Manaswita Thakur – Singer | Fantastic Friday | Satkahon Interview
Manaswita Thakur – Singer
হাসি খুশি মানুষ তিনি, ছটফটে, অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন…
কিন্তু উদাত্ত কণ্ঠে যখন তিনি গেয়ে উঠলেন “আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী/নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী” মনে হল যেন তাঁর জন্যেই এই গান…
অহংকার তাকে স্পর্শ করতে পারেনি বলেই একদিকে তিনি সকলের বন্ধু অন্যদিকে প্রতিবাদী।
তিনি জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মনস্বিতা ঠাকুর।
সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে আজ জানব তাঁর কথা………………….
মনস্বিতা, সাংগীতিক পরিবারে জন্ম না হলেও সঙ্গীতকে সাথে নিয়েই আপনি বড় হয়েছেন।
কেমন ছিল আপনার ছোটবেলা?
পেশাগত ভাবে বাড়িতে কেউ শিল্পী না হলেও সংগীতকে সাথে নিয়েই আমি বড় হয়েছি।
আমার ঠাকুমা গান করতেন। ঠাকুমার হারমনিয়ামেই কিন্তু আমার গানের হাতে খড়ি।
আমার জীবনে বাবা মায়ের অনেক বড় অবদান রয়েছে।প্রতিদিন সকাল বেলা বাবা সাইকেলে বসিয়ে আমাকে বেড়াতে নিয়ে যেতো। তখন বাবা কখনো রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনো ছড়ার গান গাইতো। খাওয়াতে বসে মা কবিতা বলতো, গান গাইতো।
সেগুলো শুনে শুনে আমিও গাইবার, আবৃত্তি করার চেষ্টা করতাম।
বাবা ভীষণ ভালো আবৃত্তি করতেন, তাছাড়া খুব ভালো গণসংগীতও গাইতো।
ছোটবেলায় বাবাই আমাকে আবৃত্তি শিখিয়েছে যার ফলে আমার উচ্চারণটা পরিস্কার হয়েছে।
তাছাড়া বাবা ক্যাসেট কিনে আনতো কিংবদন্তি শিল্পীদের। বাবা মা দুজনেই খুব গান শুনতে ভালোবাসে এখনও। সেই গান মুখে মুখে শুনে গাইতাম।
বাবার অফিসের অনুষ্ঠান হোক বা পাড়ার অনুষ্ঠান আমি স্টেজ এ যাবার জন্যে বায়না করতাম।
কখনো কখনো অনুষ্ঠানে বিরতি থাকলে ওই সময় টায় আমি মাইক নিয়ে একাই যা পারতাম আপনমনে গেয়ে যেতাম।
এই ছিল আমার ছোটবেলা।
প্রথাগত ভাবে গান শেখা কার কাছে?
ছোটবেলায় কোন্নগরে গুরু শ্রী সৌমেন গুপ্তের কাছে আমি শাস্ত্রীয় সংগীত শিখি।
মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক দুই ক্ষেত্রেই আমার বিষয় ছিল ‘Music’
এরপর রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জোড়াসাঁকোতে আমার পড়াশুনা।
স্নাতক স্তরে আমি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হই ও রাজ্যপালের হাত থেকে পুরস্কৃত হই।
স্নাতকোত্তরেও আমি ব্যবহারিক বিভাগে প্রথম হই ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হই।
জোড়াসাঁকোতে বিশিষ্ট শিক্ষামণ্ডলীর থেকে গান শিখেছি তো বটেই তাছাড়া সেই সময় থেকেই আমার গুরু শ্রী মৃগাঙ্ক সরকার এর ছত্রছায়ায় চলে আসি।
উনি আমাকে তৈরি করেছেন। আজ আমি যতটুকু হতে পেরেছি সেক্ষেত্রে ওনার অবদান অনেকটাই।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ হবার পর লোকসঙ্গীত শিখি শ্রী অভিজিৎ বসুর কাছে।
ওনার কাছে শেখার শুরু হবার পর আমি বুঝতে পারি একজন সঠিক “Performer” কিভাবে হতে হয়। আজ যে মনস্বিতা কে সবাই চেনে তা কিন্তু অনেকটাই ওনার জন্যে।
এছাড়াও শ্রী শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের কাছেও আমি শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছি।
আমি শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা করলেও মঞ্চে তা পরিবেশন করি না। কিন্তু স্যার আমাকে দিয়ে এমন অনেক দুঃসাহসিক গান গাইয়েছেন।
আমি সেমি-ক্লাসিকাল গান গেয়েছি, মানে এটা আমার নিজের কাছে একটা বড় ব্যাপার, সেটা ওনার জন্যেই সম্ভব হয়েছে।
ওনার থেকেও আমি অনেক মনের জোর পেয়েছি।
এমনকি আমি আমার এই তিন গুরুর কাছেই এখনও গান শিখছি।
ছাত্রী মনস্বিতার পেশাগত ভাবে সংগীত জগতে আসা কিভাবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমি সঙ্গীতশিল্পী উপালী চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে আসি।
দিদি তখন আমাদের গান শেখাতেন।তেমনই একদিন ক্লাসে আমার গান শুনে উনি আমাকে দেখা করতে বলেন।
ওনার তত্তাবধানে স্টার জলসায় বেহুলা সিরিয়ালটিতে আমি প্রথম প্লে ব্যাক করি।
এর পর স্টার জলসারই একের পর এক সিরিয়ালে আমি দিদির তত্তাবধানে কাজ করেছি।
স্টুডিও রেকর্ডিং এর প্রায় সবটাই আমার ওনার থেকে শেখা।
গুরু অভিজিৎ বসু আমাকে অনেক অনুষ্ঠানে সুযোগ দিয়েছেন। আগেই বলেছি মঞ্চে কিভাবে অনুষ্ঠান করতে হবে সেটা আমি ওনার থেকে শিখেছি।
এর পর আকাশ আট থেকে শুরু করে নানান টিভি চ্যানেল এ আমার গান গাওয়া শুরু হয় এবং পরিচিতি বাড়তে থাকে।
এভাবেই ধীরে ধীরে পেশাগত শিল্পী হয়ে ওঠা।
শিল্পী জীবন মানেই তো লড়াই করে যাওয়া…আপনাকে কতটা লড়াই করতে হয়েছে?
হয়েছে বলাটা বোধহয় ভুল। এই লড়াই কোন দিন শেষ হবার নয়।
এই প্রতিযোগিতার যুগে দাঁড়িয়ে আমি কখনোই বলতে পারি না আমার লড়াই শেষ।
পড়াশুনা শেষ হবার পর আমার আসল লড়াইটা শুরু হয়। কারণ শিক্ষা জীবন অন্যরকম নিয়মে বাঁধা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল।
কিন্তু তার বাইরে রয়েছে একটা সমুদ্র।
কোন্নগর থেকে কলকাতা আসতাম, এমনও হয়েছে বসার জায়গা পাইনি বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসেছি একটা নতুন কাজের চেষ্টায়।
শেষ পর্যন্ত কাজটাই হয়নি।
এমনও হয়েছে রেকর্ডিং এর জন্যে একটি পান্ডব বর্জিত জায়গায় যেতে হবে। ফোন করাও বারণ। রাস্তা চিনি না খুঁজে খুঁজে হেঁটে হেঁটে গেছি।
মা কে ফোন করেছি মা বলেছে তুই ঠিক পারবি।
প্রথমেই একটা কথা শুনেছিলাম গান গেয়ে কিন্তু পেট ভরে না। সেক্ষেত্রে আমার বাবা-মা প্রচণ্ড ভাবে আমার সমর্থন করেছে।
আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে আমার শিরদাঁড়াটা শক্ত করতে সাহায্য করেছে।
ভাগ্য করে গুরুদের পেয়েছি তাঁরা আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে আর বন্ধুরা পাশে ছিল।
মফস্বলের মেয়ে বলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, কথা শুনতে হয়েছে।
কিন্তু আমার জেদ ছিল আমাকে লড়তে হবে আমাকে পারতে হবে।
এই লড়াইয়ের সাফল্য আপনাকে পরিচিতি দিয়েছে…
নিশ্চয়ই, আমি উনিশ কুড়ি ‘গান-fun’ এ বিজয়ী হই। এছাড়াও পরবর্তীকালে আকাশ আট এর গান-fight প্রতিযোগিতায় আমি ‘Champion of the Champions’ হই।
ফলে বেশ খানিকটা পরিচিতি পাই। আকাশ আট টিভি চ্যানেল এ আমি নিয়মিত অনুষ্ঠান করি।
প্রতিবার পঁচিশে বৈশাখ জোড়াসাঁকোয় আমি সংগীত পরিবেশন করি ও রবীন্দ্রসদনেও অনুষ্ঠান করি।
সারেগামাপা অনেকটা বড় মঞ্চ, কিন্তু বন্ধুরা খুব জোর করলো, একটু ভাবলাম তারপর আমারও ইচ্ছে হল আমি অংশ নেব।
খুব বেশিদিন সেখানে থাকতে না পারলেও এই মঞ্চ আমাকে অনেকটা পরিচিতি দিয়েছে, কিছু বন্ধু দিয়েছে।
ওখানে যেসব গুরুদের তত্ত্বাবধানে গান শিখেছি তাঁদের স্নেহধন্যা হতে পেরেছি এটা আমার অনেক বড় ভাগ্য।
এছাড়া যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী দাদাদের সাথে একটা দারুণ প্রীতির সম্পর্ক পেয়েছি, একথা স্বীকার করতেই হবে।
প্রথম গানের অ্যালবাম?
প্রথম ‘বিহান’ নামে ১০ টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি গানের সঙ্কলন মুক্তি পায়, এরপর তো বেশ কিছু কাজ করেছি।
কিছুদিন আগেই মিউসিয়ানা কালেকটিভ থেকে মুক্তি পেয়েছে আমার গুরু শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের কথা ও সুরে “ওলো সই”।
প্রতি বছরই পুজোর একটি কাজ আমার থাকে। আগের বছর ফোক স্টুডিও বাংলা থেকে মুক্তি পেয়েছিল রবীন্দ্র সংগীত “আমি চিত্রাঙ্গদা”
এই বছর তাতু চ্যাটার্জীর সুরে ও ভিকির কথায় গাইলাম “তেরি ধুন” একটি হিন্দি মৌলিক গান।
আগামী দিনে বেশ কিছু নতুন কাজ আসছে।
এছাড়াও আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যার মাধ্যমে প্রায়ই কোন না কোন নতুন কাজ আমি শ্রোতাদের উপহার দেবার চেষ্টা করি।
সবসময় এত হাসিখুশি থাকেন আপনি এই আনন্দে থাকার মূল মন্ত্রটা যদি বলেন…
আগে বলি, প্রতিভার মফঃস্বল-গ্রাম-শহর বলে কিছু হয় না।
প্রতিভা যদি সত্যি থাকে সেটা বিকশিত হবেই।
গুরু অভিজিৎ বসুর কাছে যখন আমি যাই আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম স্যার আপনি আমাকে বলুন কি করলে আমি একটু শক্ত হবো?
উনি বলেছিলেন, জীবনে কোনোদিন দৌড়বি না। কারণ যত জোরে তুই দৌড়বি তত জোরে পরেও যাবি।
আমি ওনার সেই কথা আজও মেনে চলি।
হয়ত আনন্দ করে বন্ধুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছি বলেই আমি হাসি খুশি থাকতে পারি আর আগামী দিনেও তাই থাকব।
খুব ভালো লাগলো।সাবলীল স্বীকারোক্তি। আরও এগিয়ে যাও।আমরা সবাই আছি তোমার সাথে।
খুবই সাবলীল অথচ বলিষ্ঠ বক্তব্য ঠিক তোমার গায়কীর মতো।অনেক শুভেচ্ছা রইলো তোমার আগামী দিনগুলির জন্য।
Asadharon uttor protita kothar. Sabolil sikarokti.. asadharon chintadhara seta abossoi toke jara chene jane.. hm tui kore e bollam karon tui amar boddo kacher.. r o unnoti hok hm abossoi uchho sikhor ta tor jonno apekhha korche. R amra jani tui parbi. Anek VALOBASA chilo ache thakbe ❤️❤️❤️❤️❤️