Satkahon Interview – গান জীবনের গল্পে চন্দ্রানী চ্যাটার্জী

Satkahon Interview – গান জীবনের গল্পে চন্দ্রানী চ্যাটার্জী
"ছোটবেলার 'গানের লড়াই' বড় হবার পর 'গান নিয়ে লড়াই'-তে পরিণত হয়। যেমনি হোক,এটাই হয়ত ঈশ্বরের খেলা। না চাইলেও খেলতে হবে সকলেই" -CHANDRANI CHATTERJEE
আঁকার স্কুলের চিত্র প্রদর্শনী। উপস্থিত স্বনামধন্য রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতি সুচিত্রা মিত্র।
একটি মেয়েকে অটোগ্রাফ দিতে তিনি লিখেছিলেন ‘কল্যান হোক তব কল্যাণী’ এবং প্রশ্ন করলেন বলতো এই উক্তি কার প্রতি কার? উত্তর দিতে পারেনি সে।
উত্তর দিলেন ছোট্ট চন্দ্রানী, “নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা, আনন্দ বলেছে প্রকৃতিকে’।
আসানসোল এর মত মফঃস্বল শহরে ছোট মেয়েটির রবীন্দ্রচর্চা মুগ্ধ করেছিল তাঁকে।
তাই ছোট্ট চন্দ্রানীর ডাকে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে শিল্পী আলাপ করলেন চন্দ্রানীর মা ও দিদির সাথে।

জীবনের সেই টুকরো কিছু স্মৃতি সাতকাহনকে মেলে ধরলেন সঙ্গীতশিল্পী চন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায়।
পেশাগত ভাবে না হলেও মা,বাবা,ঠাকুমা গান গাইতেন। বাড়িতে প্রায়ই গানের আসর বসত।
বাড়ির ছোটখাটো গানের জলসায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গানের চর্চা হত।তাই ছোট থেকে গান শুনে বড় হওয়া তাঁর।

প্রথম গান শিখেছেন দিদি ইন্দ্রানী চট্টোপাধ্যায় এর কাছে।
পরবর্তীকালে বেশ কিছু বছর নানান কারণে প্রথাগত ভাবে গান শেখা তাঁর বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু নিজে নিজেই গানের অভ্যাস করতেন চন্দ্রানী সেই সময়।

তারপর Fashion textile design নিয়ে পড়াশুনা, বিয়ে এবং SSC পরীক্ষায় ১৭ র্যাঙ্ক করে চাকরি পাওয়া।
স্বামী ও বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের উৎসাহেই তাঁর নতুন করে গান শেখার শুরু। চন্দ্রানী বলেন,
‘স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্তের কাছে আমি গান শিখতে যাই।
গানের অডিশন দিতে গিয়ে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম কারণ আমার স্বপ্ন ছিল ওনার কাছে আমি শিখব। মেয়ে ছোট থাকায় আমি বেশিদিন শিখতে পারিনি।
ওনাকে আমার সমস্যার কথা বলতে উনি আমাকে বলেছিলেন শিষ্য যেখানেই থাক গুরুর কাছে চিরকাল শিষ্যই থাকে।
এরপর শ্রমনা চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস রাইয়চোধুরির কাছেও বেশ কিছু দিন গান শিখেছেন তিনি।
বর্তমানে দীপাঞ্জন কাঞ্জিলালের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখছেন তিনি।
খড়দা রবীন্দ্রভবন, ICCR, যাদবপুর ত্রিগুনাসেন, নজরুল তীর্থ ইত্যাদি মঞ্চে তাঁর নিজের লেখা ভাষ্যপাঠে একাধিক অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। চন্দ্রানী বলেন,
‘’নজরুল তীর্থের অনুষ্ঠান টি আমার খুব স্মৃতি বহুল একটি অনুষ্ঠান। আমি তখন মঞ্চে, দর্শক আসনে তিন চার জন শ্রোতা। আমি গান শুরু করলাম ‘মহা বিশ্বে মহাকাশে’… আসতে আসতে দর্শক আসন ভরে উঠল। সকলে আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন।
আমি যখন মঞ্চ থেকে নেমেছি তখন একটি ছোট্ট ছেলে এসে আমাকে বলল দিদি, তোমার গান আমার খুব ভালো লেগেছে।
বড়রা তো গানের বিচার করবেন, ভাল-মন্দ বলবেনই,তাদের অভিনন্দন অবশ্যই আমার পাওয়া তবে একটি ছোট বাচ্চার কাছে অনভিপ্রেত অভিনন্দন আমার আজ ও মনে আছে।“
কিছু স্মৃতি কিছু অনুভূতি আজীবন তাড়া করে বেড়ায় , হাজারো কর্মব্যস্ততা সেই অনুভূতি গুলো কে বাক্সবন্দী করে রেখে দিতে চায়…
Posted by Chandrani Chatterjee on Thursday, 16 April 2020
প্রকাশিত গানের অ্যালবাম গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘এ মন খোঁজে’ এবং ‘যে পথে প্রেম’… একক বাংলা মৌলিক গানের মধ্যে তাঁর গাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য গান রইল আপনাদের জন্য।
জীবনে হারা জেতা চলতেই থাকে।
মিথ্যে বদনাম যাচাই না করে গানের শিক্ষকের অবমাননা থেকে শুরু করে স্বজনপোষণ বা দলবাজির স্বীকার হতে হয়েছে তাঁকেও।তবে তাঁর মতে,
“স্বজনপোষণ বা দলবাজি তো থাকবেই, কোনদিন কোন বিপ্লবেই তা শিল্প জগত থেকে মুছে যাবে না। তবে, লড়াই করে কিছু জেতার পরে একটা ব্যাক্তিত্ব তৈরি হয় বলে আমি মনে করি।সেই সাফল্যই কিন্তু আগামী দিনের পাথেয়।
সঙ্গীতজগতে সঙ্গীতশিল্পী মহুয়া ব্যানার্জী, সঙ্গীত পরিচালক তাপস দত্ত মার্কোদা কে যেমন পাশে পেয়েছি তেমনই পাইনি ও অনেককে। আসলে লড়াই করে যারা জয় অর্জন করেছেন তাঁরাই আমার অনুপ্রেরণা।
ছোট বেলার ‘গানের লড়াই’ বড় হবার পর ‘গান নিয়ে লড়াই’তে পরিণত হয়। যেমনি হোক, এটাই হয়ত ঈশ্বরের খেলা। না চাইলেও খেলতে হবে সকলেই”

খুব ভালো লাগলো তোর সাতকাহন
এগিয়ে চল । পাশে আছি পাশে থাকবো । ভালো থাকিস তুই ।