Satkahon Interview – দীপাঞ্জন পাল | রবিগান তাঁর শেষ পারানির কড়ি
Satkahon Interview – দীপাঞ্জন পাল
"পুষ্প যেমন আলোর লাগি না জেনে রাত কাটায় জাগি, তেমনি তোমার আশায় আমার হৃদয় আছে ছেয়ে– সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়॥"
কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় চক্কর কাটতে কাটতে হঠাৎ দেখা। গান গাইছে নিতান্তই সাধারণ একটি ছেলে। কিন্তু অসাধারণ তাঁর গায়কী।
সে গানকে চোখ মেলে দেখার প্রয়োজন পরে না। আপনিই চোখ বুজে আসে অন্তরের টানে।
বুঝলাম, আমাদের গেছে যে দিন, সবই যায়নি। কিছু তারা আছে ফ্রেন্ড লিস্টের গভীরে।
দীপাঞ্জন পাল। কণ্ঠে তার রবীন্দ্রগানের আবেদন।কথা বলে জানলাম, সঙ্গীত জগতের ভিড় থেকে একটু সরে তিনি কেবলমাত্র সঙ্গীতানুরাগী হয়ে বাঁচতে চান। পেশাদার শিল্পী হিসেবে দাবী করতে চান না তাঁর অধিষ্ঠান।
কিন্তু কেন? কণ্ঠে সুর ও শ্রোতার একরাশ প্রশংসা ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও কেন নিজেকে পেশাদার শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান না…?
চাই না একথা ভুল।তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জীবিকা করার মত সাহস পাইনি তাই নিজেকে পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী বলতে পারব না। তাছাড়া শিল্পী হিসেবে জীবিকা নির্বাহন করতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা বোধহয় আমার মত মুখচোরার পক্ষে সম্ভব নয়।
ছোটবেলায় বেহালা শিখতে ভর্তি হলেও, দু তিন বছরের মধ্যেই সেটা ভালো-না-লাগায় পরিণত হয় তাঁর।
মা বাবা দুজনেই চাকুরিজীবি, গানের সাথে সেভাবে কোন যোগাযোগ না থাকলেও বাড়িতে খোলা গলায় ছেলের গান শুনে মা সিদ্ধান্ত নেন দীপাঞ্জন গান শিখবে। তাই শ্রুতিনন্দনে নিয়ে যান তাঁকে।
পরীক্ষায় দীপাঞ্জন গেয়ে শোনান ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’, উত্তীর্ণ হন তিনি।
কিন্তু শ্রুতিনন্দনের প্রধান অধ্যক্ষা শ্রীমতী চন্দনা চক্রবর্তী তাঁর মা কে ডেকে বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের গান শেখানো হয়, কিন্তু ওর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত অনেক বেশী মানাবে,ওকে আপনি দক্ষিণীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখান।”
সেই সময় দক্ষিণীতে ভর্তিপরীক্ষা বন্ধ ছিল, তাই বেশ কিছুদিন ভবানীপুর গীতবিতানে গান শেখেন দীপাঞ্জন।
তারপর তাঁর দক্ষিণীতে আসা এবং ২০০৪ সাল থেকে গান শেখা শুরু।
দীর্ঘদিন আপনি দক্ষিণীতে গান শিখেছেন…শেখার বাইরে কিছু অভিজ্ঞতা?
দক্ষিণীতে শুধু গান শিখেছি বলবনা,দক্ষিণী আমাকে সময়ানুবর্তী,নিয়মানুবর্তী হতে শিখিয়েছে।
এমনও হয়েছে আমার ক্লাসে ঢুকতে ৫ মিনিট দেরী হয়েছে,শেখাচ্ছেন শ্রী সুদেব গুহঠাকুরতা। আমাকে বললেন আজ তুমি ক্লাসের বাইরে বসেই গান শোনো। পরের দিন ঠিক সময় এসো।
এই যে অনুশাসন তা কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছে,তাই সব মিলিয়ে দক্ষিণী আজও সমান ঐতিহ্যে অবস্থান করছে।
আমি ২০১২ তে দক্ষিণী থেকে ডিপ্লোমা পাস করি, এবং তারপর ২০১৩ থেকে বেশ কয়েক বছর শ্রী রণো গুহঠাকুরতার কাছেও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছি।
দক্ষিণীর পরীক্ষায় আমি ২০১২ তে প্রথম হই ও সুনীল কুমার রায় স্মৃতি পুরস্কার পাই। ২০১৭তে পাই দক্ষিণী পুরস্কার।
এর পরের বছর আমি পাই দেবব্রত বিশ্বাস স্মৃতি পুরস্কার। Hindustan records ও দক্ষিণীর সাথে যৌথ উদ্যোগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
সেই পুরস্কার হিসেবে Hindustan Records আমার একটি গানের সঙ্কলন প্রকাশ করে।
দক্ষিণীর পর?
চাকরি সুত্রে আমাকে কিছুদিন বাইরে থাকতে হয়, তাই গানে ছেদ পরে।
এরপর কলকাতা বদলি হয়ে আসি ভাগ্যক্রমে। তখন শ্রী দেবাশিস রায়চৌধুরির কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র দর্শন নিয়ে চর্চা শুরু করি।
আসলে রবীন্দ্রনাথের গান শুধুই গান নয়, সেই গান কে বুঝতে গেলে প্রয়োজন রবীন্দ্র চেতনা। যা আমি শ্রী দেবাশিস রায়চৌধুরীর কাছে শিখেছি।
এখন আমি শ্রীমতী অপালা বসুর কাছে শিখছি।
যারা আপনার গান শুনতে চাইছেন তাঁদের জন্যে আগামী দিনে কোন পরিকল্পনা?
আমি নিশ্চয়ই তাঁদের নিরাশ করব না। তবে আরও একটু তৈরি হয়ে নিয়ে আমি কাজ করতে চাই।
পেশাগতশিল্পী হিসেবে নিজেকে দাবী করতে আমি চাই না আগেও বলেছি তবে ভবিষ্যতে গান শেখাবার আমার ইচ্ছে আছে,যতটুকু আমি জানি আমি শিখেছি তা আমি নিশ্চয়ই শেখাবো।
ঝিনুক যেমন তাঁর মুক্তো ঢেকে রাখে তেমনই দীপাঞ্জনও তাঁর গানকে কণ্ঠে আগলে রেখেছেন।
জনপ্রিয়তার ঘোড়দৌড় থেকে তিনি বেশ কয়েক হাত দূরে থাকতে চান।
তাঁর মতে, “রবীন্দ্রনাথের গান আমার শেষ পারানির কড়ি হয়েই থাক”…
অসাধারণ 👏👏
Thank you so much
খুব ভালো লাগলো দীপাঞ্জন এর সাক্ষাৎ কার
খুব ভাল লাগল রে…যেমন ইচ্ছে তেমন করেই এগিয়ে চল…সাথে আছি…
ভাল থাকিস
শুভকামনা
অসাধারণ মাধুর্য দীপাঞ্জন পালের কন্ঠে ।God bless.
আহা যেমন গলা, তেমনই গায়কী ! গান শুনতে শুনতেই কি যে অদ্ভুত সুন্দর সাক্ষাৎকারটুকু পড়লাম আর কিইইই যে ভাল লাগল কি বলব দীপাঞ্জন। আন্তরিক শুভকামনা আর ভালোবাসা রইল তোর জন্য।
বাঃ, সোনা ছেলে আমার । যেমন অপূর্ব গান। তেমনি সুন্দর কথা। এই রকম বিনয় সুন্দর হোক তোমার শিল্প সাধনা।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ।
রবীন্দ্রনাথের গান তোমাকে ঘিরে রাখুক,কণ্ঠে ও জীবনে
দীপাঞ্জন বরাবর রবীন্দ্রসঙ্গীত ও তার ঘরাণার মানুষ। এমন অনায়াসে কথার মানে ও সুরের মূর্ছনায় রবীন্দ্রনাথের গান কে হৃদয় হতে শোনাতে পারে।। অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।