জীবন জয়ের গল্প – বাঁশিই আমার রাধা | Jibon Joyer Golpo | Satkahon

জীবন জয়ের গল্প

জীবন জয়ের গল্প – বাঁশিই আমার রাধা

আমি নিতান্তই এক সামান্য মানুষ। গ্রামবাংলার ছোটোখাটো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজাই।

জীবনে জয়ের গল্পের কথা লিখতে চেয়েছে সাতকাহন। তাই আজ অবদি কাউকে না বলা একটি ঘটনা আমি জানাতে চাই দেশবাসীকে।

জানিনা কজন এই গল্প পড়বেন।

আমার মা মারা যান আমার জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই এমনই অভাগা আমি।

৭ বছর বয়সে ইহলোক ছেড়ে যান বাবাও।

অতঃপর কাকা-কাকিমার কাছেই বড় হতে থাকি আমি। কিন্তু বাপ-মা মরা অভাগা ছেলের যত্ন যে নিতান্তই অপচয় তা বোঝাতে বেশী সময় নেননি তাঁরা।

বিদ্যালয় শিক্ষক গুরুদাস বাবু হঠাৎ একদিন ক্লাসে বাঁশি বাজিয়ে শোনালেন। সেদিন মনে হল আমাকে এটা শিখতেই হবে।

আমি আমার টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে একটা বাঁশি কিনে ওনার কাছে শিখতে শুরু করি।

বাড়ির লোক জানতে পারেন এবং আমাকে ভর্তসনা করেন। বাড়ির চাকর (যে ভাবে আমি বড় হয়েছি) বোধহয় সঙ্গীতশিল্পী হতে পারে না।

স্বাভাবিক ভাবেই ওঁদের কথা অমান্য করে আমার একমাত্র আপন একমাত্র ভালোবাসাকেই আমি প্রাধান্য দিই।

কথা না শোনার অপরাধে আমার হাত পা বেঁধে আমার আঙ্গুল কেটে দেওয়ার ভয় দেখান হয়। আঙ্গুল অল্প অল্প করে কেটেও দেন তাঁরা।

যাতে বেশ কিছুদিন সেই যন্ত্রণায় আমি বাঁশি বাজান বন্ধ করে দিই।

সেই বাড়িতে আমি কোনোদিন বাঁশি বাজাইনি। স্কুলছুটির পর গুরুদাস বাবু আমাকে প্রত্যেকদিন ১ ঘণ্টা সময় দিতেন বাঁশি শেখাবার জন্যে।

৩ বছর এই ভাবে চলার পর আমি সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে শান্তিনিকেতন চলে যাই। সাথে থাকে আমার বাঁশি। একটি যাত্রা দলে কাজ পাই আমি।

হয়ত সেই ভাবে নাম-জশ খ্যাতি পাইনি আমি, পড়াশুনাও শিখিনি বেশী দূর, কিন্তু ভালোবাসার হাত ছাড়িনি,সেখানেই আমার জীবনের জয়।

জেনেছি একে শিল্প বলে। কিন্তু আমি শিল্প বুঝিনা।

আমি জানি, বাঁশিই আমার রাধা।

শিল্পী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক | লেখাটি পাঠিয়েছেন তাঁরই এক শুভাকাঙ্ক্ষী।    

COPYRIGHT © 2020 SATKAHON

1 thought on “জীবন জয়ের গল্প – বাঁশিই আমার রাধা | Jibon Joyer Golpo | Satkahon”

  1. রঞ্জন চক্রবর্তী

    অদম্য ইচ্ছা শক্তি র পরিচয় দিয়ে প্রতিকূল অবস্থা পার করেছেন । ভগবান আপনাকে শক্তি দিন ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *