কলঙ্কিত জ্যোতি – বাংলা সাহিত্যে প্রথম বই – Satkahon

কলঙ্কিত জ্যোতি – বাংলা সাহিত্যে প্রথম বই – Satkahon
বাঙালী মানেই বই। আর বই মানে বইমেলা। কলকাতা বইমেলার সাথে বাঙালীর যে আবেগ জড়িয়ে আছে তা নিয়ে আলদা করে কিছু লেখার নেই।
দুর্গাপুজো আর বইমেলা এই দুইয়ে মিলে বাঙালীর বেঁচে থাকা।
মুখ বোজা, ঘর কুনো, চুপচাপ এই বিশেষণ গুলো যতই বাঙালী শব্দের আগে ব্যবহার করা হোক, সবাই জানে বাঙালী মানে চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা আর হাতে বই।
কৌতূহল বাঙালীর রক্তে। বলা যায় জানতে চাওয়ার ইচ্ছে।
ডিজিটাল দুনিয়ার হাওয়া লেগে যদিও Book থেকে Facebook হয়ে যেতে বসেছে বললেই চলে,
তবুও বইমেলা আর এক ঝাঁক লেখক লেখিকার প্রান যেন বার বার বাঙালীর এই হারিয়ে যাওয়াকে ধাক্কা দিচ্ছে।
বলছে, নাহ, নাহ, এইবার নতুন করে পড়ার অভ্যাসটা শুরু করেই দেখো না।
২০২৩ কলকাতা বইমেলা শুরু হয়ে গেছে।
আর এই বারের বইমেলায় ঘরে বাইরে প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী – কলঙ্কিত জ্যোতি।
বইটি লিখেছেন তৃনাঞ্জয় ভট্টাচার্য।
জ্যোতি ঠাকুরকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও ‘কলঙ্কিত জ্যোতি’ বাংলা সাহিত্যে প্রথম।
যেখানে আমরা তাঁকে জানব নতুন ভাবে।

কলঙ্কিত জ্যোতি
‘যা রটে তা কিছু তো বটে’ –তে বিশ্বাসী কিছু মানুষ অতলে যেতে চান না।
কিন্তু এখনও কেউ কেউ আছেন যারা খনি থেকে হীরা খুঁজে বের করার চেষ্টায় প্রবৃত্ত থাকেন।
কতটুকু চিনি আমরা জ্যোতিন্দ্রনাথ কে?
কেবলমাত্র একজন বাঙালি নাট্যকার, সংগীতস্রষ্টা, সম্পাদক ও চিত্রশিল্পী?
বাংলা সাহিত্যে প্রথমবার তৃনাঞ্জয় তুলে এনেছেন তাঁর এক অন্য রুপ, অন্য পরিচয়।
লেখক বলছেন,
“জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সব থেকে অনালোচিত মানুষটিকে নিয়েও অন্তত তিনচারজন গবেষণা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথের কথা যদি ছেড়েই দিই, সোমেন্দ্রনাথের বায়ুরোগ নিয়েও বাঙালির উৎসাহ কম নয়।
অথচ, যেই মানুষটাকে নিয়ে সবথেকে বেশি আলোচনা হওয়া উচিত ছিল, তিনি রয়ে গেলেন শুধুই “কাদম্বরীর অপরাধী স্বামী” হয়ে।
আমরা ভুলে গেলাম, বাংলা নাট্যমঞ্চের তিনিই প্রথম প্রাণপুরুষ, বাল্মীকিপ্রতিভার সুরারোপ তাঁর নিজের করা, আজকের রবীন্দ্রনাথের সেদিনের প্রথম অভিভাবক তিনিই, এমন কি বাঙালিকে জাহাজ ব্যবসার মতো এক সাংঘাতিক স্বপ্নও তিনিই দেখিয়েছেন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে গেলেন একরাশ কলঙ্ক ও উদাসীনতার স্বীকার হয়েই।
আমার লেখার কোথাও জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে নায়ক প্রতিপন্ন করার জন্য কোনো মহাপ্রাণকে খলনায়ক বানানোর বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় নেই।
চিরাচরিত ট্রাজেডি থিওরি আমাকে যেই স্বাধীনতা দিয়েছে, তাই দিয়ে আমি তুলে ধরতে চেয়েছি,
ঠাকুরবাড়ির উজ্জ্বলতম অথচ অবজ্ঞার মেঘে ঢাকা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠিক ভুলে ভরা লৌকিক জীবনকে।“
তৃনাঞ্জয় ভট্টাচার্য
বাবা ছিলেন সাহিত্য অনুরাগী। কবিতা লিখতে ভালবাসতেন তিনি। বাবার সাহিত্য অনুরাগ শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়েছে পুত্র তৃনাঞ্জয়ের মধ্যে।
বললেন, তাঁর লেখালেখির প্রধান অনুপ্রেরণা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর কাছে রবি ঠাকুর ‘বন্ধু’।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় সাহিত্য ব্যকরণ কাব্যতীর্থ রণেন্দ্র কিশোর সরকার এঁর কাছে পড়াশুনা করার সময় থেকেই লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা জন্মায় তৃনাঞ্জয়ের।
আশুতোষ কলেজে বাংলা সাহিত্য পড়ার সময় বন্ধুরা মিলে পত্রিকা তৈরি করলেন। সেই সময় থেকে তৃনাঞ্জয় মনস্থির করলেন লেখালেখিকেই তিনি পেশা করবেন।
এর পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করেন তিনি।
পড়াশুনা শেষ হতেই নামী সংবাদ মাধ্যমে ক্রীড়া সাংবাদিকের ভূমিকায় যোগদান।
কিন্তু কলম থেমে থাকেনি।
২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “অগ্নিগ্রাসী”।
২০২২ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “উত্তরণ”।
জীবনের অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পার করে, প্রিয় বান্ধবী তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের অদম্য উৎসাহে অবশেষে ২০২৩ এ মুক্তি পেল “কলঙ্কিত জ্যোতি”।

একটি উপন্যাসের অন্তরালে জড়িয়ে থাকে বিস্তর গবেষণা।
তৃনাঞ্জয়ের এই গবেষণা বিফলে যাবে না।
বাঙালী সন্ধান পাবে এক নতুন পুরুষের, এক ছাই চাপা আগুনের, যে কেবলই ‘দোষী’ হয়ে রয়ে গেছে বাংলার হৃদয়ে।
তৃনাঞ্জয়ের এই লেখায় হয়ত দূরে কোথাও কোন প্রান্তে সেই চির অপরাধীর অধরে বেজে উঠবে একটুকরো শান্তির বাঁশী।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ৪৯৬বি স্টলে।