নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয় | শতবর্ষ পূর্তি উৎসব | Satkahon
হাওড়া জেলার ঝিকিরা অঞ্চলের চিংড়াজোল নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ে মহাসমারোহে পালিত হল শতবর্ষ পূর্তি উৎসব
প্রতিবেদন – সায়ন দে
কথিত আছে, চিংড়ি মাছের জলা থেকে নাকি এই গ্রামের নাম হয়েছিল ‘চিংড়াজোল’।
জলাজঙ্গল আর সেখানে জীবিকা নির্বাহ করা কৃষক, জেলে, কামার, কুমোরদের দীর্ঘদিনের জীবনসংগ্রামের মাঝে
আজ থেকে একশত বছর আগে নারী শিক্ষার দ্বীপ জ্বালিয়েছিল গ্রামের বর্ধিষ্ণু মণ্ডল পরিবার।
এই পরিবারের কৃতী সন্তান রাসবিহারী মণ্ডল, রাধাগোবিন্দ মণ্ডল ও গোপীকৃষ্ণ মণ্ডল এলাকার শিক্ষাব্রতী ডাঃ শীতল চন্দ্র কইল্যা,
কৃষ্ণ প্রসন্ন কাঁড়ার, নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল প্রমুখদের নিয়ে তাদের মা নারায়ণী দেবীর নামাঙ্কিত এই নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন,
যা হাওড়া জেলার আমতা ২ ব্লকের জয়পুর থানা এলাকার সবচেয়ে পুরনো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে গৌরবের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।
১৯২৩ সালে এই বিদ্যালয় সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছিল,
তাই এবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি তিনদিন ধরে মহাসমারোহে পালিত হল চিংড়াজোল নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব।
বিদ্যালয় সংলগ্ন মাড়োতলা এলাকায় মঞ্চ নির্মাণ করে স্থানীয় ক্লাব ও মন্দির কমিটির সহযোগিতায়
একাধিক নজরকাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি সুদক্ষিণা রায় ঘোষ মহাশয়ার নেতৃত্বাধীন এবং
শ্রী শংকর কুমার পাল ও প্রদীপ দাস মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত শতবর্ষ উদযাপন কমিটি।
সকালে বিদ্যালয়ের ছাত্রী শিক্ষিকা ও গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়,
দুপুরে আমতার বিধায়ক মাননীয় সুকান্ত পাল এবং সারদা মিশন ও মঠের দুই সম্মানীয়া প্রব্রাজিকা সদ্ভাবপ্রাণা মাতাজী ও তন্ময়প্রাণা মাতাজীর হাতে
মঞ্চের মূল অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘটে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয় মনিষীদের মর্মর মূর্তি।
প্রথম দিনের আকর্ষণ ছিল বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দ্বারা অভিনীত নাটক ‘ঋষি অরবিন্দ’,
যার নাট্যরূপ রচনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নিকটবর্তী মেনকা স্মৃতি বিদ্যামন্দির-এর শিক্ষক সায়ন দে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকলের আগ্রহের বিষয় ছিল দূরদর্শন ও বেতার খ্যাত বাচিক শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কণ্ঠে শ্রুতিনাটক ও
হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের উপস্থাপনায় বন্যপ্রাণী সচেতনতা প্রোগ্রাম।
প্রায় দুই শতাধিক প্রাক্তন ছাত্রীরা সমবেত হয়েছিলেন এদিন প্রাক্তনী সম্মেলন অনুষ্ঠানে।
তৃতীয় দিনে সকলের মন মাতিয়ে দেন কিংবদন্তী শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নাচ গান কবিতার পরিবেশনাও দর্শকবৃন্দ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে।
হাওড়া জেলার পশ্চিম প্রান্তের এই আমতা ২ ব্লক এবং বিশেষ করে অমরাগড়ি ও ঝিখিরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা বিখ্যাত হয়ে রয়েছে
রাজা রামমোহন রায় ও কেশবচন্দ্র সেন মহাশয়ের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্ম আন্দোলনের পীঠস্থান হিসাবে,
যেখানে নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তির বিষয়টা বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে।
সেই সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসাবে শতবর্ষ পেরিয়ে চিংড়াজোল গ্রামের এই নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে
আগামী দিনেও তার উজ্জ্বল ছাপ রেখে যাবে – এই প্রত্যয় জাগে তাদের এই অনুষ্ঠান দেখার পর।
এই প্রতিবেদন থেকে অনেক তথ্য জানা গেলো ।
thank you so much.