Roshni Ghosh | Actress | Friday Fantastic | Satkahon
Roshni Ghosh | Actress | Friday Fantastic | Satkahon
অভিনয়, এক বিশাল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র। যেখানে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন শিল্পী, আবার প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছেন এক একজন।
রুপকথার গল্পের মত জীবনের অন্তরালে কত যে লড়াই, কত ভাঙা মন বা কত চোখের জল লুকিয়ে আছে সে কথা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে।
Star kid বা তারকার সন্তান হলে সুবিধা হয়ত আছে, কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মানুষ যেকোনো শিল্পীরই বিচার করেন তাঁর কাজ দিয়ে তাই নিজের জায়গা নিজে তৈরি করতে হয় সকলকেই।
অন্য দিকে যারা একেবারেই নিজের চেষ্টায় এই অভিনয় জগতে পা রাখেন, তাঁদের যাত্রাটা প্রথমদিকে কষ্টের কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে তাঁরা দৌড়ের কালো ঘোড়া।
আজ সাক্ষাৎকারে আমাদের সাথে আছেন অভিনেত্রী রোশনি ঘোষ।
অভিনয় জগতে সদ্য পা রাখলেও ফ্যাশন জগতে অতি জনপ্রিয় ও পরিচিত নাম রোশনি।
সাতকাহনের পাঠক দের জানাব তাঁর জীবনের কিছু টুকরো গল্প…
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সল্টলেকে একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন রোশনি।
ছোট থেকেই সাজতে ভালবাসতেন তিনি। তবে তাকে যিনি সাজাতে সব থেকে বেশী ভালবাসতেন তিনি হলেন তাঁর মেজ জেঠিমা, ওরফে রোশনির মামনি।
জেঠিমা নিজেও খুব সাজতে ভালবাসতেন তাই তাঁর থেকেই সুন্দর জামা কাপড় কিংবা সুন্দর ভাবে সাজার প্রতি আগ্রহ রোশনির।
মা গান শিখতে ভর্তি করলেও গান গাওয়া যেন তার মনের মত কাজ ছিল না। তাই ছোট্ট বেলাতেই মা কে বললেন তিনি নাচ শিখতে চান। মা বাবা আজকের মত সেদিনও তাঁর মতের বিরুদ্ধে যাননি।
মেয়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েই নাচ শিখতে ভর্তি করেন।
প্রথম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে সল্টলেকেই কত্থক শিখতে শুরু করেন রোশনি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
বললেন,
“ এখন ওই দিন গুলো খুব মিস করি। সব মায়েরা বসে আছে, আমরা নাচ করছি। সকলের পায়ে ঘুঙুর, একটা গমগমে আওয়াজ… সেই দিন গুলোর মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার ছিল। এখনও মাঝে মাঝে বড্ড মনে পড়ে।
ছোট বেলা থেকেই নিজের কাজটা নিজে করে নিতে আমি খুব পছন্দ করি। নাচের ক্লাসে নিজে নিজে ঘুঙুর পরা, স্কুলের ব্যাগ নিজে নিয়ে যাওয়া এইসব আমার খুব প্রিয় কাজ ছিল। কেউ করে দিক সেটা পছন্দ না। এমনকি নাচের অনুষ্ঠানের আগে আলতা পরতাম নিজে নিজে, সে যেমনই হোক না কেন।“
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় রাজা সরকারের কাছে পাশ্চাত্য নৃত্য শৈলীতে তালিম নেন রোশনি।
নাচ শেখার পাশাপাশি আঁকাও শিখেছেন তিনি।
বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন, কিন্তু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করেছেন Mass Communication নিয়ে।
ফ্যাশন জগতে প্রথম পা রাখলেন P.C. Chandra Goldlites Diva প্রতিযোগিতার হাত ধরে।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
বললেন,
“ আমি তখন বিদ্যাসাগর কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানও করতাম সেই সময়। কলেজেও কিছু অনুষ্ঠানে আমি নাচ করেছি।
একদিন কলেজের এক দাদা এসে বলল P.C. Chandra Goldlites Diva প্রতিযোগিতার কথা। আমি যেন এতে অংশগ্রহন করি।
আমার কলেজের ২৫ জন ছাত্রীর মধ্যে আমি প্রথম হই ও Collage Diva হই।
পরের দিন খবরের কাগজে আমার ছবি আসে এবং মা বাবা তো ভীষণই খুশি হয়।
পরবর্তী প্রতিযোগিতা হয় ৭০ জনের মধ্যে এবং সেই প্রতিযোগিতাতে আমি সেরা ২৫শে উত্তীর্ণ হই।
এর পর, আমাদের ১৫ দিন ধরে গ্রুমিং করা হয়।সেই গ্রুমিং এ ছিলেন জেসিকা গোমস সুরানা।
ওনার কাছেই আমি সব কিছু শিখেছি সেই সময়।
শেষ প্রতিযোগিতায় আমি সেরা ১০ হই।“
বিজয়িনীর মুকুট মাথায় না উঠলেও P.C. Chandra Goldlites Diva প্রতিযোগিতা থেকে একটি বিপুল পরিচিতি পান রোশনি।
বিভিন্ন কমার্শিয়াল টিভি অ্যাড, ব্যানার,হোরডিং, মডেলিং এর কাজ শুরু হয় সেই সময় থেকেই।
জী, সারেগামা, আমারা মিউজিক, বাংলাদেশ প্রমুখের সাথে বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেছেন রোশনি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
এক দিকে কাজের চাপ, ও অন্যদিকে পড়াশুনা, দুই সামলে উঠতেন কিভাবে জানতে চাওয়ায় রোশনি বলেন,
“আমার জীবনে অনেকের অনেক অবদান রয়েছে।
বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময় আমি ভীষণই ব্যস্ত হয়ে যাই আমার নাচ, বা অন্যান্য কাজ নিয়ে।
সেই সময় অনেকেই বলেছিল যে আমি মন দিয়ে পড়ছি না, ভালো ফল করবো না। কিন্তু কলেজের শিক্ষক অভিরুপ মুখোপাধ্যায় আমার উপর খুবই ভরসা রেখেছিলেন যে আমি পড়াশুনাটাও মন দিয়ে করছি, আমি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারব।
আমি ভালো ফল করেছি ও ওনার মান রেখেছি।
কিন্তু ওই সময় উনি আমার উপর যে বিশ্বাস রেখেছিলেন সেটা আমাকে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। তাই ওনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।“
রোশনি Ramp Walk করেছেন P.C Chandra, Avon, Chandrai pearls প্রমুখ ডিজাইনারদের জন্য।
এছাড়াও KOLKATA GLITZ 2017 এ তিনি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।
স্টার জলসা থেকে অভিনয়ের আমন্ত্রণ এলেও পড়াশুনা ছেড়ে সেই সময় অভিনয় জগতে পা রাখতে চাননি তিনি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
বললেন,
“পড়াশুনা আমাদের আত্মনির্ভর করে তোলে। আত্মবিশ্বাস দেয়।
অভিনয় জগতের অনিশ্চয়তা নিয়ে আমার মনে একটা ভয় ছিল।
আমি মনে করি passion profession হওয়া ভালো, কিন্তু একটা back up থাকা দরকার। তাই সেই সময় পড়াশুনা ছেড়ে অন্য দিকে মন দিতে চাইনি।“
পড়াশুনা শেষ হবার পর জী বাংলা ‘সর্বজয়া’ ধারাবাহিকে তাঁর প্রথম অভিনয়।
বললেন,
“যেদিন আমি প্রথম জানতে পারলাম আমি কাজটা করছি, আর দেবশ্রী রায়ের সাথে করছি, সেদিন তো ভীষণ ভয় হয়েছিল।
সত্যি বলতে আমি তো আগে কখনো এভাবে অভিনয় করিনি। কিন্তু ওখানে যারা গুরুজন ছিলেন তাঁরা আমাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন।
একবারও মনে হয়নি আমি নতুন।
আর দেবশ্রী দির কথা কি বলব দিদি একেবারে মায়ের মত খেয়াল রাখতেন।
গরম কালে দিদি সকলের জন্যে আম পান্না বানিয়ে আনতেন। কখনো আবার সকলের জন্যে রসগোল্লা আনাতেন।
আসলে দিনে ১২ ঘণ্টা করে টানা দেড় বছর একসাথে কাজ করতে করতে ওটা একটা সংসার হয়ে ওঠে।
প্রত্যেকের কাছে এত কিছু শিখেছি যে কি বলব!“
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সর্বজয়ার পর ‘যমুনা ঢাকি’তে অভিনয় করছেন রোশনি।
বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন জি বাংলা ‘জগদ্ধাত্রী’ ও কালার্স বাংলা ‘নায়িকা নং ১’ ধারাবাহিকে।
ধারাবাহিকের পাশাপাশী সিনেমায় কবে দেখা যাবে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন,
“সবারই ইচ্ছে থাকে সিনেমায় কাজ করার। যদি কোন পরিচালকের বা প্রযোজকের মনে হয় আমি কোন চরিত্রের জন্য উপযোগী আর আমার মনে হয় আমি সেটা পারব তাহলে নিশ্চয়ই সিনেমা জগতে মানুষ আমাকে দেখতে পাবেন।“
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
অভিনয় জগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যে প্রত্যেক দিন প্রত্যেককে নানা ভাবে লড়াই করে যেতে হয়। অভিনয় জগতে নতুন হিসেবে রোশনির লড়াই কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“অনেকেই বলে, তোদের কি আর চাপ? কেউ চুল বেঁধে দেয়, কেউ মেকাপ করে দেয়, কেউ খাবারটা মুখের কাছে এগিয়ে দেয়, শুধু চিত্রনাট্য মুখস্থ করে বলতে হয়।
কিন্তু এটা যে কত বড় একটা দায়িত্ব যে একসাথে বেশ কয়েকটি আলাদা চরিত্রে অভিনয় করা আর আমি যেটা নই সেই ভাবে নিজেকে ভেবে অভিনয় করা, সেটা সবাই বোঝে না। এমন অনেক অভিনেত্রীকে দেখেছি ব্যক্তিগত জীবনে নানারকম সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সম্পুর্ণ ভুলে একদম অন্য চরিত্রে অভিনয় করছেন।
আসলে নিজের কাজটা ঠিক ভাবে করে যাওয়াটাই সব থেকে বড় লড়াই বলে আমি মনে করি।”
মেয়েদের কাছে অভিনয় জগত কখনো কখনো খুবই খারাপ রুপ নিয়ে ধরা দেয়। সেই প্রসঙ্গে রোশনি বলেন,
“যদি কেউ খুব সহজে কিছু পেতে চায় তাহলে অভিনয় কেন, যেকোনো জগতেরই খারাপ রূপ তাকে দেখতে হতে পারে।
আমার যদি মনে হত আমি নায়িকাই হব, অন্য কোন চরিত্রে কাজ করবো না, তাহলে হয়ত আমাকেও এই খারাপ রুপ দেখতে হতে হত।
আমি শূন্য থেকে শুরু করেছি,তাই অনেক কিছু শিখেছি।“
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সব সময় মিষ্টি হাসি তাঁর মুখে, তারকা খচিত পরিবেশে দিনরাত কাটালেও কিন্তু খুবই ঘরোয়া ব্যবহার তাঁর।
বললেন,
“ ছোট থেকে একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি, তাই বাড়ি আমার কাছে সব কিছু। কাজকে আমি কাজ হিসেবেই দেখি।
কাজ শেষ হলে আমাকে যদি কেউ খোঁজে আমার বাড়িতেই পাবে। কাজ ছাড়া আমার পরিবার, আমার Doggy – Shadow, এরাই আমার জীবনে প্রথম গুরুত্ব।
খুব ইচ্ছে ভবিষ্যতে পাহাড়ের কোলে একটা ছোট্ট ক্যাফে হবে আমার। একমাত্র স্বপ্ন আমার সেটা। দেখাই যাক আগামী দিন আমার জন্য কি উপহার নিয়ে আসে।“