তাহলে দেখা যেত যে ভারতবর্ষে শিল্পীর সংখ্যা হয়ত তার থেকেও বেশী। আর বাংলা ও বাঙালী এই শিল্পকে এক্কেবারে হৃদয়ে বহন করে চলেছে।
সঙ্গীতের প্রসঙ্গে আসি। আগেকার দিনে প্রত্যেক বাঙালী বাবা মা চাইতেন আমার মেয়ে গান শিখবে।
বয়স চারের কোঠায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই বাড়িতে আসত হারমোনিয়াম।কিন্তু, সঙ্গীতকে ঠিক সেইভাবে পেশা করে তুলতে কিন্তু দ্বিধা থেকেই যেত পরিবারে।
এখন সেই দ্বিধা- দ্বন্দ অতিক্রম করে সঙ্গীত তার জায়গা করে নিয়েছে অন্য সব পেশার সাথে সমান ভাবে।
পরিবারের মানুষের সমর্থনে ছেলে মেয়ে উভয়ে সমান ভাবে সঙ্গীতকে জীবিকা করে তুলছেন নির্ভয়ে।
সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়, নবীন প্রজন্মের এই উন্নত মানসিকতার প্রতি অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে সঙ্গীতের ধারায়। এক ধারার সঙ্গে অন্য ধারা মিশে তৈরি হচ্ছে ফিউশন।
আজ্ঞে না, এই ফিউশন নিয়ে বর্তমান শিল্পীদের মনে কোন কন-ফিউশন নেই, বরং বাঙালী তাকে গ্রহণ করছে সাদরে।
‘আগামী প্রজন্মের মন পেতে গেলে ফিউশনধর্মী কাজ বাধ্যতামুলক, তাদের পছন্দ মত কাজে তাদের মন পেতে হবে, তবে তারা আদি সঙ্গীতকে নিজে থেকেই আত্মস্থ করতে চাইবে।’
এমনটাই বললেন সঙ্গীত শিল্পী চৈতালি দাস।
সাতকাহনের আজকের সাক্ষাৎকারে আমরা জানব তাঁর সাংগীতিক জীবনের কথা।
‘কথা না কথায়’ গানের অ্যালবাম দিয়েই মানুষের সঙ্গে তাঁর সাংগীতিক পরিচয়। লক্ষাধিক শ্রোতার ভালোবাসা অর্জন করন তিনি তাঁর এই গানের মাধ্যমে।
বাংলা আধুনিক গানের সাথে হিন্দি Ras ke bhare tore nayna গানের মিশ্রণ ও এক অসাধারণ সঙ্গীতায়োজনে মানুষের মনে মনে জায়গা করে নেয় গানটি।
এরপর একে একে, ঝড়ের কাছে’, ‘তুমি ছাড়া আমার আঁখিকোণে’, ‘বোল রে পাপিহারা’, ‘পথ না জানে’, ‘আমার নিভৃত প্রানের’, ‘বীনাবাদিনি সারদা’, ‘এবার তারা দেখব তোরে গো’ ‘তোমার আশিসেই সাজালাম তরী’ ইত্যাদি প্রতিটি গানেই আধুনিকত্বের ছোঁয়া রেখেছেন শিল্পী।
সুমিষ্ট কণ্ঠের সাথে নবীন সঙ্গীতায়োজনের মেলবন্ধন স্বাভাবিক ভাবেই মন কেড়েছে শ্রোতাদের।
বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য “Bless o lord thy earth” ও “তোমার ছোঁয়ায় এক লহমায়” গান দুটির মিশ্রনে একটি উপস্থাপনা।
ইংরাজি অংশ গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা ও বাংলা গান পরিবেশন করেছেন চৈতালি নিজে। মা-মেয়ের যুগলবন্দীতে এই গান এক অনন্য মাত্রা পেয়েছে।
নিজের জীবনদর্শন থেকেই আগামীর প্রতি বার্তা রেখেছেন তিনি। বললেন,
“ছোটবেলায় নানা ধরণের গান শিখেছি। একদম প্রথম প্রথম খেয়াল গান শিখতে ভালো লাগত না।
তখন বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতাম না।
এখন যে ধরণের ফিউশন কাজ হচ্ছে, বা আমি নিজেও ইংরাজি ক্যারল গানের সাথে ঠুমরী, বাংলা গান এর সাথে খেয়ালের বন্দিশ ইত্যাদি বেশ কিছু কাজ করেছি, করছি তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।“
কিছুদিন আগেই তাঁর কণ্ঠে মুক্তি পেয়েছে শ্যামা সঙ্গীত ‘তোমার আশিসেই সাজালাম মাগো’।
গানটির সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি গানের কথা রচনা করেছেন তিনি।
কেবলমাত্র কণ্ঠ মাধুর্যেই নয়, মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখনীতে তিনি মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের। শুনে নেবো সেই গান…
কিছুদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া টিভিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি।
নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করে দেখে নিন সেই অনুষ্ঠানের কিছু ঝলক…
এছাড়াও ভবানীপুর সঙ্গীত সম্মিলনী, অহীন্দ্র মঞ্চ, জ্ঞান মঞ্চ, বিবেকানন্দ পাঠচক্র, বঙ্গবানী মিউজিক কনফারেন্স কোলাঘাট, ফারাক্কা এন টি পি সি, সুভা-এ-বেনারস,The Dovar lane music academy,ICCR ও বিড়লা অ্যাকাডেমি ইত্যাদি একাধিক উল্লেখযোগ্য মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন তিনি।
বর্তমানে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গীত প্রশিক্ষন দিচ্ছেন তিনি।বলা যেতে পারে, শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষয়িত্রীর এক নতুন ভুমিকায় পেয়েছি আমরা তাঁকে।
তাঁর কথা অনুযায়ী,
“একাল সেকালের মিলনেই সৃষ্টি হয়েছে আধুনিকতা।ধ্রুপদ সঙ্গীতের সাথে নবীনত্বের মেলবন্ধনেই তো সৃষ্টি খেয়াল, ঠুমরী।
আদি সঙ্গীতের ভিত্তি যদি মজবুত হয় তবে যেকোনো সঙ্গীত পরিবেশনেই দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
তাই নবীন প্রজন্মকে তাদের মত করেই শাস্ত্রীয় রাগ রাগিণীর প্রতি ভালোবাসা তৈরি করাতে হবে। আর তাহলেই নতুনের মাঝে চিরকাল বিরাজ করবে পুরাতন, তার আদি শিক্ষা নিয়ে।“
একদিকে বর্তমান সমাজে যেমন স্বাধীনতা পেয়েছে সঙ্গীতায়োজনে কিংবা ভাষায়, যেমন স্বেচ্ছায় মিশে যাচ্ছে প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের সুর, তেমনই সঙ্গীতের স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণকে অস্বীকার করে কখনো শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন গুরুমুখী শিক্ষার।
নতুন গানে নবীন প্রজন্মকে যেমন মুগ্ধ করছেন চৈতালি তেমনই সঙ্গীতের অনুশীলনে শেখাচ্ছেন সঙ্গীতের আদি অনন্ত জ্ঞান।
দুইয়ের মিলনে তিনি বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি এক অভিনবত্ব রেখে যাবেন এ কথা বলাই বাহুল্য।