Gourab Sarkar – Sunday Exclusive – Satkahon

Gourab Sarkar – Sunday Exclusive – Satkahon

Gourab Sarkar – Sunday Exclusive – Satkahon

“হেথা যে গান গাইতে আসা…আমার হয় নি সে গান গাওয়া…”

এ কথা যে শুধু কবিগুরুর তা নয়, এ কথা প্রত্যেক সঙ্গীতশিল্পীর মনের কথা।

একজন ডাক্তারের কাজকে যদি আমরা অভ্যাস বা Practice বলি, তাহলে একজন শিল্পীর কাজকেও তাই বলা উচিত।

কারণ একজন শিল্পী কোনদিনই তাঁর কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

প্রতি নিয়ত তিনি তাঁর নিজের কাজের সাথে লড়াই করে চলেছেন উন্নত থেকে উন্নততর হবার লক্ষ্যে।

সর্বোপরি বলা যায় উন্নত থেকে উন্নত পরিবেশনার লক্ষ্যে।

আর এই চেষ্টা, এই লড়াই এর মাধ্যমেই সাংস্কৃতিক মঞ্চের জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে যিনি নিজের গানকে জনমাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন,

যার পরিচয় এখন শুধু নামেই,সদা সর্বদা যার মুখে হাসি, গলায় গান…

টনিক আর প্রজাপতি সিনেমায় ইতিমধ্যেই আপনারা শুনেছেন তাঁর কণ্ঠ…

আজ সাতকাহন Sunday Exclusive সাক্ষাৎকারে, আপনাদের সেই প্রিয় শিল্পী গৌরব সরকার।

গান জীবনের শুরু কিভাবে?

আমার ঠাকুমা গান গাইতেন।

তিনি ছিলেন স্বনামধন্য শিল্পী শ্রীমতি রত্না সরকার।

তিনি নিজে কাজ করেছেন সলিল চৌধুরী,হেমাঙ্গ বিশ্বাস, নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রমুখ গুনী মানুষদের সাথে।

ঠাকুমা যখন ওনার ছাত্র ছাত্রীদের গান শেখাতেন আমি তখন তাঁর কোলে বসে গান শুনতাম।

আমার তখন দুই-তিন বছর বয়স।

এ ছাড়াও কাকা দেবাশিস সরকার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী।

গান তাহলে আপনার রক্তে। জীবনের শুরু থেকেই কি তাহলে সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল?

না না। একসময় ইচ্ছে ছিল আমি একজন ক্রিকেট প্লেয়ার হবো।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি।

কিন্তু সব শেষে মনে গানটাই রয়ে গেল।

বলতে পারেন, আমি নয়, গান আমাকে আপন করে নিয়েছে।

তাই, গানকে ভালবেসেই এগিয়ে চলেছি।

প্রথাগত ভাবে গান শেখা কার কাছে?

 ঠাকুমা আর কাকার কাছে প্রাথমিক ভাবে গান শিখেছি।

এরপর সাত বছর বয়স থেকে পণ্ডিত আনন্দ গুপ্তার কাছে আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিই।

পরবর্তীতে সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমীতে স্কলারশিপ পেয়ে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে শেখার সুযোগ পাই।

তার পরবর্তীকালে আমি সঙ্গীত পরিচালক গৌতম ঘোষালের কাছে গান শিখেছি ও এখনও শিখছি।

ইটিভি বাংলা রিয়েলিটি শো সুরদরিয়া ও ২০১৯ জি বাংলা সারেগামাপা আপনাকে পরিচিতির শিখরে নিয়ে যায়।

কোন স্মরণীয় ঘটনা?

সুরদরিয়া প্রতিযোগিতায় বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন বাপি লাহিড়ী।

আমার গান শুনে তিনি মঞ্চে এসে তাঁর গলা থেকে সোনার চেন খুলে আমাকে পড়িয়ে দেন।

অবিস্মরণীয় ঘটনা। কোনদিন ভোলা যাবে না।          

আমার জীবনে অন্যতম পাওয়া।

Gourab Sarkar – Sunday Exclusive – Satkahon

‘সারেগামাপা খ্যাত’ বিশেষণটা একজন শিল্পীকে অনেকাংশে বেঁধে রাখে।

আগামীকে কি পরামর্শ দেবেন?তারকার গৌরব সরিয়ে নিজের নামের গৌরব কিভাবে তৈরি করা সম্ভব?

একটা প্রতিযোগিতার মঞ্চ মানুষকে অনেকটা কম সময়ে অনেকটা বেশী পরিচিতি দিয়ে দেয়। কিন্তু পরিচিতি বজায় রাখাটা নিজের কাজের উপর নির্ভর করে।

প্রথম কথা, একটা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তবেই প্রতিযোগিতার মঞ্চে পা রাখা উচিত।

অনেক শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতায় আসে।

পরিবারের ইচ্ছেয় তাকে এই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।

কিন্তু তার শিক্ষা বা পরিবেশনা কি সম্পুর্ণ?

হয়ত তার গলা ভাঙার পর তার থেকে আমরা তার সেরা পরিবেশনাটা শুনতে পেতাম।

মানুষের কাছে একজন অসম্পূর্ণ অবস্থায় মূল্যায়ন চেয়ে নিলে ভবিষ্যতে তার সম্পূর্ণ মর্যাদা পাওয়া মুস্কিল হয়ে পরে।

নিজের শিক্ষার উপর আস্থা থাকলে প্রতিযোগিতার পরেও সদর্পে টিকে থাকা যায়।   

নিয়মিত মঞ্চ অনুষ্ঠানের সময় রেওয়াজ কতটা জরুরী, যেটা অনেকেই অগ্রাহ্য করে যান…

হ্যাঁ,সময় চাইলেই বের করে নেওয়া যায়।

কারণ একটা বাড়ির বা একটা গাড়ির যেমন নির্দিষ্ট সময় মত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, গলারও তাই প্রয়োজন।

গান যেমন আমাদের নাম জশ, খ্যাতি, অর্থ দেয়, আমাদের গানকে কিছু দেওয়া উচিত।

আর সেটা অনুশীলন, চর্চা আর ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নয়।

সময় পেরিয়েছে। মানুষ এখন কেবলমাত্র সঙ্গীতশিল্পী নয়, চিনেছেন সুরকার ও গীতিকার গৌরব সরকারকে। পেয়েছেন কবি গৌরবকে।

কিভাবে নিজের মধ্যে এই সত্ত্বা খুঁজে পেলেন?

গৌতম ঘোষালের কাছে যখন গান শিখতে শুরু করি, তখন ওনাকে দেখতাম কিভাবে, কতটা মনন দিয়ে উনি একটা নতুন গান তৈরি করছেন।

একদম চোখের সামনে থেকে দেখেছি,জেনেছি যে কি ধরণের ভাষা প্রয়োগ ও সুরের মেলবন্ধন থেকে একটা নতুন গান উঠে আসছে।

ফলে সেই থেকেই লেখা লেখির প্রতি একটা ঝোঁক আমার আসে।

কিন্তু গান আর কবিতা দুটো আলাদা।

আমার কাছে কবিতা গান নয়, গান কবিতা নয়।

জয় গোস্বামী, শ্রীজাত, চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের লেখা আমার ভীষণ ভাললাগে।

আর গানের ক্ষেত্রে আগে সুর করি, তারপর সেই সুরে গান লিখি।

২০১৪ সালে ‘ডাকনাম’ গানের অ্যালবাম এ মুক্তি পায় আমার কথায় সুরে ‘সাজনা’।

বাংলা সিনেমায় (টনিক, প্রজাপতি) ইতিমধ্যেই আপনি গেয়েছেন, আগামী দিনে কি কি নতুন পরিকল্পনা…

বেশ কিছু কাজ করার ইচ্ছে আছে। যেমন,

বাংলা সিনেমায় গান গাইবার পাশাপাশি বাংলা সিনেমার জন্য গান তৈরির ইচ্ছে আমার অনেক বেশী। কখনো সুযোগ এলে নিশ্চয়ই করব।

তার মধ্যে সঙ্গীত পরিচালনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।

এছাড়া এই মুহূর্তে আমার কথায় সুরে গান গাইল চন্দ্রিকা, অরিত্র দাশগুপ্ত। সেই কাজ গুলো আসছে।

যখন আমি কারুর জন্যে কাজ করি তখন আমার জমানো লেখা থেকে তাকে একটা গান দিয়ে দিলাম এমন নয়, শিল্পীর ভাষা ও সুরের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখেই আমি নতুন করে গান তৈরি করি।

তাই কাজটা ভীষণই কঠিন।

নতুন গান তৈরির সমগ্র বিষয়টাই এখন আমার গবেষণার বিষয়।

দুবাই,ব্যঙ্কক, বাংলাদেশ, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আপনি একের পর এক মঞ্চ অনুষ্ঠান করেছেন। এছাড়া নতুন কোথায় মানুষ শুনতে পাবেন আপনাকে?

থাইল্যান্ড গেছি, এছাড়া অস্ট্রেলিয়া যাবার কথা আছে।

মিউজিক অ্যালবাম এর জমানা নেই, এখন তো সবই ‘একক’।

গৌরব কি নতুন কিছু ভাবছেন?

ডাকনাম’ আর ‘উড়ান’ এর পর ‘মেঘ ও গজল’ নামে আমার আর একটি অ্যালবাম মুক্তি পায়। কিন্তু তারপর বহুদিন অ্যালবাম নিয়ে সেভাবে কাজ হয়নি।

তবে এই পুজোয় আমার একটা এক গুচ্ছ গানের অ্যালবাম আসছে। তার মধ্যে কিছু গান ভিডিও আকারে ইউটিউবে থাকবে।

আর কিছু শুধুই অডিও মাধ্যমে শোনা যাবে।

জয় সরকার, শ্রীজাত, গৌতম ঘোষাল, সৌপ্তিক,মহুল, দুম,অর্ঘ্য ব্যানার্জী, শোভন গাঙ্গুলী,শুভম মৈত্র অনেকে কাজ করছেন সেই অ্যালবামে।

Gourab Sarkar – Sunday Exclusive – Satkahon

আপনার নিজের গানের দল প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

আমার গানের দল গৌরব এন্ড গাইজ, সাজদা বয়েস এবং তাণ্ডব।

তাণ্ডব এর দুটি কাজ মুক্তি পেয়েছে। এই দলটা নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে তৈরি করেছি। আগামী দিনে আরও বেশ কিছু কাজ আসবে।

COPYRIGHT © SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *