Digital Artist Udoy Datta | Friday Fantastic | Satkahon
Digital Artist Udoy Datta | Friday Fantastic | Satkahon
বাঙালীর হৃদয়ের এক ভাগের নাম ভারত আর একভাগের নাম বাংলাদেশ।
বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যে ধরণের গবেষণা মূলক কাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত, তা প্রশংসনীয়।
সংস্কৃতি বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়ের একটি অন্যতম উপাদান।
আজ সাক্ষাৎকারে যার কথা বলব তাঁর বয়স এবং অভিজ্ঞতার বয়স দুটোই মাত্র ২০।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহৃত ইমোজি দিয়ে মানুষের হুবহু ছবি এঁকে ফেলতে পারেন তিনি।
তাঁর শিল্পচর্চা সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশ তথা ভারত ও অন্যান্য দেশে।
জানব ডিজিটাল আর্টিস্ট উদয় দত্ত-র জীবনকথা। (Digital Artist Udoy Dutta)
উদয় বড় হয়েছেন বাংলাদেশ ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলায়।
বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে পড়াশুনার সাথে আঁকাও ছিল একটা বিষয়।
বিদ্যালয়ে আঁকার পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকসময় বাড়িতেও আঁকার কাজ দিতেন।
উদয় বলেন, তিনি তখন খুবই ছোট ছিলেন কিন্তু মনে আছে শিক্ষক শিক্ষিকারা তাঁর আঁকা ছবি গুলোর খুবই প্রশংসা করতেন এবং বলতেন সেগুলি সকলের থেকে আলাদা হয়েছে।
সেই থেকেই ধীরে ধীরে আঁকার প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মাতে থাকে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুদের অনুরোধে তাঁদের ছবি আঁকতেন উদয়।
ছোট ছিলেন,হুবহু না হলেও চেষ্টা করতেন যথাযথ করার।
সেই সময় ছবি পেয়ে বন্ধুদের আনন্দ, উদয়ের জীবনে ছবি আঁকার অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল।
শুধু তাই নয়,একটু বড় হবার পর বাড়ীতে থাকা বাবা মায়ের ছবি দেখে তাঁদের ছবি হুবহু এঁকে ফেলতেন উদয়।
সেই ছবি দেখে ভীষণ খুশি হতেন বাবা মা। উৎসাহ দিতেন আরও ছবি আঁকার জন্য।
যে উৎসাহ উদয়ের ছবি আঁকার আগ্রহকে দিগুণ বাড়িয়ে তোলে।
নবম-দশম শ্রেনীতে পড়ার সময় আঁকার সাথে ক্ষণিকের বিচ্ছেদ নিতে হয় উদয়কে।
দশম শ্রেনী পাস করার পর তাঁর বড় দাদা একটা স্মার্ট ফোন কিনে দেন তাঁকে।
সেই সময় ফটোগ্রাফিও করতে শুরু করেছেন উদয়।
২০২১ সালে ফেসবুকে বিভন্ন আঁকার ও বিভিন্ন শিল্পকলা প্রদর্শনের গ্রুপ গুলিতে ছোট ভাই প্রত্যয় তাঁকে যুক্ত হতে বলেন।
সেই গ্রুপ থেকেই বিভিন্ন রকম আর্ট যেমন ভিক্টর আর্ট,ডিজিটাল আর্ট ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে তাঁর।
উদয় তাঁদের থেকে জানতে চান এগুলো তাঁরা কিভাবে এঁকেছেন।
তাঁরা সাহায্য করেন এবং তাঁদের থেকে জেনে উদয় নিজেই ডিজিটাল ছবি আঁকতে শুরু করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি গুলি খুবই জনপ্রিয় হতে থাকে।
জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী থেকে শুরু করে সিয়াম আহম্মেদ মেহজাবিন চৌধুরী ও আরও অনেকের ডিজিটাল ছবি আঁকেন উদয়।
তাঁরা স্বয়ং উদয়ের ছবির প্রশংসা করেন, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
প্রশংসা পেয়েছেন ভারতবর্ষের সারেগামাপা খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিকের থেকেও।
প্রায় এক থেকে দেড় বছর পর উদয় পেশাগত শিল্পী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
তখন থেকে স্ক্রাবল আর্ট, ইমোজি আর্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ছবি আঁকতে শুরু করেন।
প্রথম উপার্জিত অর্থ মায়ের হাতে তুলে দিলে মা অত্যন্ত খুশি ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
উদয় বলেন,
“আমি একজনকে ইমোজি দিয়ে ছবি আঁকতে দেখি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করি তিনি কিভাবে করেছেন। কিন্তু তিনি আমাকে শুধু অ্যাপ এর নাম বলেন।
আর কিছুই তিনি বলতে চান না।বহুদিন ধরে অনেক চেষ্টা করার পর আমি নিজেই শিখে যাই এটা কিভাবে করতে হবে।
ইমোজি আর্ট দিয়ে আমি প্রথম অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ছবি আঁকি।সেই ছবিটি বহু মানুষের প্রশংসা পায়।
সেটি আঁকতে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।“
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে উদয় বললেন,
“ জানিনা শুধুমাত্র ছবি আঁকাকেই জীবনে পেশা করতে পারব কিনা কোনদিন, কিন্তু যদি অন্য কোন কাজ কে পেশা করতেও হয় ছবি অবশ্যই আঁকব।
ছবি আঁকা বন্ধ করে কিছু করতে পারব না। কারণ এই ছবির জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া আমাকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
আমার পরিবার, প্রতিবেশী বন্ধুরা সকলেই আমার আঁকা ভালোবাসে।
এই ভালোবাসা আমি কোনদিনই হারিয়ে ফেলতে পারব না।“
সকলের থেকে আলাদা হবার লক্ষ্যে ভিন্ন কিছু করতে চান উদয়। বললেন,
” আমি প্রথম যার ইমোজি আর্ট থেকে অনুপ্রাণিত হই তিনি ১ টি ইমোজি দিয়ে ছবি এঁকেছিলেন।
কিন্তু আমি অনেকগুলি ইমোজি দিয়ে ছবি আঁকি।
মানুষ সেটি অনেক বেশী পছন্দ করেন।
ইউনিক কাজ করতে ভালোবাসি তাই পাতা কেটে, কাগজ কেটে পোট্রেট বানাই।
ভবিষ্যতে আরও অন্যরকম কাজ করার ইচ্ছে আছে।“
সবশেষে বললেন,
“ সুজন সাহা কৌশিক, হজবরল পেজের প্রধান তন্ময়দা, এনারা আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন।
যতই ভালো আঁকি না কেন এতদুর এসেছি শুধু মানুষের ভালবাসায়।
তাঁরা আমার কাজের প্রশংসা করে আমাকে উৎসাহ না দিলে আমি কোনদিনই এই জায়গায় আসতে পারতাম না।
ভবিষ্যতেও পাশে না থাকলে নতুন উদ্যম পাবো না।
আর, আমার ভাই প্রত্যয় দত্ত অনেক সহযোগিতা করেছে।
এছাড়া আমার মা বাবার আশীর্বাদ ও উৎসাহ সবসময় রয়েছে আমার বড় হওয়ার প্রেক্ষাপটে ।“