Dr Ananya Bhowmik | Dancer | Clinical Nutritionist | Sunday Exclusive | Satkahon
Dr Ananya Bhowmik | Dancer | Clinical Nutritionist | Sunday Exclusive | Satkahon
একদিকে নাচ, অন্যদিকে পড়াশুনা, এবং আরও এক দিকে খেলাধুলো। সবেতেই প্রথম যিনি, তাঁর নাম ডঃ অনন্যা ভৌমিক মিত্র।
কঠিন ধর্মীয় রীতি নীতির কর্দমাক্ত আভরণ থেকে মুক্ত করে যে মহীয়সী নারী সমাজকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছেন সেই শ্রীমতি নন্দিনী ভৌমিক এর প্রথমা কন্যা তিনি।
সহজ ভাবে বলতে গেলে সব কিছুতেই প্রথমা তিনি, তাই তিনি অনন্যা।
পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে তাঁর গবেষণা। নাচ তাঁর নিশ্বাস।
পেশাগত শিল্পী না হলে যে শিল্পী হওয়া যায় না একথা তিনি বিশ্বাস করেন না।
তাই নিজের কাজের পাশাপাশি সমান তালে করে চলেছেন নানান নৃত্যানুষ্ঠান।
অনেকেই তাঁর থেকে জানতে চান তাঁরা কিভাবে ভালো থাকবেন…
আজ আমরা জানতে চাইব, অনন্যার নিজের জীবনের ভালো থাকার কাহিনী…
সাতকাহনের পাঠকদের জানাব তাঁর নৃত্য জীবনের গল্প….
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
ছোট থেকেই কি নাচের প্রতি আগ্রহ?
ছোটবেলা থেকেই আমি এমন পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে আমার দিদা ভীষণ ভাবে সংস্কৃতির সাথে যুক্ত ছিলেন। উনি নাটক, আবৃত্তি, নাচ করতেন।
মা তো খুবই ভালো অভিনয় করতেন। নাচও করতেন।
সব মিলিয়েই আমার মধ্যেও তাই একটা সংস্কৃতি মনস্কতা তৈরি হয়েছিল।
মা বলেন, আমি নাকি যেকোনো গান হলেই নাচতে থাকতাম।
এমনকি টিভিতে বিজ্ঞাপন হলে সেই গানেও নাচ করতাম।
তাই মায়ের উৎসাহেই চার বছর বয়সে ডোভারলেন কলামন্ডলমে আমার নাচ শেখা শুরু হল।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
কার কাছে শিখেছেন ?
কলামন্ডলমে প্রথম দু বছর গুরু মোহনা আইয়ার-জীর কাছে আমি শিখেছি।
ছয় বছর বয়স থেকে গুরু কলামন্ডলম ভেঙ্কিট এর কাছেই নাচ শিখেছি।
ওনার কাছেই আমার নাচ শেখার সবটুকু।
নাচের প্রতি যে আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছে সেটা আমি বুঝতে শিখেছি ওনার কাছে।
খুব আনন্দ করে নাচ শিখেছি।
নাচের ক্লাস যাওয়াটা আমার কাছে ছিল ভীষণ আনন্দের।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
কেমন ছিল সেই শেখার দিন গুলো?
সারা সপ্তাহ আমি বসে থাকতাম কবে রবিবার হবে আর আমি নাচের ক্লাসে যাব।
গুরুজী খুব রাগী ছিলেন,কিন্তু ভীষণ ভালবাসতেন।
অনেক জায়গায় না যাওয়ার জন্য মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতাম কিন্তু এমন কোনদিন হয়নি যে নাচের ক্লাসে যাব না বলে মা কে বলেছি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
যেকোনো মানুষেরই সাংস্কৃতিক জীবন শুরু হয় তাঁর বিদ্যালয়ের হাত ধরে… শুনব স্কুল জীবনের গল্প…
মর্ডান হাই স্কুল ফর গার্লস (Modern High School For Girls) এ পড়তাম আমি।
মর্ডান হাই স্কুল কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সমস্ত বিষয়কে ভীষণ ভাবে সমর্থন করে, এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দেয়।
আমি স্কুলের প্রত্যেকটা নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছি।
বৃক্ষরোপণ উৎসব থেকে শুরু করে রবীন্দ্রজয়ন্তী সমস্ত রকম অনুষ্ঠান হত আমাদের স্কুলে।
আর অবশ্যই প্রত্যেক অনুষ্ঠানে শাস্ত্রীয় ভরতনট্যম নৃত্যই আমি প্রদর্শন করেছি।
আমাদের একটা বন্ধুদের দল হয়ে গিয়েছিল যারা নতুন ধরণের কাজ করতে শুরু করেছিলাম।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
আমাদের স্কুল জীবনের সেই সময়টায় হিন্দি গান ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে,
সেহেতু শাস্ত্রীয় নৃত্য যাতে দর্শকদের কাছে একটু বেশী মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে সেহেতু হিন্দি গানের উপরও আমরা ভরতনট্যম নৃত্য করতাম।
ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকবার আমরাই প্রথম হয়েছি।
আসলে শুধু শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনুষ্ঠান হলে সেখানে দর্শক সেই ধরণের নাচ দেখবে এই মানসিকতা নিয়েই আসে।
কিন্তু স্কুলে একান্তই শাস্ত্রীয় নৃত্যের দর্শক পাওয়া একটু কঠিন তাই আমাদের কাছে এটা গর্বের ছিল যে সেখানেও আমরা শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর দর্শক তৈরি করতে পেরেছিলাম।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
জাহ্নবীর সাথে আপনি কিভাবে যুক্ত?
মধুবনী চট্টোপাধ্যায় দিদিকে আমরা ছোটবেলা থেকেই কলামন্ডলমে দেখেছি।
সেই সময় কলামন্ডলমে নাচ শেখার নির্দিষ্ট স্তর আমি অতিক্রম করেছি।
তারপর কি করব ভাবছি, সেই সময় মধুবনীদি ঠিক করে নাচ শেখাবে।
তখনও জাহ্নবী শুরু হয়নি।
সেই সময় আমি ও আরও পাঁচ জনকে নিয়ে দিদি একটা ছোট্ট নাচের দল তৈরি করেন।
Padmashree Alarmel Valli- এঁর কাছে দিদি একটি ভিন্ন নৃত্য শৈলী শিখে এসেছিলেন, সেই শৈলী দিদির থেকে শিখতে আমাদের সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর।
এরপর জাহ্নবী এল। Jahnavi Centre for Performing Arts.
জাহ্নবীর উন্মোচনের দিন আমরা একটি অনুষ্ঠান করি।
সেই অনুষ্ঠানের জন্য নেওয়া প্রস্তুতির দিন গুলো মনে পড়ে।
বৃষ্টির দিনে, জল ভেঙে কাদা মেখে দিদির বাড়ি যেতাম। দিদি জামা দিতেন, সেই পড়ে নাচ করে আবার রাতে বাড়ি ফিরতাম।
এখন অনেককে দেখি মাধ্যমিক পরীক্ষা তিন মাস নাচ গান শেখা যাবে না।
আমাদের তো পড়াশুনা বন্ধ হয়নি, আমরা যেমন পড়াশুনাটাও মন দিয়ে করেছি, নাচটাও তাই।
শুধু জাহ্নবী নয়, সেই সময় মায়ের প্রতিষ্ঠান ‘আঙ্গিক’-এরও বহু অনুষ্ঠানে আমরা অনুষ্ঠান করেছি।
সেই সময় কলকাতায় হেন কোন মঞ্চ ছিল না যেখানে আমরা অনুষ্ঠান করিনি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
প্রথাগত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ কবে?
অনেক ছোট থেকে। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। তখন থেকেই মঞ্চ অনুষ্ঠান।
পেশাগত শিল্পী হতে ইচ্ছে হয়নি কখনো?
না।
পেশাগত ভাবে নাচ নিয়ে এগোনোর ইচ্ছে হয়নি কখনো।
আমি তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী।
মা একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমি নাচ নিয়েই এগোতে চাই কিনা, নাচ কে আমার উপার্জনের মাধ্যম করতে চাই কিনা।
কিন্তু আমি বলেছিলাম না।
আমি পুষ্টিবিদ হতে চাই।
ছোট বেলা থেকেই পুষ্টি বিজ্ঞান এর প্রতি আমার একটা আগ্রহ ছিল।
আমি আমার মনের ইচ্ছেকে সফল করতে পেরেছি।
আর, চিরকাল মা কে দেখেছি মা সংস্কৃতটা এত ভালোবেসে পড়েছে, সেটা নিয়ে নতুন নতুন কাজ করেছে, সাথে সাথে নাটকটাও সমান ভাবে করে গেছে।
পেশাগত শিল্পীই হতে হবে নাহলে আমি শিল্পী হতে পারব না একথা আমার কখনো মনে হয়নি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
নাচ শেখানোর কথা মনে হয়নি?
জাহ্নবীতে থাকা কালীন বেশ কিছুদিন জাহ্নবীতেই আমি নাচ শিখিয়েছি।
তবে, সত্যি বলতে আমার মঞ্চ বেশী ভালো লাগে।
মঞ্চে পা রাখতে গেলে যে পরিশ্রমটা করতে হয় সেটা করতেও তেমনই ভালো লাগে।
পুষ্টি বিজ্ঞান এবং নাচ দুটো নিয়েই সমান ভাবে কাজ করে চলেছেন …প্যাশন আর প্রফেশন একসাথে সামলানোর রহস্য কি?
আসলে আমি কিন্তু কোনদিনই নাচ ছেড়ে থাকিনি। মা হবার সময়টুকু ছাড়া।
ছোট মেয়ে হবার পর মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে বসে নাচ করেছি।
নাচ আমার কাছে অক্সিজেনের মত।
ছোট থেকে বিভিন্ন নাচের প্রতিযোগিতায় যেমন প্রথম হয়েছি তেমন পুষ্টি বিজ্ঞানেও আমি প্রথম হয়েছি।
প্যাশন আর প্রফেশন দুটোই একসাথে সামলানো যায়।
চেষ্টা করলে সব সম্ভব।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
মা নাট্যজগতের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত।
কর্মসুত্রে অনেক গুনী মানুষের সাথেও আপনার নিত্যদিনের পরিচয়।
কখনো অভিনয় জগতে আসার ইচ্ছে হয়নি?
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে আমি কাজ করেছি, কিন্তু প্রথাগত ভাবে অভিনয় জগতে আসার কথা আমার মনে হয়নি কারণ তাহলে পড়াশুনাটা ছাড়তে হত।
পড়াশুনাটা আমি ভীষণ ভালোবাসি।
নাচ টাও আমি ভালোবেসে করি, পড়াশুনাটাও ভালোবেসে করি।
তাই সকালে উঠে আমি যে কাজে যাই সেটা আমি ভালোবেসে যাই।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সব শেষে আপনার কিছু কথা শুনতে চাই…
সব সময় এই হাস্যমুখ, সব কিছুতে প্রথম আর সবার থেকে এগিয়ে থাকা মানুষটির থেকে…
যেহেতু আমি একজন WELLNESS consultant, WELLNESS নিয়ে পড়াশুনা করেছি.
সেহেতু আমি বলব, যা নিয়েই আমি পড়াশুনা করেছি সেটা আগে নিজের উপর প্রয়োগ করে দেখেছি।
আমি যখন CODE WELLNESS তৈরি করেছি, সেখানে আমি DANCE THERAPY বা MOVEMENT THERAPY রেখেছি।
কারণ আমার মনে হয়েছে আমার মত আরও কিছু মানুষ আছেন, যারা MOVEMENT এর মধ্যে দিয়ে নিজেকে বেশী প্রকাশ করতে পারবেন। এর মধ্যে দিয়ে তাঁদের HEALLING হবে।
সেইজন্য CODE WELLNESS এ MOVEMENT THERAPY আছে।
সব শেষে এটুকুই বলব, নিজের আনন্দে আমি নাচব চিরকাল।
শুনতে অবাক লাগবে কিন্তু দুঃখ পেলেও নাচ করি আমি।
আমার কাজের জায়গাটা বিশাল, তাই নাচ আমাকে সব কিছুর মাঝে একটা মানসিক শান্তি দেয়।
অন্তত এ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নাচ ভালোবেসে যাবো।