HURDY GURDY | কলমে- সুরদীপ হাজরা | AMAR KOLOM | SATKAHON
HURDY GURDY
কলমেঃ সুরদীপ হাজরা
সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার
সঙ্গীত এবং বিজ্ঞান একে অপরের সাথে জড়িত ওতপ্রোত ভাবে।
সঙ্গীত যদি ঈশ্বরের দান হয় তবে সেই সঙ্গীতের ব্যবহৃত যন্ত্র সবই বিজ্ঞানের দান, তাই কোথাও যদি আস্তিক আর নাস্তিকের একত্রিত মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায় তবে সেটা সঙ্গীতেই।
সাত সুরের এই ভুবন ভান্ডারে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার মনি মানিক্য যার অন্ত কোথায় কেউ জানে না।
ভারতীয় পুরাণমতে সঙ্গীতের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মহাদেব, যার আদি নেই, অন্তও নেই। সেই রকমই সঙ্গীতের সৃষ্টি কবে তা নিয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে সঙ্গীতের বিবর্তন নিয়ে অনেক কিছুই জানা যায়।
বিবর্তন, যা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকা প্রকৃতির এক নৃত্যরঙ্গ। মানব জীবনের মতই যন্ত্রসঙ্গীতের বিবর্তন এক বিরাট অধ্যায়।
এই ঘটানুঘটিক বিবর্তনই এক এক সময় জন্ম দিয়েছে এক এক কিংবদন্তির।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
যেমন হার্প থেকে জন্ম নিয়েছিল, হার্পসিকর্ড আর সেখান থেকে পিয়ানোর জন্ম।
এই পিয়ানোকেই সঙ্গী করে কিংবদন্তি হয়ে উঠলেন বিটোফেন এবং আরও অনেকে।
ভায়োলিন যন্ত্রটির উৎপত্তি আঠারোশো শতকের শেষের দিকে এবং এটিও বিভিন্ন যন্ত্রের বিবর্তিত একটি রূপ।
এই ভায়োলিনের পূর্বপুরুষ আবার ভিওল নামক একটি যন্ত্র যা অনেকটা চেলো আর ভায়োলিনের মাঝামাঝি একটা রূপ।
এভাবেই উৎপত্তি ও বিবর্তন আর তাঁকে সাক্ষী করে জন্ম নেওয়া সঙ্গীতের এক এক মহা অধ্যায়, অনেকটা যেন বিজ্ঞানের ঝংকারে ঈশ্বর উপলব্ধির এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।
সঙ্গীতের এই ভরা সংসারে যন্ত্রসঙ্গীত আবার তার শাখা প্রশাখা নিয়ে নানারূপে বিস্তার লাভ করে সমৃদ্ধ করেছে সমগ্র সাংগীতিক সৃষ্টিকে।
এই যন্ত্রসঙ্গীতের উপর ভর করেই তৈরি হয়েছে নানা ধরণের Orchestration.
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ভিওল নামক যন্ত্রটির কথা যেটি একসময় ব্যবহৃত হত পাশ্চাত্য Orchestration এ।
এবার বলব একটি যন্ত্রের কথা যেটির নাম হার্ডিগার্ডি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সেটির উৎপত্তি এই ভিওল-এরও অনেক আগে এবং এটি থেকেই বিবর্তিত হয়ে এখনকার ভায়োলিন কিনা সেই নিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে এটির আকার ও বাজানোর পদ্ধতি অনেকটা ভায়োলিনের মত।
যদিও সম্পুর্ন ভাবে কখনই নয়, তবুও এর শব্দের মধ্যে আছে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য্য।
অনেকটা গাম্ভীর্য ভরা প্রখর গ্রীষ্মের মাঝে যেন ফোঁটা ফোটা অল্প বৃষ্টি।
String, Key আর Wheel এর সম্মিলিত একটি Musical Instrument এই হাড্ডি গার্ডি।
Wheels এর ব্যাবহার অনেকটা ভায়োলিনের Bow-এর মত এবং String আর Wheel -এর ঘর্ষনে এর শব্দ তৈরী হয়.
Key গুলির ব্যাবহার মূলত Pitch পরিবর্তনের জন্য করা হয়।
এই হার্ডিগার্ডির উৎপত্তি স্থল নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে ।
অনেকের মতে এটির উৎপত্তি স্থল মধ্যপ্রাচ্য আবার অনেকের মতে ইউরোপ।
সময়কাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ মতে একাদশ শতাব্দীর পূর্বেই এর উৎপত্তি।
প্রথমদিকে এটির ব্যবহার চার্চেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং এটির আকার এতই বড় ছিল যে দুজন একত্রিত হয়ে এটি বাজানো হত, যার প্রমান বিভিন্ন শিলাখন্ডে খোদাই করা রাজাদের চিত্র থেকে পাওয়া যায়।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
পরবর্তীকালে এর ব্যবহার ও পরিচিতি যখন বাড়তে শুরু হয় তখন একজন মানুষের দ্বারা বাজানোর সুবিধার জন্য এটির আকার ছোট করা হয়।
তারও পরবর্তীতে পাশ্চাত্য লোকসঙ্গীতে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার অল্প করে শুরু হয়।
যদিও এর লৌকিক পরিচিতি তেমন ভাবে ছিল না এবং কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যেই এর ব্যাবহার সীমাবদ্ধ ছিল।
এটি প্রচার লাভ করে ১৯৬৮ তে ডনোভানের Hit pop song ‘Hurdy Gurdy Man’ মুক্তি পাবার পরে।
যদিও উল্লেখ্য এই গানে কিন্তু এই যন্ত্রের ব্যবহার কিন্তু করা হয় নি।
বিদেশী বিভিন্ন চলচিত্রে এর ব্যবহার হয়েছে মূলত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে।
প্রথম চলচ্চিত্রে এর ব্যবহার হয় 1927 সালে মুক্তি পাওয়া ছবি নেপোলিয়নে।
এছাড়াও একটি জনপ্রিয় ভিডিও গেম ‘God of war Ragnarok’ এও এর ব্যবহার হয়।
যদিও বর্তমান সময়ে এর ব্যবহার খুব বেশী দেখা যায় না, হতে পারে কিছুটা সেইভাবে প্রচারে না আসার জন্য ।
বিভিন্ন কোম্পানি আবার এই যন্ত্রটিকে মার্কেটে এনেছে এবং আনছে অনেক নতুন রূপে।
এর দামও ভারতীয় মূদ্রায় সাধারণের নাগালের মধ্যেই।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
আমাদের দেশ ভারতবর্ষে এর ব্যবহার কার্যত হয়নি বললেই চলে।
আমি নিজে সঙ্গীত পরিচালনার সাথে যুক্ত আছি বেশ কিছু বছর।
আমার যেটুকু উপলব্ধি হয়েছে তাতে বলতে পারি প্রাচ্য হোক বা পাশ্চাত্য প্রতিটা যন্ত্রই বাজানোর নিজস্ব Technique এবং Style আছে।
সেই Technique এবং Style -এ বাজালে তবেই সেই যন্ত্রের স্বার্থকতা।
শুধু আমি বাজিয়ে ফেললাম মানেই বাজাতে পারি এমনটা কিন্তু একেবারেই হওয়া উচিত নয়।
আমার নিজের একটা সুপ্ত ইচ্ছাও আছে, জীবনে একবার অন্তত একটা কাজ করার এই ধরনের অল্পশ্রুত বা হারিয়ে যাওয়া এই সব যন্ত্র নিয়ে।
যদিও তা নির্ভর করছে অনেক কিছু Factor এর উপর।
আর একটি শখ আছে আমার, হারিয়ে যাওয়া বা স্বল্পশ্রুত সাঙ্গীতিক যন্ত্র সম্বন্ধে জানা।
এই হার্ডিগার্ডি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাটা সেদিন থেকে শুরু হয়েছে যেদিন থেকে এটির ব্যাপারে জেনেছি এবং পড়েছি।
আমি আশা করবো ভবিষ্যতে আমাদের দেশে এমন কোন মানুষকে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবো যিনি Hurdy Gurdy কে যথার্থ ভাবে বাজাবেন এবং তাঁর পাশে বসে কিছুক্ষন হারিয়ে যাবো ঘন গম্ভীর অথচ মধুর সাত সুরের এক দেশে।