Abir Mukherjee | Tabla Player | Friday Fantastic | Satkahon

Abir Mukherjee

Abir Mukherjee | Tabla Player | Friday Fantastic | Satkahon

সংগীত তার আপন ছন্দে মত্ত।

পৃথিবী যেমন তাঁর নিজস্ব ছন্দে অবিরত গতিময় তেমনই ছন্দে ঘুরছে সময়ের কাঁটা।

তাই মানব জীবনে ছন্দ খুবই তাৎপর্যপুর্ণ।

ছন্দ হারিয়ে ফেললেই কিন্তু এক ধাক্কায় অনেকটা বদল ঘটে যাবে জীবনে।

 সংগীত এই ছন্দকে আগলে রেখেছে, আর আমরা সঙ্গীতকে আগলে রেখেই হয়ে উঠেছি ছন্দবদ্ধ।

আজ সাতকাহনের সাক্ষাৎকারে পাঠকদের জানাব এমন এক মানুষের জীবন গল্প যার নেশা এবং পেশা দুইই ছন্দে ছন্দে…

তিনি, আপনাদের সকলের পরিচিত তবলা বাদক আবীর মুখোপাধ্যায়।

কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বোনের বাড়ি হাওড়া জেলার দেউলটি গোবিন্দপুর। সেই বাড়ির ছেলে আবির।

সেখানেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা।

ছোট বেলা থেকেই একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি।

প্রথাগত ভাবে না হলেও, বাড়িতে নানা অনুষ্ঠানে গানবাজনা করতেন সবাই।

হই হুল্লোড় করে সদলবলে গান হত হাঁড়ি বাজিয়ে।

সকলের সাথে ছোট্ট আবীরও হাঁড়ি বাজানোয় যোগ দিতেন।

এভাবেই সঙ্গীতকে চিনে ওঠা ও ধীরে ধীরে ছন্দময় হয়ে ওঠার শুরু তাঁর।

  প্রথাগত তালিম নেওয়া শুরু ১০ বছর বয়সে গুরু পুলক মুখোপাধ্যায়ের কাছে।

আট-নয় বছর তাঁর কাছে তবলা শিক্ষা গ্রহণ করেন আবীর।

ছোট থেকেই বিভিন্ন মঞ্চ অনুষ্ঠান করছেন আবীর।

খড়গপুর আইআইটি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় শিল্পী শ্রীমতি আবীরা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

তবলা শুনে তাঁর ভালো লাগলে তিনি আবীরকে প্রশ্ন করেন তাঁর স্বপ্ন কি, জীবনে কি হতে চান তিনি।

আবীর বলেন তিনি একজন ভালো তবলা বাদক হতে চান, সুনাম অর্জন করতে চান ও বিভিন্ন গুনী মানুষের সাথে নানা অনুষ্ঠানে সঙ্গত করতে চান।

তখন শ্রীমতি আবীরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ভালো জায়গায় বাজাতে হলে ভালো জায়গায় শিখতে হবে। কারণ তালিম ঠিক না হলে ঠিক লক্ষ্যে পৌছনো যাবে না।

পরামর্শ দেন পণ্ডিত শুভ্যজ্যোতি গুহ-এঁর কাছে শিখতে।

 আবীর জানালেন,

“দিদির কথা শুনে আমি পণ্ডিতজীর সাথে যোগাযোগ করি। গুরুজী আমাকে বলেন তাঁর কাছে যেতে।

কিন্তু উনি বলার পরেও আমি কিছুতেই ওনার সাথে সেভাবে যোগাযোগ করে উঠতে পারছিলাম না, কারণ উনি বছরের অধিকাংশ সময়টাই বিদেশে থাকতেন।

এরপর রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমীর একটি প্রতিযোগিতায় আমি অংশ নিই।

সেখানে বিচারক হিসেবে ছিলেন পণ্ডিত শুভ্যজ্যোতি গুহ এবং পণ্ডিত স্বর্গীয় শুভঙ্কর ব্যানার্জী।

তখন আমি গুরুজীর (পণ্ডিত শুভ্যজ্যোতি গুহ ) সাথে দেখা করি ও তাঁকে সরাসরি বলি আমি তাঁর কাছে মাসে ১ দিন হলেও শিখতে চাই।

কিন্তু আমি গুরুজীকে এটাও বলি যে, আপনাকে যথার্থ গুরুদক্ষিনা দিতে পারার মত ক্ষমতা আমার নেই।

গুরুজী তখন আমাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে যা শেখাব, তা যদি সঠিক ভাবে রেওয়াজ করে আমাকে শোনাতে পারো, সেটাই আমার গুরুদক্ষিনা হবে।

সেদিন থেকে আমি আজও তাঁর কাছেই শিখেছি ও শিখছি।“

ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতেন আবীর।

রাজ্যস্তরে খেলার সুযোগও পান তিনি। কিন্তু তার আগেই খেলার সময় পায়ে চোট পান তিনি।

আবীর বললেন,

“রাজ্য স্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম।

পায়ে চোট নিয়ে আমি হসপিটালে ভরতি,বাবা বললেন তবলা আর খেলাধুলা দুটো একসাথে সামলাবার মত ক্ষমতা আমার নেই, তোমাকে যেকোনো একটা দিক বেছে নিতে হবে।

তোমার জীবনের লক্ষ্য তুমি নির্বাচন করো তুমি কোন দিকে যাবে। যে দিকেই তুমি যাবে আমরা তোমার পাশে থাকব।

তারপর আমি ঠিক করলাম তবলাই বাজাব।“

Abir Mukherjee

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Percussion Music নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হন আবীর।

 পারিপার্শ্বিক নানা মানুষের থেকে নানা কথা শুনতে হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে আবীর সব সময় সমর্থন পেয়েছেন একজন তবলা শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য।

২০১৩ সালে রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমির প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন আবীর।

এছাড়াও তানসেন সঙ্গীত সম্মেলনে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র-যুব উৎসবে পরপর তিনবার রাজ্যস্তরে প্রথম হন তবলা বাদনে।

২০১৬ সালে সঙ্গীত মিলন আয়োজিত Classical Voice Of India-য় বাদ্য যন্ত্র বিভাগের প্রতিযোগিতায় কলকাতা থেকে প্রথম হন তিনি। এবং তবলা-নওয়াজ উপাধি পান।

দেশ স্তরে সেই প্রতিযোগিতাতেই সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

সেই অনুষ্ঠানে আবীরের বাজনা শুনে মুগ্ধ হন বেগম পারভিন সুলতানার কাছের একজন শিষ্যা।

তাঁর অনুরোধে মুম্বাইতে একক অনুষ্ঠান করেন আবীর।

ভাগ্যক্রমে বেগম পারভিন সুলতানার বাড়িতে তাঁর সাথে কিছুক্ষন সঙ্গত করারও সুযোগ পান তিনি।

এমনকি তাঁর নিজের হাতের রান্নারও স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ পান আবীর।

মাকলা শিঞ্জিনী সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, চেতলা মুরারী স্মৃতি সঙ্গীত সন্মিলনী,

অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্স ইত্যাদি নানা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন আবীর।

বর্তমানে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বি-গ্রেড শিল্পী তিনি।

তানসেন মিউসিক ফেস্টিভাল, চেতলা মুরারী মিউসিক ফেস্টিভাল, আগরতলায় NZCC আয়োজিত অনুষ্ঠান,

ডোভারলেন জুনিয়র মিউজিক কনফারেন্স ইত্যাদি বহু মঞ্চ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি।

Abir Mukherjee

পণ্ডিত পার্থ সারথী দেশিকান, পণ্ডিত সুমন লাহা, বিদুষী নৃত্যশিল্পী আলোকপর্ণা গুহ, বিদুষী হৈমন্তী শুক্লা,

বিদুষী সুরঞ্জনা বোস,পন্ডিত কৌশিক ভট্টাচার্য, নচিকেতা চক্রবর্তী, উস্তাদ আরশাদ আলি খান, পণ্ডিত শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাথে সঙ্গত করেছেন তিনি।

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও অনুষ্ঠান করেছেন তিনি।

সবশেষে আবীরের কথায়,

“ আমার বাড়ি, হাওড়া জেলার দেউলটি গোবিন্দপুর। এখানে কোন Music school নেই।

কলকাতায় এই ধরণের অনেক শেখার মাধ্যম ও সুযোগ সুবিধা হয়েছে।

এখানে এমনও কিছু গ্রাম আছে, যেখানে বিদ্যুতের আলো পৌঁছতে পারেনি কিন্তু সঙ্গীতের আলো পৌঁছে গেছে।

তাই, যাদের চেষ্টা রয়েছে তাঁদের জন্য একটি সঙ্গীত বিদ্যালয়  যেন আমি তৈরি করতে পারি যেখানে সব রকমের সঙ্গীতের সাথে ছাত্র ছাত্রী পরিচিত হবে সেটাই আমার অন্যতম ইচ্ছে আর লক্ষ্য।

আমি মনে করি,

শুধু প্রতিভা থাকলেই হবে না, শেখার ইচ্ছে আর জেদ থাকাটা খুব জরুরী।

পরিবারের পাশে থাকা আর সঠিক গুরু নির্বাচন করাটাও খুব গুরুত্ত্বপুর্ন।

আর অবশ্যই কিছু ভালো বন্ধুও কিন্তু একজন শিল্পীর জীবনের থাকা খুব দরকার।“

   আগামী পথ সুন্দর হোক, আবীর মুখোপাধ্যায়ের জন্য সাতকাহনের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা।

COPYRIGHT © SATKAHON

1 thought on “Abir Mukherjee | Tabla Player | Friday Fantastic | Satkahon”

  1. Rangan Mahapatra

    Khub valo laglo…Abir dadar icche purnota pak Ami soho aro onek musical student ra jno dada k onukoron kore o dadar dakhano pathe dadar ashirbad mathy niye agiye jete pari vobissoth e ai asa kori

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *