Rajdeep Mukherjee | Friday Fantastic | Satkahon
Rajdeep Mukherjee | Friday Fantastic | Satkahon
কথায় আছে The fight isn’t over until you win.
লড়াই লড়াই লড়াই। সারাজীবন ধরেই মানুষের জীবন জুড়ে লড়াই।
জয়ের পরেও কি সত্যিই এই লড়াই এর শেষ? নাকি এক নতুন লড়াই এর যাত্রা শুরু নতুন কিছু জয়ের লক্ষ্যে?
শিল্পীর জীবনে এই যুদ্ধের সংজ্ঞা আলাদা। শিল্পী জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে লড়াই।
কারণ অর্থনৈতিক ভাবে শিল্প আমাদের এখনও সেইভাবে নিরাপত্তা দিয়ে উঠতে পারেনি।
প্রত্যেক দিন জন্ম নিচ্ছে নতুন শিল্পী, নতুন শিল্প।
কেউ কেউ এর মধ্যেই খুঁজে নিচ্ছেন বেঁচে থাকার রসদ আবার কেউ নিজেকে এই যুদ্ধ জয়ের ঘোর দৌড় থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন অনেক দূরে।
আজ সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে পাঠকদের জানাব এমনই এক নবীন শিল্পীর কাহিনী, ভালো করে গান শেখা আর ভালো কাজ করে যাওয়াই যার জীবনের মূল লক্ষ্য।
জামশেদপুরের ছেলে সঙ্গীতশিল্পী রাজদীপ মুখার্জী।
ছোটবেলায় দূরদর্শন, রেডিওতে গান শুনে শুনেই নিজে নিজে আপন মনে গান গাইতেন তিনি।
কখনো পাউডারের কৌটকে মাইক বানিয়ে, আবার কখনো বাড়িতে কোন অতিথি এলে গান শোনাতে বলা হত ছোট্ট রাজদীপকে।
এইভাবেই মধ্যবিত্ত বাঙালী পরিবারের সকলের উৎসাহে গান শেখা শুরু তাঁর।
মিষ্টি গলা শুনে যখন সবাই বললেন ছেলেকে গান শেখাতে তখন সেই গুরুভার প্রথমেই কাঁধে তুলে নিলেন মা।
মায়ের কাছেই গানের হাতে খড়ি হল তাঁর।
মায়ের কাছে শেখা নজরুলগীতি ‘আমি যার নূপুরের ছন্দ’ গেয়ে ৮ বছর বয়সে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হন তিনি।
১০ বছর বয়সে জামশেদপুরেই শ্রীমতি রুবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান্ধর্ভ ঘরানায় প্রথাগত ভাবে সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন রাজদীপ।
এছাড়াও বেশ কিছু বছর রাজদীপ আধুনিক গানের তালিম নিয়েছেন শ্রী পঙ্কজ ঘোষালের কাছে।
বিদ্যালয়ের নানা অনুষ্ঠানে ছোট থেকেই অংশ নিতেন রাজদীপ।
নবম শ্রেনীতে পড়ার সময় সারেগামাপা (হিন্দি) রিয়েলিটি শো এর প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। কিন্তু ৩০ জনের মধ্যে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে বেরিয়ে আসতে হয়।
না জিততে পারা মানেই তো হেরে যাওয়া নয়, না জিততে পারা মানে নতুন করে আবার সফলতা পাওয়ার লড়াই।
রাজদীপও নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে মন দেন তাঁর প্রশিক্ষণে।
বিজ্ঞান নিয়ে প্রথাগত পড়াশুনা শুরু হলেও মন পড়ে থাকে গানে।
ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারে পুরুষ মানুষের অর্থ উপার্জন যে কতটা গুরুত্তপুর্ণ বিষয় তা প্রত্যেক পুরুষই জানেন।
উপার্জনের সঠিক পথ আর উপার্জনের মনের মত পথ এই দুইয়ের সংঘাতে কখনো কখনো শেষ হয়ে যায় প্রতিভা।
মন শক্ত করে রাজদীপ মা বাবাকে জানালেন মনের কথা, বললেন, ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, গান নিয়ে এগোতে চান তিনি।
শিল্পীর ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পেয়েছিলেন মা বাবা।
মা বাবার অনুমতিতেই অবশেষে ইকনমিক্স নিয়ে আকাদেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি চলতে লাগল তাঁর পুরো দমে গান শেখা।
এরপরেই পড়াশুনার জন্য কলকাতায় চলে আসেন রাজদীপ।
গান শিখতে শুরু করেন পণ্ডিত জয়ন্ত সরকারের কাছে।
তাঁর সান্নিধ্যে সঙ্গীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় রাজদীপের।
সারা সপ্তাহ পড়াশুনা, শনিবার গান শেখা ও তারপর কলকাতা থেকে জামশেদপুর যাত্রা, এই ভাবেই শুরু হয় এক নতুন লড়াই।
এখনও রাজদীপ তাঁর ছাত্র।
সেই সময়েই বেশ কিছু রিয়েলিটি শো তে অংশ নেন তিনি।
বললেন,
“ ‘সুপার সিঙ্গার’ এ আমি পঞ্চম হয়েছিলাম। স্বয়ং আশা ভোঁসলে আমার গান শুনে আমার নির্বাচন করেন।এটা আমার জীবনের অন্যতম পাওয়া।
এছাড়াও, ফিনালে তে গিয়েছিলাম মোট ৬ জন,৫ জন মেয়ে এবং ছেলেদের মধ্যে আমি একা।
কুমার শানু স্যার ওনার হাত থেকে সোনার রিস্টলেট খুলে আমাকে পড়িয়ে দেন,এবং বলেন তুই ছেলেদের মুখ রেখেছিস। এটাও আমার কাছে একটা বড় পাওয়া।
জেতা- হারা মুল বিষয় নয়। রিয়েলিটি শো-তে অংশ গ্রহন করা অবশ্যই দরকার বলে আমার মনে হয়, কারণ রিয়েলিটি শো একজন শিল্পীকে যে পরিচিতি দেয়, তাতে অনেক বেশী কাজের সাথে যুক্ত হওয়া যায়।
আর অবশ্যই অনেক কিছু শেখা যায়।
তবে, ভালো করে না শিখে কোন প্রতিযোগিতার মঞ্চেই নিজেকে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।“
বর্তমান দিনে অনেক শিল্পীরাই গানের পাশাপাশি গান লেখা, সুর করা ও সঙ্গীতায়োজনের সাথে যুক্ত।
রাজদীপ গান গাওয়ার পাশাপাশি গানের সুর করতে ভালোবাসেন।
Rhythm school of music তাঁর সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান। বহু ছাত্র ছাত্রী তাঁর কাছে গান শিখছেন।
মঞ্চ অনুষ্ঠান, কভার গানের পাশাপাশি ২০২২শে মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা ‘ভটভটি’তে গান গেয়েছেন রাজদীপ। এছাড়াও বিভিন্ন ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন তিনি।
আগামী দিনে বেশ কয়েকটি সিনেমায় আমরা তাঁর গান শুনতে চলেছি।
বললেন,
“ বাংলা মৌলিক গান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। আগামী বছরেই আমার সুরে হয়ত শ্রোতাদের গান উপহার দিতে পারব।“
বিখ্যাত হবার ঘোড়দৌড়ে নেই তিনি। শুধুই ভালো কাজ করে যাবার ইচ্ছে রাজদীপের।বললেন,
“ বছরে দুটো কাজই করব, কিন্তু ভালো কাজ করব। আমি এই ধারনায় বিশ্বাসী।“
গানজীবনে এখনও অনেক পথ অতিক্রম করে যেতে হবে রাজদীপকে।
তবে যেহেতু সস্তার কাজে বিখ্যাত হবার ইচ্ছে তাঁর নেই, তাই আশাকরি, আগামী দিনে ভিন্ন ধরণের নতুন নতুন কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের সঙ্গীত জগতকে সমৃদ্ধ করবেন।
সাতকাহনের পক্ষ থেকে রইল একরাশ শুভেচ্ছা।