দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার | সবজান্তা তিন্নি –গল্প ২২ | Satkahon
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার | সবজান্তা তিন্নি –গল্প ২২ | Satkahon
বন্ধুরা, তোমরা সকলেই ‘ঠাকুমার ঝুলি’ পড়েছ। সিনেমাতেও তোমরা দেখেছ ‘সাত ভাই চম্পা’র কিংবা ‘বুদ্ধু ভুতুমে’র গল্প।
কিন্তু তোমরা কি বলতে পারবে, এই ‘ঠাকুমার ঝুলি’ কার লেখা?
এই ‘ঠাকুমার ঝুলি’ যিনি লিখেছিলেন, তাঁর নাম দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। আজ তিন্নি তোমাদের জানাবে তাঁর ছোটবেলার কথা।
বন্ধুরা, একজন বরেণ্য শিশু সাহিত্যিক ও কথাসাহিত্যিক দক্ষিণা রঞ্জন কিন্তু ছোটবেলায় একদম পড়াশুনা করতে চাইতেন না।
তিনি ছিলেন এক্কেবারে দুষ্টু, ডানপিটে ছেলে।
পড়াশুনার চাইতে মায়ের কাছে রুপকথার গল্প শোনাই তাঁর সব থেকে প্রিয় কাজ ছিল।
মা কে বড়ই ভালবাসতেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি মা কে হারান।
মা কুসুমময়ী দেবী মারা যাবার পর তিনি আরও বেশী পড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়েন।
বেশ কয়েকবার বিদ্যালয় বদল করলেও কোন লাভ হয় না।
অবশেষে তাঁকে নিঃসন্তান পিসি রাজলক্ষ্মী দেবীর কাছে পাঠিয়ে দেন বাবা।
পিসির কাছে আসার পর ফিরে আসে মাতৃস্নেহ, ফিরে আসে সেই রুপকথার গল্প শোনার দিন।
পড়াশুনায় মন দেন তিনি। নবম ও দশম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি।
কিন্তু ধরা বাঁধা পড়াশুনা তাঁর কোনদিনই পছন্দ ছিল না।
তাই পরবর্তীকালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে এফ.এ পড়তে ভর্তি হলেও পড়াশুনা শেষ করেননি তিনি।
CLICK TO JOIN: SATKAHON NEWS FACEBOOK GROUP
সাহিত্যিক বলছেন,
“এক দিনের কথা মনে পড়ে, দেবালয়ে আরতির বাজান বাজিয়া বাজিয়া থামিয়া গিয়াছে, মা’র আঁচলখানির উপর শুইয়া রূপকথা শুনিতেছিলাম।
” জ্যোচ্ছনা ফুল ফুটেছে” ; মা’র মুখের এক একটি কথায় সেই আকাশে- নিখিল- ভরা জ্যোৎস্নার রাজ্যে,
জ্যোৎস্নার সেই নির্মল শুভ্র পটখানির উপর পলে পলে কত বিশাল “রাজ-রাজত্ব”, কত “অছিন অভিন” রাজপুরী, কত চিরসুন্দর রাজপুত্র রাজকন্যার অবর্ণনীয় ছবি
আমার শৈশব চক্ষুর সামনে সত্যকারটির মত হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছিল।
সেই যেন কেমন –কতই সুন্দর! পড়ার বইখানি হাতে নিতে নিতে ঘুম পাইত; কিন্তু সেই রূপকথা তা’রপর তা’রপর তা’রপার করিয়া কত রাত জাগাইয়াছে!
তা’রপর শুনিতে শুনিতে শুনিতে শুনিতে চোখ বুজিয়া আসিত; —
সেই অজানা রাজ্যের সেই অচেনা রাজপুত্র সেই সাতসমুদ্র তের নদীর ঢেউ ক্ষুদ্র বুকখানির মধ্যে স্বপ্নের ঘোরে খেলিয়া বেড়াইত, আমার মত দুরন্ত শিশু!
শান্ত হইয়া ঘুমাইয়া পড়িতাম।
মা আমার অফুরণ রূপকথা বলিতেন। –
জানিতেন বলিলে ভুল হয়, ঘর- কন্নায় রূপকথা যেন জড়ানো ছিল; এমন গৃহিণী ছিলেন না যিনি রূপকথা জানিতেন না,
না জানিলে যেন লজ্জার কথা ছিল।
আজ মনে হয়, আর ঘরের শিশু তেমন করিয়া জাগে না তেমন করিয়া ঘুম পাড়ে না।“