সাতকাহন ‘আমার কলম‘ বিভাগে আপনার লেখা পাঠাতে চান?
WHATSAPP – 9038482776
MAIL– satkahonnews@gmail.com
১। যে কোন সাংস্কৃতিক বিষয় যেমন,
বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া শিল্প, আপনার চোখে আপনার গুরু,
নৃত্যশৈলী, নাটক, বই, সাহিত্যিক, ইত্যাদি বিষয়ে অনধিক ৬০০ শব্দে লেখা পাঠাতে হবে।
২। লেখা হতে হবে বাংলায়।
৩। আপনার পরিচয় ও একটি ছবি অবশ্যই লেখার সাথে পাঠাতে হবে।
আমার কলম – হারিয়ে যাওয়া চিঠি – Satkahon

কলমে- শ্রাবনী সেনদাশগুপ্ত
সঙ্গীতশিল্পী
অশ্বিনী নগর, বাগুইআটী,কলকাতা- 700059
আমার কলম – হারিয়ে যাওয়া চিঠি – Satkahon
অন্তর্ধান বা হারিয়ে যাওয়া কথাটির মধ্যে একটা রহস্যময়তা রয়েছে।
কিন্তু প্রিয়জনকে চিঠি লেখার অভ্যেস কেন আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল সেখানে বোধহয় কোনো রহস্য নেই বরং এই হারিয়ে যাওয়া সর্বজনবিদিত।
অবশ্য রোমান্টিক বাঙালি কখনো কখনো যে চায়ের কাপে তুফান তুলে এই বিষয়টি নিয়ে তর্ক করেনা তেমন নয় কিন্তু সেটা ওই তর্কেই সীমাবদ্ধ।
কিভাবে এই চিঠির সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে তেমন কোনো সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

প্রয়োজন মেটানো যেখানে কয়েক মূহুর্তের ব্যাপার সেখানে কে আর পেনের কালি, অমূল্য সময় জলাঞ্জলি দিয়ে ডাকবিভাগের অনিশ্চয়তাকে সহ্য করে চিঠি লিখতে বসবে??
কিন্তু এতো গেল ভীষণ যুক্তির কথা।
আর মনন?
একসময় বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে যে চিঠি সে কি এতোটাই মূল্যহীন হয়ে পরেছে আমাদের জীবনে!!
কেন এই অসহায় আত্মসমর্পণ!
জীবনের ব্যস্ততম সময় থেকে একটু সময় বের করে কি আমরা আমাদের প্রিয় জনের জন্য লিখতে পারিনা একটি মন ভালো করা চিঠি?
চিঠির ওই প্রতিটি লেখার মধ্যে যে কতটা হৃদয়ের স্পর্শ লেগে থাকে তা কি ওই ইমেল বা হোয়াইটস আ্যপে সম্ভব?
চিঠির মতো স্থায়ীত্ব আছে কি এইসব ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার?
এ তর্কের হয়তো কোনো শেষ নেই।

বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছেন যে মানুষটি তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ,ছোটগল্পর পাশাপাশি তাঁর পত্রাবলীও বাংলা সাহিত্যে কতটা উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে আমরা জানি।
সে যুগে তো মনের ভাব প্রকাশ করার অন্তরায় ছিল অনেক তাই চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা।
একেকটা চিঠি কতো কতো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে আজও।
কতো অজানা গল্প উঠে আসে একেকটি চিঠিতে।
কত প্রেম কতো অভিমান কতো নালিশ কতো চিন্তার বহমান সংস্কৃতি এই চিঠি।
একটা সময়তো পত্রমিতালীর মাধ্যমে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হয়ে বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে কিছু সম্পর্ক।
দুজন অচেনা মানুষ শুধুমাত্র বন্ধুত্বের গন্ডিতে আবদ্ধ না থেকে সেই সম্পর্ক কে কিভাবে আরো গভীরে নিয়ে যাওয়া যায় তা এই চিঠিনা থাকলে আমরা জানতে পারতামনা।
একটু রোমাঞ্চ, একটু মজা, কিছুটা গোপনীয়তা সবকিছু নিয়ে ছিল এই চিঠিময় জগৎ।

নব্বইয়ের দশক ছিল আমার কিশোরীবেলা।
তখন মোবাইল, ল্যাপটপ দূরের কথা সকলের বাড়িতে টেলিফোনও ছিলনা।
গরমের ছুটি বা পূজোর ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সাথে দেখা না হওয়ার দুঃখকে ভোলার একমাত্র আশ্রয় ছিল সেই চিঠি।
কতো কথা যে জমে যেতো তার ঠিক নেই।
চিঠিতে তার পুরোটা হয়তো প্রকাশ করতে পারতাম না তবু কিছুটা তো হতো সেটাই ছিল ভীষণ মজার।
সাইকেলের টুং টুং আওয়াজ যেই পেতাম ছুট্টে যেতাম রাস্তায়।
বন্ধুর চিঠি হাতে পেয়ে সে কি আনন্দ!! আমার পিসতুতো দিদির সঙ্গেও এই চিঠি বিনিময় প্রথা চলতো।
কি আনন্দ ছিল সেই দিনগুলোতে।
এখন আর এই প্রজন্মের কাছে এই টুকরো টুকরো আনন্দগুলো ধরা দেয়না এটাই কষ্টের।
কিছুটা পরে যখন বাংলা সাহিত্য বা কবিতা পড়তে শুরু করেছি তখন অনেক প্রিয় লেখক লেখিকার মধ্যে আমার ভীষণ প্রিয় ছিল বুদ্ধদেব গুহ এবং সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য।
‘কোয়েলের কাছে’ আর ‘কাঁচের দেয়াল’ পড়ে চিঠি লিখেছিলাম ওনাদের। উত্তর পাইনি।
অবশ্য কি জানি সে চিঠি আদৌ পৌঁছেছিল কিনা! তবে পরবর্তীতে বইমেলায় গিয়ে ওনাদের দেখা পাই।
আমার ছোটকাকুর সঙ্গে গিয়েছিলাম সেই বইমেলায়।
তাদের লেখা বই-এর ওপর তাদের মূল্যবান সই পাওয়ার পর অসম্ভব ভালো লেগেছিল,মনে হয়েছিল বইমেলা যাওয়াটা বুঝি সার্থক হলো।
ওই “ভালোবাসা সহ শ্রাবনীকে বুদ্ধদেব গুহ” এই লেখাটি আমার সারাজীবনের সম্পদ হয়ে রয়ে গেল।
রবীন্দ্রনাথ তার ছিন্নপত্রাবলীতে বলেছেন যেকোন মূল্যবান উপহারের মতোই চিঠি পাওয়ার মূল্য কিন্তু এ জীবনে কিছু কম নয়।
তাই সস্তার হলুদ রঙা কার্ড বা সমুদ্রনীল ইনল্যান্ড যতোই বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাকনা কেন কিছু কিছু উদ্যোগ আমাদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার করে।
যেমন বাংলাদেশের একটি সংগঠন “ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা” তাদের একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল 2021 এর ফেব্রুয়ারিতে।
বিষয়টি হল তাদের প্রিয় মানুষের জন্য লিখতে হবে একটি চিঠি।
অভিনব উদ্যোগে সাড়া দেন অনেকেই।
গভীর অতলে ডুবে যাওয়া অভ্যেসকে ডুবরির মতো তুলে এনে যদি সেই নুড়িপাথর মনিমানিক্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাই তাতে হৃত গৌরব কিছুটা তো ফিরে আসে।
সেটাই বা কম কিসে???
অনুভব ও মনন সমৃদ্ধ লেখা।
Thank you so much.