সাতকাহন ‘আমার কলম‘ বিভাগে আপনার লেখা পাঠাতে চান?
WHATSAPP – 9038482776
MAIL– satkahonnews@gmail.com

১। যে কোন সাংস্কৃতিক বিষয় যেমন,
বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র, হারিয়ে যাওয়া শিল্প, আপনার চোখে আপনার গুরু,
নৃত্যশৈলী, নাটক, বই, সাহিত্যিক, ইত্যাদি বিষয়ে অনধিক ৬০০ শব্দে লেখা পাঠাতে হবে।
২। লেখা হতে হবে বাংলায়।
৩। আপনার পরিচয় ও একটি ছবি অবশ্যই লেখার সাথে পাঠাতে হবে।

আমার কলম – হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ী তৈরি শিল্প – Satkahon

আমার কলম

কলমে- বিশ্বনাথ পাল

অমরপুর
পো–দ্বারনড়ী, থানা-গলসী
জেলা -পূর্ব বর্ধমান, পিন ৭১৩৪০৩
পশ্চিমবঙ্গ

আমার কলম – হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ী তৈরি শিল্প – Satkahon

কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ী বোঝাই করা কলসী হাঁড়ির কথা আপনাদের  মনে আছে নিশ্চয়।

যা এই প্রজন্মের শিশুদের কাছে টোটোর দাপটে কষ্ট করেও মনে আনা সম্ভব নয়।

শুধু বিশ্বকবি কেন, অপরাজেয় কথাশিল্পী  শরৎচন্দ্রও তাঁর দেবদাস উপন্যাসে নায়ক দেবদাসের  নায়িকা পার্বতীর কাছে শেষবারের মতো ফেরার  মাধ্যম হিসাবে গোরুর গাড়িকেই নির্বাচন করেছেন।

অধিকতর  সুবিধার প্রযুক্তিকে জায়গা করে দিতেই আপাত বিরল এই গোরুর গাড়িই এই প্রবন্ধের মূল বিষয়।

কি থাকে গোরুর গাড়িতে? একজোড়া কাঠের চাকা, আর বাঁশ আর বাখারির সংমিশ্রণে একটা  ছই। 

চাকা দুটি কাঠের হলেও বেশ মজবুত। 

চাকা দুটি যে শক্ত লোহার দন্ড দ্বারা যুক্ত থাকত তার নাম লিগে। লিগের দুপাশে ছোট গর্তে  দুটি  লোহার গুঁজি চাকা গুলিকে সব সময় লিগের সঙ্গে জুড়ে রাখত সে দুটিকে কোথাও রোঁদখিল আবার কোথাও আলাংগুঁজি বা আলাং বলা হতো।

এই আলাং এর কাজ গাড়ী চলতে চলতে যেন চাকা বেড়িয়ে বা ছুটে না যায়। আবার চাকা দুটি যাতে পরস্পরের কাছাকাছি চলে না আসে সেজন্য দুটি চাকার মাঝে, লিগের ওপর থেকে বাধা দেওয়ার কাজ করে যেটি,সেটি মাঝের কাঠ বা মাঝার কাঠ নামে প্রসিদ্ধ।

সাইকেল চাকার যে তারগুলি স্পোক এই গাড়ির ক্ষেত্রে সেগুলি আড়া নামে প্রসিদ্ধ।

একটা মোড়ার মতো গোলাকার কাটে আড়া গুলি লম্বালম্বি ঢোকানো থাকে। প্রথমে দুটি শক্ত  শাল কাঠের আড়া ঢোকানো হয়।

পরে আরো দুটি অপেক্ষাকৃত সরু আড়া দুটি এমন ভাবে ঢোকানো হয় সেগুলি যেন আগের আড়া দটিকে

 ভেদ করে চলে যায়। পাইয়ের মধ্যে পাঠানো চারটি আড়ার মধ্যে অপেক্ষাকৃত সরু আর একজোড়া আড়া এমন ভাবে ঠোকা হয় যাতে সব কটি আড়া মজবুত ভাবে পাইকে ধরে রাখে।

সিড়িশ কাঠের পাই, শালকাঠের আড়া আর এই আড়ার চারদিকে বাবলা কাঠের পূঁটে দিয়ে যে  বৃত্তাকার চাকাটি সম্পূর্ণ হতো তার চারদিকে মজবুত লোহার হাল বা বেড়ি পড়ানো হতো।

চাকার মাপে তৈরী বেড়ি গরম করলে

লোহার বেড়ির বৃদ্ধিটাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাম্য কামার সেটাকে পরিয়ে শীতল করলে ঐ হাল চট করে ছিটকে বেড়িয়ে আসত না।

চাকা পুরনো হলে কিম্বা অতিরিক্ত ব্যবহারে লোহার বেড়ি অসাবধানতা বশতঃ খুলে গেলে কৃষকেরা  তাকে ‘হাল -ছেটা’ বলত। 

পাইয়ের  মাঝের যে ছিদ্রের মধ্যে  লোহার লিগে পরানো হতো, লোহার ঘর্ষণের ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত না হবার জন্য পাইয়ের দুপাশে দুটি লোহার বেড়ি  সেঁটে দেওয়া হত। এই গুলির নাম উলো। 

 মাঝার কাঠের ওপর দুটি মজবুত বাঁশের  সাহায্যে ব আকৃতির ফড় তৈরী করা হতো।

ফড়ের বাঁশ দুটি সামনের দিকে পরস্পরকে এঁটে থাকলেও পিছনের দিকে তাদের মধ্যে বেশ ব্যাবধান থাকত।

মোটা ঐ দুটি বাঁশের মধ্যে বিভিন্ন দূরত্ব সৃষ্টি কারী মজবুত বাঁশের ডাঁপ দেওয়া হতো। 

আড়াআড়ি ডাঁপ গুলির ওপর ফড়ের বাঁশ দুটির প্রায় সমান মাপের লম্বা লম্বা

মজবুত বাঁশ আধাআধি করে খুব ঘন করে বসানো হতো। এর ফলে ঐ  বাঁশের পাটাতন যেকোন মানুষ বা বোঝা নিরাপদে রাখা যেত। 

ফড়ের বাঁশ দুটির মাঝামাঝি অংশে খাপ সম্পন্ন দুটি লম্বা কাঠের চাতরার

 ওপর নাট বোল্টুর সাহায্যে এঁটে মাঝার কাঠের দুই প্রান্তের খাপে  শক্ত তারের বাঁধনে বাঁধা হয়। 

এই বাঁধনকে মোড়ানো বাঁধা বলা হতো। ফড়ের ছুঁচলো অংশটাই সামনের দিক। সামনের দিকে কাঠ বা বাঁশের সাহায্যে  তৈরি একটি জোঁয়াল বেঁধে দেওয়া হয়।

এই জোঁয়ালের  দুই প্রান্তে  দুটি ছিদ্রে দুটি লোহার লম্বা বিশেষ দণ্ড বা শোল (কোথাও বা শলি বলা হয়) দেওয়া হয়।

গোরু বা মোষ দিয়ে গাড়ি টানানোর সময় গোরু বা বাঁশের কাঁধ থেকে জোঁয়াল যাতে না ছিটে যায়। তাই এই ব্যবস্থা। 

পাটাতনের  ওপরে ফড়ের বাঁশের  ঠিক ওপরে অপেক্ষাকৃত সরু দুটি বাঁশ দেওয়া হয়।

এগুলি হাতল নামে পরিচিত।   বাঁশের পাটাতনের ওপরে  হাতল দুটির  মধ্যে দুটি শক্ত অথচ দুদিকে ছিদ্রযুক্ত  ঘুরে কাঠ এঁটে দেওয়া হয়।

প্রয়োজন হলে এই ঘুরে কাঠের সঙ্গে দুটি খাটুলি লাগিয়ে দেওয়ার ফলে অনেক জিনিসপত্র নিশ্চিত ভাবে বহন করা যাবে যেমন আবার মহিলাদের বহনক্ষম করতে ঐ খাটুলির ওপরে কাঁচা কঞ্চি সহজে বাঁকিয়ে তালাইয়ে ছাউনি করে কুড়ে ঘরের আকৃতি দেওয়া হতো।

এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গোরুর গাড়িতে তেল লাগে কী না? 

অভিজ্ঞ মানুষের উত্তর অবশ্যই লাগে। উলো ও লিগের মধ্যে লোহায় লোহায় ঘর্ষণের জন্য যাতে গাড়ির কাঠামোয় বড়  ক্ষতি না হয় তাই উভয়ের মধ্যবর্তী অংশে  পোড়া মোবিলতেল আর শন দিয়ে তেলানো হয়। এই তেল ফুরিয়ে গেলেই চাকা গুলি ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে কাঁদতে থাকে।

গোরুর গাড়ী পালকির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত যান।

বিপদে আপদে দুঃখে সুখে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার  শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

অত্যধিক সুবিধা জনক প্রযুক্তিকে ঠাঁই দেওয়ার জন্যই গোরুর গাড়ী আজ লুপ্ত বললেই

 চলে । ব্যয় সংকোচনের যুগে কাঠ আর কাঠ শিল্পীদের দাম বেশ চড়া।

তাই বর্তমানে শুধু মাত্র লোহার চাকা তৈরীতে বেশ মদত চলছিল। 

গোরুর গাড়ী তৈরীতে সূত্রধর ও কামার শ্রেণীর অবদান উল্লেখ করার মতো।

আয়েসী মানুষ  তবুও দুর্গ রক্ষার দায় মেনে গোরুর গাড়ী রক্ষার কাজটি কষ্টকর বলেই কি –প্রচুর মানুষের রুটি রুজির সম্ভাবনার শিল্পটি ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে বসেছে। 

বাংলা ভাষা,বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও আমরা বাংলার মানুষকে বা সংস্কৃতিকে কতটুকু জেনেছি ? অনেক গুণী ব্যক্তিদের জীবন কাহিনী আমাদের অনেকেরই অজানা। সাতকাহন সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আজ আপনাদের দরবারে।শুধু তাই নয় বাংলায় এমন অনেক কাজ হচ্ছে বা এমন অনেক নতুন প্রতিভা রয়েছে যারা প্রচারের অভাবে সামনে আসতে পারছে না। সাতকাহন তাদের জন্য একটা বড় জায়গা রেখেছে এই নিউজ পোর্টালে।বাংলা সংস্কৃতি বিকশিত হোক, পুরাতনকে সমাদর করার পাশাপাশি নতুন কেও বরণ করে নেওয়া হোক সমান ভালবাসায়। এই অঙ্গীকার নিয়েই সাতকাহনের জয়যাত্রা।

Satkahon

COPYRIGHT © SATKAHON

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *