Satkahon – সবজান্তা তিন্নি – গল্প ১৬ – পুঁথি
Satkahon – সবজান্তা তিন্নি – গল্প ১৬ – পুঁথি
বন্ধুরা, তোমরা যারা বই পড়তে ভালোবাসো, তাঁরা নিশ্চয়ই জানো প্রাচীন যুগে কিভাবে পুঁথি তৈরি হত?
যেহেতু আগেকার দিনে ছাপাখানা ছিল না সেহেতু বই হাতে লেখা হত।
আর এই হাতে লেখা বইকে বলা হত পুঁথি।
সংস্কৃত শব্দ পুস্তিকা থেকে পুঁথির জন্ম।
পুস্তিকা শব্দটি আবার সৃষ্টি ‘পুস্ত’ থেকে। পুস্ত কথার অর্থ হল চামড়া। চামড়ার উপর লেখা হতো বলে একে বলা হত পুস্তিকা।
পুঁথির লেখপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো চামড়া, ভূর্জপত্র, তেরেটপত্র, গাছের বাকল, কলাপাতা, তালপাতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান।
এগুলিকে জলে ভিজিয়ে, সেদ্ধ করে এবং রোদে শুকিয়ে লেখার উপযোগী করা হতো।
ফলে এর বর্ণ হতো পান্ডু বা ধূসর এবং এতে সহজে পোকা লাগত না।
তাই পুঁথিকে পাণ্ডুলিপিও বলা হতো।
এখনকার দিনে যেকোনো মুদ্রণের আগে যেকোনো লেখার খসড়া কেই পাণ্ডুলিপি বলা হয়।
পুঁথি লেখার প্রাকৃতিক উপাদানের দুষ্প্রাপ্যতা এবং নানা রকম সীমাবদ্ধতার কারণে এক সময় আবিস্কার হল তুলোট কাগজ।
শন, তুলো, তিসির তন্তু, ছেঁড়া কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তুলোট কাগজ তৈরি করা হতো।
তুলোট কাগজ তৈরি করার সময় মন্ডের সঙ্গে চুন, নীল বা হলুদের গুঁড়ো মেশানো হতো। এর ফলে কাগজ পোকায় কম কাটত।
কিন্তু চুন মেশালে কাগজের স্থায়িত্ব কমে যেত।
নীল মেশালে কাগজের রং হতো নীল এবং হলুদ মেশালে হতো পান্ডু বা ধূসর বর্ণ।
বাঁশের কঞ্চি, পাখির পালক, শজারুর কাঁটা, নল জাতীয় ঘাসের ডগা ইত্যাদি দিয়ে কলম তৈরি করা হতো।
শিমুলের ছাল, লোধ্র, লাক্ষা, জবার কুঁড়ি, কাচা গাব, আমলকী, জাটির রস, ডালিমের কস, কাঠ-কয়লার গুঁড়ো, ভুসা কালি, পোড়া চালের গুঁড়ো ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হতো কালি।
কালির সঙ্গে অনেক সময় লোহার গুঁড়ো মেশানো হতো। এতে কালির ঔজ্জল্য বৃদ্ধি পেত, তবে এর একটা অসুবিধা ছিল এই যে, লোহায় মরচে পড়ে অল্পদিনেই পুঁথির পাতা নষ্ট হয়ে যেত।
অনেক সময় কোনো কোনো কোন কোন গাছের পাকা ফল বা বীজ থেকেও লাল রঙের এক ধরনের কালি তৈরি করা হতো।
পুঁথির পাতাগুলোর মাঝখানে ছিদ্র করে সুতো দিয়ে বেঁধে ওপরে-নিচে কাঠের তক্তা দিয়ে আটকে রাখা হতো।
এই কাঠের তক্তা এবং পুঁথির পাতায় অনেক সময় নানা ধরনের ছবি আঁকা হত।
বর্তমান দিনে হাতে লেখা এই প্রাচীন পুঁথি গুলির মধ্যে অধিকাংশই গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত।
যেগুলি এখন পর্যন্ত গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি, মাইক্রোফিল্ম করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।