সাতকাহন ‘আমার কলম‘ বিভাগে আপনার লেখা পাঠাতে চান?
WHATSAPP – 9038482776
MAILsatkahonnews@gmail.com

১। যে কোন সাংস্কৃতিক বিষয় যেমন,
বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া শিল্প, আপনার চোখে আপনার গুরু,
নৃত্যশৈলী, নাটক, বই, সাহিত্যিক, ইত্যাদি বিষয়ে অনধিক ৬০০ শব্দে লেখা পাঠাতে হবে।
২। লেখা হতে হবে বাংলায়।
৩। আপনার পরিচয় ও একটি ছবি অবশ্যই লেখার সাথে পাঠাতে হবে।

দোতারা – দোতারিয়ান | কলমে- সোমদত্তা মৈত্র | AMAR KOLOM

কলমে- সোমদত্তা মৈত্র

চক্ষুবিশারদ, অধ্যাপিকা
বরাহনগর, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গ

দোতারা

———

‘দোতারা’ হল দেহজাত যন্ত্র।

মাথার খুলি দিয়ে এর মাথা এবং পায়ের দিকের হাড় দিয়ে লম্বা অংশ তৈরী আর আঙুলের গাঁট থেকে নাট গুলো বানানো বলে শোনা যায়।

 শশ্মান সাধকদের হাত ধরে গৌড় বা রাঢ় বংগে এই যন্ত্রের জন্ম হয়।

 জনশ্রুতি আছে যে তখন যন্ত্রটিতে দুটি তার ছিল।

ধা ও রা-তে তার বাঁধা থাকতো আর এর থেকেই এর নাম হয় ‘দোতারা’।

যন্ত্রে এই দুটো তার নারী পুরুষ বা স্বামী স্ত্রীকেই বোঝায়,যারা সবার মাঝে থেকেও এক সুরে বাজতে থাকে।

মাঝে মাঝে ডি-টিউন হতে পারে কিন্তু আবার যদি টিউন করা যায় আবার একই সুরে বাজবে,যা আমাদেই জীবন থেকেই নেওয়া কতকটা।

আমাদের সংসারের গল্পের মতোই টক-ঝাল-মিষ্টি।

দো-তারা মানেই যুগল সাধনা।

ভক্তি মুভমেন্টের সময়, বুদ্ধিইসম (Buddhism)  এর ওপর প্রভাব ফেলে।

বুদ্ধের হাত ধরে এই বাদ্যযন্ত্রের মাথায় আসে হংস,যা মুক্তির প্রতীক।

ফিংগার বোর্ডের মাথায় পালঙ্কের মতো থাকে যা চক্র ও বজ্রের প্রতীক।

তাই হয়তো কোনো বুদ্ধের মন্দির বা মনেষ্ট্রিতে গেলে আমরা একটা ‘গং’ করে আওয়াজ শুনতে পাই যা হতো আমাদের দোতারর খাদের ‘সা’।

এর পরের রূপ স্বরাজ বলে এক যন্ত্রতে পরিণত হয়  যাতে সিম্ফোনেটিক স্ট্রিংস গুলো তলার দিক থেকে আসে।

এরপর আসে আজকালকার দিনের দোতারা।

কিন্তু আমাদের আরেক ধরনের দোতারা ভাওইয়া দোতারা, তার গল্পই বা বাদ যায় কেনো?

না না কোনো পরীক্ষায় আসবে না কিন্তু এই মিষ্টি যন্ত্রগুলোর গল্প পুরো না বললে আমারোও ঘুম আসবে না।

এতক্ষন আমরা গৌড় বংগের দোতারার গল্প শুনলাম।

কিন্তু উত্তর বংগের দোতারা ছিলো খেটে খাওয়া মানুষদের বানানো।

তারা হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়েই বানিয়েছে।

মুগা সুতো, জেলেদের কাছ থেকে নাইলন স্ট্রিং ইত্যাদি।

এদের মাথাটা একটু ছোটো হয় আর ফিংগার বোর্ড হয় অনেকটা লম্বা। আর কাঠের কান হয়।

শুধু ভারতবর্ষেই না, মিশর,ইজিপ্ট,ইউরোপিয়ান বিভিন্ন চার্চে দোতারার মতোই দেখতে যন্ত্র বাজানো হতো।

সমুদ্রের দিকের দেশ গুলোতে এর সুর হয় মিহি।

যাকে আমাদের বাউল ফকিররা বলে থাকেন ‘চিকন’ সুর আর পাহাড়ের দিকের গুলোর সুর খাদের দিকে হয়।

যাকে বাউলরা ‘বোম ‘সুর বলে থাকে।

আমরা এখন যে দোতারা গুলো বাজাই সেগুলো মূলত পাঁচ তারের ও মেটাল স্ট্রিং এর হয় আর ভাওয়াই দোতারা গুলো চার তারের হয়।

আর ওপার বাংলার যে দোতারা গুলো হয় সেগুলোও চার তারের হয় শুধু ‘মা’র তারটা মেটাল আর বাকি গুলো নাইলনের হয়।

আমার কথাটি ফুরোলো,নটে গাছ টি মুড়োলো।

কিন্তু যেমনিই হোক না কেনো দোতারা হলো প্রাণের গান,মনের টান।

তাই সব ভুলে গেলেও মন খারাপে বা ভালোয় বা প্রেমে বা বিয়োগে দোতারা আপনার পাশে থাকবে শক্ত করে আপনারই শিকড় হয়ে।

