Dr. Imtiaz Ahmed – Anandadhara Arts UK | Satkahon Interview

Dr. Imtiaz Ahmed - Anandadhara Arts UK

Dr. Imtiaz Ahmed – Anandadhara Arts UK

লন্ডন নিবাসী প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ডঃ ইমতিয়াজ আহমেদ। কর্মসুত্রে তিনি ক্যান্সার চিকিৎসক।গভীর ভাবে রবীন্দ্র চেতনায় সমৃদ্ধ তাঁর আপন জগত।

প্রবাসী বাঙালী হিসেবে কেবলমাত্র বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে তিনি কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ না করেই সঙ্গীতশিক্ষা দিয়ে চলেছেন অগুন্তি ছাত্র ছাত্রীকে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাংগীতিক প্রতিষ্ঠান আনন্দধারা আর্টস।

সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে জানালেন তাঁর টুকরো জীবন কাহিনী এবং আনন্দধারার নির্মাণের প্রেক্ষাপট।

জীবন শুরুর কথা জানতে চাইব প্রথমেই। সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা কার কাছে পান?

আমার জন্ম লন্ডনে হলেও আমার বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের রাজশাহীতে।সাংগীতিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠার সুবাদে সঙ্গীতকে কখনো জীবন থেকে আলাদা করে দেখিনি।

বরং গানের মধ্যে দিয়ে জীবনকে চিনেছি।

আমার গানের হাতে খড়ি আমার বাবার কাছে। তাই বাবাই গান জীবনের অনুপ্রেরণা।

দীর্ঘদিন আপনি রবীন্দ্রচর্চা করছেন। আপনার রবীন্দ্র দর্শন অনেকের থেকে আলাদা। সেই প্রসঙ্গে যদি কিছু বলেন…

রবীন্দ্রনাথের গান শুধু নয়, তাঁর সাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ নাটক গল্প এসবের মধ্যে দিয়েই আমার বড় হওয়া।

তাঁর জীবনাদর্শের মধ্যে দিয়েই আমি নিজের জীবন বয়ে নিয়ে গেছি। সেই দিক থেকে তাঁর একটা বিশেষ জায়গা আছে আমার কাছে।

তাছাড়া আমি মনে করি রবীন্দ্রচর্চার মধ্যে দিয়ে আমি আমার বাঙালীত্বকে অনেক বেশী করে পাই।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় রবীন্দ্রনাথের বিশেষ ভূমিকা ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মত অনায়াসে আমরা তাঁকে পাই নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই রবীন্দ্রচর্চা একপ্রকার নিষিদ্ধ ছিল। সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রচর্চা করাটাই ছিল একপ্রকার সংগ্রাম।

যখন উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছিল তখন তিনি ছিলেন আমাদের অনেক বড় আশ্রয়।তাই রবীন্দ্রনাথ মানে আমাদের কাছে একটা আন্দোলন, কেবলমাত্র বিনোদন নয়।

প্রথাগত সংগীত শিক্ষা কার কাছে?

আমার রবীন্দ্রসঙ্গীত ও দর্শনের দীক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক। রবীন্দ্র মননের পুরোটাই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া।

এরপর আমি গান শিখেছি বাংলাদশের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী এবং গবেষক সনজীদা খাতুন মহাশয়ার কাছে।

এ ছাড়া আমি রবিগান শিখেছি স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতী মায়া সেনের কাছে।

আমার শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রথম গুরু হলেন মোজাম্মেল হোসেন। লন্ডনে আসার পর আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিই পণ্ডিত হরিদাস গাঙ্গুলীর কাছে।

বর্তমানে আমি বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতী চন্দ্রা চক্রবর্তীর থেকে বিভিন্ন সময়ে উচ্চাঙ্গ সংগীত বিষয়ে উপদেশ নিয়ে থাকি।

আমি মনে করি বাঙালীর আত্মপরিচয়ের একটা বড় হাতিয়ার গান।

গান করে একটু নাম হল, করতালি হল এটা আমরা চাই না।

রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চকবির গানকে আশ্রয় করে যেন আমরা অশুভ ভাবনার সাথে লড়াই করতে পাড়ি সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।

পেশাগত ভাবে আপনি লন্ডনে কর্মরত ক্যান্সার চিকিৎসক। সংগীতকে এত গভীর ভাবে উপলব্ধি করেও তাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা মনে হয়নি?

আমি আগেই বলেছি গানকে কোনোদিন নিজের জীবনের থেকে আলাদা মনে হয়নি তাই পেশা হিসেবে তাকে গ্রহণ করার কথাও কখনো মনে হয়নি।

গান আমার জীবনে একটা পবিত্রতার জায়গা।

রবীন্দ্র দর্শনে সকলকে সম্পৃক্ত করাই আমার উদ্দ্যেশ্য।

সংগীত প্রতিষ্ঠান আনন্দধারা নিয়ে যদি একটু বিস্তারিত বলেন …

বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসার পর আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে রবীন্দ্র সংগীত ও পঞ্চকবির গান শেখাতে শুরু করি।

কারণ আমি মনে করি, বাংলা গান শেখার মধ্যে দিয়ে এদেশের ছোট ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষাকে যেন চিনে উঠতে পারে।

বাংলার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে উঠে প্রবাসী বাঙালিরা যেন তাঁদের শিকড়ের সন্ধান পান।

এক্ষেত্রে বলে রাখি আমি কিন্তু গান শিখিয়ে কোন পারিশ্রমিক নিই না। আমি মনে করি এটা আমার সামাজিক দায়িত্ব।

বরাবর আমার ইচ্ছে ছিল আমি এদেশের ছোটদের গান শেখাবো। দীর্ঘদিন আমি লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠান সত্যেন স্কুল অফ ফাইন আর্টসের সাথে যুক্ত ছিলাম।

২০০৪ সালে আনন্দধারা শুরু হয় একটি সাঙ্গীতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ হিসেবে।আমার সাথে এই উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন মিসেস পারভীন কাদেরী।

এই মঞ্চে গান গেয়েছেন রেজয়ানা চৌধুরি বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, মিতা হক প্রমুখ গুণী শিল্পী।

এমনকি উস্তাদ রশিদ খান এবং পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জীও আমাদের মঞ্চ আলোকিত করেছেন।

সেক্ষেত্রে উদ্দ্যেশ্য ছিল এদেশের মানুষের কাছে ভারতীয় শিল্পকে পৌঁছে দেওয়া।

চার বছর হল আনন্দধারা সংগীত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিয়মিত সপ্তাহান্তে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪০ জন ছাত্র ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানে সঙ্গীতশিক্ষা গ্রহণ করে।

মূলত রবীন্দ্রসংগীত এবং পঞ্চ কবির গান নিয়েই এখানে চর্চা করা হয়। আমি সকলকে সঙ্গীতশিক্ষা দিয়ে থাকি রবীন্দ্রচেতনা তথা বাংলা সংস্কৃতির প্রচারের উদ্দ্যেশ্যে।

আনন্দধারা ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে এখনও পর্যন্ত কি কি অনুষ্ঠান করেছে?

লন্ডনের বিভিন্ন বড় বড় প্রেক্ষাগৃহে আনন্দধারা অনুষ্ঠান করেছে। যেমন ভারতীয় বিদ্যাভবন, Richmix, Barbican Centre, কবি নজরুল সেন্টার ইত্যাদি।

প্রতি বছর আমাদের প্রতিষ্ঠানে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। রবীন্দ্রজীবনের বিভিন্ন দিককে কেন্দ্র করে এখানে অনুষ্ঠান হয়।

পাশ্চাত্য সংগীত ভাঙা রবিগান নিয়েই কিছুদিন আগেই একটি অনুষ্ঠান হয়।

এছাড়া ভারতীয় বিদ্যাভবনে ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয় যেখানে কবিগুরু ইউরোপে বসে যে গান লিখেছিলেন সেগুলি পরিবেশিত হয় আনন্দধারার ছাত্র ছাত্রীদের দ্বারা।

ক্যান্সার এর মত একটি বিষয় নিয়ে আপনি কাজ করছেন।

দিনরাত হয়ত অনেক মানুষেরই জীবনবিদারক দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় আপনাকে। এরপরেও সংগীত চর্চা বা সংগীত শিক্ষা একসাথে কিভাবে বজায় রাখেন?

আমি আগেও বলেছি সংগীত আমার জীবনের অংশ।

পেশাগত ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হলেও দিনের শেষে বাড়ি ফিরে যখন আমি গান নিয়ে বসি আমার সব চিন্তা দূর হয়ে যায়।

এমনকি আমার আনন্দের বিষয়, ইন্টারনেটে যোগাযোগ করে যারা আমার কাছে চিকিৎসার জন্যে আসেন তাঁরা এটাও দেখেন যে আমি গান গাই।

 তাঁরা আমার গানের বিভিন্ন সিডি নিয়ে যান। এবং অনেকে আমাকে বলেছেন আমার গান তাঁদের যন্ত্রণা থেকে একটু সময়ের জন্যে হলেও উপশম দেয়।

এর থেকে বড় পাওয়া আর কিই বা হতে পারে!

করোনা মহামারী আমাদের আন্তরজালে জড়িয়ে দিয়েছে। সমস্ত অনুষ্ঠানই ডিজিটাল। আনন্দধারা কি কি কাজ করছে?

করোনা শুরু হবার পর শিল্পীরা ব্যাপক ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

 সেই কথা মাথায় রেখে আনন্দধারা ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন প্রথিতযশা শিল্পীদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে এবং বাংলাদেশের শিল্পীদের হাতে তুলে দেয়।

এই অনুষ্ঠান আলোকজ্বল করেছেন হৈমন্তী শুক্লা, স্বপন বসু, রেজয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, লাইসা আহমেদ লিসা ও আর অনেকে।

পরবর্তীকালে আমরা ভাবি এই কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা।

তাই শিল্পীদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁদের আমাদের লাইভ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানটির নাম “শিকড়ের সন্ধানে।”

বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠান করছি। তাঁদের গান আমরা আমাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।

গত সপ্তাহেই নদী বক্ষে বাউল ও ভাটিয়ালি গান নিয়ে আমরা একটি অনুষ্ঠান করেছি।

Dr. Imtiaz Ahmed - Anandadhara Arts UK
আনন্দধারা

রবীন্দ্রসংগীতকে কেন্দ্র করে কি কি কাজ করছে আনন্দধারা?

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে আমাদের আর একটি ক্রিয়াকর্ম চলছে। এটিও একটি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান।

রাখীবন্ধনে রবীন্দ্রনাথ, বৃষ্টিস্নাত রবীন্দ্রনাথ, পদ্মাপাড়ের রবি প্রমুখ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছেন সঙ্গীতশিল্পী স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত, স্বনামধন্য সরোদ বাদক তেজেন্দ্র নারায়ান মজুমদার, সঙ্গীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা আরো অনেকে।

আগামী ৩১ শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কবিগুরু ও মহাত্মা।

ডিজিটাল যোগাযোগ এর জন্যে আনন্দ ধারার লন্ডন ছাড়াও আর দুটি শাখা হয়েছে স্কটল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়।

রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক শ্রী পবিত্র সরকার, রবীন্দ্রগবেষক ও লেখক প্রীতম সেনগুপ্ত, বাংলাদেশ থেকে রয়েছেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিবিদ জনাব সোহরাব উদ্দীন, রয়েছেন ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী শ্রীমতি চন্দ্রা চক্রবর্তী।  

একজন সংগীতশিক্ষক তথা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এবং তদুপরি প্রবাসী বাঙালী হিসেবে সকলকে আপনি কি বার্তা দেবেন?

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গকে যদি আমরা দুই বাংলা বলি তাহলে আমরা যারা প্রবাসে রয়েছি সেটাকে তৃতীয় বাংলা বলা চলে।

আর এই তৃতীয় বাংলার ব্যপ্তি কিন্তু অনেকটা।

আনন্দধারা ডিজিটাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিশ্ব বাংলাকে স্পর্শ করতে পারছে।

ছোট ছোট প্রবাসী বাঙালী ছেলে মেয়ের পাশাপাশি যারা বাংলাভাষী নন তাঁদের মধ্যেও আনন্দধারা বাংলা সংস্কৃতির বীজ রোপন করতে পারছে এখানেই এর সাফল্য।

বাংলা গান ছড়িয়ে পড়ুক। আশা করি এইভাবেই আনন্দধারা সমগ্র বিশ্বে এক প্রীতির বন্ধন স্থাপন করতে পারবে।

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

2 thoughts on “Dr. Imtiaz Ahmed – Anandadhara Arts UK | Satkahon Interview”

  1. Prof. Tirthadip Ghose

    আমার ছোটবেলার বন্ধু। জীবনকে উপভোগ করছে। ভালো লাগলো।

  2. অপূর্ব গেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথকে গভীরে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *