Sanchari roy | Dancer | Friday Fantastic | Satkahon

Sanchari roy | Dancer | Friday Fantastic | Satkahon

Sanchari roy | Dancer | Friday Fantastic | Satkahon

নবীনদের নিয়ে চিরকাল মানুষের বুক ভরা আশা।

আজ যা শেষ হয়নি, কাল কোন নবীনের নব ভাবনায় তা পুর্ণতা পাবে।

আবার আজ যা হয়েছে কাল হয়ত কোন আর এক নবীন তাকে রুপ দেবে ভিন্ন মাত্রায়।

সংস্কৃতির কাজই হল এই নবীনের জয়গান গাওয়া।

বসন্তের সবুজ জানান দিয়ে যায় আমি এসেছি, আবার নতুন করে সাজাব ব’লে।

আমি এসেছি নতুন করে শেখাবো আর শিখব ব’লে।

ঝরা পাতার থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাকে আপন রসে, রঙে রাঙিয়ে তুলে সবটুকু প্রকৃতিকে দিয়ে যাব ব’লে।

সাতকাহনের পাঠকরা আজ জানবেন তেমনই এক নবীনের পরিচয়।

সাক্ষাৎকারে নৃত্য শিল্পী শ্রীমতী সঞ্চারী রায়।

বাঙালীর চিরাচরিত নিয়ম সন্তানকে সংস্কৃতিবান করে তোলা। সেই নিয়মেই তাঁর নাচ শেখার শুরু।

খুব ছোট থেকেই তিনি যেকোনো গান শুনলেই নিজে নিজে নাচতে থাকতেন।

সেই দেখেই বাবা মা বাড়ির পাশেই সীমা দি-র কাছে আমাকে নাচ শিখতে ভর্তি করে দেন। তখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স।

সীমা দিদিমনি কত্থক শেখাতেন। তাই সঞ্চারীও কত্থক দিয়েই তাঁর নাচ শেখা শুরু করেন।

এছাড়াও, কত্থকের পাশাপাশি তিনি ছড়ার গানের নাচ,আধুনিক নৃত্য,রবীন্দ্রনৃত্য ইত্যাদি শিখতেন।

বললেন,

“মনে আছে, সেই পাঁচ বছর বয়সেই আমি ছড়ার গানের সাথে প্রথম মঞ্চে নাচ করি।

মধ্যমগ্রামে আমাদের একটি অনুষ্ঠান হয়। আলিবাবা ৪০ চোর। আমাকে দিদি একটা গানের নাচ তুলিয়েছিলেন।

কিন্তু আমি অন্যদের দেখে দেখে আরও কয়েকটা নাচ শিখে ফেলি। দিদি সেটা লক্ষ্য করেন আর আমাকে অন্য গানের সাথেও নাচ করার অনুমতি দেন।

আলি বাবা ৪০ চোর নাটকে আমি মোট ৪ টি ভূমিকায় নৃত্য পরিবেশন করেছিলাম।

কিন্তু দিদির বিয়ে হয়ে যাবার পরে ওনার কাছে আর শেখা হলনা। এরপর ইন্দ্রাণী বক্সী বলে এক দিদির কাছে আমি কত্থক নৃত্য ও অন্যান্য নৃত্য শিখি।“

সঞ্চারী যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তখন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ নামে তাঁদের পাড়ায় একটি অনুষ্ঠান হয়।

সেখানে তাঁর পরিচয় হয় নৃত্য শিল্পী সুদেষ্ণা ব্যানার্জীর সাথে।

উনি ওই অনুষ্ঠানে ভরতনট্যম এর আঙ্গিকে একটি নৃত্য নাট্য পরিবেশন করেছিলেন।

সেখানেই সঞ্চারী প্রথম ভরতনট্যম দেখেন আর এই নৃত্য শৈলীর প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মায়।

তখন থেকে ওনার কাছে তিনি ভরতনট্যম শেখা শুরু করেন।

বললেন,

“প্রায় পাঁচ বছর শেখার পর, দিদি বেনারসে চাকরি পেয়ে চলে যাওয়ায় ওনার পরামর্শেই আমি ওনার গুরু শ্রীমতী বন্দনা হাজরার কাছে নাচ শেখা শুরু করি।

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক কোন সময়েই আমি নাচ বন্ধ করিনি। কারণ নাচ আমার ভালোবাসা।“

সঞ্চারী নৃ-তত্ত্ব নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।

 সুদেষ্ণা ব্যানার্জীর কাছে যেমন ভরতনট্যম এর প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল তেমনই বন্দনা হাজরার কাছে শেখার সময় তাঁর নৃত্য জীবনের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল।

বললেন,

“বন্দনাদি,আমাকে বললেন, নৃ-তত্ত্বের সাথে ভরতনট্যম নৃত্যের যোগসাধন করে আমি যেন ভবিষ্যতে কিছু করি।

সেই চিন্তাটা আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। আমি তখন ভরতনট্যম, ভারতীয় নৃত্য ইত্যাদি বিভিন্ন বই নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি।“

যাতায়াতের কিছু সমস্যার কারণে তাঁকে বন্দনাদির কাছে নাচ শেখা কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখতে হয়।

তাই তখন তিনি গুরু থাঙ্কুমনি কুট্টির ছাত্রী শ্রীমতি জলসা চন্দ্রের কাছে শিখতে শুরু করেন।

এবং তাঁর কাছে শেখার সময় থেকেই উন্মোচিত হয় সঞ্চারীর নৃত্য শিক্ষা জীবনের আর এক দিক।

পরবর্তীকালে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাচ নিয়ে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর করেন। সেখানে তিনি ভাগ্যক্রমে পুনরায় শ্রীমতি বন্দনা হাজরার সান্নিধ্য পান।

উড়িষ্যায় পঞ্চম বেদা উৎসব,Folk Fair Festival, Beach Carnival, কলকাতা ও বিভিন্ন জায়গায় পৌষ উৎসব,উদয় শঙ্কর নৃত্য উৎসব,

West Bengal dance group federation আয়োজিত ‘Stars Of Tomorrow’, বর্ধমান যাত্রা উৎসব,

কলকাতা বিড়লা অ্যাকাডেমিতে নটরাজ উৎসব, দক্ষিন ভারতের বেশ কিছু জায়গায় তিনি নৃত্য পরিবেশন করেছেন।

কলকাতায় লরেটো বউবাজার ও সাউথ পয়েন্ট বিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানে শ্রীমতি জলসা চন্দ্রের সাথে সহ নৃত্যশিক্ষিকা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

তাঁর নৃত্য প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নৃত্য আলাপ’, বহু ছাত্র ছাত্রী নিয়ে বিস্তার লাভ করেছে।

নবীন শিল্পী হিসেবে তাঁর শেখার ভাণ্ডার থেকে সমাজকে সংস্কৃতি প্রদানের সময় এই সবে শুরু… এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি।

কিভাবে পরিকল্পনা করেছেন সকলের থেকে ভিন্ন কিছু করার প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন,

“আমি মনে করি, সবাই সবটা হয়না। একটা বিষয়ের ক্ষেত্রে কেউ উপস্থাপক হয়, কেউ শিক্ষক হয় আবার কেউ শুধুই শিক্ষার্থী হয়ে থেকে যায়।

মঞ্চে নৃত্য পরিবেশনাই আমার কেবলমাত্র লক্ষ্য নয়, আমি চাই নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটাও একজন শিক্ষার্থী সঠিক ভাবে শিখুন।

কারণ সবটা না জানলে কখনো একটা বিষয়কে সম্পূর্ণতা দেওয়া যায় না। কাজের মধ্যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতে হবে।

তাছাড়া, নৃ তত্ত্বের সাথে, এবং উত্তর ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের সাথে ভরতনট্যমের যোগসাধন করে আগামী দিনে কিছু কাজ করার ইচ্ছে আছে।“

 বর্তমানে নৃত্য নিয়েই আগামী উচ্চস্তরের পড়াশুনা করছেন সঞ্চারী।

আগামী দিনে ভরতনট্যম নৃত্যের ইতিহাসে তিনি তাঁর নাম উজ্জ্বল করবেন এবং সমাজকে নতুন কিছু উপহার দেবেন এই আশা থাকবে।

সাতকাহনের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা।

 COPYRIGHT © SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *