Satkahon Interview – আমতা বইমেলা এবং গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
Satkahon Interview – আমতা বইমেলা এবং গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
আমতায় সংস্কার ভারতী শুরু হয়েছিল ২০০০ সাল থেকে। মূলত নাচ-গান-আবৃত্তি চর্চাই ছিল সংস্কার ভারতীর মূল কার্যকলাপ।
বিদ্যা চক্রবর্তী, অলিভিয়া চক্রবর্তী, ঈশিতা চক্রবর্তী, তপতি ব্যানার্জী, দিব্যেন্দু চক্রবর্তী এমনকি সকলের পরিচিত এবং জনপ্রিয় শিল্পী মহুয়া ব্যানার্জী ইত্যাদি বেশ কিছু মানুষের হাত ধরেই সংস্কার ভারতীর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা।
অনুষ্ঠানের অধিকাংশ রিহার্সালই হত গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ফলে তাঁর বাড়ির পরিবেশ ছিল সংস্কৃতি সমৃদ্ধ।
ধীরে ধীরে আমতার একাধিক স্থান থেকে সংস্কার ভারতীর আমন্ত্রন আসতে লাগল অনুষ্ঠানের জন্য।
সেই সময় আমতার প্রাক্তন ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তা শ্রী ফটিক চক্রবর্তী বলেন,“সংস্কার ভারতী যখন এত ভালো অনুষ্ঠান করছে তখন তাঁদের উদ্যোগেই আমতায় শুরু হোক বই মেলা”
এর মধ্যেই কলকাতা সংস্কার ভারতীর অন্যতম প্রধান সুভাষ ভট্টাচার্যের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন,”পশিমবঙ্গের ১০০ টি সংগঠনের মধ্যে আমতা সংস্কার ভারতী যে ভেবেছে তাঁরা বইমেলা করবেন এ তো খুবই আনন্দের খবর।” সম্মতি দেন তিনি।
সেই বছরই আমতা বইমেলার সভাপতি নির্বাচিত হন গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘ ১৭ বছর আমতা বইমেলা কমিটির সভাপতি পদে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর মুখেই শুনব বইমেলার উত্থানের গল্প।
“ প্রথম বছর সুভাষ ভট্টাচার্যয়ের হাত ধরেই বইমেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পাই শ্রী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কে। তখন ৮-১০ টা স্টল হত আমাদের। ৫ দিন ব্যাপী বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত প্রতিদিন।
দ্বিতীয় বছর আসেন শ্রী বুদ্ধদেব গুহ। নারায়ন দেবনাথ,গুরুপদ বিশ্বাস প্রমুখ বিশেষ সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সিনেমা, খেলাধুলো ও সঙ্গীত জগতের একাধিক তারকা আমাদের মঞ্চ আলোকিত করেছেন এবং আমার ভাগ্য যেহেতু আমি সভাপতি ছিলাম সকলেই আমার বাড়িতে এসেছেন এবং আমার আতিথেয়তা গ্রহন করেছেন।”
দশম বর্ষ থেকে বইমেলা ৭ দিনে পরিণত হয় এবং স্টলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০-৩৮ এ।
বই এর পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের পুতুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা যোগ দেন মেলায়।
“ধীরে ধীরে বইমেলার পরিধি ও বিক্রি বাড়তে লাগল।অনেক সদস্য যুক্ত হল।
গিল্ড এর সভাপতি ত্রিদিব চৌধুরী আমাদের বইমেলায় এলেন এবং বললেন যে ‘গ্রামে এইরকম একটি বইমেলা খুবই সুন্দর এবং বইমেলার কর্মকর্তা দের ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমার নেই।’
যেকোনো সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি আমাদের।
তার পরের বছরই ‘আমতা সংস্কার ভারতীর সহযোগিতায় বই ও সংস্কৃতিমেলা’ পাল্টে বইমেলার নামকরন করা হল ‘আমতা বই ও সংস্কৃতিমেলা সমতি’।”
আনন্দ পাবলিশার্স থেকে শুরু করে দেব সাহিত্য কুটির বিভিন্ন নামীদামী প্রকাশনী আসেন আমতা বইমেলায়।
আমতা, ছোট্ট একটি গ্রাম। সেখানে বইমেলা শুরু থেকে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার বই বিক্রি করে প্রতিবছর।
শিক্ষার আলো প্রসারে আমতায় এই বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও প্রতিবছর বিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ছাত্রীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয় বইমেলার পক্ষ থেকে।
বয়সের সাথে সাথে নবীনদের এগিয়ে দিতে হয়, জায়গা দিতে হয়, এমনটাই মনে করে আমতা বইমেলার সভাপতি পদ থেকে অবসর নেন গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমিটি থেকে চিফ প্যাট্রন অর্থাৎ মুখ্য উপদেষ্টা পদে সন্মানিত করা হয় তাঁকে।
ব্যাক্তিগত জীবনে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি নিজেও সুনামের সাথে নানারকম নাটক পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভজ গৌরাঙ্গ কথা,গৌতম নেই,গোলাপের রক্ত,গ্রেব্রিয়াল পেরী,মিল হারা ছন্দ, ইত্যাদি।
এক একটি নাটক ২২-২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে নানা মঞ্চের আমন্ত্রনে।
নাটকের হাত ধরে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। কবি সন্মেলনে নিজের লেখা কবিতাও পাঠ করেছেন একাধিক বার।
কুসংস্কার এর অন্ধকার মুছে ফেলতে পারে বই। শহরের সুযোগ সুবিধা আমতা পর্যন্ত পৌঁছেছে গত কয়েকবছরে।
কিন্তু বিগত ১৭-১৮ বছর ধরে সংস্কার ভারতীর হাত ধরে শুরু করে আমতা বইমেলা কমিটি যেভাবে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে।
আমতা বইমেলা সর্বসাধারণের,কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় না থাকায় বইমেলা সরকার থেকে খুব বেশি সুযোগ সুবিধাও পায়নি।
বইমেলার মঞ্চ থেকে নেতা মন্ত্রীদের সাহায্য বার্তা তাই ভাষণ হয়েই থেকে গেছে।
COPYRIGHT © 2020 SATKAHON