দোতারিয়ান

আমার গুরু শুভব্রত সেন
————–

গান মানেই প্রাণের টান।

আর এই যন্ত্র বাউল গান কেন জানিনা আমার নিজের মনের খুব কাছের।

ঠিক যেমন কোনো নিয়ম ছাড়াই অনেক বন্ধুর মধ্যে একজন থাকে যে প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে।

দোতারা শেখা যায় কিনা, আর আমি পারবো কিনা এই দ্বন্দ্ব নিয়ে পৌঁছে গেলাম, শুভদার বাড়ি।

দেখলাম, আর একটা যন্ত্র পেলাম।

স্যার বললেন, “দেখো ক্রাশ না ভালোবাসা!”

আমার স্যারের গল্প একটু বলি।

ওনার মা ছিলেন ওনার অনুপ্রেরণা।

ছোট থেকেই তিনি মাকে দেখেছিলেন গান বাজনা নিয়ে থাকতে।

কিন্তু সেই ভাবে কিছুই শেখা শুরু হয়নি।

১৯৯০ সালে তাঁর মা মারা যান। তারপর ১৯৯৬ সালে মায়ের একটি চিহ্ন হারমোনিয়াম,উত্তরবঙ্গের ধুপগুড়ি থেকে নিয়ে কলকাতায় আসেন।

কলকাতায় SRA-এ’তে পণ্ডিত এ.টি.কাননের কাছে ক্লাসিকালের যাত্রা শুরু হল। 

তারপর অভিজিৎ ভট্টাচার্য-এর কাছে তালিম নেওয়া শুরু হল।

কিন্তু পাপী পেটের কাছে আমরা সবাই কাবু।

সেই সময় গান বাজনার পাশাপাশি মধু বিক্রি, বাড়ি বাড়ি কাগজ দেওয়া এইসব করে দিন কাটছিল।তার মাঝে ছিল টুকটাক টিউশনি।

আর এই দিনগত পাপক্ষয়-এর মধ্যে কোথায় যেন সুর গান চাপা পরে যাচ্ছিল।

হঠাৎই সুশীল চক্রবর্তীর বই হাতে আসে আর পবন দাস বাউলের কিছু গান তাঁর মাথা ঘুরিয়ে দেয়।

সকাল দুপুর মনের মধ্যে পাক খেতে থাকে এত অসাধারণ গায়কি,মন ছুঁয়ে যাওয়া সুর মনে গেঁথে যায় আর মনে হয় এঁরা কারা,খুঁজে বার করতেই হবে।

সেই সময় গুগল বাবাজি আসেননি আর না এসেছে মোবাইল, তাই সমস্তটাই অনেকটা খাটনি আর অনেকটা পেয়ে যাওয়া, চাওয়ার থেকেও আরোও বেশী কিছু।

তারপর শুরু হয় ভালোবাসার জন্য খোঁজ।

এ যেন এক সাধনা।

প্রথমে শুরু হয় বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ফকিরদের সাথে আনাগোনা।এর মাঝেই এক বেসরকারি চ্যানেলে এডিটিং-এর চাকরি আসে ঝুলিতে।

তারপর সময়ের সাথে সাথে শুরু হয় বাউল ফকির উৎসব।

তাও আবার তাঁর বাড়ির পাশে।

এ যেন চাঁদের নিজেই হেঁটে বাড়ি আসা।

সাথে সাথে শুরু হয় বাউল গানের সঙ্গে যাপন, এক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আর তা সারাজীবনের।

প্রথম পাঠে উনি শিখেছিলেন সা-পা-সাসা।

বাউলরা বলে থাকেন “এক ধামা চাল তিনটে পটল”।

সব ঠিক তো গল্পেও চলে না এ তো জীবন।

২০১৩তে হারালেন বাবাকে। তখনো তিনি সিনেমা এডিটিং-এর কাজ করতেন।

কিন্তু পয়সা-কড়ি বাড়ন্ত।

তাই তাঁর কালিম্পং-এর গুরু ক্ষ্যাপা বাবা আর ওঁর গানের গুরু অভিজিৎবাবুর থেকে আর্শীবাদ নিয়ে শুরু করলেন দোতারিয়ানের যাত্রা।

ভেবেচিন্তে কিছু করেননি।

কিন্তু এই দোতারিয়ান এখন দোতারা শিশিক্ষুদের ঠিকানা।আর এক পরিবারও বটে।

এর পর আস্তে আস্তে সবার সামনে আসে দোতারিয়ান। ( LISTENDotarian Folkmusic)

টুকটাক বিভিন্ন দলের থেকে ডাক পাওয়া থেকে,পার্বতী বাউলের সাথে বাজানো।

আমাদের প্রিয় শুভদা কিন্তু দোতারাকে সোলো বাদ্যযন্ত্র হিসেবেই দেখেন এবং প্রতিষ্ঠা করতে চান যে দোতারা শুধু সঙ্গের দোসর নয়, দোতারা একাই একশো!

COPYRIGHT © SATKAHON

1 thought on “দোতারা – দোতারিয়ান | কলমে- সোমদত্তা মৈত্র | AMAR KOLOM”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *