ARATRTIKA BHATTACHARYA | FRIDAY FANTASTIC | SATKAHON

ARATRTIKA BHATTACHARYA | FRIDAY FANTASTIC | SATKAHON

ARATRTIKA BHATTACHARYA | FRIDAY FANTASTIC | SATKAHON

একদিকে কঠোর অনুশীলন, অন্য দিকে সাফল্য।

কিন্তু এই দুইয়ের মাঝে যদি ভালোবাসা চলে আসে তবে অনুশীলন আর কঠোর থাকে না। জিতে যায় সাফল্য।

ভালোবাসা না থাকলে কি হয় তা সকলে জানেন।

সঙ্গীত তেমনই এক বিষয়। মা সরস্বতীর কৃপা।

যা লাভ করতে গেলে প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রম।

তবে যদি ভালবাসার ফুলে তাঁর পুজো করা হয়, তাহলে কঠোর কিছুই নয়।

আজ এমনই এক নবীন শিল্পীর কথা আপনাদের শোনাব যিনি সঙ্গীতকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করেছেন।

গান তাঁর সঙ্গী।

আজ সাক্ষাৎকারে সঙ্গীতশিল্পী আরাত্রিকা ভট্টাচার্য।(ARATRTIKA BHATTACHARYA)

গান জীবনের ছোটবেলা

বাবার চাকরি সুত্রে আরাত্রিকার জন্ম গুজরাটে। বছর চারেক সেখানে থাকার পর তাঁরা চলে আসেন পশ্চিম বঙ্গে।

মা স্বর্গীয়া আরাধনা ভট্টাচার্যের কাছেই তাঁর গান শেখার শুরু।

তিনি প্রানী বিদ্যা নিয়ে স্নাতকত্তর হওয়ার পরেও মেয়েকে গান শেখাতে যাতে ত্রুটি না থাকে তাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত পদ্মজা নাইডু মিউসিক কলেজ থেকে সঙ্গীতে স্নাতক এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে স্নাতকত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

আরাত্রিকার তখন চার বছর বয়স।

তখন তাঁরা বর্ধমানে। কলকাতায় যাতায়াত সুত্রে একদিন খবর পেলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রুতি নন্দন।

যে প্রতিষ্ঠান স্থাপনার খবর তাঁরা শুনেছিলেন গুজরাটে তা এখন বাস্তবায়িত।

কিন্তু শ্রুতি নন্দন এ সর্বনিম্ন ৭ বছর থেকেই ছাত্রী ছাত্রী ভর্তি নেওয়া হয়।

ফলে, আরাত্রিকার সঙ্গীত শিক্ষা চলতে থাকে মায়ের কাছেই।

শ্রুতি নন্দন

প্রথম শ্রেনীতে পড়ছে ছোট্ট মেয়ে আরাত্রিকা।

শ্রুতিনন্দন এ ভর্তি নেওয়া হচ্ছে খবরের কাগজে এই বিজ্ঞাপন দেখে মা নিয়ে গেলেন তাকে।

কলকাতায় এসে দেখলেন কাতারে কাতারে ছেলে মেয়ে তাঁদের মা বাবার সাথে এসছে শ্রুতিনন্দন এ পরীক্ষা দিতে।

বর্ধমান থেকে কলকাতা দীর্ঘ যাত্রার পর তাদের সাথেই সকাল থেকে না খেয়েই চলতে লাগল ছোট্ট মেয়েটির অপেক্ষা।

অবশেষে তাঁরা দেখা পেলেন গুরুজীর। সেখানেও কিছুক্ষনের অপেক্ষা।

ছবি আঁকতে ভালবাসত সে তাই মন ভোলানোর জন্যে মা বললেন বসে বসে ছবি আঁকতে।

পরীক্ষা নিচ্ছেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। ছোট্ট মেয়েটি কিই বা জানে তিনি কে, সে আঁকতে শুরু করল গুরুজীর ছবি।

এক সময় ডাক এলো। ডেকে পাঠালেন গুরুজী স্বয়ং।

বললেন, “ এই দেখি, তুই কি ছবি আঁকলি…”

ঝিঁঝিঁ ধরে যাওয়া পায়ে টলতে টলতে যখন ছোট্ট আরাত্রিকা পৌঁছলেন গুরুজী তাকে কোলে তুলে নিলেন।

নিজে হাতে সেই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে মালিশ করে দিলেন।

আর এই স্নেহের পরশেই গুরুজী হয়ে গেলেন আরাত্রিকার পরম আপন।

এই ভালোবাসাতেই কেটে গেল অনুশীলনের কঠোরতা।

সঙ্গীত হয়ে উঠল সঙ্গী।

দীর্ঘ ১৫ বছর শ্রুতিনন্দনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহন করেছেন আরাত্রিকা। 

 ব্রতী

শ্রুতিনন্দনে গান শেখার সময় থেকেই নেহেরু চিলড্রেনস মিউসিয়াম এ যাতায়াত আরাত্রিকার।

নেহেরু চিলড্রেনস মিউসিয়াম আয়োজিত যুগল শ্রীমল স্কলারশিপ (Jugal Srimal Scholarsahip) রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় পর পর দুই বছর প্রথম হন আরাত্রিকা।

সেই প্রতিযোগিতার বিচারক মণ্ডলীতে ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতী অপালা বসু সেন।

আরাত্রিকার গান শুনে নেহেরু চিলড্রেনস মিউসিয়াম থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তিনি স্বয়ং ফোন করলেন আরাত্রিকার বাবাকে।

বললেন, তিনি নিজে গান শেখাতে চান আরাত্রিকাকে।

সেই থেকে তাঁর সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ‘ব্রতী’ –র ছাত্রী আরাত্রিকা।

আজও তাঁর সান্নিধ্যেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখছেন আরাত্রিকা।

 গান ভালোবেসে গান

সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছেন আরাত্রিকা।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে PHD ডিগ্রি অর্জন করে এখন তিনি ডঃ আরাত্রিকা ভট্টাচার্য।

২০১৪ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সমাজ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তিনি।

 সঙ্গীত আরত্রিকার সঙ্গী তা আগেই বলেছি। পেশাগত ভাবে গান নিয়ে এগোবার কথা তিনি কখনই ভাবেননি। গান তিনি ভালোবেসে গান।

পড়াশুনাতে মনঃসংযোগ করার জন্যেও তিনি গান করেন।

বললেন,

“যেভাবে বেঁচে আছি, সেভাবেই গান আছে।

গান যে আলাদা কোন কাজ সে কথা কখন মনে হয় নি।

গানকে কখনো Service হিসেবে ভাবিনি। তাই হয়ত গানকে পেশা করে উঠতে পারিনি।

যতটুকু গান শিখেছি যত্ন করে শিখেছি, যত্ন করেই গাই।

অনেক পেশাদার শিল্পী আছেন, গানটা গুরুত্ব দিয়ে গান না, গানের চেয়ে প্রচারের ব্যাপারেই বেশী মনযোগী তাঁরা।

আমি কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে গান গাওয়া এবং শেখা এই দুটোতে বিশ্বাস করি।

আমার গান

এছাড়াও বেশ কিছু বাংলা মৌলিক গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত মুক্তি পেয়েছে শিল্পীর কণ্ঠে।

আগামী দিনে আসতে চলেছে বেশ কিছু নতুন গান।

বর্ধমান, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ বাঙালী সমিতি, হায়দ্রাবাদ কালী বাড়ী, উৎসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন আরাত্রিকা।

এমনকি বাংলাদেশ ও লন্ডন টেগোর সেন্টারেও সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন তিনি।

ইচ্ছে গাঙের গান…

 মনের আনন্দে গান করেন আরাত্রিকা।

একটু ভালো গান গাইলেই বাবা মা রিয়েলিটি শো এর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন সন্তানদের।

চাইছেন তাঁর সন্তান যেন বড় হয়ে পেশাগত সঙ্গীত শিল্পীই হন।

এই প্রসঙ্গে আরাত্রিকা বললেন,

“আমাদের ছোটবেলায় রিয়েলিটি শো কিংবা ফাইন টিউন, অটো টিউন ছিল না, তাই একদিকে যেমন চটজলদি বিখ্যাত হবার পথ ছিল না তেমনই রেওয়াজ না করে সঙ্গীতশিল্পী হয়ে যাবারও উপায় ছিল না।“

কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু করায় বিশ্বাস করেন না আরাত্রিকা।

তিনি মনে করেন পেশাগত শিল্পী আর শিল্প মনস্ক শিল্পীর মধ্যে পার্থক্য আছে।

রেল অবরোধ, বাস অবরোধ, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা অগ্রাহ্য করে প্রত্যেক সপ্তাহে বর্ধমান থেকে কলকাতায় শুধু মাত্র গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে গান শিখতে আসতেন তিনি।

নিয়মিত রেওয়াজ ও গুরু নির্দেশ মেনেই গান শিখেছেন।

কিন্তু এত কিছুর পরেও গানকে ব্যবসার মাধ্যম করে তুলতে পারেননি তিনি।

বললেন,

“পেশাগত নয় মানে একজন মানুষ শিল্পী নন একথা ভাবা উচিত নয়। আজ মঞ্চ নেই বলেই যে আমার গান শেখা বৃথা এ কথা ভাবলে আর গানকে কি দেওয়া হল?

আমি যদি মনে করি আমি শিল্পী, তাহলে আমাকে শিল্পকে লালন করতে হবে।

শিল্প একটা সত্ত্বা।  সত্ত্বার সাথে যদি  নিবিড় যোগাযোগ না থাকে তাহলে শিল্পী হওয়া যায় না।“

ইচ্ছে নদীর গাঙে তিনি গান ভাসিয়েছেন …

পেশাগত না হলেও শিল্পী হওয়া যায়… এর প্রকৃত উদাহরণ তিনি।

ARATRTIKA BHATTACHARYA | FRIDAY FANTASTIC | SATKAHON
আগামীর জয়গান

মা চলে গেছেন ২০১৮ সালে। মননে দিয়ে গেছেন গান।

মায়ের স্বপ্ন কখন যে তাঁর স্বপ্ন হয়ে গেছে তা তিনি নিজেও জানেন না।

 বললেন,

“ মা নিজে হাতে আমাকে শিখিয়েছেন,এগিয়ে দিয়েছেন।

মা নেই কিন্তু মায়ের শিখিয়ে যাওয়া পথেই চলছি। আগামী দিনেও চলব।

আমি মনে করি মা গানে গানেই এখনও আমার সাথে।আমার মধ্যেই।

বাবা আছে পাশে।বাবাই এখন আমার মা। আমার বন্ধু।

বাবা সঙ্গীতজগতের মানুষ নন, কিন্তু এখন বাবাই আমার সঙ্গীতজীবনে অন্যতম অনুপ্রেরণা।“

বর্ধমানে এক দল ছাত্র ছাত্রী ‘আরাত্রিকার গান ঘর’-এ। তারা শুধু শিক্ষার্থী নয়, তারা আরাত্রিকার অনুরাগী।

সেখানেই তাঁর জয়। বললেন,

“মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই আমার ‘আরাত্রিকার গান ঘর’।

নিজে ভালো গান গাওয়ার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে যেন সবসময় ভালো গান শিখতে ও সঙ্গীত মনস্ক হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি এই আমার ইচ্ছে।

আর আমার জন্যে আমার গান তো সঙ্গী হয়েই আছে সবসময়।“

COPYRIGHT © SATKAHON

6 thoughts on “ARATRTIKA BHATTACHARYA | FRIDAY FANTASTIC | SATKAHON”

  1. Incomparable personality ! An ideal artist, teacher over and above a quality personae. আমার সোনা মা♥️❗

  2. Dr. Aratrika Bhattacharya is an inspiration. Her dedication towards her work and devotion for music is not only unparalleled but also a testament of her being a true artist of a very high order. Seldom we see such artistic greatness with so much humility. Extremely fortunate to be her colleague. This interview is a wonderful and insightful representation of who she is.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *